মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশদিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই হারুনকে বললো: আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না। [সূরা আল আরাফ ১৪২]
অবশেষে মূসা পর্বত চূড়ায় আরোহণ করলেন। কারণ ওখানে গিয়ে মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের নিকট থেকে ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশ্যে প্রণীত দশ আজ্ঞা ও তওরাতের লিখিত সংস্করণ নিয়ে আসবেন। কিন্তু পরমেশ্বর কী প্রক্রিয়ায় মূসাকে তওরাতের নির্দেশনাসমূহ প্রদান করবেন, তা আড়াল করতেই ইস্রায়েলের সত্তর জন প্রবীণ ব্যক্তিকে পাহাড়ের পাদদেশে অপেক্ষমান রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য আলাদা হয়ে যান মূসা। তবে তিনি একা গেলেন না, যাওয়ার সময় তার ভৃত্য যোশুয়াকে সাথে নিলেন। কারণ যোশুয়া মূসার যাবতীয় প্রতারণামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মুখ্য সহায়কের ভূমিকা পালন করবে, যেন মূসা নির্বিঘ্নে পর্বত চূড়ায় অবস্থান করে পরমেশ্বরের নামে তওরাত প্রণয়ন করতে পারে। তার এমন গোপনীয় কার্যক্রম ইস্রায়েলের জনগণের নিকট যেন প্রকাশ হয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই যোশুয়া সংশ্লিষ্ট পর্বত চূড়ায় আরোহণের পথ পাহারায় নিয়োজিত থাকবে এবং মূসার আনুষঙ্গিক কাজে সহযোগিতা করবে। বাইবেলে তার পরের ঘটনা নিম্নরূপ:
তখন মোশী পর্বতে গিয়ে উঠলেন, আর মেঘটি পর্বতকে ঢেকে ফেলল। প্রভুর গৌরব সিনাই পর্বতের উপরে অধিষ্ঠান করল, আর ছ’ দিন ধরে মেঘটি তা ঢেকে রাখল। সপ্তম দিনে তিনি মেঘের মধ্য থেকে মোশীকে ডাকলেন। ইস্রায়েল সন্তানদের চোখে প্রভুর গৌরব পর্বত চূড়ায় গ্রাসকারী আগুনের মত প্রকাশ পাচ্ছিল। আর মোশী মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে পর্বতে গিয়ে উঠলেন। মোশী চল্লিশদিন-চল্লিশরাত পর্বতের উপরে থাকলেন। [যাত্রাপুস্তক ২৪:১৫-১৮]
পর্বত থেকে নেমে আসতে মোশীর দেরি হচ্ছে দেখে লোকেরা আরোনের কাছে একত্রে সমবেত হয়ে তাঁকে বলল, ‘ওঠ, আমাদের পুরোভাগে চলবেন এমন দেবতাকে আমাদের জন্য তৈরি কর, কেননা ওই যে মোশী মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে এনেছে, তার যে কী হল, তা আমরা জানি না। ’
আরোন তাদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কানের সোনার দুল খুলে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ তাই সমস্ত লোক কান থেকে সোনার দুল খুলে আরোনের কাছে নিয়ে গেল। তাদের হাত থেকে সেইসব নিয়ে তিনি খোদকারের একটা যন্ত্র দিয়ে নকশা গঠন করে ঢালাই করা একটা বাছুর তৈরি করলেন; তখন লোকেরা বলে উঠল, ইস্রায়েল এ-ই তোমার পরমেশ্বর, যিনি মিশর দেশ থেকে তোমাকে এখানে এনেছেন! [যাত্রাপুস্তক ৩২: ১-৪]
যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করিয়াছিলাম, তাহার প্রস্থানের পর তোমরা তখন গোবৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে। আর তোমরা তো জালিম। [সূরা বাকারা ৫১]
মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলঙ্কার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত ‘হাম্বা’ রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনাও দেয় না ? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম। [সূরা আরাফ ১৪৮]
Leave a Reply