(পর্ব ১)
(গল্পটা হয়তো এক লাইনে শেষ করা যেত। কিন্তু ভূমিকা এবং উপসংহার–প্যাঁচাল অনেক বড় হতে পারে।)
নাস্তিকদের নিয়ে আরিফুর রহমানের এক পোস্টে Mahfuzur Sazal একটি মন্তব্য করেছেন। সেটি দিয়েই ভূমিকা শুরু করা যাক–// …নাস্তিকতা মানেই অনেক বড় কিছু না। আমি ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের মূলধারার অনলাইন নাস্তিক কমিউনিটিকে(আপনাদের) ফলো করে আসছি। তখন নাস্তিকের সংখ্যা অনেক কম ছিল, আর তাদের সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণাই ছিল। তবে একটা গ্রুপ যখন অনেক বড় হয়ে যায়, তার ভেতর কিছু হলেও কট্টর ধর্মী, জোর প্রয়োগকারী, লোক তৈরি হয়। আমি বলছিনা এটা নাস্তিকতার দোষ, আমি বলছি ব্যাপারটা স্বাভাবিক।
এটা দূর করতে চাইলে আমাদের মনে নাস্তিকতা সম্পর্কে, মুক্তচিন্তা সম্পর্কে যেই উচু ধারণা আছে সেটা দূর করা দরকার। নাস্তিক, মুক্তমনা হলেই যে লোকে মানুষ হিসেবে অনেক ভালো হয়ে যাবে, এমন চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসলে এই ধরণের সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।//
বেশ কিছু দিন আগে থেকে বলছি–এখন কেউ নাস্তিক পরিচয় দিলে বা কেউ নাস্তিক–এটা শোনার পরে প্রথম যে অনুভূতিটা হয় তা হলো– কুত্তার বাচ্চা শুয়ারের বাচ্চারাও ‘নাস্তিক’ হয়, তো?
তারও কিছুদিন আগে নিজেও এই নাস্তিক ব্যাপারটার পক্ষে তর্ক করেছি এই ভাবে যে, নাস্তিক মানে ভগবানেশ্বরাল্যাতে যারা আস্থা বা বিশ্বাস নেই–এই টুকুই। নাস্তিক হতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হবে,… সর্বোপরি মানবিক হতে হবে–এমন কোন কথা নেই।
বর্তমানে আগের সেই অবস্থান একটু পাল্টেছে।
নাস্তিক শব্দটা ঠিক কবে প্রথম চালু হলো? প্রথম দিকে কিন্তু দেব-দেবীদের ব্যাপারগুলো সত্যই ছিল–এই অর্থে যে, তখন দেবদেবীরা সাধারণ মানুষের মতই দুনিয়ায় বিচরণ করত। বৈদিক যুগে এরা মানুষকে খাদ্য, বস্ত্র, অন্নের চাহিদা মেটাতে সাহায্য করত। সাধারণ মানুষ ইচ্ছে করলে সাক্ষাত দেখতে পেত। পরের দিকে এই দেবদেবীদের যুগ শেষ হয়ে গেলে–যেহেতু তাদের আর বাস্তব অস্তিত্ব তখন ছিল না, এদের কাছ থেকে আর সরাসরি সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না তাই লোকেরা ওসব অবিশ্বাস করতে শুরু করল। তখন এদেরকে আবার ধর্মকর্মে ফিরিয়ে আনতে সেই বৈদিক যুগের এক পর্যায়ে যাজ্ঞ্যবল্ক মুনিরা ‘নিরাকার ঈশ্বর’-এর ধারণা প্রচার করছিল। এই নিরাকার ঈশ্বরের ধারণাটা যে এক ধরনের ধানাইপানাই ছাড়া আর কিছুই নয়, বরং শাসকশ্রেণী এটাকে সাধারণ জনগণকে শোষনের একটা হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করবে–এই সত্য বুঝতে পেরে অনেকে এর বিরোধিতা করেছিল নিরাকার ঈশ্বরে অবিশ্বাস করে। এদেরকেই ‘নাস্তিক’ বলা হত–এই অর্থে যে এরা ঈশ্বরে আস্থা রাখছে না।
কিন্তু তখন নিরাকার ঈশ্বর থাকলেও ধর্মের রূপটা বর্তমান কালের মত হয় নি। বর্তমান কালে যেমন ওই নিরাকার ঈশ্বরের ধারণাকে কেন্দ্র করে আরো অনেক ফন্দি-ফিকির প্রথা আচার-অনুষ্ঠান জীবন-ব্যবস্থা–লিখিত আকারে প্রথাগত ধর্মের যে রূপ এখন আমরা দেখি, তখন এসব ছিল না। তাই তখনকার দিনে শুধু ঈশ্বরে অবিশ্বাস করেই যেমন নাস্তিক হওয়া যেত, বর্তমানে নাস্তিক জিনিসটা শুধু ঈশ্বরে অবিশ্বাসে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। বর্তমান কালে নাস্তিকদের দাঁড়াতে হচ্ছে এক বা একাধিক প্রথাগত ধর্মের একটা সামষ্টিক রূপের বিরুদ্ধে–এখানে ঈশ্বর ধারণায় অবিশ্বাসের পাশাপাশি আরো অনেক ধর্মীয় প্রথা, ধর্মীয় বিবিব্যবস্থা, ধর্মীয় পারিবারিক আইন, ধর্মীয় রাজনীতি, ধর্মীয় সমাজব্যবস্থা, ধর্মীয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে হচ্ছে। এভাবে সামনে আগাতে থাকলে পুরুষতন্ত্র, পুঁজিবাদ,…নিজের লোভ, স্বার্থ–ধর্ম থেকে আসা প্রায় সব কিছুকেই ‘শত্রু’ বলে মনে হতে থাকবে।
(পর্ব ২)
(ভূমিকা চলছে…)
প্রথম দিকে সামুব্লগে প্রথম পেজে একসেস পাওয়াটা কঠিনই ছিল। তারপর আবার নানান ক্যাচালে আইডি ব্যান, ব্লক, সুলেমানি ব্যান–এসব তো ছিলই। আবার নতুন আইডি বানানো, সেগুলারে আবার প্রথম পেজে আনা–ঝামেলার কাজ। ব্যক্তিগত ভাবে কারো সাথে তেমন সখ্যতা গড়ে না উঠলেও একটু পরের দিকে যখন সবাই মোটামুটি ফেসবুকে একটিভ হতে শুরু করল, তখন ব্লগাররা ফেসবুকের গ্রুপচ্যাট বা সিক্রেটগ্রুপ করার অপশনটার সুযোগ নিতে শুরু করল সবচেয়ে বেশি। তখন থেকেই মোটামুটি পাকাপোক্তভাবে গ্রুপিং-এর শুরু। কীভাবে কীভাবে যেন সেরকম কিছু গ্রুপে ঢুকে পড়ি।
ওরকম গ্রুপে কোন বিষয়ে পড়াশোনা, কোনো টপিকে আলোচনা, আড্ডার পাশাপাশি আরেকটা জিনিস চলত–রীতিমত প্লান করে ব্লগে একজন পোস্ট দেবে, বাকিরা সেখানে তার হয়ে প্রতিপক্ষদের সাথে ফাইট দেবে। আবার গ্রুপিং করে কারো পিছে লাগা, কারো পোস্টে একযোগে হামলা–এসবও ছিল। সে সময়েই বর্তমান-অতীতের আস্তিক-নাস্তিক–সব ধরনের বিশিষ্ট ব্লগার-ফেসবুকারদের ব্যাপারে মোটামুটি আইডিয়া লাভ–সিক্রেট গ্রুপে কেউই খুব একটা সিক্রেট থাকত না–কার সাথে কার কী সম্পর্ক, কে কার শত্রু, কী নিয়া শত্রুতা, কে কেমন–এসব ব্যাপারই উঠে আসত।
অনেকদিন ধরে একটি মেয়ের সাথে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছিল। একদিন শুনলাম সে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলছে। কিছুটা হলেও মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু গ্রুপের সবার সাথে অনেক ব্যাপার নিয়ে আলাদা কথা হলেও এসব ব্যক্তিগত ব্যাপারে আগাতাম না। কিন্তু তখন এমন অবস্থা যে ভার্চুয়াল জগতটাই সব, বাস্তবে মন খুলে বলার কেউ নেই। কিন্তু এসব বলতে পারলে নাকি হালকা হওয়া যায়। একবার ওরকম গ্রুপেরই একজনকে বলতে গেলাম। তিনি ছেলেমানুষী ব্যাপার ভেবে এড়িয়ে গেলেন।
ওদিকে ফারামিদের সাথে ক্যাচালের সূত্র ধরে ফারামির দূর সম্পর্কের এক বান্ধবীর সাথে পরিচয়। যথেষ্ঠ দূরত্ব বজায় রেখে চললেও একসময় উনি অনেকটা ক্লোজ হয়ে গিয়েছিলেন। নিজের অনেক কথা বলতেন। শেষ পর্যন্ত নিজের কথাগুলোও উনাকেই বলেছিলাম। এবং বলে আসলেই হালকা লাগছিল। মনে হয়েছিল বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল। পরে উনার কাছ থেকে সম্পর্ক-প্রেম-ভালোবাসা ইত্যাদির ব্যাপারে অনেক জ্ঞানও লাভ করেছি। তারপর একদিন আরো খোলামেলা কথাবার্তা… এদিকে আছন্নভাবে আমিও ‘হুম, হ্যাঁ, না, হুম’ করে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর জানলাম, অতক্ষণ যা হচ্ছিল ওটাকেই নাকি ‘সেএণ্ডক্সচ্যাট’ বলে! জ্ঞানের সাথে অভিজ্ঞতাও লাভ করলাম!
এর মধ্যে গ্রুপের সেই লোক এনার ছবি/ছবির লিঙ্ক ইনবক্স করে বললেন, চোখ দুইটা দেখছেন? আপনারে কিন্তু অনেক ভালো পায়!
স্বাভাবিক ভাবেই বললাম–আপনি কীভাবে চিনেন? আপনার কে হয়?
— আমার কেউ হয় না, তবে আপনার খালাম্মা লাগে!
(পর্ব ৩)
কয়েকদিন পরে দুজনের অন্তরঙ্গ বেশ ছবি পাই। খুব একটা অবাক হইনি, বরং খুশিই হয়েছিলাম; দুজনের জন্যই। ততদিনে দুজনের অনেক ব্যক্তিগত কথাই শুনতে হয়েছে। তারা দুজনেই তাদের জীবনের যে গল্প শুনিয়েছিলেন তাতে মনে হয়েছিল দুজনেই খুব অসুখী। তাই এবার দুজন দুজনকে পেয়ে যদি খুশি হয়, সুখী হয়, তাহলে বিষয়টাকে পজেটিভ ভাবেই নেয়া উচিত।
খালাম্মা বললেন, খালুজান নাকি আমাকে ভাইয়ের মত দেখেন, উনার দ্বারা আমার কোনোদিন কোনো অপকার হবে না। কথা সইত্য, জ্ঞানত এখন পর্যন্ত কোনো অপকারের কথা শুনি নি।
খালুজান বললেন, খালাম্মার সাথে আমার যত চ্যাট হয়েছে সেগুলো সব খলাম্মা নাকি তাকে দেখিয়েছে।
আমি বললাম, আলহামদুলিল্যাহ। কারণ এটা সম্পর্ক গভীর হওয়ার লক্ষণ। সম্পর্ক গভীর হলে দুজনের মধ্যে কুনো গুপল কথা থাকে না।
খালাম্মা ডিভোর্সি। তিনি চাইছিলেন নতুন করে আবার জীবন শুরু করতে। তার আগে ভালো একটা জব খুঁজে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। খালুজানও খালাম্মাকে তৃপ্তি রাখার পাশাপাশি এ ব্যাপারেও সাহায্য করতে লাগলেন।
খালুজান ডিভোর্সি না হলেও ‘সেপারেট’। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই তাদের বাচ্চাদেরকে দেখাশোনা করেন। ভালো জব করেন। আলদা থাকেন। তো আমাকে যিনি এত ভালো জানেন, তিনি যদি আবার সুখী হন–এসব যখন ভাবছিলাম, ঠিক তখনই বিনা ঘষাঘষিতেই বীর্যপাত! তাদের সুখের স্বপ্ন নাকি স্বপ্নদোষে পরিণত হয়েছে!
খালাম্মার ভালো একটা চাকরি হয়েছে। বাড়ি ছেড়ে চাকরির ওখানে গিয়ে উঠেছেন। খালুজানের সাথে যোগাযোগ বন্ধ বা খালুজানকে এড়িয়ে যাচ্ছেন বা তার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার ধারণা খালুজান তার এবং তার চাকরির ক্ষতি করবে। খালুজান পুরো এলোমেলো হয়ে গেছেন। শুধু বলছেন, তিনি নিজে তার চাকরির ব্যাপারে হেল্প করছেন, তিনি কেন সেই চাকরির ব্যাপারে আবার ক্ষতি করবেন!
আর আমি থার্ড পার্সন, কারো স্বপ্ন বা স্বপদোষের ভেতরে আঙুল ঢুকানো থেকে বিরত থাকলাম।
(পর্ব ৪)
মেয়েটির নাম জানি না। ফেসবুকে কী এক নিকনেমে লেখালেখি করেন। খালুজান একবার এই মেয়েটির লেখা দেখিয়ে বললেন, ভালো লেখে। একটু ঘষামাজা করে দিলে বড় ব্লগার হতে পারবে।
খালুজান মেয়েটিকে একটি ব্লগে লেখালেখি করতে বললেন। মেয়েটি লিখতে থাকলেন। খালুজানও মাঝে মাঝে সেগুলো শেয়ার দিতে লাগলেন।
কিছুদিন পরে এই মেয়েটিরকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ছবি দেখালেন। দেখতে খুব বাচ্চা বাচ্চা লাগে। খালুজান বলছিলেন মেয়েটি তখন অনার্সে পড়ত। তার মানে আঠারো পেরিয়েছে অনেক আগেই। তখন আমার সাথে ইনবক্স হয়েছিল কি না, ঠিক মনে নেই। হতে পারে। লেখালেখি নিয়ে দু-চার কথা। তারপর প্রায়ই তার আইডি ডিএকটিভ থাকে বা হাওয়া হয়ে যায়। কদিন পরে আবার আসে, নয়তো নতুন আইডি বানায়। ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়।
এর মধ্যে খালুজান ঠিক করলেন বহুল প্রচলিত ৮৪জন ব্লগারের লিস্টে যখন নাম আছে, তখন তিনিও বিদেশে গিয়ে এসাইলাম নেবেন। তিনি আগে তার বাচ্চাদের নিয়ে যাবেন। তারপর এই মেয়েটিকেও ‘খুব সম্ভবত’ স্ত্রী হিসাবে নিয়ে যাবেন–এরকমই প্লান। আমাকে খুব করে বললেন এক প্রবাসী রাইটারের কাছ থেকে রেফারেন্স জোগাড় করে দিতে। আর বাকিসব তিনি নিজেই ব্যবস্থা করতে পারবেন। এসময় থেকেই খালুজানের সাথে যোগাযোগ অনেকটা কম। তিনি সিকিউরিটির কারণ দেখিয়ে প্রায়ই ফেসবুক আইডি অফ রাখেন। অন্য আইডি থেকে মেসেজ দিয়ে জানান যে দরকার হলে তিনি নিজেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
যোগাযোগ করল সেই মেয়েটি। খালুজান তখন কোলকাতায়। আর মেয়েটিও নাকি কোলকাতায় গেছেন। সেখান থেকে আমাকে নক করে যা বললেন–সারমর্ম–আমি নাকি তার ভাই লাগি। আর এরকম একজন ভাই থাকতে বোনটি কোলকাতা থেকে দিল্লিতে ট্রেনে যাবে, তা কী করে হয়…আমি যেন তার প্লেনের টিকিট করে দেই।
ফেসবুকে সাধারণত সম্পর্ক পাতাই না। বিশেষ করে এইসব ভাইয়া-আপ্পি টাইপের ব্যাপারস্যাপার থেকে দূরে থাকি। বয়সে ছোট হোক, বড় হোক, সবাইকে নাম ধরে ‘আপনি’ করে ডাকতেই ভালো লাগে। আমি খানিকটা দমে গেলাম, সেই সাথে বিব্রত। বুঝলাম খালুজান একে ভালোই ছবক দিয়েছে!
খালুজানকে বলতে তিনিও দেখি মজা করেন–বাচ্চা মানুষ, প্লেনে উঠতে চায়, টাকা নাই, ব্যবস্থা করে দেন…। এই সময় থেকে আমি আসলেই অফ গেলাম।
পরে এদের দিল্লি যাওয়ার ছবি দেখলাম। এর অনেকদিন পরে খালুজান মেসেজ দিলেন–তিনি ইউরোপে। বউ-বাচ্চারা কিছুদিনের মধ্যে ওখানে যাবে।
ওই মেয়েটির কী হলো, সেসব আর জিজ্ঞেস করলাম না। কারণ আমি থার্ড পার্সন–কারো স্বপ্ন বা স্বপদোষের ভেতরে আঙুল ঢুকানো থেকে বিরত থাকলাম।
(পর্ব ৫)
গল্প মোটামুটি ওখানেই শেষ। অনেকটাই ‘হ্যাপি এন্ডিং’–খালুজান বউ-বাচ্চা নিয়ে নাস্তিকর সূত্র ধরে এসাইলাম নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। খালাম্মা ভালো একটি জব পেয়ে বিয়ে করে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ভালো আছেন।
এবার স্কুলের বাংলা পরীক্ষার মত একটা প্রশ্ন রাখা যায়–“খালুজানের চরিত্র বিশ্লেষণ কর।”
ওহ, একজনের কথা ভুলে গিয়েছিয়াম–সেই মেয়েটি। এই গল্পের বড় একটা অংশ জুড়ে সেই মেয়েটি। তবে এই চরিত্র শুধু এই একটি মেয়েই নয়। এরকম আরো অনেক মেয়ে বা ছেলে থাকতে পারে।
একবার কথা উঠেছিল যে, এসাইলামের ব্যবসা চলছে। টাকার বিনিময়ে নাকি বিদেশে নেয়া, এসাইলাম পাইয়ে দেয়া–এরকম ব্যাপার চলছে। আমার মনে হয় না খালুজান এসবে জড়িত। তবে একটি মেয়েকে যখন এসবের লোভ দেখিয়ে বিছানায় নিয়েছিলেন, তখন না জানি খালুজানের নিজের কত কী লোভ আছে, বা আর কতজনে এসাইলামের লোভে খালুজানের দ্বারস্থ হয়েছেন!
খালুজান কোলকাতায় ভালো জায়গায় ভালো একটা ফ্লাট নিয়েছিলেন। শুধু খালুজান নন, আরো যত নাস্তিক তখন ‘হাইডে’, সবাই দেশের বাইরে কোথাও না কোথাও এভাবে ছিলেন। টাকা দিচ্ছিল ইউরোপ-আমেরিকার নাস্তিক সংগঠনগুলো। মূলত প্রথমে ওদের সাথেই যোগাযোগ করতে হয়। ওদেরকে যদি কনভিন্স করতে পারা যায় যে আপনি আসলেই বিপদে আছেন, তাহলে ওরা আপনাকে বিদেশে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু পাসপোর্ট-ভিসা–কিছু জটিলতা আছে, সময়ের ব্যাপারও। অনন্ত বিজয়কে ‘হাইডে’ না রেখেই তার ব্যবস্থা করেতেছিল, কিন্তু ভিসা হওয়ার আগেই সে খুন হয়ে যায়। তাই পরের দিকে যারা বিদেশে যেতে পারছেন, তাদেরকে তড়িঘড়ি করে প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোতে মুভ করিয়ে নিত। সেজন্য প্রথমে এদের সবাইকে একটা মোটা অংকের টাকা দিত ওই হাইডে থাকাকালীন সময়ে খরচবাবদ। এই টাকা দিয়েই এরা দেশের বাইরে কোথাও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করত যতদিন না ভিসা হচ্ছে। ভিসা হলে ওরা টিকিট কনফার্ম করে দেয়, তারপর কোনো এক ফাঁকে লুকিয়ে নাস্তিকরা দেশে গিয়ে ফ্লাই করে। হাইডে থাকাকালীন সময়ে যদি বলেন যে আরো টাকা লাগবে, সংগঠনগুলো সাথে সাথে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এটা খালুজানই বলেছিলেন–তিনি নিজেও কয়েকদফা টাকা নিয়েছিলেন। আবার অনেক নাস্তিক মাঝে মাঝে তার ফ্লাটে গিয়ে থাকতেন, তাও বলেছিলেন।
নাস্তিক সংগঠনগুলো এত টাকা কোথায় পায়? রাষ্ট্র বা সরকার থেকে এরা কোনো টাকা পায় নাই। এরা ডোনেশন পায় নাস্তিকদের কাছ থেকেই। অনেক নাস্তিক আছে প্রচুর টাকার মালিক–এরা বড় অংকের টাকা ডোনেট করে। অনেকে আছেন বিয়ে করেননি, বা বিয়ে করলেও বাচ্চাকাচ্চা নেননি–এরাও একটা পর্যায়ে সব অর্থ-সম্পত্তি এসব নাস্তিক সংগঠনগুলোকে দান করে দিয়ে যায়।
এখানে আর একটা পুরানো ব্যাপার উল্লেখ করি–দেশে নাস্তিকরা খুন হতে শুরু করলে তসলিমা নাসরিন সিএফআই (সেন্টার ফর ইনকোয়ারি) থেকে ২০ হাজার ডলার গ্রান্ট পেয়েছিলেন। যেসব নাস্তিক ডেঞ্জার জোনের মধ্যে থাকেন, বিপদ মনে করলে তারা তৎক্ষনাৎ যেন কেটে পড়তে পারে, সেজন্য এরকম গ্রান্ট কমবেশী অনেক নাস্তিকই পেয়ে থাকেন–যেমন পেয়েছিলেন বা পান আমাদের দেশের অনেক নাস্তিক যা উপরে উল্লেখ করেছি। কিন্তু তসলিমা নাসরিন এই গ্রান্ট নেয়ার পরে দেশের নাস্তিকরা উনাকে একেবারে ধুয়ে দিয়েছিল–নাস্তিকদের নাম করে টাকা নিয়ে নাস্তিকদেরকে না দিয়ে একা ভোগ করতেছেন, এসব করেই তিনি খান–এরকম সব অভিযোগ।
এরপর তিনি সিএফআই-এর এক অনুষ্ঠানে আমেরিকায় গেলেন। সিএফআই বলছিল তাকে আর ইন্ডিয়া যেতে দেবে না, আমেরিকাতেই বাড়ি করে দেবে। সেজন্য তারা তার বাড়ি করার নাম করে ডোনেশনও তোলে। বাংলাদেশের পেপার-পত্রিকায় এ খবর বেশ ফলাও করে ছাপাও হয়েছিল। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত আমেরিকায় বাড়ি না করে ডোনেশন পাওয়া প্রায় মিলিয়ন ডলার সিএফআই-এর ফাণ্ডে দিয়ে ইন্ডিয়া ফেরত আসেন। সিএফআই থেকে উনাকে বলা হয়–তারা ওই টাকা দিয়ে কমসে কম ১২ জন নাস্তিককে বাইরে নেয়া এবং এসাইলাম না পাওয়া পর্যন্ত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে।
কিন্তু তাদেরকে নেবে, কারা বিপদে–এসব তসলিমা নাসরিনের ভালো জানার কথা না। ওদিকে তার ইন্ডিয়া থাকার পারমিট রিনিউ করিতে হবে বলে তড়িঘড়ি করে ইন্ডিয়া চলে গেলেন, আর নাস্তিকদের ব্যাপার কাজ করার জন্য সিএফআই যোগ দেয় মুক্তমনা-ব্লগ-এর সাথে। পরে জানতে পারি–মুক্তমনার রেফারেন্সে প্রথম দিকে যায় এমন একজন যাকে ব্লগার হিসাবে আমরা কেউ তেমন জানি না, তবে সে লোক অনন্ত বিজয়ের লেখালেখিতে সাহায্য করত বলে শোনা যায়। আর বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয় অভিজিৎ রায়ের একটা বইয়ের কো-রাইটার-এর এসাইলাম পাওয়ার কথা। এই লোক বিদেশে গিয়ে আমাকে মেসেজ দিয়েছিল যেন তার ব্যাপারে কিছু না লিখি, কারণ তখনো তার বউ-বাচ্চা দেশে। লিখলে তাদের বিদেশ যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে। সে প্রথমে বলেছিল, তার এসাইলামের দরকার নাই, কারণ সে স্কলারশিপে বিদেশ গেছে। ওদিকে বিদেশে গিয়ে সে সিএফআই-এর সাথে কাজ করতেছে দেশের নাস্তিকদের এসাইলামের ব্যাপারে মুক্তমনা-ব্লগ মালিক পক্ষের কথায়। তো এই এসাইলাম, আর কার কার ব্যাপারে তারা রেফারেন্স দিয়েছে–এ ব্যাপারে আর যত প্রশ্ন করেছি–সে সরাসরি উত্তর দেবে না বলছে–সব প্রশ্নের উত্তর অমুক-আপা জানে, তাকে যেন জিজ্ঞস করি। সিএফআই-এর মাধ্যমে যখন তার বউ-বাচ্চাসহ এসাইলাম পাওয়ার খবর পেলাম–হাসছিলাম–এই লোকই প্রথমে তসলিমা নাসরিনের সেই গ্রান্ট পাওয়াকে ‘টাকা মেরে খাওয়া’ বলে পোস্ট দিছিল… নাস্তিকরা আসলে অনেক রকমই হয়!
সেই অনেক রকমের এক রকম খালুজানের সেই মেয়েটি যখন কোলকাতা গিয়ে দিল্লি যাওয়ার প্লেনের টিকিট করে দেয়ার জন্য বলছিলেন, তখন আরো অনেক কথাই খুলে বলেছিলেন–তিনি খালুজানের বাড়িতে গেছেন, সেখানে খালুজানের ছেলে-মেয়েদের সাথে পরিচয় হয়েছে, তারা তাকে খুব পছন্দ করেছে, এদেরকে নিয়ে বিদেশে গিয়ে একটা সংসারের স্বপ্ন… কিন্তু দিল্লি পর্যন্ত গেলেন, তারপরেও স্বপ্নভঙ্গ কেন হলো, খালুজান চলে যাওয়ার পরে তিনি কী করলেন–এসব কিছুই তিনি আর বলেন নি। আসলে সেই কোলকাতা পর্বের পরে উনি আর যোগাযোগই করেননি। কেন করেন নি, সেটা বুঝছিলাম অনেক পরে!
(শেষ পর্ব)
নাস্তিকেরা অনেক রকমই হয়ে থাকে। যেমন খালুজান একাই কয়েকরকম। এরকম বহুরূপী কি আমিও নই। হয়তো–যা বলি বা যে আদর্শ মনে ধারণ করি–বাস্তবে সবসময় সেটা করতে পারি না–ব্যর্থতা অবশ্যই আছে। তাই বলে আপনি কি এমন মনে করবেন যে–নাস্তিকরা হেন হয় তেন হয়, তাই আমি নাস্তিকতা থেকে সরে দাঁড়ালাম…অমুক নারীবাদী এই কইছে, আমি তার সাথে একমত না, অতএব আমি নারীবাদ থেকে সরে দাঁড়ালাম? অমুক সাম্যবাদী পালটি খাইছে, অতএব আমিও পালটি খাইলাম?
পালটা প্রশ্ন উঠতে পারে–তাহলে ধার্মিকদের আকাম-কুকাম দেখে ধর্ম থেকে সরে দাঁড়ালাম কেন? ধর্ম থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ ধর্ম নিজেই ধার্মিকদের আকাম-কুকাম করার পথ প্রশস্ত করে। আমরা যত না ধার্মিকের সমালোচনা করি, তারও বেশি করি ধর্মের–ধর্মগ্রন্থের লাইন ধরে ধরে ভেজালগুলো দেখানো হয়েছে বহুবার। কিন্তু নাস্তিকতা, নারীবাদ, সাম্যবাদ–এসবের কি ওরকম নির্দিষ্ট কোনো ম্যানুয়াল আছে? নেই। এগুলা এমন কিছু আদর্শ যা আপনার মনের ভেতর থেকেই আসতে হবে। বাইরে থেকে কেউ আপনাকে নাস্তিক/নারীবাদী/সাম্যবাদী বানাতে পারবে না। তেমনি কারো পতন দেখে যদি নিজেও এই আদর্শ থেকে সরে যান, সেটা একান্তই নিজের ব্যর্থতা। এ কারণেই খালুজানের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের সাথে নাস্তিকতাকে গুলিয়ে ফেলছি না।
খালুজানের নাম? সেটাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয়। খালুজানের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো কিছু নাই। তবে উনার এই কাহিনী না হলে আমার নিজের কাছেও অনেক ব্যাপার অন্ধকার থেকে যেত। খালুজানের নাম গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেই মেয়েটির কাছে। মেয়েটি ইচ্ছে করলে সে নাম প্রকাশ করতে পারেন। কারো কারো কাছে করেছেনও। প্রমাণ হিসাবে খালুজানের সাথে নিজের অন্তরঙ্গ কিছু ছবিও অনেককে দেখিয়েছেন। সে ছবি এক দুই করে অনেকের ইনবক্সে গেছে। সেই সাথে গেছে আরো কিছু বানানো কাহিনী।
এ কাজটা তিনি কেন করলেন? প্রতিশোধ? কিন্তু তার নিজেরও দুর্বলতা আছে, সেজন্য সবাইকে না জানিয়ে কয়েকজনকে জানিয়েছেন গোপনে। তবে এখানে তিনি নাস্তিকতাকে জড়িয়েছেন। নাস্তিকরা তলে তলে এমন খারাপ হয়–এসব যদি সবাই জেনে যায় তাহলে নাস্তিকতার ক্ষতি হবে–এমন একটা দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি অনেকরে সতর্ক করে কাহিনীটা জানিয়েছেন, পরোক্ষভাবে একটু প্রতিশোধও নেয়া হলো ভেবে হয়তো তৃপ্তি পেয়েছেন।
নাস্তিকদের কর্মকাণ্ডের জন্য নাস্তিকতার ক্ষতি হতে পারে–এরকম চিন্তাভাবনা থেকে নাস্তিকতাকে উদ্ধার করার মহান ব্রত নিয়ে আরো একজন এগিয়ে এসেছেন। তাকে অনেকেই বড় ভাইয়া হিসাবে জানেন, তার কথা বেদায়াতের মত মান্য করেন, সে কোনো মিথ্যা কথা বলতে পারে না–এমনই ধারণা অনেকের–আপনাদের প্রিয় মহামান্য মশুয়ার মানকিরবাচ্চা।
এই মানকিরবাচ্চার সাথে দীর্ঘকাল ইনবক্সে যোগাযোগ। সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কখনো তেমন কথা হয় নাই, কথা হত সামগ্রিক ভাবে। কিন্তু যখনই কোনো ব্যক্তির প্রশ্ন উঠত, সে ব্যক্তি সম্পর্কে–কোনোদিনও কারো সম্পর্কে একটা ভালো কথা তার মুখ থেকে শুনি নাই। তার কাছে সবাই খারাপ। ভাবতাম, সবার মধ্যেই তো ভালোমন্দ আছে। সে হয়তো খারাপ দিকটা বলে আমাকে সতর্ক করে দিচ্ছে। কিন্তু সে যখন আবার অন্যদের সাথে কথা বলত, সেখানে আমার নামে নিন্দা-মন্দ গাইত। সবাইকে নিষেধ করত আমার পোস্টে লাইক-কমেন্ট না করতে, আমার সাথে যোগাযোগ না রাখতে। ফেসবুকের খুব বড় একটা অংশর কাছে আমাকে খারাপ বানাতে সক্ষম হয়েছে। এই কারণে ফেসবুকে যে এত এত সিক্রেট গ্রুপ–খেয়াল করে দেখেন কোনো গ্রুপেই পাল্লা নাই! কারণ কেউ পাল্লাকে বিশ্বাস করতে রাজী না।
আরো অনেকের মত খালুজান নিজেকে পাল্লা বলে বা পাল্লার সাথে ভাল সম্পর্ক আছে–এমন বলে ভাব নিতেন হয়তো। মেয়েটির কাছেও হয়তো নিয়েছেন। বা এটা বলেছেন যে, কোলকাতার ওই ফ্ল্যাট পাল্লার। মেয়েটি এই কাহিনী সচিত্র মশুয়ারকে বলেছে। খালুজানের সাথে ব্রেকআপের পরে মেয়েটি পাল্লাকে কিছু বললেন না, কিন্তু মশুয়ারকে বলতে গেলেন কেন? মেয়েটি পাল্লাকে খালুজানের পক্ষ মনে করেছে, আর আগেই হয়তো জেনেছেন মশুয়ার পাল্লার বিপক্ষ। তাই সরাসরি প্রতিশোধ নিতে না পেরে মশুয়ারকে বলে কিছুটা গায়ের ঝাল মিটিয়েছেন। মশুয়ার এই সুযোগটা আরো ভালো করে কাজে লাগালো–সেই সব ছবি আর মেয়েটির কথা সবাইকে দেখিয়ে বলল–দেখো, আগেই কইছিলাম, এই নাও এখন সচিত্র প্রমাণ! মশুয়ার সবার কাছে প্রমাণ করে দিল যে–কোলকাতার ওই ফ্ল্যাট পাল্লার। সেখানে নাস্তিকরা কচি কচি মেয়ে নিয়ে ফূর্তি করতে যায়, পাল্লা তাদের জন্য নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে দেয়।
এখানে আমার কিছু বলার আছে–আগেই বলেছি, খালুজান কোন টাকায় কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি সেখানে আরো পালিয়ে বেড়ানো নাস্তিককেও জায়গা দিয়েছেন। মশুয়ারের বিচিচাটা এক নাস্তিকও সেখানে জায়গা পেয়েছিল। খালুজানের সাথে সেই নাস্তিকের পরে ইন্টারনেটের খরচ নিয়ে সমস্যা হয়েছিল যা খালুজান পরে আমাকে বলেছিলেন। তো আমার যদি আসলেই সেরকম সামর্থ্য থাকত, মানে কোলকাতায় ফ্ল্যাট–নাস্তিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আমার কাছে যদি আশ্রয় চায়–আমি যদি আশ্রয় দিয়ে থাকতাম, সেটা কি আমার ভুল কিছু হত? নাস্তিকরা যদি তাদের জিএফ/বিএফ নিয়েও আসত, সেটা কি আমার দেখার বিষয় হত? মশুয়ার জানে ওতে আমার ভুল হত না, তাই সে বলে বেড়াচ্ছে মেয়েটি কচি, অর্থাত নাবালিকা–আণ্ডার ১৮। ছবিতে মেয়েটিকে আসলেও খুব অল্প বয়সী ছোটখাটো একটা বাচ্চা বলে মনে হয়। কিন্তু আগেই বলেছি, মেয়েটি দেখতে এমন হলেও সে ভার্সিটি পড়ুয়া। তার বয়স কোনো ভাবেই ১৮-এর নীচে নয়। এই তথ্য এড়িয়ে সে বলছে–ওই ফ্ল্যাটে পাল্লা চাইল্ড এবিউজের সুযোগ করে দিচ্ছে, আবার ফেসবুকে বড় বড় কথা বলে! আমি আজও জানি না, পাল্লার প্রতি সেই প্রথম থেকে তার এত আক্রোশ কিসের জন্য?
শুধু তাই নয়, সে অনেক আগে থেকেই অনেকরে বলেছে যে পাল্লা আইডিটা আর কেউ নয়, স্বয়ং তসলিমা নাসরিন চালায়। ফেসবুকের একটা বড় অংশের নাস্তিক যে তসলিমা নাসরিনকে দেখতে পারে না, তার অন্যতম কারণ এই। এই মশুয়ার সবাইকে বুঝিয়েছে যে পাল্লা আইডির জন্য নাস্তিকতার ক্ষতি হচ্ছে, তসলিমা নাসরিনের জন্য নারীবাদের ক্ষতি হচ্ছে। সর্বশেষ–খালুজানের সাথে এই মেয়েটির ছবি ও তার কাহিনী সবাইকে দেখিয়ে এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে, ওই ফ্ল্যাট আসলে তসলিমা নাসরিনের। সে-ই আসলে এরকম চাইল্ড-এবিউজের ব্যবস্থা করে দিয়ে খুশি রাখে অন্য নাস্তিকদের। এভাবেই সে কিছু নাস্তিকরে তার পক্ষে কথা বলায়। আর এরকম সুবিধা পেয়েই কিছু নাস্তিক তসলিমার পা-চাটা কুত্তা হয়ে থাকে। ফেসবুকের অনেক বড় বড় নাস্তিকদেরকেও সে এইসব বলে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে। আর এজন্যই ইদানিং ফেসবুকে নাস্তিকদের একটা বড় অংশ এত তীব্রভাবে তসলিমা বিরোধী।
সবচেয়ে খারাপ লাগছে ধর্মকারীর ‘একজন ধর্মপচারক’-এর কথা ভেবে। উনার সাথে বরাবরই একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। উনি মারা যাওয়ার বেশ কিছুদিন আগে কিছু কার্টুন করে ইনবক্স করেছিলাম। উনি সীন করেও সেগুলো ধর্মকারীতে দেন নাই, আমাকেও আর কোনো রিপ্লাই দেন নাই। বিষয়টা তখন বুঝতে পারি নাই। বুঝেছিলাম আরো কিছুদিন পরে–যখন অনেকে জানিয়েছিলেন যে উনিও নাকি তাদেরকে পাল্লার সাথে ‘মিশতে’ না করেছেন! অর্থাৎ পাল্লার নামে বানানো ওসব গল্প তিনিও বিশ্বাস করেছিলেন। অভিমান নিয়ে আমিও আর মেসেজ দেই নাই উনাকে। এভাবেই তিনি চিরতরে চলে গেলেন।
মশুয়ার পাল্লার নামে সেসব নাস্তিকদের এসব বলে ক্ষেপিয়েছে, তারাই কোনো না কোনো সময় এসব আবার পাল্লাকে বলেছে। আপনাদের সৎ সাহস থাকলে মুখ খোলেন, একটু স্বীকার করে যান যে মশুয়ার এসব বলেছে আপনাদেরকে। অনেকে স্বীকার করবেন না, জানি–অনেকে ভয় পান এই ভেবে যে–এই মশুয়ার ইচ্ছে করলে আপনাদের পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দিতে পারে! সেজন্য মশুয়ার যখন পাল্লাকেও ওই হুমকি দেয়, তখন কোনো প্রতিবাদ করেন না! মশুয়ারের এসব কথা শুনে যারা মশুয়ারের বিচি চাটতেছিলেন, এখনো চাটেন, তাদের জন্য এক বদনা সমবেদনা ছাড়া আর কিছু বলার নাই!
খালুজাননামা ‘গল্প’ এখানেই শেষ হলো।
Leave a Reply