লিখেছেন : আবু জাহেদ
শেষ ক্লাসের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের ১৫ ব্যাচের ছাত্ররা, অভিনব কিছু একটা করার কথা চিন্তা করেছিলেন।
কি করা যায় কি করা যায়, ভাবতে ভাবতে শেষমেশ তারা পুরোপুরি আরবের ঐতিহ্যগত পোশাক পড়ে শহীদ মিনারের পাদদেশে দলবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে, ছবি তুলে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখলেন।
পৃথিবীতে এতকিছু থাকতে তাদের কেনই বা আরবিও হয়ে যেতে ইচ্ছা হল, এবং ছবি তোলার জন্য শহীদ মিনারকেই কেন বা বেছে নেয়ার দরকার হলো, তা বোধহয় একটু চিন্তা করার দরকার।
সারা দেশ জুড়ে ইসলাম চর্চা শিক্ষা এবং প্রসারের যে মহাবিস্ফোরণ অবস্থা চলছে, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের এই আরবীয় হয়ে যেতে চাওয়া – এর বাহিরে কিছু নয়।
আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে হলেও এর অন্তর্নিহিত বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।
বর্তমান সময় গুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি এদেশের তরুণ যুবসমাজ এত পরিমাণে ধর্মান্ধ হয়ে পড়েছে যে, অতীতের কোনো সময়ই আর এমন অবস্থা ছিল না।
সবকিছুতেই এদেশের মুসলমানরা পুরোপুরিভাবে আরবীয় হয়ে যাওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখে চলেছে।
সবকিছুই বাংলাদেশে আজকে ধর্ম এবং ইসলামের মানদন্ডে বিচার করার প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে।
এদেশের একজন তরুণ আজকের বাংলাদেশে কেউ চে গুয়েভারা কিংবা গ্যারিবল্ডি হয়ে যেতে চাই না, সে চাই আরবীয় হতে এবং ধর্মের অপরিসীম কূপমণ্ডূকতার মধ্যে ডুবে যেতে।
এই দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশে মুসলমানদের মধ্যে সর্বত্র এবং সব শ্রেণীর মধ্যে।
এখানে একজন কৃষক শ্রমিক কিংবা মসজিদের হুজুরের সাথে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের একজন ছাত্রের চিন্তার কোন মৌলিক পার্থক্য নেই।
এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে ভবিষ্যত বাংলাদেশ কেমন হবে, তা কিন্তু পরিষ্কারভাবে উপলব্ধি করা যায়।
এই বেশ কয়েক বছর ধরে দেখছি এদেশের মৌলবাদী মোল্লা আলেম-ওলামার মধ্যে, মুক্তিযুদ্ধ ভাষা আন্দোলন কিংবা জাতীয় দিবস গুলোর বিষয়ে কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করতে।
যে সমস্ত বিষয় গুলোকে তারা সারাজীবন খোলাখুলি বিরোধিতা করে এসেছে,আজকে এসে কৌশলগত স্বার্থের জন্য তারা বলছে মুক্তিযুদ্ধ এদেশের আলেম সমাজ করেছে, ভাষা আন্দোলন করেছে দেশের আলেম সমাজ, এবং আলেম সমাজ ছাড়া নাকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন কখনোই সম্ভব হতো না!
এই সমস্ত কথাগুলো তারা সারা বাংলাদেশে ওয়াজ মাহফিল করে প্রচার করছে।
এতে করে হয়েছে কি, একেবারে ধর্মান্ধ জনসাধারণ যারা পাপের ভয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ১৬ ই ডিসেম্বর কিংবা ২৬ শে মার্চের মত জাতীয় দিবসগুলো পালন করা থেকে বিরত ছিল, তারাও এগুলো এখন পালন করছে — কিন্তু অবশ্যই তাদের নিজস্ব স্টাইলে।
মোটকথা তারা ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে চাই, আর সবকিছুর মতো এটাকেউ তারা ইসলামীকরণের মধ্যে নিয়ে আসতে চাই।
সেই কারণে আজকাল অনেক সময় হুজুরদের শহীদ মিনারে যেয়ে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।
Leave a Reply