বিয়ার বয়স পার হয়ে যায় দেখে পরিবার-আত্মীয়-স্বজন-সমাজ উঠে পড়ে লাগে ধরে-পড়ে বিয়ে দেয়ার জন্য। এটা তাদের অতি আবশ্যক পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। অনেক খুঁজেটুজে মেয়ে ঠিক করা হলো। সবাই জানানো একটা মেয়ের মধ্যে যতগুলো ভালো গুণ থাকা সম্ভব–সবই আছে এই মেয়ের মধ্যে।
স্বীকার করতে লজ্জা নাই–বিয়া না করলে খামু কী–এই চিন্তার বশবর্তী হয়ে কয়েক মিনিট সেই মেয়ের সাথে দেখাসাক্ষাতও হলো। তারপর সময়ের ফেরে দেশান্তরী। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে মেয়ের সাথে যোগাযোগ হয়; প্রেম-ভালোবাসা না হলেও বিয়ে-সংসার নিয়ে কথা হয়।
মেয়ের অনেক গুণের একটি হলো–আধুনিক। এতদিন কার সাথে কী করেছে না করেছে–প্রেম ভালোবাসা বিএফ–সবই আগেভাগে বলে রাখল। কিন্তু তখন আর সম্পর্ক নাই, তাই পরিবারের মতে বিয়ে করতেও আপত্তি নাই।
বললাম, বিএফকে বিয়ে করেন না কেন?
বললেন, সে চালচুলোবিহীন, বিয়ে করে খাওয়াবে কী… আর পারিবারিক ভাবে ওরকম ছেলে কেউ মেনে নিবে না।
যা হোক, মনে মনে ভাবলাম, আমিও তো আধুনিক–বিয়ের আগে কত কিছুই তো থাকতে পারে, ওসব ভাবলে কি চলে!
বেশ কিছুদিন পরে পরিবার বেঁকে বসল–এই মেয়ে চলবে না… এতদিনে অনেক খোঁজখবর নেয়া হয়েছে–মেয়ের এতগুলা সিম… যত সিম, তত বিএফ… মেয়ে হেন, মেয়ে তেন… মেয়ের পরিবারেও অনেক সমস্যা…
জেদ চেপে গেল। এই আধুনিক কালে এত দোষ দেখলে চলে! মেয়েকে বললাম, আপনি রাজি থাকলেই হলো, তাহলে দুজনে অন্য ভাবে বিয়ে করে ফেলা যাবে। কিন্তু মেয়ের এক কথা–পরিবারের কাউকে কষ্ট দিতে পারবে না, লুকিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে পারবে না… এই নিয়া ঝামেলা, কথাকাটি… সপ্তাহখানেক যোগাযোগ নেই। রাগ কমলে যোগাযোগ করতে গিয়ে দেখা গেল–সব অফ! ভাবলাম রাগ করেছে, পরে আবার ট্রাই করা যাবে।
পরেও একই অবস্থা। মেয়ের বাড়িতে যোগাযোগ করে জানা গেল–তিনি তার সেই চালচুলোহীন বিএফ-এর সাথেই ভেগে গেছেন! আগের যোগাযোগের সব মাধ্যম অফ, সব কিছু আবার নতুন করে করেছেন।
২) এই কাহিনীটাই খালুজানের সাথে শেয়ার করতে গিয়ে ধমক খেলাম। তখন খালাম্মাকে বললাম যে, এটা কীভাবে সম্ভব!
খালাম্মা বললেন, তার *দায় কুড়কুড়ানি উঠছে, আর তুমি দূরে থাকবা, তাইলে কেমনে হবে! *দার কুড়কুড়ানি কমানোর জন্যই ওই পোলার সাথে ভাগছে… পোলার ধন নাই তো কী হয়েছে, *ন তো আছে।
৩) খালাম্মার কথা সত্য-মিথ্যা জানি না, তবে গ্রামের দিকে দেখেছি–ধরেন কোনো মেয়ে কোনো নারীর বরের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে। এটা যদি ওই নারী জানতে পারেন, তাহলে তুমুল ঝগড়া শুরু হয়… এক পর্যায়ে ওই মেয়েকে বলেন–তোর *দায় কুড়কুড়ানি উঠছে, আয় *দায় বাঁশ দিয়া জ্বালা মিটাইয়া দেই, হেন ঢুকাইয়া দেই, তেন ঢুকাইয়া দেই…
এটা তো গেল পরের কথা। কোনো মেয়ে প্রেম করলে নিজের পরিবারের লোকজনকেও–মা বাবাকেও–এমন কথা বলতে শুনেছি।
৪) এতদিন এরকম কথা শুধু শুনেই আসছি। কিন্তু ভারতে শুনলাম এক মেয়ে প্রেম করে শুনে বাপ-ভাই-চাচারা মিলে মেয়েটির ‘কুড়কুড়ানি’র জ্বালা দূর করতে নিজেরাই এগিয়ে আসছে।
অবাক হই নাই। এখন মনে হচ্ছে, গ্রামের দিকে যেসব কথা শুধু শুনতাম, তলে তলে বাস্তবে হয়তো ওরকম কাহিনী হয়েছেও অনেক। ছোট ছিলাম বলে, বা অন্যের ব্যাপারে বেশি নাক গলাতাম না বলে হয়তো সেগুলো কানে আসে নাই।
৫) অনেকদিন পর গ্রামে ফিরছিলাম। সেবার চোখের সামনেই একটা বাচ্চা মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল। বাধা দিতে গেলে সবাই উলটা আমাকে খারাপ বলেছিল। সবার বক্তব্য–মেয়েটার ‘কুড়কুড়ানি’ উঠছে, সে প্রেম করে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে…ইত্যাদি, ইত্যাদি… পরিবারের মানসম্মান নষ্ট হবে, তার চেয়ে আগেভাগে বিয়ে দিয়ে দেয়াই ভালো…
হায়রে কুড়কুড়ানি! (ইয়ে মানে, এই সমাজ নিয়া সবাই সন্তুষ্ট! তাই সমাজ নিয়া কিছু বললাম না। কারণ তাতে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, আর সব দোষ হবে উগ্র নাস্তিকদের। আপনারা আপনাদের সমাজ নিয়া ভালো থাকেন।)
Leave a Reply