লিখেছেন সাঈদুর রহমান
একদা এক তরুণ ছেলে চুরির মতলব নিয়ে একটা দোকানে প্রবেশ করল। চারদিকে তাকিয়ে চুরি করে যেই দৌড়ে পালাবে, তখনই দোকানের মালিক তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলল। তাকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধল। তারপর শুরু হল জিজ্ঞাসাবাদ…
– নাম কি তোর?
– আব্দুল কুদ্দুস গো, চাচা। আমারে ছাইড়া দেন। আমি আর জীবনে চুরি করুম না!
– তুই চুরি কবে থেকে করিস? তোর বাবা-মা নাই?
– বিশ্বাস করেন গো, চাচা, আমার জীবনে আমি চুরি করি নাই। তয় আজকে পর্থম চুরি করতে আইছি। বাপে মারে ছাইড়া চইলা গেছে। মায় বাসা বাড়িতে কাম কাইজ করে। কয়দিন ধইরা অসুখে মরা-মরা হইয়া গেছে। বাপ মদ-জুয়া খেইল্লা সব টাকা উড়াই ফেলে। ঘরে খাওন নাই। চাইর ভাই-বোন আমরা। আমারে যাইতে দেন গো, চাচা। আর জীবনে চুরি করুম না।
– হুম। সকালে কিছু খাইছছ?
– না গো, চাচা। সারাদিন কিছু খাই নাই। ঘরে কেউ কিছু খায় নাই।
– ঠিক আছে। যা বলছিস, সব সত্যি তো?
– আল্লার কসম, চাচা। মিছা কইলে আমার মায়ের মরা মুখ দেখুম, আমি আগুনে পইড়া মারা যাইমু।
তিনি বাধঁনটা খুলে দিলেন এবং দোকান থেকে কিছু খাবার তাকে খেতে দিয়ে বললেন:
– এই নে। খেয়ে নে। আর জীবনে চুরি করবি না। তর মায়ের চিকিৎসার টাকাও আমি দিব। পারলে পরে ফিরায়ে দিস। না পারলে নাই।
– (পায়ে ধরে) চাচা গো! আল্লায় আফনের ভালা করুক।
– এই পা ছাড়!
– যা এবার। কোনোদিন টাকা পয়সা লাগলে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাস। তবু চুরি করতে যাস না।
– আইচ্ছা গো, চাচা। আমার লাগি দুয়া করবেন।
আশেপাশে যারা দাঁড়িয়ে ঘটনাটি দেখছিলেন, তারা সবাই হাতে তালি দিলেন। পরের দিন এটা নিয়ে পত্রিকায় খবর হল। ওমুকে তমুক চোরকে শাস্তির বদলে টাকা হাতে দিলেন। ইউটিউবে ভিডিও ফুটেজও আপলোড করা হল। টাইটেল দেয়া হল, “এই ভিডিও দেখার পর নিজেকে মুসলিম হিসেবে গর্ব করবেন।” রেডিও মুন্না, ফেইসবুকে শেয়ার দেয়া হল: “দেখুন আসল মুসলিমের পরিচয়।” পোস্টটি ভাইরাল হয়ে গেল।
তারপর পেরিয়ে গেল লাখো বছর। একদিন দুনিয়ায় কেয়ামত হয়ে গেল। হাশরের ময়দানে সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হল, সবার বিচার হবে। এক সময় ওই লোকটির ডাক পড়লো। আল্লা প্রশ্ন করলেন:
– নাম?
– আল্লা হুজুর, হাজ্বী মোহাম্মদ আক্কাস আলী।
– হুম। ফেরেশতা, প্রোফাইল খুলো।
– আল্লা হুজুর, প্রোফাইল ভাল। তয়…
– তয় কী?
– একটা খারাপ কাজ আছে।
– কী সেটা?
– আপনের আইন মানে নাই? আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ছেলেরে চুরির অপরাধে ধইরাও তার হাত কাটে নাই, উল্টা ওরে খাওয়াইছে। টাকাও দিছে।
– কী? এত্ত বড় সাহস! আমি যেখানে নিজে বইলা দিছি – চুরির শাস্তি হাত কাটা (কোরান, সুরা ৫:৩৮), সেখানে সে মানবতা চোদাইছে! শাস্তি দাও। কঠোর শাস্তি দাও।… আর ওই চোর পোলাটা কই?
– আল্লা হুজুর, পোলারও প্রোফাইল ভাল। ওই ঘটনার পর আর চুরি করে নাই।
– তা বুজলাম, তয় চুরির শাস্তি তারে পাইতেই হইব। ওর হাত কাটো। ইহকালে কাটা হয় নাই তো কী হইছে, এখন হইব। আমি আল্লা। আমি ন্যায় বিচারক। আমি দয়ালু।
Leave a Reply