• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

পাল্লাহু । pAllahu

দাঁড়িপাল্লা ধমাধম-এর বাংলা ব্লগ

  • পাল্লাব্লগ
  • চুতরাপাতা
  • মহাউন্মাদ
  • ধর্মকারী
  • রেফারেন্স
  • ট্যাগস

ঈশ্বরের ইতিহাস – ৪ (সৃষ্টিতত্ত্ব)

You are here: Home / ধর্মকারী / ঈশ্বরের ইতিহাস – ৪ (সৃষ্টিতত্ত্ব)
July 31, 2016
লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩

ইসলামী মিথ অনুযায়ী, আদম আর হাওয়া হচ্ছেন আদি পিতা-মাতা। আদমের বংশধরদের বলে আদমী। হিন্দু মিথ অনুযায়ী, আদি পিতা মনু আর আদি মাতা হচ্ছেন শতরুপা। মনুর সন্তানকে বলে মানুষ। এই কন্সেপ্টের কারণে আমার এলাকায় এক মুরুব্বি মানুষকে মানুষ বলতেন না, সব সময় বলতেন আদমী। কাউকে মানুষ বলে ডাকলেই তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, ও হচ্ছে মনুর বংশধর। তাঁর কাছে এটা খুবই গুরুতর পাপ বলে মনে হতো।
আমরা তাহলে কার বংশধর? আদম নাকি মনুর? নাকি পৃথিবীতে প্রাণ এসেছে অন্য উপায়ে? ধর্মগুলো কি বলে এ ব্যাপারে? কবে পৃথিবী সৃষ্টি হল?
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে ‘দি স্টোরি অফ গড’ নামে একটা প্রোগ্রাম হয়েছিল, যেটার ৪ নাম্বার এপিসোডের বিষয় ছিল সৃষ্টিতত্ত্ব। এপিসোডটার রিভিউ লেখার চেষ্টা করছি।
প্রোগ্রামের হোস্ট মরগ্যান ফ্রিম্যান কথা বলেছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সাথে। তবে মেইনস্ট্রিম ধর্মগুলো থেকে তিনি খুব সামান্য সাহায্যই পেয়েছেন। ভারতীয় হিন্দুধর্ম বিশারদ benda paranjape, মিশরের ইসলামি গবেষক আহমেদ রাগাব কিংবা রোমের father guiseppe tanzella-এর সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে সবাই বলেছে, বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মীয়ভাবে সৃষ্টিতত্ত্ব ব্যাখ্যা করা যাবে না। ঈশ্বর বিগ ব্যাং হওয়ারও আগেই ছিলেন, হয়তো তিনিই বিগ ব্যাং ঘটিয়েছেন। ধর্মীয় কেতাবে যা লেখা আছে, যেভাবে সৃষ্টি হওয়ার কথা লেখা আছে, সেটা বিজ্ঞান প্রমাণ করতে পারে না, আবার ভুল প্রমাণ করতেও পারে না।তাই এই আলোচনাগুলো পৃথক রাখা উচিত। ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, ভাল কথা, তাহলে ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছেন কে? এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই বলেছেন, আমরা অনেক ক্ষুদ্র প্রাণী, এই প্রশ্নের উত্তর আমরা খুঁজতে পারব না। এটা আমাদের জ্ঞানবুদ্ধির বাইরে, আমাদের স্রেফ বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
ইহুদি, খ্রিষ্টান এবং মুসলমান – প্রধান এই ৩ টি ধর্মেই একটা কমন মিথ পাওয়া যায়: “ঈশ্বর ৬ দিনে পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলী তৈরি করেছিলেন।” বাইবেলের বুক অফ জেনেসিস-এ সৃষ্টি সম্পর্কে একটা দীর্ঘ বর্ণনা রয়েছে। দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও আমি এখানে সেটা উদ্ধৃত করছি:

১. শুরুতে, ঈশ্বর আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন। প্রথমে পৃথিবী সম্পূর্ণ শূন্য ছিল; পৃথিবীতে কিছুই ছিল না। ২. অন্ধকারে আবৃত ছিল জলরাশি আর ঈশ্বরের আত্মা সেই জলরাশির উপর দিয়ে ভেসে বেড়াচ্ছিল। ৩. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো ফুটুক!” তখনই আলো ফুটতে শুরু করল। ৪. আলো দেখে ঈশ্বর বুঝলেন, আলো ভাল। তখন ঈশ্বর অন্ধকার থেকে আলোকে পৃথক করলেন। ৫. ঈশ্বর আলোর নাম দিলেন, “দিন” এবং অন্ধকারের নাম দিলেন “রাত্রি।” সন্ধ্যা হল এবং সেখানে সকাল হল। এই হল প্রথম দিন। ৬. তারপর ঈশ্বর বললেন, “জলকে দুভাগ করবার জন্য আকাশমণ্ডলের ব্যবস্থা হোক।” ৭. তাই ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের সৃষ্টি করে জলকে পৃথক করলেন। এক ভাগ জল আকাশমণ্ডলের উপরে আর অন্য ভাগ জল আকাশমণ্ডলের নীচে থাকল। ৮. ঈশ্বর আকাশমণ্ডলের নাম দিলেন “আকাশ।” সন্ধ্যা হল আর তারপর সকাল হল। এটা হল দ্বিতীয় দিন। ৯. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশের নীচের জল এক জায়গায় জমা হোক যাতে শুকনো ডাঙা দেখা যায়।” এবং তা-ই হল। ১০. ঈশ্বর শুকনো জমির নাম দিলেন, “পৃথিবী” এবং এক জায়গায় জমা জলের নাম দিলেন, “মহাসাগর।” ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১১. তখন ঈশ্বর বললেন, “পৃথিবীতে ঘাস হোক, শস্যদায়ী গাছ ও ফলের গাছপালা হোক। ফলের গাছগুলিতে ফল আর ফলের ভেতরে বীজ হোক। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করুক। এইসব গাছপালা পৃথিবীতে বেড়ে উঠুক।” আর তাই-ই হল। ১২. পৃথিবীতে ঘাস আর শস্যদায়ী উদ্ভিদ উত্পন্ন হল। আবার ফলদাযী গাছপালাও হল, ফলের ভেতরে বীজ হল। প্রত্যেক উদ্ভিদ আপন আপন জাতের বীজ সৃষ্টি করল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১৩. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে হল তৃতীয় দিন। ১৪. তারপর ঈশ্বর বললেন, “আকাশে আলো ফুটুক। এই আলো দিন থেকে রাত্রিকে পৃথক করবে। এই আলোগুলি বিশেষ সভাশুরু করার বিশেষ বিশেষ সংকেত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর দিন ও বছর বোঝাবার জন্য এই আলোগুলি ব্যবহৃত হবে। ১৫. পৃথিবীতে আলো দেওয়ার জন্য এই আলোগুলি আকাশে থাকবে।” এবং তা-ই হল। ১৬. তখন ঈশ্বর দুটি মহাজ্যোতি বানালেন। ঈশ্বর বড়টি বানালেন দিনের বেলা রাজত্ব করার জন্য আর ছোটটি বানালেন রাত্রিবেলা রাজত্ব করার জন্য। ঈশ্বর তারকারাজিও সৃষ্টি করলেন। ১৭. পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে স্থাপন করলেন। ১৮. দিন ও রাত্রিকে কর্তৃত্ত্ব দেবার জন্য ঈশ্বর এই আলোগুলিকে আকাশে সাজালেন। এই আলোগুলি আলো আর অন্ধকারকে পৃথক করে দিল এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটা ভাল হয়েছে। ১৯. সন্ধ্যা হল এবং সকাল হল। এভাবে চতুর্থ দিন হল। ২০. তারপর ঈশ্বর বললেন, “বহু প্রকার জীবন্ত প্রাণীতে জল পূর্ণ হোক আর পৃথিবীর ওপরে আকাশে ওড়বার জন্য বহু পাখী হোক।” ২১. সুতরাং ঈশ্বর বড় বড় জলজন্তু এবং জলে বিচরণ করবে এমন সমস্ত প্রাণী সৃষ্টি করলেন। অনেক প্রকার সামুদ্রিক জীব রয়েছে এবং সে সবই ঈশ্বরের সৃষ্টি। যত রকম পাখী আকাশে ওড়ে সেইসবও ঈশ্বর বানালেন। এবং ঈশ্বর দেখলেন ব্যবস্থাটি ভাল হয়েছে। ২২. ঈশ্বর এই সমস্ত প্রাণীদের আশীর্বাদ করলেন। ঈশ্বর সামুদ্রিক প্রাণীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করে সমুদ্র ভরিয়ে তুলতে বললেন। ঈশ্বর পৃথিবীতে পাখীদের সংখ্যাবৃদ্ধি করতে বললেন। ২৩. সন্ধ্যা হয়ে গেল এবং তারপর সকাল হল। এভাবে পঞ্চম দিন কেটে গেল। ২৪. তারপর ঈশ্বর বললেন, “নানারকম প্রাণী পৃথিবীতে উত্পন্ন হোক। নানারকম বড় আকারের জন্তু জানোয়ার আর বুকে হেঁটে চলার নানারকম ছোট প্রাণী হোক এবং প্রচুর সংখ্যায় তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি হোক।” তখন য়েমন তিনি বললেন সব কিছু সম্পন্ন হল। ২৫. সুতরাং ঈশ্বর সব রকম জন্তু জানোয়ার তেমনভাবে তৈরী করলেন। বন্য জন্তু, পোষ্য জন্তু আর বুকে হাঁটার সবরকমের ছোট ছোট প্রাণী ঈশ্বর বানালেন এবং ঈশ্বর দেখলেন প্রতিটি জিনিসই বেশ ভালো হয়েছে। ২৬. তখন ঈশ্বর বললেন, “এখন এস, আমরা মানুষ সৃষ্টি করি। আমাদের আদলে আমরা মানুষ সৃষ্টি করব। মানুষ হবে ঠিক আমাদের মত| তারা সমুদ্রের সমস্ত মাছের ওপরে আর আকাশের সমস্ত পাখীর ওপরে কর্তৃত্ত্ব করবে। তারা পৃথিবীর সমস্ত বড় জানোয়ার আর বুকে হাঁটা সমস্ত ছোট প্রাণীর উপরে কর্তৃত্ত্ব করবে।” ২৭. তাই ঈশ্বর নিজের মতোই মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষ হল তাঁর ছাঁচে গড়া জীব। ঈশ্বর তাদের পুরুষ ও স্ত্রীরূপে সৃষ্টি করলেন। ২৮. ঈশ্বর তাদের আশীর্বাদ করে বললেন, “তোমাদের বহু সন্তানসন্ততি হোক। মানুষে মানুষে পৃথিবী পরিপূর্ণ করো এবং তোমরা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার নাও, সমুদ্রে মাছেদের এবং বাতাসে পাখিদের শাসন করো। মাটির ওপর যা কিছু নড়েচড়ে, যাবতীয় প্রাণীকে তোমরা শাসন করো।” ২৯. ঈশ্বর বললেন, “আমি তোমাদের শস্যদায়ী সমস্ত গাছ ও সমস্ত ফলদাযী গাছপালা দিচ্ছি। ঐসব গাছ বীজযুক্ত ফল উত্‌পাদন করে। এই সমস্ত শস্য ও ফল হবে তোমাদের খাদ্য। ৩০. এবং জানোয়ারদের সমস্ত সবুজ গাছপালা দিচ্ছি। তাদের খাদ্য হবে সবুজ গাছপালা| পৃথিবীর সমস্ত জন্তু জানোয়ার, আকাশের সমস্ত পাখি এবং মাটির উপরে বুকে হাঁটে য়েসব কীট সবাই ঐ খাদ্য খাবে।” এবং এই সব কিছুই সম্পন্ন হল। ৩১. ঈশ্বর যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সেসব কিছু দেখলেন এবং ঈশ্বর দেখলেন সমস্ত সৃষ্টিই খুব ভাল হয়েছে। সন্ধ্যা হল, তারপর সকাল হল। এভাবে ষষ্ঠ দিন হল।

বাইবেলের ওপরের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই, সব বর্ণনা পৃথিবীকেন্দ্রিক। সূর্য তৈরি হয়েছে অনেক পরে, ১৬ নাম্বার আয়াতে। সূর্য আসার আগেই আলো এসেছিল, বাইবেলের বর্ণনায় আলোর উৎস সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
বৈজ্ঞানিকভাবে, সৃষ্টির প্রথমে সব পদার্থ এবং শক্তি এক জায়গায় ঘনীভূত অবস্থায় ছিল। এই পরমাণুটির নাম সুপার অ্যাটম। এই সুপার অ্যাটমটি বিস্ফোরিত হয়, একে বলে বিগ ব্যাং। তখন স্পেস এবং টাইম সৃষ্টি হয়। এটা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগের কথা (১৩৮০ কোটি বছর) সৃষ্টির কেন্দ্র থেকে সব পদার্থ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কেন্দ্র থেকে দূরে চলে যাওয়ার এই প্রবণতা এখনো রয়েছে।আমাদের সূর্য সৃষ্টি হয়েছিল ৪৬০ কোটি বছর আগে। সূর্যের গায়ে একটা ধূমকেতে আঘাত করার ফলে সূর্যের কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে লাগল। দীর্ঘদিন ঘুরতে ঘুরতে ওটা গোল আকার ধারণ করল, ওটাই পৃথিবী। সেটা ৪৫০ কোটি বছর আগের কথা।অন্যান্য গ্রহগুলোও এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল। পৃথিবীকে একটা ধূমকেতে আঘাত করায় এইভাবে পৃথিবীর কিছু অংশ নিয়ে চাঁদ সৃষ্টি হল।
পৃথিবী ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হল। পানি এলো ৪১০ কোটি বছর আগে।  ৩৯০ কোটি বছর আগে পানির ভেতরে সরল এককোষী প্রাণ সৃষ্টি হল (কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রজেন ইত্যাদি মৌলিক কণাগুলা একত্রে থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ স্ফুলিংগ চালান হলে অ্যামাইনো অ্যাসিড/সরল প্রাণ/ব্যাকটেরয়া তৈরি করা যায়। বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরিতে এটা তৈরি করেতে পেরেছেন। ৩৯০ কোটি বছর আগে, সম্ভবত, বাতাসের বিদ্যুৎ চমকের মাধ্যমে কার্বন, নাইট্রজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন পরমাণুগুলো একত্রে মিলিত হয়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে প্রথম প্রাণ তৈরি হয়েছিল) এককোষী সরল প্রাণ থেকে পরে বিবর্তনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জটিল প্রাণ তৈরি হয়েছিল। এই কাজে সময় লেগেছিল কোটি কোটি বছর। প্রথম প্রাণটি ছিল উদ্ভিদ আর প্রাণীর মাঝামাঝি কোষ। পরে পৃথকভাবে উদ্ভিদ তৈরি হল, প্রাণী তৈরি হল। প্রথমে এলো অ্যামিবা জাতীয় সরল এককোষী প্রাণী ।তারপরে এলো পরিফেরা, নিডারিয়া পর্বের বহুকোষী সরল প্রাণী। তারপরে ধীরে ধীরে এলো জটিলতর প্রাণী। উদ্ভিদের ভেতরে অনেক রকমের ফাইটোপ্লাংকটন, শ্যাওলা, শৈবাল তৈরি হল। তখন সব প্রাণই ছিল পানিতে। কিছু শৈবাল ঢেউয়ের কারণে চলে গেল পানির কিনারায়, ডাঙায়। সেখানে মাটিতে অধিকাংশ শৈবাল শুকিয়ে গেল, কিছু কিছু শৈবাল মাটি থেকে পানি ও খাবার শুষে নিয়ে বেঁচে থাকল। এভাবে ডাঙায় উদ্ভিদ এল। অনেক জাতের উদ্ভিদ হল। মাছেরা আগে শ্যাওলা খেয়ে বেঁচে থাকত।ডাঙায় গাছপালা দেখে তারা ডাঙায় খাওয়ার জন্য চলে এল কেউ কেউ। তৈরি হল উভচর (কুমির জাতীয় প্রাণী) ছোট ছোট পোকামাকড়ের উদ্ভব হল। পোকা-খাওয়া উভচর তৈরি হল। পোকারা গাছের উঁচু ডালে চলে গেল। তাদের খাওয়ার জন্য উভচরেরা লাফ দিয়ে দিয়ে গাছের মগডালে ওঠা শিখল। কোটি কোটি বছর ধরে এভাবে লাফ-ঝাপ দিতে দিতে তাদের ডানা জাতীয় অঙ্গ গজাল। তৈরি হল পাখি। ৩ কোটি বছর আগে এলো স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স) এসেছে প্রায় ২০ লাখ বছর আগে।
অনেকে প্রশ্ন করে: বৈজ্ঞানিক সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী বিগ ব্যাং-এর আগে কী ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর হছে, বিগ ব্যাং থেকেই সময় সৃষ্টি হয়েছিল।এর আগে যাওয়া সম্ভব নয়। যেমনভাবে উত্তর মেরুর উত্তরে কিছু নেই, ঠিক তেমনিভাবে বিগ ব্যাং-এর আগেও কিছু থাকা সম্ভব নয়।
বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে ঈশ্বর মাটি দিয়ে আদম এবং হাওয়াকে তৈরি করে ইডেন গার্ডেনে (বেহেশত) রাখলেন। (তখনকার রসায়নবিদেরা জানতেন, মৌলিক পদার্থ ৪ টি – মাটি, পানি, আগুন আর বাতাস। তাঁরা সব কিছুকে এই ৪ টি মৌলিক পদার্থের তৈরি বলেই মনে করতেন। এভাবেই সবকিছু ব্যাখ্যা করতেন – যেমন, মানুষ মাটির তৈরি, জ্বিন আগুনের তৈরি। আরব রসায়নবিদেরা নূর, মানে আলোকেও মৌলিক পদার্থ মনে করতেন। তাঁরা ব্যাখ্যা দিতেন, ফেরেশতারা নূর দিয়ে তৈরি) ইডেন গার্ডেনে ঈশ্বর আদেশ দিয়েছিলেন: খবরদার, গন্ধম ফল খেতে যাবে না তোমরা! কিন্তু ওরা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে গন্ধম ফল খেয়েছিল। ফলে তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে তাদেরকে ইডেন গার্ডেন থেকে বের করে দিলেন। বাইরে বের হবার পরে তাদের বাচ্চাকাচ্চা হল। তারা সব সময় ইডেনে ফেরত যেতে চাইত, কিন্তু যেতে পারেনি। বাচ্চাকাচ্চাদের গল্প বলত ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম!’ বাচ্চাদের মাথাতেও সেই ইডেন গার্ডেনে ফেরত যাওয়ার স্বপ্ন ঢুকে গেল।
ইডেন গার্ডেনে আদম আর হাওয়াকে খাওয়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হত না। কারণ ইডেন গার্ডেনে অগনিত ফলফলাদি গাছে ঝুলে রয়েছে। পৃথিবীতে খাওয়া আহরণ এত সগজ নয়। আল্লাহ আদম আর ইভকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময়েই বলেছিলেন, “যাও, কৃষিকাজ করে খাও।” এখানের মাটিতে লাঙল দিয়ে জমি চাষ করে বীজ বুনলে তারপরে খাওয়ার উপযোগী খাদ্য পাওয়া যায়, তৈরি খাবার পাওয়া সহজ নয়।
তাহলে কি ধর্মের সাথে কৃষিকাজের কোনো সম্পর্ক রয়েছে? একটা সময় মানুষ যাযাবর জীবনযাপন করত। আজ এখানে, কাল ওখানে -এভাবে ঘুরে বেড়াত নিজের নিজের মত করে। জমি চাষ করা শুরু হলে মানুষ কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করল, কারণ ফসল না পাকা পর্যন্ত তাকে ওই জায়গায় অপেক্ষা করতেই হবে। অনেকে এক জায়গায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে করতে দলবদ্ধ হয়ে গ্রাম গঠন করে ফেলল। ধর্মের উৎপত্তিও কি তখন থেকেই?
মরগ্যান ফ্রিম্যান গিয়েছিলেন তুরস্কে চ্যাতেলহুইওক নামের এক আর্কিওলজিকাল সাইটে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মাটি খুঁড়ে এই শহরটা খুঁজে বের করেছেন। এটা প্রায় ৯ হাজার বছরের পুরনো। পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া এটাই প্রাচীনতম শহর। মেসোপটেমিয়া সভ্যতার অংশ ছিল এই শহর। এই শহরের মানুষের ধর্মবিশ্বাস খোঁজার চেষ্টা করলেন মরগ্যান ফ্রিম্যান। লক্ষণ দেখে মনে হল, এই শহরের মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ছিল না। তারা পূর্বপুরুষদের পূজা করত। তাদের বাসার যে জায়গায় তারা ঘুমাতো, সেই মাথা রাখার জায়গার নিচেই থাকত কবরখানা। গর্ত করে সেই গর্তে মানুষদের হাড়গোড় ফেলে দিয়ে গর্তটা বন্ধ করে দিত তারা। নতুন কেউ মারা গেলে আবার সেই গর্তটা খুলে নতুন মানুষের লাশ/হাড়গোড় ওটার ভেতরে ফেলে আবার গর্তটা আটকে দিত। এভাবেই তারা পূর্বপুরুষদের আত্মার সাথে একই বাড়িতে বসবাস করতো।
ব্যবহারের দিক থেকে তাদের বাড়িটাই ছিল আসলে মন্দির। শহরে আলাদা আর কোনো মন্দির ছিল না। তবে চ্যাতেলহুইক থেকে বেশ কিছুটা দূরে গোবেকিলি টেপি নামে আরেকটা আরকিওলোজিকাল সাইটে একটা মন্দিরের নিদর্শন পাওয়া গেছে। মরগ্যান ফ্রিম্যান সেখানেও গেলেন। দেখলেন ইংরেজি T অক্ষরের মত অনেকগুলা পিলার রয়েছে সেখানে। ধারণা করা হয়, আগে মানুষ মূর্তি বানাতে অতটা দক্ষ ছিল না। এই T-গুলোই দেবতাদের মূর্তি।
ওই এলাকায় কেন এই ধরনের মন্দির বানানোর দরকার পড়ল?
অনেকগুলো গ্রাম/কমিউনিটি যদি একই জায়গায় থাকে, তখন খাবার কিংবা শিকারের ভাগাভাগি নিয়ে মাঝে মাঝে ঝগড়া কিংবা যুদ্ধ বাধাটাই স্বাভাবিক। তখন বিভিন্ন গোত্র মিলে সিদ্ধান্ত নিল, আমাদের একটা কমন জায়গা থাকা দরকার, যেখানে এসে আমরা যুদ্ধ করব না, আমরা স্রেফ গল্পগুজব করব আর আমাদের অতীত নিয়ে আলোচনা করব (সম্ভবত, সেই সময়ে প্রতিটি গোত্রের একই অতীত ছিল। সব গোত্রই মেসোপটেমিয়ার কেন্দ্র থেকে উদ্ভূত হয়ে দেশের বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল) আর এই কমন কালচার থাকার কারণেই তারা একটা কমন উপাসনার জায়গা বানাল, কমন দেবদেবীদের মূর্তি বানিয়ে একসাথে পূজা শুরু করল।
ধারণা করা হয়, আমরা বর্তমান সময়ে ঈশ্বরের যে কনসেপ্ট পাই, অতীতে এই রকম ছিল না। মানুষের ধর্মবিবর্তন ধাপে ধাপে এই অবস্থায় এসেছে। একেবারে প্রথমে মানুষ প্রাকৃতিক শক্তির পূজা করতো। পরে পূর্বপুরুষ পূজা। পরে বহু ঈশ্বরের পূজা এবং সবশেষে এক ঈশ্বরের পূজা করা শুরু করল। তবে বিশ্বের সব জায়গায় ঈশ্বরের বিবর্তন একই সময়ে একই রকমভাবে হয়নি। এই ২০১৬ সালে এসে আমরা দেখি, বাংলাদেশে এক ঈশ্বর এর উপাসনা হচ্ছে, ভারতে হচ্ছে বহু ঈশ্বরের পূজা আবার আফ্রিকার জঙ্গলে এখনো প্রাকৃতিক শক্তির পূজা চলছে। সেখানকার সমাজে কোনো ধর্মগুরু নেই, বরং সেখানে আছে জাদুকর। তবে বর্তমানের প্রচলিত ধর্মগুলোর ভেতরেও অতীতের বিবর্তনের লক্ষণ রয়েছে।
ইজরাইলে চার্চ অফ হোলি সেপালকার নামে একটা গির্জা আছে। ধারণা করা হয়, এই জায়গাতেই যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল এবং তার কবরও এখানেই। তবে আরকিওলোজিস্ট যোডি ম্যাগনেস এইটা ছাড়াও আরেকটা গল্প শোনালেন। ১৭০০ বছর আগে রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইন এই গীর্জা তৈরি করেছিলেন। গির্জার ভেতরে চ্যাপেল অফ অ্যাডাম নামে একটা অংশ আছে। বিশ্বাস করা হয়, এই চ্যাপেল অফ অ্যাডামে আদমকে কবর দেওয়া হয়েছিল। যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল ঠিক এই চ্যাপেলের ঠিক ওপরের পাথরে। যিশুর শরীর থেকে রক্ত নেমে যখন আদমের শরীর স্পর্শ করে, তখন আদম পুনরুজ্জীবিত হয় (খ্রিষ্টান ধর্মে পূর্বপুরুষ পূজার লক্ষণ)।
মর্গ্যান ফ্রিম্যান যোডি ম্যাগনেসকে জিজ্ঞেস করলেন, বাইবেলে যে বলা আছে, আদম এসেছিলেন ইউফ্রেটিস আর টাইগ্রিস নদীর মাঝখানে, তাহলে আদম এখানে এলেন কী করে? যোডি ম্যাগনেস বললেন, এটা এখানে রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, সম্ভবত। হিব্রু ভাষায় আদম মানে মানুষ। দাম মানে রক্ত, আদমাহ মানে মাটি। একইভাবে, ইডেন গার্ডেন মানে হচ্ছে যেখানে ঈশ্বর থাকেন। জেরুজালেমে যেহেতু ঈশ্বরের মন্দির আছে, সেহেতু এখানে অ্যাডাম আসতেই পারে।
আদম আর ইভ এর গল্পেরও কি এইরকম রূপক অর্থ আছে? আদম আর ইভ একটা সুন্দর জায়গায় বাস করতেন, যেখানে খাদ্যের অভাব ছিল না, পরে তারা অন্য জায়গায় চলে গেলেন, যেখানে খাদ্য পাওয়া যেত কম, ফলে মাটি চাষ করতে হত। আদম তার বাচ্চাকাচ্চাদের সেই হারানো খাদ্যে পরিপূর্ন ইডেনের গল্প বলতেন, আর বাচ্চারা সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠল। এভাবেই পরবর্তীকালে মানুষের মুখে মুখে ইডেন গার্ডেনের কিংবদন্তী রচিত হল, ব্যাপারটা কি এরকম?
বাইবেলের বর্ণনা থেকে পরিষ্কার হয় যে, ইডেন গার্ডেন পৃথিবীর কোনো জায়গাতেই, নাকি পৃথিবীর বাইরে কোথাও। পৃথিবীর ভেতরের কোনো এক জায়গার কথাই বলা হয়েছে বলে মনে হয়। ইডেন গার্ডেন আর হেভেন আলাদা জিনিস। মৃত্যুর পরে পুণ্যার্থীরা হেভেনে যাবে, ইডেনে নয়। তবে বর্তমানে প্রচলিত ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী. বেহেশত হচ্ছে পৃথিবীর বাইরের একটা স্থান। এই বেহেশতেই আদম ছিল, এবং মৃত্যুর পরে যারা ভাল কাজ করবে, তারা এই বেহেশতেই যাবে, অন্য কোথাও নয়। আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় বেহেশত থেকে এক ধরনের বিশেষ রকেটে করে আদম এবং হাওয়াকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। ২ জনকে ২ টা আলাদা রকেটে করে পাঠানো হয়। আদমের রকেট ল্যান্ড করে শ্রীলংকায় (যে পাহাড়ের ওপরে তিনি অবতীর্ন হন, তার নাম অ্যাডামস পিক, এটি এখন বৌদ্ধদের একটি পবিত্র ধর্মীয় স্থান। হিন্দুরাও বিশ্বাস করে এই পাহাড়ের সাথে শিব-এর একটা অলৌকিক ঘটনা জড়িত আছে) ইভ-এর রকেট ল্যান্ড করে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো এক জায়গায় (এই ২ টা রকেটের একটা পাওয়া গেছে। মক্কার কাবা ঘরে রক্ষিত কালো পাথর হাজরে আসওয়াদ-এর ওপর ভর করেই নাকি ইভ পৃথিবীতে এসেছিলেন বলে দাবি করা হয়। পাথরটি দেখতে মেয়েদের যৌনাঙ্গের মত কিছুটা। অনেকে মনে করেন,ভারতে যেমন শিবলিঙ্গ পূজা করা হয়, প্রাচীন আরবেও এইভাবে কোনো একজন দেবীর যোনী পূজা করা হত। সেই প্যাগান কালচার এখনো মূলধারার ইসলামে রয়ে গেছে। আদম সাগর পাড়ি দিয়ে শ্রীলংকা থেকে ভারতে ঢুকেছিল, সম্ভবত, সাঁতার কেটে। পরে ভারত থেকে পায়ে হেঁটে হেঁটে পুরা পৃথিবী খুঁজে বেড়িয়েছিল ইভকে। অবশেষে কয়েকশো বছর পরে আরাফার ময়দানে ২ জনের দেখা হয়েছিল (মিথ অনুযায়ী, তখনকার মানুষ বেঁচে থাকতো দীর্ঘদিন ধরে। বৈজ্ঞানিকভাবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।)।
বিশ্বের সব ধর্মেই কমবেশি সৃষ্টি নিয়ে এইরকম মিথ প্রচলিত আছে। আদিবাসীদের মিথগুলো মাঝে মাঝে খুব ইন্টারেস্টিং হয়। আদিবাসী তাদেরকে বলা হয়, যাদের কোনো মাইগ্রেশনের ইতিহাস কখনো পাওয়া যায় না। সৃষ্টির প্রথম থেকেই ঈশ্বর তাদেরকে এই পাহাড়ে/এলাকায় থাকতে দিয়েছেন বলে তাদের মাঝে উপকথা প্রচলিত আছে।
টেস্ট কেস হিসাবে এখানে সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ায় অ্যারেন্ট নামক এক আদিবাসীর কাছে গিয়েছিল ‘দ্য স্টোরি অফ গড’ দল (মরগ্যান ফ্রিম্যান এত দৌড়াদৌড়ি সইতে পারেননি। নিজে না গিয়ে আরেকজনকে পাঠিয়েছিলেন।) অ্যারেন্টদের সৃষ্টিতত্ত্বের গল্পটা এরকম: মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে একটা বড় উৎসব হচ্ছিল। অনেকে এসেছিল সেই উৎসবে। উৎসবের এক পর্যায়ে মেয়েরা নাচা শুরু করল। তাদের একজনের কোলে একটা বাচ্চা ছিল। বাচ্চাটাকে তার মা একটা ক্রেডল-এ (বাচ্চাদের খাট/দোলনা জাতীয় জিনিস) বাচ্চাটাকে রাখলেন। কিন্তু তাদের তুমুল নাচের এক পর্যায়ে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ব্যাপক ভাইব্রেশন শুরু হল। দোলনা সহ বাচ্চাটা ছিটকে পড়ল পৃথিবীতে, মধ্য অস্ট্রেলিয়ার নরালা নামক জায়গায়। সেটা ছিল প্রাণের বীজ। সেখান থেকেই প্রথম মানবসন্তানের উৎপত্তি হল।
মরগ্যান ফ্রিম্যান নিজে দেখতে গেলেন আরেকটা আদিবাসি এলাকা। গুয়াতেমালায়। আরকিওলোজিস্ট রিচার্ড হ্যানসেন জানালেন, গহীন জঙ্গলের ভেতরে ঢেকে যাওয়া এই প্রাচীন শহরটার নাম ছিল এল মিরাডোর। ২০০০ বছর আগে এটি বর্তমানে লস এঞ্জেলেসের মত বড় একটা শহর ছিল। মর্গ্যান ফ্রিম্যান দেখলেন জঙ্গলের ভেতরে গাছের আড়ালে শহরের অনেক কিছু ঢেকে আছে। মিশরের পিরামিডের চেয়েও বড় পিরামিড আছে খানে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে এখন। মিশরের পিরামিডের হায়ারোগ্লিফিক্সের মতই এখানেও খোদাই করে লেখা আছে মায়াদের ধর্মগ্রন্থ মায়ান বাইবেল।
মায়াদের সৃষ্টির গল্প এইরকম: ঈশ্বর একবার ফাঁদে পড়ে আটকা পড়ে গেলেন পাতালে। সেখানে তার মাথা কেটেও ফেলা হল। তখন তার ২ ছেলে, যাদের নাম হচ্ছে হিরো টুইন্স, পাতালে যাওয়ার কথা ভাবলেন। কিন্তু পাতালে সশরীরে যাওয়া যায় না, ছাই হয়ে যেতে হয়। হিরো টুইনস নিজেদের শরীর আগুনে পোড়ালেন, তারপরে ছাই হয়ে গেলেন পাতালে। পাতালের পানির সাথে তাদের ছাই স্পর্শ করলেই তারা আবার পুনরুজ্জীবিত হলেন। ঈশ্বরের কাটা মাথা তারা নিয়ে এলেন পৃথিবীতে। মাটিতে সেই মাথাটা তারা পুতে দিলেন। সেখান থেকে ভুট্টা গাছ জন্মাল (এর আগে ওই কমিউনিটিতে ভুট্টা ছিল না); সেই গাছের ফল হিসেবে টিপিকাল ভুট্টা হয়নি, সেই গাছের ফল হিসাবে জন্ম নিয়েছিল মানব সন্তান। তারাই প্রথম মায়া সভ্যতার মানুষ ছিল। এভাবেই মায়া জাতি এসেছে বলে তাদের বিশ্বাস।
মায়াদের বর্তমান ধর্মীয় রিচুয়ালেও এই জিনিসটা বিশেষভাবে আছে। হিরো টুইনসকে স্মরণ করে ভুট্টা পুড়িয়ে ছাই করে সেই ছাই পানিতে মেশানো হয় আজও। ভুট্টা তাদের জাতীয় ফসল এখন।
মায়ারা আবার আকাশের ওরিয়ন তারকারাশিকে খুব গুরুত্ব দেয়। ৩ টা উজ্জ্বল তারা নিয়ে এটি গঠিত। ৩ টা তারার মাঝে উজ্জ্বল একটা নেবুলা আছে (নেবুলা হচ্ছে নতুন তারা, এই তারার এখনো জন্ম হয়নি, কুণ্ডলি পাকানো ধূণিকণা, মেঘ আর আগুনের সংমিশ্রনে অনেক উজ্জ্বল আলো তৈরি করে এরা) মায়ারা এই ওরিয়ন তারকারশির আদলেই সবকিছু বানাতে চাইতো। তারা আগুন জ্বালানোর সময় ৩ দিকে ৩ টা পাথর রেখে মাঝখানে আগুন জালাতো (বাংলাদেশের গ্রামের মাটির চুলার ডিজাইনও এই রকম, ৩ দিকে উচু মাটি, মাঝে আগুন) তাদের প্রধান ধর্মীয় জায়গাটায় ৩ টা মন্দির, ঠিক ওরিয়নের মত করেই। সম্ভবত তারা নেবুলার রহস্য বুঝতে পেরেছিল। নেবুলা থেকেই নতুন তারা তৈরি হয়, এটা বুঝতে পেরেছিল। তারা ওই নেবুলা এবং ওরিয়নের ৩ টা তারার ডিজাইনেই সবকিছু বানাতে চাইতো।
বাংলাদেশের গারো উপজাতি সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। বাংলা ভাষায় আমরা এদেরকে বলি গারো, তবে এদের নিজেদের ভাষায় এরা নিজেদেরকে বলে ‘মান্দি’: মান্দি মানে মানুষ। এদের ধর্মের নাম সাংসারেক। এদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। সৃষ্টির আদি অবস্থায় বিশ্বজগৎ নেই। বর্তমান পৃথিবীর চারদিক অসীম কালো, অন্ধকার ও অসীম জলরাশি পরিপূর্ণ। চারদিকে শুধুই পানি, নেই কোনোকিছুর অস্তিত্ব। এ অবস্থায় তাতারা-রাবুগা (গারোদের আদি ধর্ম সাংসারেক-এর প্রধান দেবতা) চিন্তা করলেন পৃথিবী সৃষ্টির। তার এ ইচ্ছাকে বাস্তব রূপান্তর করতে তিনি দায়িত্ব দিলেন তাঁর সহকারী দেবতা নস্তু-নপান্তুকে। নস্তু-নপান্তু প্রথমে পানির ওপর বিছানো মাকড়সার জালে আশ্রয় নিলেন। এরপর স্ত্রীলোকের বেশে সহকর্মী ‘মাচি’র সহযোগিতায় পৃথিবী সৃষ্টির কাজে হাত দিলেন। তাতারা-রাবুগা পৃথিবী সৃষ্টির জন্য তাকে এক মুঠো বালি দিয়েছিলেন।
পৃথিবীর ওপরিভাগ তখন খুবই নরম, হাঁটা অসম্ভব। তাই এ বিষয়ে নস্তু-নপান্তু সাহায্য চাইলেন তাতারা-রাবুগার। তখন প্রধান দেবতা তাতারা-রাবুগা আকাশে সূর্য ও চাঁদ দিলেন এবং মর্তে বাতাস। সূর্য, চাঁদ আর বাতাসে শক্ত ও কঠিন হলো পৃথিবীর ওপরের ভাগ।
তাতারা-রাবুগা পৃথিবীকে একটি আবরণও দিলেন। পৃথিবী সৃষ্টির পর আনন্দে তিনি মেঘের তৈরি ‘পাগড়ি’ পরলেন, মাথার চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করলেন।
এরপর তাতারা-রাবুগা সর্বপ্রথমে লেজবিহীন বানর সৃষ্টি করেন। এই প্রাণীর কাজ হলো উচ্চস্বরে আওয়াজ তুলে পৃথিবীকে সজাগ রাখা। পৃথিকীর প্রকৃতি যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে, সে জন্য যাবতীয় দায়িত্ব দেয়া সেই প্রাণীকে। এরপর তাতার-রাবুগা সৃষ্টি করেন হনুমান এবং বাদামি রঙের বানর। সৃষ্টি করেন একে একে স্থলের অন্যান্য প্রাণী। তাতারা-রাবুগা, জলচর প্রাণীর মধ্যে প্রথম সৃষ্টি করেন একটি বড় কুৎসিত ব্যাঙ। অন্য জলচর প্রাণীর কাছে আওয়াজ তুলে আকাশে মেঘের আগমন বার্তা ঘোষণা করার দায়িত্ব দেয়া হয় ব্যাঙকে। ব্যাঙ সৃষ্টি শেষে তাতারা-রাবুগা সৃষ্টি করেন জলের মাছগুলো। কিন্তু পরে তাতারা-রাবুগা দেখতে পান, মাটির নিচে অনেক পানি, কিন্তু পৃথিবীর ওপরিস্থলে কোনো পানি নেই। তাই তিনি পৃথিবীর বুকে প্রবাহিত করেন নদী। এছাড়া পৃথিবীর কঠিন বুক পানি দিয়ে ভেজাতে তিনি আকাশে পাঠালেন ‘নরে-চিরে-কিম্রে-বক্রে’ নাম্নি বৃষ্টিদেবীকে। বৃষ্টিদেবী আসার সংবাদ ঘোষণার জন্য দায়িত্ব দিলেন গয়রা’কে (বজ্রদেবতা); এভাবে পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি এবং বিভিন্ন দেবতাকে বিভিন্ন দায়িত্ব দেয়ার পর সবশেষ মানুষ সৃষ্টি করলেন তাতারা-রাবুগা।
তাতারা রাবুগা আদি নর-নারী শনি ও মণিকে সৃষ্টি করেন এবং আমিতং আপিলজার নামক স্থানে রাখেন। তাদের সন্তানগন গামচেং এবং দুজেং। তাদের পরবর্তী বংশধর নরমান্দে (পুরুষ) ও দিমা রঞ্চিত্ত ( দিমারিসি) গারোদের আদি পিতামাতা। এই বাচ্চারা গানচেং আর দুজং নামেও পরিচিত।
সব শেষে মরগ্যান এলেন ভারতে। বারাবসিতে গাইড benda paranjape তাকে নিয়ে গেলেন গঙ্গা দেখাতে। (এখানে একটা জিনিস না বলে পারছি না। এই সিরিয়ালটা করার সময় বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ছেলে-মেয়ে গাইডের সাথেই কথা হয়েছে মরগ্যানের। কোনো মেয়ের সাথেই মর্গ্যানের ঘনিষ্টতা করার কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। ইন্ডিয়ান বেন্দা পারাঞ্জাপিকে, মনে হয়, অবশেষে তার মনে ধরেছিল। এর সাথে অনেক জোক করতেন, ভালোবাসা নিয়ে অনেক কথা বলতেন (ঈশ্বরের প্রেমের কথা বলতেন, তবে লালনের গানের মত তাঁর কথাগুলোও দ্ব্যর্থবোধক), লাঞ্চ খাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন একবার) গঙ্গার ইতিহাস সম্পর্কে বেন্দা বলল, গঙ্গা ছিল স্বর্গের নদী। কিন্তু ব্রহ্মা তাকে বন্দী করে রেখেছিল। ব্রহ্মা একসময়য় চাইলেন, গঙ্গাকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। কিন্তু গঙ্গা অনেক স্রোতস্বিনী শক্তিশালী নদী ছিল। এত শক্তিশালী নদী পৃথিবীতে গেলে অনেক ক্ষতি হতে পারে বিধায় গঙ্গাকে শিব তার চুলের মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় আটকে দিয়ে গঙ্গার শক্তি অনেক কমিয়ে দিল। সেই কম শক্তির গঙ্গা পৃথিবীতে এল। বিশ্বাস অনুযায়ী, এই গঙ্গার উৎপত্তি হিমালয় পর্বত থেকে নয়, এটি এসেছে সরাসরি স্বর্গ থেকে (হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, এখানে স্বর্গ হচ্ছে আকাশের ছায়াপথ, মানে মিল্কিওয়ে); গঙ্গা সজীব পানি সরবরাহ করে পৃথিবীতে, সেই পানি থেকেই সকল উদ্ভিদ এবং প্রাণী তৈরি হয়। গঙ্গা শুধু নদী নয়, গঙ্গা একজন দেবতাও। গঙ্গা দেবীর মূর্তি বানিয়ে পূজাও করা হয়।
ছবি পরিচিতি:

১ম ছবিটি তুরস্কের চ্যাতেলহুইওক এর বর্তমান অবস্থা
২য় ছবিটা চ্যাতেলহুইওকের কাল্পনিক ছবি
৩য় ছবিটা গোবেকিলি টেপির বর্তমান অবস্থা
৪র্থ ছবিটা গবেকিলি টেপির কাল্পনিক দৃশ্যায়ন
৫ম ছবিটা ইজরায়েলের চার্চ অফ সেপালকারের ভিতরে,চ্যাপেল অফ এডাম
৬ষ্ঠ ছবিটা শ্রীলংকার এডামস পিক এর
৭ম ছবিটা হাজরে আসওয়াদের
৮ম ছবিটা অস্ট্রেলিয়ার এ্যরেন্ট উপজাতিদের মিথ অনুযায়ী ড্র করা হয়েছে ।এখানে দেখাছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি ধরে সবাই নাচানাচি করতেছে,একটা দোলনা জাতীয় জিনিসে একজনের কোলে একটা বাচ্চা
৯ম ছবিতে দেখা যাচ্ছে করোনা অস্ট্রেইলস। এটি দেখতে অনেকটা উলটানো দোলনার মতই
১০ম ছবিটা সেন্ট্রাল অস্ট্রেলিয়ার tnorala. অ্যারেন্টরা বিশ্বাস করে এখানেই সেই স্টার চাইল্ড এসে পড়েছিল (এখানে কোন একটা উল্কা পড়েছিল এটা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়)
১১ এবং ১২ নাম্বার ছবিটা গুয়াতেমালার এল মিরাডোর শহরের বিভিন্ন অংশ
১৩ নাম্বার ছবিটা মায়াদের বাইবেল
১৪ নাম্বার ছবিটা আকাশের ওরিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের
১৫ নাম্বার ছবিটা দেবী গঙ্গার
বর্তমান এপিসোডের ভিডিও: https://youtu.be/WqCmM-THWes
Category: ধর্মকারীTag: ছবি, রচনা
Previous Post:ইছলাম রকস
Next Post:গরুপূজারি গাধাগুলো – ১৫৯

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পাল্লাহু । pAllahu • ফেসবুক • পেজ • টুইটার

Return to top