(ফেসবুক একাউন্ট আপাতত ব্লক থাকায় যখন যেটা আগে মনে পড়ছে, তখন সেটা লিখছি—কয়েকদিন ধরে, যখন যেটা মনে পড়ছে–বিধায় ঘটনাগুলার সময়ের ক্রম আগে পরে হতে পারে। এছাড়া স্মৃতি থেকে অনেক কিছু তুলে আনছি—তথ্য ভুল-ত্রুটি থাকলে ধরিয়ে দিলে যাদের কাছে সঠিক তথ্য আছে, তারা তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারেন। পরে এডিট করে দেব।)–
১) প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে—র্যাব, ডিবি, ডিজিআইএফ ইত্যাদি পর্যায়ে—ভালো যোগাযোগ আছে, তাকে খাতির করে, তার সোর্স আছে ওখানে—তাকে ইনফো সাপ্লাই দেয়, কী হবে না হবে আগে থেকেই সে খবর পেয়ে যায়, আবার তাদের কোনো সাহায্য বা তথ্য লাগলে তাকে ডেকে নেয়, চা-সিগারেট খাওয়ায়—ইনবক্সে এগুলা সে নিজেই বলছে। সামনে কী কী হতে পারে—জিজ্ঞেস করলে বলত অপেক্ষা করতে, নিচের চোখেই দেখতে।
২) পুরানো ব্লগাররা খুব গর্ব করে নিজেদেরকে সামু ব্লগের ‘ছাগু ফাইটার’ বলে পরিচয় দেয়। এই লোকও তার ব্যতিক্রম নয়। এই পর্যন্তই। তার নিজের লেখা উল্লেখযোগ্য কিছু ব্লগের লিঙ্ক (নাস্তিকতা বা অন্য যে কোনো বিষয়ে) চেয়েও পাই নাই, খুঁজেও পাই নাই। অবশ্য ভিন্ন নিকে লিখে থাকলে আলাদা কথা। তবে মজার ব্যাপার হলো—সামু ব্লগ থেকে ছাগু তাড়াতে তাড়াতে এমন অবস্থা যে তার কিছুদিনের মধ্যেই পুরা সামু ব্লগটাই ছাগুদের দখলে চলে যায়।
৩) সামু ব্লগে মূলত ফাইট হতো লীগার এবং জামাত-শিবিদের মধ্যে। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে জামাতঘেঁষা বলে, এবং ব্লগে লীগারদের প্রতিপক্ষ বিধায় তারাও ছাগু ট্যাগ খেতো। আওয়ামিলিগ, মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তান—এসবই ছিল মূল পয়েন্ট। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে দেখা গেলো—লীগার বাদে অন্যদের পাকিস্তানপ্রীতির অন্যতম প্রধান কারণ ধর্ম—মুসলি-মুসলিম ভাই ভাই। তখন লীগের পক্ষে থাকা কেউ কেউ ধর্মের ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে লেখালেখি শুরু করল। এভাবে আলাদা করে একটা নাস্তিকগ্রুপ তৈরি হলো। এই নাস্তিকদের সাথে আবার লীগার মুসলিমদের একটা বিরোধ হতে শুরু করল। লীগার নাস্তিকরা চেষ্টা করছিল ধর্মকে আক্রমণ না করে লীগার আস্তিকদের সাথে মিলেমিশে শুধু ছাগু পুন্দাইতে। কিন্তু ততদিনে কেউ কেউ উগ্র-নাস্তিক হয়ে গেছে। তারা লীগকেও ছেড়ে দিল না। লীগের ভুল-ভ্রান্তি নিয়েও লেখালেখি শুরু করল। এদের সাথে আবার যোগ দিল বামধারার নাস্তিকরা—তারা নাস্তিকতার পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক মতবাদের স্বপক্ষেও লেখালেখি শুরু করল। অতঃপর লীগার নাস্তিক এবং বাম নাস্তিক—নাস্তিকদের মধ্যেও এরকম বিভাজন শুরু হলো। আবার কেউ কেউ বামদেরকেও ছেড়ে দিল না—ধর্ম থেকে শুরু করে সমস্ত রাজনৈতিক মতবাদ নিয়েও চুলকানি দিতে লাগল। এভাবে নাস্তিকদের মধ্যে কেউ কেউ কোনো না কোনো দলের দাস হয়ে রইল, আর কেউ কেউ সব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে শুধু ধর্ম-দল সবকিছুরেই পুন্দাইতে লাগল। ইদানিং আবার এদের মধ্যে ঢুকেছে নতুন আইডিয়া–নারীবাদ-সাম্যবাদ—মানববাদ। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নাস্তিকরা এক দিকে, আরেকদিকে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের পক্ষের… নাস্তিকদের মধ্যে বিভাজনটা বাড়ছেই… এই বিভাজনের সুযোগ নিয়ে লোকটা আবার জোট-ঘোট পাকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে, এবং দেশপ্রেম সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে যেমন লীগার আস্তিক-নাস্তিকদের ‘বড় ভাইয়া’ তেমনি এই পুরুষতান্ত্রিক সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়েও অনেকটা সফল বটে।
৪) সে-যে সবসময় জোট-ঘোট-গ্রুপ নিয়ে চলে তার প্রমাণ কয়েকবার পাই। শাহবাগ আন্দোলনের সময়েও যেহেতু পাল্লার ধর্ম পুন্দানি অফ হয়ে নাই, তাই ওই সময় ইনবক্সে ছবক দিল—লীগারপন্থী নাস্তিকরা তাদের গ্রুপে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা আপাতত ধর্ম নিয়ে এমন কিছু লিখবে না যাতে হেফাজতিরা সুযোগ পায় বা রাজনৈতিক ভাবে লীগের বিপক্ষে যায়। পাল্লাকেও পরোক্ষভাবে ধর্ম নিয়ে অফ থাকতে বলে। তবে আরো কিছু অজানা আইডি থেকে সরাসরিই অফ থাকতে বলে। পাল্লা তখন বিএনপি-জামাত-শিবিরের বিপক্ষে একের পর এক কোলাজ বানিয়ে যাচ্ছিল।
৫) কোপ খেয়েও বেঁচে যাওয়া মার্কামারা এক নাস্তিক ব্লগার শাহবাগ আন্দোলনের সময় মিছিলে গেলে এই লোক মেসেজ দেয় ওই নাস্তিক ব্লগারকে নিষেধ করতে যেন সে আর এই আন্দোলনের সামনে না যায়। কারণ এতে নাকি জনগণ বুঝে যাবে এটা নাস্তিকদের আন্দোলন, এবং সর্বপরি লীগ সরকারের ক্ষতি হবে। সে আরো বলে—এই আন্দোলনে লীগ সরকার প্রতিদিন দুই কোটি টাকা করে খরচ করছে।
৬) সে নিজে না বলে পাল্লাকে দিয়ে কেন বলাচ্ছে—কারণ ওই নাস্তিকও আলাদা একটা গ্রুপ নিয়ে চলে, যে গ্রুপ এই লোকের বশ্যতা স্বীকার করে না, ফলে অনলাইনে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারে তার সমস্যা হচ্ছে। এই নিয়ে সেই কোপ খাওয়া নাস্তিকের সাথে এই লোকের বিরোধ। (এবং তার ধারণা–পাল্লার সাথে ওই নাস্তিকের সখ্যতা আছে।)।
৭) এই ধারণাটা কীভাবে হলো?–
একবার তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে লিখেছিলাম—তিনি আশির দশকে ধর্ম-ইসলাম-আল্যা-নবির বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন, কোরান-হাদিস থেকে রেফারেন্স দিয়েছেন—সেসব কলাম লোকে পড়েও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই, বরং তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু যেই নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘লজ্জা’ লিখলেন, এবং সেটা জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে গেল, অর্থাৎ রাজনৈতিক স্বার্থে আঘাত হানলেন, তখন থেকেই সমস্যা হতে শুরু করল এবং শেষ পর্যন্ত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উনাকে দেশান্তরী করা হলো। ওই ব্লগারকে নিয়েও একবার একই কথা বলেছিলাম—যে-ই সে নাস্তিকতার পাশাপাশি লীগারদের বিরুদ্ধে লেখালেখি করতে শুরু করল, অমনি সমস্যা হতে শুরু করল—এমনকি কাছের বন্ধুদের সাথেও বিভাজন হতে শুরু করল এই রাজনৈতিক ভিন্ন মতের জন্যে। তার তেমনই এক ফেসবুক পোস্টে এক পোস্টে ছাত্র ইউনিয়ন করা এক নারী ফেসবুকার লীগের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে লীগার আস্তিক-নাস্তিকদের রোষানলে পড়ল—সে উত্তর না দিলে গালি, পালটা উত্তর দিলে আরো বেশি গালি! ওই ব্লগার সেই গালাগালির প্রতিবাদ করে নিজেও এই ক্রসফায়ারে পড়ে যায়। গালিবাজিদের বক্তব্য ছিল এরকম–ওই নারী ফেসবুকারকে এই এই ব্লগার চেনে বলেই নারী ফেসবুকারকে গালি দেয়াতে তার গায়ে ফোস্ক পড়েছে, এবং তার প্রতিবাদ করতে আসছে। (সিপি গ্যাঙ-এর বীজ সেদিনই রোপিত হয়ে যায়।) এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই ব্লগারের সাথে নিজের ঘনিষ্ট লীগার বন্ধুদের সাথে সম্পর্কটা এতই খারাপ হয় যে পারলে তারা তাকে খুন করে ফেলে। তার অপরাধ সে মিথ্যা কথা বলেছে–নারীকে চিনেও চেনা না বলেছে। বিষয়টা ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে চলে আসে। তাকে হুমকি দেয়া হয়—সাহস থাকলে ছবির হাটে যাওয়ার।
এই লোকটা তখন আমাকে মেসেজ দেয় যে দুই দিনের মধ্যে ওই ব্লগারকে ধোলানো হবে। ওই ব্লগারকে নিষেধ করি ওখানে না যেতে। কিন্তু সে-ও ঘাড়ত্যাড়া। গেল। সাথে নিয়ে গিয়েছিল আরেক ব্লগারকে (খুব সম্ভবত এক কবি পুত্র)। দুইদিন পরে এই লোক খিক খিক করতে করতে মেসেজ দেয়—কী, বলছিলাম না?
বললাম, কী হইছে? বলল—ছবির হাট (বা আজিজ সুপার মার্কেট) গিয়েও তর্কাতর্কি করছিল। তারপর তার কলার চেপে ধরতেই অন্য জন দৌড়ে পালায়। আর একে চড় থাপ্পর মেরে ছেড়ে দেয়া হয়…খিক খিক…
অনলাইনে ক্যাচালের জের করে গায়ে হাত তোলার ঘটনা আমার জানামতে এটাই প্রথম, আর সেটার শুরুটা করেছিল নাস্তিকরাই, আর এসবের পেছনে কলকাঠি নেড়েছিল এই লোকটাই।
মনে আছে—এই ঘটনার সময় কয়েকটা কোলাজ বানিয়েছিলাম ছবির হাট নিয়ে—বাড়ির কাছে পাইয়া কুত্তা আসে ধাইয়া/ আসিস পারলে ছবির হাটে ফেলামু তোরে খাইয়া… এছাড়া ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’—এই গানের প্যারোডি করে কোলাব্যাঙ নিয়ে একটা কোলাজ বানিয়ে কাভার পিকে দিয়েছিলাম। অনেকেই বলছিলেন—যে ছবির হাট নাস্তিকদের মক্কার মত, সেই ছবির হাটের পেছনে লাগলাম কেন…
এই লোকরে বার বার মেসেজ দিছিলাম, লেখালেখি জবাব লেখালেখি দিয়ে দেন, অনলাইনের ক্যাচাল অনলাইনে রাখেন, গায়ে হাত তুইলেন না। সে বলত—ও সীমা ছাড়িয়ে গেছে…
৮) আস্তিকরা নাস্তিকদের সীমা নির্ধারণ করে দেয়। অনলাইনে কী কী নিয়ে লিখতে পারবে না, সেসব ঠিক করে দেয়। এই সীমা অতিক্রম করলে মামলার হুমকি দেয়, হামলা করে, কোতল করে। এইসব লোকেরাই যখন আবার আস্তিকদের ওসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে, তখন ভাবি এরা এত ভণ্ড হয় কীভাবে!
নাস্তিকতা এদের একটা মুখোশ মাত্র। স্বার্থে আঘাত লাগলে বা এদের অপছন্দের কিছু করলে, বা রেগে গেলে যে এরাও আস্তিকদের মত মামলা-হামলা করে—মুখোশ খসে পড়ে, তার প্রমাণ অনেক আগেই পেয়েছি। কয়েকদিন আগে আবার পাওয়া গেল।
৯) একটা মিথ প্রচলিত আছে যে এই লোক যাদেরকে ছাগু-ছাগী ট্যাগ দেয়, সেটা মিথ্যা হয় না। আবার একটু পুরানো দিনে ফিরে যাওয়া যাক—
এক নারী ব্লগার তখন সুপার ফর্মে। ফারামিদের প্রায় কোণঠাসা করে ফেলছে। ফারামি তখন আর তর্কে না গিয়ে ‘প্রেম নিবেদন’, ফ্লেক্সিলোড, বিয়ের প্রস্তাব-এসব ‘গেম’ খেলা শুরু করল। বিষয়টা অনেক হাস্যরসের সৃষ্টি করে। তখনো আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচাল আস্তিকরা অনলাইনেই রাখত। হুমকি-ধামকি দেয়া শুরু হয় নাই। আস্তিক-নাস্তিক সম্পর্ক তিক্ততার দিকে যায় নাই। এর মধ্যে ফারামি প্রায়ই নাস্তিকদের প্রস্তাব দিতে শুরু করল—সরাসরি দেখা করে কথা বলার জন্য। এদের অনেকে আমাকে বলেছিল দেখা করবে কিনা। বলছিলাম—অনলাইন ছেড়ে যদি নাস্তিকরা ফিল্ডে নামতে পারে তো সেটা নাস্তিকতার জন্য বড় প্লাস পয়েন্ট—দেখা করতে পারেন…দেখেন কী বলে… আর আস্তিকদেরকে যুক্তিতে হারানোর মত সব অস্ত্রই নাস্তিকদের আছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ইনফো কালেক্ট করা, বা সেগুলা নিয়ে পরে কোতলের কাহিনী—এসবের বিন্দুমাত্র আভাস তখন ছিল না। নাস্তিকদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ব্লগার ও কয়েকজন নারী ব্লগার ফারামির সাথে দেখা করে, ছবি তোলে, ছবি ফেসবুকে পোস্টও করে। এ নিয়েও হাসাহাসি হয়। কিন্তু এই লোক তার দেশপ্রেমিক লীগার বাহিনী নিয়ে ফারামির সাথে দেখা করা সবাইকে ছাগু-ছাগী ট্যাগ দেয়া শুরু করে।
উক্ত দুইজন পুরুষ ব্লগারের মধ্যে একজন পরে ডিবির হাতে গ্রেফতার হয়, আর অন্যজন (মুরাদ টাকলা পেজের এক এডমিন) এই লোকের বিচি চাটা শুরু করলে তার ছাগু-ট্যাগ প্রত্যাহার করা হয়। এই এডমিনই এই লোকসহ আরো অনেকের কাছে অন্য পুরুষ ব্লগারে ইনফো লিক করে। খুব এই ইনফোর সূত্র ধরেই অর্থাৎ এই লোক এইসব ইনফো ডিবিকে দিলে পরবর্তীতে হল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
১০) ছবি নিয়ে আরো একটা কাহিনী আছে–ফারামির সাথে দেখা করা এক নারী ফেসবুকার–অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী–যেহেতু অলরেডি ছাগী ট্যাগ খাইছে, সেহেতু তার সাথে ছবি তোলা মানে তারাও ছাগু। সেরকম একটা ছবিতে এই অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী ফেসবুকের সাথে ছবি ছিল দুই ব্লগার এবং এক ফেসবুক কবির–ফেসবুকে কপিবর নামে পরিচিত–এই চারজনের একটা মদ-মাংস খাওয়ার ছবি ছিল। ছাগীর সাথে ছবি–বাকিরাও ছাগু ট্যাগ খাইলো। সেই ছাগুট্যাগ খাওয়া কপিবর এখন আবার নারীবাদ ইস্যুতে এই লোকের বিচি চাটে… তাতে সেই কপিবর ছাগুট্যাগ মুক্ত হতে পারছে কি না–জানি না।
১১) ফারামির সাথে দেখা করা দলটির লিড দিয়েছিল সেই সুপার ফর্মে থাকা নারী ব্লগার। থাবাবাবা এই নারী ব্লগারের সাথে বাস্তবে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিল। (এটা ফারামির সাথে দেখা করার আগে, নাকি পরে, সেটা ঠিক মনে করতে পারছি না।) নারী ব্লগার আমাকে জিজ্ঞেস করছিল দেখা করবে না কি না। আমি না বলি নি, তবে সাথে একজনকে নিয়ে যেতে বলেছিলাম যে দেশে কেস খেয়ে এখন প্রবাসী। দেখা হয়েছিল কোনো একটা রেস্টুরেন্ট। এবং আগে কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকলে সেটা ওই দেখা করার পরে কেটে যায় এবং সম্পর্কটা ভালো হয়েছিল—এমনটাই সেই নারী ব্লগার বলেছিল পরে।
এদিকে সরকার-প্রশাসন লোক দেখানো অনেক কিছুই করে। সেখানে হাসিনা নিজে থাবাবাবা খুন হলে পরে তাকে দ্বিতীয় প্রজন্মের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা বলেছে, তখন তার খুন-পরবর্তী যদি একটু সক্রিয়তা না দেখানো হয় তাহলে কেমন দেখায়! ওদিকে আবার হেফাজতিরা বিষয়টা নিয়ে ধর্মীয় রাজনীতির চাল চালল। হাসিনা যে থাবাবাবাকে দ্বিতীয় প্রজন্মের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা বলল, খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সে ব্লগে ইসলাম-আল্যা-নবিকে নিয়ে অনেক ‘কটূক্তি’ রেখে গেছে। তখন সরকার দুইদিন আগে যে নাস্তিকদের সিকিউরিটি দিয়েছে, তাদেরকেই শায়েস্তা না করলে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের কাছে ইয়ে হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং, সরকার এবার নাস্তিকদের ব্যাপারে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। শুরু হলো নাস্তিকদের শায়েস্তা করার পালা—
কিন্তু সরকার কোনো নাস্তিককে খুঁজে পাচ্ছে না! সরকার নাস্তিকদের বিষয়ে এতদিন অন্ধকারে ছিল। ওদিকে কয়েকদিন আগে যাদেরকে সিকিউরিটি দিয়েছে তাদেরকেই যদি আবার ধরে তাহলে শাহবাগ নিয়ে সরকারের পাতানো খেলাটাও ভেস্তে যেতে পারে (সরকার তখন সিকিউরিটি তুলে নিল শুধু), মানে এখানকার নাস্তিকরা আন্দোলন থেকে সরে যেতে পারে। তাহলে এমন নাস্তিক দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, যাদেরকে সিকিউরিটি দেয়া হয় না, আবার নাস্তিকদের মধ্যে তাদের নিয়ে নেগেটিভ ধারণা আছে—অর্থাত উগ্র নাস্তিক। কিন্তু তাদের খোঁজ পাবে কীভাবে? ডাকা হোক ‘সোর্স’কে…
ওদিকে আগেই বলেছি, এই লোকের সাথে প্রশাসনের ভালো খাতির, অনেকটা সোর্স হিসাবে কাজ করে—যা সে নিজেই গর্ব করে বলেছে আগে, আবার থাবাবাবার সাথেও তার ভালো সম্পর্ক। থাবাবাবা খুন হলে—(এই লোকের মত আমারও ধারণা যে থাবাবাবাসহ আর সব নাস্তিকদের খুনের পেছনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হাত আছে। এবং খুনের পরবর্তী সরকার-পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা সেই ধারণাকেই সমর্থন করে।)– পুলিশ তার ল্যাপটপ জব্দ করে, অনেক নাস্তিক ও নারী ব্লগারদের জবানবন্দি নেয়। এই নারী ব্লগারের সাথে থাবাবাবার হয়তো অনেক চ্যাট দেখেছিল। হয়তো এই নারী ব্লগারেরও জবানবন্দি নিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে হয়তো তার ঠিকানা থাবাবাবাকে দেয় বা ওই চ্যাটে ছিল না। আবার থাবাবাবার সাথে এই লোকের চ্যাট ছিল, সেখানে হয়তো এই নারী ব্লগারকে নিয়ে তাদের মধ্যে কথা হয়েছিল। এই লোকের ধারণা ওই নারী ‘ছাগী’ অর্থাৎ ‘বিপক্ষের’ কেউ। সেসব দেখে ডিবি পুলিশ দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ভেবেছে এই লোক হয়তো ওই নারী ব্লগারের ঠিকানা জানে।
(এই বিষয়টা বিস্তারিত জানতে চেয়ে কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, পুরানো লেখাগুলো কারো কাছে আছে কিনা, জানতে চেয়ে—কেউ সাড়া দিল না)–তো ঘটনার আগে-পরে অনেকের লেখালেখিতে যা বুঝেছিলাম–তাকে ডেকে এনে এই নারী ব্লগারের ঠিকানা চাওয়া হলো। কিন্তু সে সেটা জানে না। ডিবি হয়তো তার কথা বিশ্বাস করে নাই, বা তারাও বিরক্ত হচ্ছিল। কাউকে না পেয়ে একেই ফাঁসানোর চিন্তা ভাবনা করছে হয়তো। তখন এই লোক হয়তো ডিবির মনোভাব বুঝতে পারল। সে কল করে আরেক নাস্তিক ব্লগারকে ডিবি অফিসে নিয়েছে। সে-ও ওই নারী ব্লগারের ব্যাপারে কিছু জানে না। এবার সবাই মিলে হিসাব করে ভাবল—যে পুরুষ ব্লগারের সাথে এই নারী ব্লগার ফারামি এবং থাবাবাবার সাথে দেখা করেছিল সেই ‘ছাগু’টায় হয়তো এই ‘ছাগী’র ঠিকানা জানে। তার সন্ধানে তার হলে (সে কোথায় কোন হলে থাকে সেটা মুরাদ টাকলার এডমিনের কাছ থেকেই জেনেছিল) অভিযান চালানো হলো। তাকে ভার্সিটি হল থেকে ডেকে এনে ডিবির গাড়িতে করে যখন ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল—ঠিক তখন এই ‘তিন নাস্তিক ব্লগার গ্রেফতারের’ খবর ফাঁস হয়ে যায়। অনলাইনে এই নিয়ে বিশাল হাউকাউ শুরু, কিন্তু নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না কারো কাছে। সবাই নিশ্চিত হয় যখন পরে ছবিসহ গ্রেফতারের খবর ছাপা হয়।
এখানে উল্লেখ্য, এই লোকের কথিত ওই ‘ছাগু’ ব্লগার ওই ‘ছাগী’ নারী ব্লগারের ঠিকানা জানলেও ডিবির কাছে প্রকাশ করে নি। ততক্ষণে ওই নারী ব্লগার গা ঢাকা দিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছে। পরে ডিবি তার ঠিকানা হয়তো পেয়েছিল, কিন্তু তাকে আর পায় নি। মজার ব্যাপার, এই নারী ব্লগাররের ব্যাকগ্রাউণ্ডও লীগ–লীগ সরকারের উচ্চপর্যায়ে শুধু যোগাযোগই না, আত্মীয়তার সম্পর্ক। কিন্তু এই লোক তাকেও ‘ছাগী’ বানিয়ে দিয়েছিল! (এই লোক ‘ছাগী’ ট্যাগ দিয়েছিল আরো এক প্রবাসী নারী ব্লগারকে যে এককালে হিজাব পরে একটা প্রতিযোগিতামূলক ভিডিও বানিয়েছিল। এছাড়া এক প্রবাসী ব্লগার দম্পত্তিকেও ছাগু-ছাগী বলে খিক-খিক করতেও ছাড়ে নি। লীগ-লীগারদের বিরুদ্ধে যে-ই এক লাইন লিখেছে—সে-ই তার কাছে ছাগু নয়তো ছাগী।)
এখানে আরেকটা ছোট ভিন্ন প্রসঙ্গ যোগ করি এই ট্যাগ দেয়া নিয়ে–কানাডা প্রবাসী এক দেশি-ব্যবসায়ী ফেসবুকার–অনেকটা সহজ সরল টাইপের–একবার নারীবাদ ইস্যুতে মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি তার স্ত্রীকে অনেক ‘স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। যেখানে সবার সমান অধিকার, সেখানে একজন আরেকজনকে অধিকার দিচ্ছে, যারা বোঝেন বিষয়টা তাদের কাছে এই ধরনের কথা বিরক্তিকর মনে হবে। মনে করতাম এই লোকটা নারীবাদ বিষয়টা বোঝে। তাকে ওই কমেন্টের স্নাপশট নিয়ে দেখালাম–দেখেন কে কারে অধিকার দেয়!
এই লোক তখন ওই ফেসবুকারকেও একটা বিরূপ ট্যাগ দিয়েছিল।
১২) তিন ব্লগার গ্রেফতার এবং তাদেরকে ওরকম জঙ্গিদের মত করে সাজিয়ে পাবলিশ করা ছবিটা উলটা দেশে নাস্তিকতার পক্ষে সহানুভূতির সৃষ্টি করে। এছাড়া সরকার উলটা চাপে পড়ে যায়। সবাই লিখল এরা সবাই ‘ভালো নাস্তিক’। তখন সরকার আরেক উগ্র নাস্তিককে গ্রেফতার করে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা চালায়।
এই নাস্তিকদের বের হয়ে আসার পথ খোলা রেখেই তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো সাজানো হয়েছিল—এটা এই লোকেরই কথা। তারপর তাদের জন্য আলাদা স্পেশাল সেলের ব্যবস্থা, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতা-নেত্রীদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ—যখন যা লাগে সব ব্যবস্থা করা—সরকার কোনো ত্রুটি রাখে নাই—এটাও তার কথা। এখন সব ঘটনারই একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। নাস্তিকদের এমন পরিচয় পেয়ে, আর ওরকম ছবি দেখে অনেক মুসলমান মনে করল এই সুযোগে নাস্তিকদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিলে সরকার কিছু বলবে না। ফলাফল– ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ভাবে এই নাস্তিকরা কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হলো। সরকারও দুই দিক রক্ষা করতে চুপ থাকল। এই চুপ থাকার ধারাবাহিকতায় একের পর এক আরো নাস্তিক-ভিন্নমতাবলম্বীরা খুন হতে শুরু হলো। এসব নিয়ে সরকার-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা সন্দেহজনক। এই প্রসঙ্গে ডিজিএফআই নিয়ে করা সুব্রত শুভর ব্লগপোস্টটার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যারা দেশে ইসলামের শাসন চায় কিন্তু জঙ্গিবাদের মাধ্যমে নয়। এছাড়া উচ্চপর্যায়ের অনেক লীগারের বাচ্চা আছে যারা দেশে শরিয়া আইন চায়, কিন্তু জামাত-শিবিরের হাতে ক্ষমতা যাক, সেটা চায় না। এ নিয়ে ‘কুঞ্জ আপ্পি’কে নিয়ে চুতরাপাতার পোস্টটাও আরেকবার স্মরণ করা যেতে পারে।
১৩) এই লোকটা যেভাবে সরকারের এইসব উচ্চপর্যায়ের তার দহরম-মহরমের কথা বলে তাতে তাকে ভদ্র ভাষায় ‘সোর্স’ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। কবে কখন কার সাথে কী কথা হয়েছে, কী কী ইনফো পেয়েছে, সেসব আমাকেও দিত মাঝে মাঝে। সেগুলা নিয়ে আমি আবার পোস্ট দিতে শুরু করলে একসময় বিরক্ত হয়ে আমাকে ইনফো দেয়া বাদ দেয়–আমি নাকি সব ফাঁস করে দেই।
১৪) এত ‘বড়’ নাস্তিক, কিন্তু লীগপন্থী ছিপির গালি খায় নাই—এইটা রহস্যজনক না? মাঝে মাঝে লীগের বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়—সেগুলা যায় পুলিশের আইজিপি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর দিয়া। কিন্তু এরা যে হাসিনার কথাতেই বা লীগ সরকারের সিদ্ধান্তেই নিজেদের কাজ করে—সেটা এই লোক বুঝেও না বোঝার ভান করে। ওদিকে লীগ সরকার বা হাসিনাকে সরাসরি কিছু না বলে ছিপির সাথে ব্যালান্স করে। আইজিপি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপর রাগের অন্য কারণ থাকতে পারে—জামিনে বের হয়ে আসার পরে হয়তো তারা তাকে ঠিক মতো প্রোটেকশন দেয় নাই, পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে কল্লা সামলিয়ে, বা হয়তো ততদিনে টের পেয়ে গেছে যে সরকার অভিজিত রায়ের মতো ব্লগারকেই যখন ‘বলির পাঠা’ বানালো তখন সুযোগ পেলে তাকেও বানাতে পারে। এই নিয়ে তার সাথে কয়েকবার কথাও হয়েছিল—পালাতে বা দেশ ছাড়তে বলতাম বার বার। কিন্তু আর সবার মত এরও তখন সেই একই বাণী–মরলে দেশেই মরব, তবু পালাবো না।
১৫) তার পোস্টে কমেন্ট করলে গালিবাজ লীগাররা এসে গালাগালি করত। কিন্তু ওই গালিবাজদের কখনো কিছু বলে নাই, উলটা আমাকে ইনবক্সে ইগনোর করতে বলে সব দিক ব্যালান্স করতে চাইত। সর্বশেষ তার এক কিটিবাদী ট্যাগ দেয়া পোস্টে এক লীগার আস্তিক নারীবাদী-উইমেন-চ্যাপ্টার নিয়ে কুৎসিত গালাগালি করলে সেটার স্নাপশট নিয়ে একটা পোস্ট দিলাম যে এই লোক এইগুলারে প্রশ্রয় দেয়। তারপর দেখলাম গ্রুপ/পেজ থেকে পাল্লার এডমিনশিপ সরিয়ে দিয়েছে—এমন নোটিফিকেশন আসছে। এমন কিছু পেজ/গ্রুপ আমার নিজেরই বানানো, আইডিয়া শেয়ার করে।
১৬) এছাড়া সে নিজেও অনেক কোলাজ-কার্টুন-পোস্টের আইডিয়া দিত। নিজে পোস্ট দিত না, কারণ সেগুলা তার ইমেজের সাথে যায় না। ব্যাঙগানিক গ্রুপের আইডিয়াটা এক পোস্টে বললে, এই লোক ধাক্কাটা না দিলে হয়তো গ্রুপটা খোলা হত না। এমন কাহিনী আরো অনেকের সাথেই হয়েছে। অনেকেই অনেক আইডিয়া দিছেন, সেজন্য কৃতজ্ঞতা। আবার অনেকে ক্যাচাল সামলাতে না পেরে ইনবক্স করছেন তাদের হয়ে ‘ফাইট’ দেয়ার জন্য। কিছুদিন পরে আবার এরাই আনফ্রেণ্ড/ব্লক করছে—এমন কাহিনীও আছে। সুযোগ-সন্ধানী, বা স্বার্থ ফুরালে কেটে পড়া, বা নিজের প্রয়োজনে ‘ইউজ’ করা…এগুলা ভার্চুয়ালে অস্বাভাবিক কিছু না!
১৭) নারীদের নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি এখানে স্পষ্ট। নারীবাদ নিয়ে লেখালেখির জন্য নারীদের ট্যাগিং করতে করতে কোথায় নামছে দেখা যাক–
১৮) আর তাকে নিয়ে করা একটা কোলাজের প্রতিক্রিয়া এখানে—
(মামলা আর পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দেয়ার হুমকি আস্তিকরা দিলে প্রতিবাদের বন্যায় দেশ ভেসে যায়। কিন্তু একই কাজ নাস্তিকরা করলে দেশে অলরেডি বন্যা চলছে তাই এসব ‘ছোটখাটো’ বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নাস্তিকদের নাই।)
১৯) হুমকির ব্যাপারে আরেকটা পুরানো কথা মনে পড়ল। ফারামি তখন একের পর এক কোতলের হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। যখন-তখন এর-ওর কল্লার দাম হাকাচ্ছে। পাল্লাকে এরকম হুমকি দিয়েছিল। এই লোক তখন পরামর্শ দিল পালটা হুমকি দিতে। হেসে দিয়েছিলাম প্রথমে। তাছাড়া বিষয়টা এথিক্সের সাথে যায় না। তারপরেও বার বার বলতেছিল। আর বলছিল হুমকিতে আসলেই কাজ হয়। কী কাজ হয় তা অবশ্য জানা হয় নাই। তবে পরে–যা কোনোদিন করি নি, সেটাই করে ফেললাম–ফান করে একটা ফারামিরে একটা পালটা হুমকি দিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম। কাজের কাজ কী হয়েছিল জানি না। তবে তর্কের সময় অনেক মমিন সেই হুমকির স্নাপশট পোস্ট করে বলত যে নাস্তিকরা যদি মানবতার কথা বলে তাহলে এই হুমকিটা কেন দিয়েছিলাম। আমার কাছে ভালো কোনো পাল্টাত্তর নেই। এটা একটা টেকনিক্যাল ফল্ট ছিল।
২০) নাস্তিকদের ইনফো কারা লিক করে, কারো কথা বা অবস্থান পছন না হলে কারা জোট বেঁধে গায়ে হাত, কারা পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে দিতে চায়–আশা করি অনেকটাই ক্লিয়ার।
একটু রাগিয়ে দিতে পারলেই মুখোশ শুধু আস্তিকদের নয়, নাস্তিক-নাম-ধারীদেরও খসে খসে পড়ে—
(আরো কিছু মনে পড়লে সেগুলা পরে এখানে আপডেট করে দেয়া হবে।)
আপডেট #১ – আগস্ট ৩০, ২০১৭
ইনবক্সের কাহিনী বাইরে প্রকাশ করা আনএথিক্যাল, কিন্তু যখন সেসবের সাথে জীবনের নিরাপত্তা জড়িত থাকে তখন প্রকাশ করা দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যদিও এই লোকের ধারণা, ডিজিএফআই সহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তার ফোনে আড়ি পাতে, তবুও বেশিরভাগ কথাই সে ফোনে বলতে পছন্দ করে। ইনবক্সে খুব বেশিদূর আগায় না প্রমাণ থেকে যাবে–এই ভয়ে। আবার ইনবক্সে আলাপের পরে যাওয়ার আগে বলে দেয় মেসেজ সব ডিলিট দিতে।
মেসেজ কিছুই ডিলিট দেই নাই, তবে সমস্যা হলো আইডিটাই ব্লক হয়ে আছে। যদিও এখন পর্যন্ত এই পোস্টের স্বপক্ষে কেউ কোনো প্রমাণ দাবী করে নাই, তবুও যদি আইডি ফিরে পাই, তবে কিছু স্নাপশট প্রকাশ করা হবে জনস্বার্থে।
এই লোক যে ডিজিএফআই সহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশের দালালি করত (হয়তো এখনো করে), এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নাই। এটা যখন থেকে বুঝতে পারছিলাম, তখন থেকেই বার বার স্ট্যাটাস দিয়েছি–কেউ যেন কারো কাছে ব্যক্তিগত ইনফো না দেন, এমনিক আমাকেও কাছেও না।
প্রশাসন সামনে কী কী একশন নিয়ে যাচ্ছে, সেসবের ইঙ্গিত এই লোক ইনবক্সে দিত। দিত আসলে নিজেকে বিশাল হোমরা-চোমরা প্রমাণ করার জন্য, সে যে বিশাল একটা কিছু, সেটা ইনিয়ে-বিনিয়ে প্রকাশ করে একটা ভাব নেয়া আরকি। তার ইঙ্গিতগুলো বেশিরভাগ সময় সত্য হয়েছে–সে নিজেও বলেছে ওসব লেভেলে তার জানাশোনা আছে–আগেই বলেছি এই কথা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সে আগেই কাচ্চিবিরানীর অর্ডার দিয়ে পোস্ট দিত। তার মানে সে আগেই জানত কোনটার ফাঁসি হবে, কোনটার হবে না। এটা ইনবক্সেও জানাত। আবার সরকার ফান্দে পড়লে সামনে কিছু একটা ঘটবে–সেটাও বলত। দেখা যেত তখনই ভিন্নমতের কেউ খুন হচ্ছে। একটা পর্যায়ে বলেছিল যে আর নাস্তিকরা খুন হবে না। তারপর থেকে আসলেই আর কেউ খুন হয় নাই, বা কারো প্রতি বিন্দুমাত্র আক্রমন হয় নাই।
সে নিজেই কীভাবে ফেঁসে গিয়েছিল, সেসব উপরে বলেছি। এগুলা গ্রেফতার হওয়ার পর অন্য ব্লগাররাও কমবেশি প্রকাশ করেছিল। স্নাপশট রাখি নাই, তবে অনেকেরই মনে থাকার কথা। থাবাবাবার সাথে তার ঘনিষ্টতা ছিল, কিন্তু ঘটনা যে থাবাবাবার সাথেও ঘটতে পারে, এটা সে আঁচ করতে পারে নাই। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলে তার হিসাবনিকাশে গণ্ডগোল দেখা দেয়। লীগার নাস্তিকদের কেউ কেউ থাবাবাবার ইনফো লিক করতে পারে, বা তার মত আরো অনেক নাস্তিক আছে যারা গোয়েন্দা সংস্থার ইনফরমার, তারাই হয়তো ইনফো লিক করেছে–এমন সন্দেহের কথা সে নিজেই জানিয়েছিল, এবং বেঁচে থাকলে তাদেরকে ছেড়ে দেবে না বলেও জানিয়েছিল। পরবর্তীতে সে বগা নিজেই গোয়েন্দাদের ফান্দে আটকা পড়ে, এবং সেই সাথে আরো দুই ব্লগারকেও ফান্দে ফেলে দেয়।
এই পোস্ট দেয়ার পরে কারো কোনো প্রতিক্রিয়া নাই, সবাই চুপ। মূলত ভয়ে চুপ। তার কাছের লোকেরাও তাকে ভয় পায়, সে কী পরিমান ভয়ংকর হতে পারে, বা সে ক্ষমতা রাখে, সেটা তারা জানে। পাল্লার পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়ার পরেও আর সবাই ভয়ে চুপ। তার এরকম হুমকি দেয়ার ক্ষমতা বা সাহসের উৎস কী?–যেহেতু পুলিশের দালাল, সেহেতু ওইসব লেভেলে কিছুটা হলেও তার জানাশোনা আছে–এটা ধরে নেয়াই যায়। সবাই চুপ থাকেন সমস্যা নাই, কিন্তু এর সাথে সাবধান। পাল্লারে যেভাবে ইউজ করছে, আপনাদেরও সেভাবেই করছে। যখন স্বার্থ ফুরাবে, তার আপনি তার কোনো স্বার্থে আঘাত দেবেন, তখন সুযোগ পেলে যে আপনার পায়ের তলার মাটি সরিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না–সেটার প্রমাণ আশা করি পেয়েছে।
কেউ প্রতিক্রিয়া দেখালো না–একজন শুধু ইনবক্সে এসে তাকে ‘ডটারফাকার’ বলে গালি দিল।
জিজ্ঞেস করলাম, কী কাহিনী?
নিরাপদ না মনে করে পুরো কাহিনী খুলে বললেন না।
বললাম, যদি নিজেকে নিরাপদ মনে করেন, তাহলে নিজেই পোস্ট দেন। কিন্তু সাহসে কুলাচ্ছে না।
আমার ধারণা, এরকম আরো অনেক কাহিনী অনেকের সাথেই হয়েছে। যদিও সে গর্ব করে বলে যে তার লুচ্চামির কোনো রেকর্ড নাই। না থাকারই কথা। কারণ এগুলা ইনবক্সে বেশি হয় না, হয় ফোনে ফোনে বা অ্যাপসে।
তবে আশা করি, একদিন এক এক করে অনেকেই মুখ খুলবেন।
Leave a Reply