‘বাইশে শ্রাবণ’ একটি সিনেমার নাম মাত্র। এ নিয়ে এত মাতামাতির কিছু নেই।–এই ছিল পুরো ‘স্ট্যাটাস’টি। নোটে সেইভ করা ছিল। মনে পড়ল, গত শ্রাবণে ফেসবুক একাউন্ট ব্লক ছিল, তাই দিতে পারি নি। তার আগের শ্রাবণেও দেয়া হয় নি, কারণ, ভেবেছিলাম সাথে একটি ছবি যুক্ত করে দেব, কিন্তু ছবিটি তোলা হয়ে উঠছিল না আসলেমি করে। অথচ হুজুরের আঁতরের দোকান থেকে কাছেই, হেঁটে গেলেও বেশিক্ষণ লাগে না। এ বছরও ‘স্ট্যাটাস’ হিসাবে দিতে পারছিলাম না। এ বছরের শ্রাবণেও একাউন্ট আবার ব্লক।
জানি না এই পরিস্থিতিতে আর কেউ পড়েছেন কি না। আগে কয়েকবার ফটো আইডি দিয়ে একাউন্ট ফেরত আনা হয়েছিল। তারপর এমন অবস্থা যে আর সবাই ৬০ দিন পর নাম পরিবর্তন করতে দিলেও আমাকে দিচ্ছিল না। মাস দুয়েক আবার আবার সেই একই সমস্যা–ফটো আইডি চায়।
বললাম, আগে তো কয়েকবার দেয়া হয়েছিল, আবার কেন?
বলল, এবার তিনটে আইডেন্টিটি কার্ড লাগবে।
আমার কাছে আছে দুইটি।
বিশুকে সব খুলে বললাম। ফেসবুক একাউন্ট আর ইমেইল একাউন্টের সব তথ্য দিয়ে বললাম আমাদের জন্মতারিখ কাছাকাছি আছে, সে যেন তার তথ্য দিয়ে অন্তত একাউন্টটা ফেরত এনে দেয়। সে ঝুঁকি নিতে রাজি হলো না।
কী করি! কী করি! পাল্লা পেইজের ইনবক্সে অনেকে খোঁজ খবর নিচ্ছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে বললাম সমস্যার কথা। একজন এগিয়ে এলেন। ইত্তিলা রায় ইতু (পারমিশন নিয়েই নামটা দিলাম)। তিনি তার এক এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়কে রাজি করিয়েছেন—এখানেই থাকেন; ইন্টারনেট, সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে টুকটাক খোঁজখবর রাখেন, তবে নিজে খুব একটা একটিভ নন।
তো উনার সব ফটো আইডি ফেসবুককে দেয়া হলো।
উত্তর এলো—আইডিগুলো হাতে নিয়ে আইডি এবং মুখের ছবি তুলে পাঠাতে হবে। তারা মুখের ছবি আর আইডির ছবি মিলিয়ে দেখবে।
তা-ও দেয়া হলো।
সপ্তাহখানেক পরে বলে, ছবিগুলো স্পষ্ট হয় নি।
আইডিগুলো আরো অনেক ছবি তোলা হল। ওর চেয়ে ভালো কোয়ালিটি আর সম্ভব হচ্ছিল না। উনি বুদ্ধি দিলেন তাহলে ফেসবুকের অফিসে চলে যাওয়া যাক। নিউইয়র্ক সিটিতেই নাকি তাদের অফিস আছে। ঠিকানা দিলেন—ব্রডওয়ের উপরে। হুজুরের আঁতরের দোকান থেকে বেশি দূরে নয়। উনি একদিন সময় দিলেন—উনি সরাসরি অফিসের সামনে যাবেন, আর আমি কাজের ওখান থেকে সেখানে উনার সাথে দেখা করব। তারপর একসাথে অফিসে ঢুকব।
হুজুরকে বলে গেলাম সেখানে। সিকিউরিটি ডেস্কে গিয়ে উনি কথা বললেন যে ফেসবুক অফিসে যেতে হবে। জিজ্ঞেস করলেন–কার সাথে দেখা করব, আর অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে কি না।
উনি বললেন, অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই। তারপর সমস্যার কথা খুলে বললেন।
আগে থেকে নির্দিষ্ট কারো সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকলে অফিসে যাওয়া যাবে না।
অপেক্ষা করতে বলে সিকিউরিটি ডেস্ক থেকে ফেসবুক অফিসে ফোন করলেন। মিনিট পাঁচেক পরেই একজন হাতে একটি আইপ্যাড নিয়ে নেমে আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কীভাবে সাহায্য করতে পারেন।
সমস্যার কথা খুলে বলাতে উনার সব ফটো আইডি একবার চেক করলেন। তারপর কেস নাম্বার দেখলেন। তখন তিনি আবার বললেন যে, নিরাপত্তার কারণে তিনি অন্য একটি ‘নিক নেম’ ইউজ করতেন, তবে একাউন্টটা তারই। এখন ফেসবুক যদি নিকনেমে একাউন্ট না ফেরত দিতে চায়, তাহলে তিনি নিজের যেসব ফটো আইডি শো করছেন, সে নামেই যেন একাউন্ট ফেরত দেয়।
ফেসবুক থেকে বললেন, এটা সমস্যা না। কারণ তিনি নিজে সব ভেরিফাই করে গেলেন।
তারপর আইপ্যাড খুলে বের করে কেস নাম্বার আর সমস্যার কথা সংক্ষেপে লিখে দিতে বললেন।
উনি লিখে দিলেন।
বললেন, মেইল করে আপডেট জানাবেন।
কয়দিন লাগবে?
দুইদিন। বড়জোর এক সপ্তাহ।
তারপর আড়াই সপ্তাহ পার হয়ে গেল, কোনো আপডেট জানায়নি।
এই হলো একাউন্ট অফ থাকার কাহিনী।
এবার শ্রাবণে ফিরে যাওয়া যাক। ফেসবুকের অফিস থেকে ফোর্টিনন্থ স্ট্রিট / ইউনিয়ন স্কয়ার বেশি দূরে নয়। উনাকে বললাম যাবেন কিনা। উনি রাজি হলেন না। অনেক কৃতজ্ঞতা জানালাম। উনি হেসে চলে গেলেন।
ইউনিয়ন স্কয়ারের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। জায়গাটা খুব পরিচিত। এখানে আসার পরে বেশ কিছুদিন কয়েকটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেছিলাম। বেশি কিছু না—ফুড ডেলিভারির কাজ। আশেপাশের কাস্টমাররা ফোনে বা নেটে খাবার অর্ডার দেয়। ভিতর থেকে খাবার রেডি করে দিলে আমার কাজ হত সেগুলো জায়গামত পৌঁছে দেয়া। হাঁটাহাঁটির কাজ। সিটির প্রায় পুরো মিডটাউন আর ডাউনটাউন এভাবে হেঁটেছি।
একদিন বিশুর কাছে শুনলাম ফোর্টিনন্থ স্ট্রিটে নাকি পৃথিবীর অন্যতম বড় বুকস্টোরের একটা এখানে– Barnes & Noble. আর বলছিল, টইলেট করার দরকার হলে এরকম বুকস্টোরে ঢুকে যাওয়া ভালো। সিটির সবচেয়ে পরিষ্কার টয়লেট নাকি এসব বুকস্টোরের। একদিন কাজের ফাঁকে সাহস করে ঢুকে পড়লাম। আসলেই অনেক বড় স্টোর—কয়েকতলা নিয়ে পুরো বিল্ডিংটাই একটা স্টোর। তার ভেতর আবার উপররের একটা তলায় অনেকটা জায়গাজুড়ে একটা ক্যান্টিনের মত আছে। বসার অনেক চেয়ার-টেবিল। অনেকেই বসে বই পড়ছে। কেউ ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। কেউ চা-কফি-স্যাণ্ডউইচ নিয়ে বসেছে।
সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলাম এই ক্যান্টিনের দেয়ালে আঁকা কিছু ছবি দেখে। সেদিন ছবি তোলার মত অবস্থা ছিল না, ছবি তোলার কথা মনেও হয় নি। জাস্ট অবাক হয়ে দেখছিলাম সব। শ্রাবণে এসে মনে পড়ছিল—ছবিগুলো তুলে একটা পোস্ট দেব। সেটা এতদিনে হল। সেদিন কিছু ছবি তুলে এনেছিলাম।
==============
সংযোজন : প্রথম যখন ‘দাঁড়িপাল্লা ধমাধম’ একাউন্টটি ব্লক (সাময়িক ব্যান নয়) হয়েছিল, তখন আরেকটি একাউন্ট খুলেছিলাম একই নামে। সেটাও কিছুসময় পরেই ডিজেবল হয়ে যায়–ফেবু থেকে নিষেধ করে–আগের একাউন্টের ব্যাপারে ফাইনাল সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত একই নামে যেন আর একাউন্ট না খুলি। এবারও তাই হয়েছে। ভাবছিলাম একটা ব্যাকআপ একাউন্ট খুলে রাখি। সেটাও ব্লক করে দিয়েছে। মেজাজ খারাপ করে ভাবছিলাম আর ফেবুতেই আসব না! এখন মনে হয় একেবারে অন্য কারো নামে ছাড়া আসা সম্ভব হবে না।
Leave a Reply