কোরান কে লিখেছে? কখন, কোথায়, কিভাবে, কেন? সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির ধর্ম মহান ইসলাম থাকতেও পৃথিবীতে এতসব অন্য ধর্ম কেন? ওরা আল্লা মানছে না কেন?
বাংলাদেশের মুসলমানদের মনে কখনো কখনো এই ধরনের প্রশ্ন জাগলেও এ নিয়ে কেউ খুব একটা ঘাঁটাঘাঁটি করে না কেউ, ভাবে খামোখা কি দরকার? অসুবিধা তো হচ্ছে না তেমন। বাংলাদেশের মুসলমান তো এত গোঁড়া মুসলিম না, যার ইচ্ছা হিজাব লাগায়, যার ইচ্ছা টুপি পরে, সুটবুট পরে, কোন অসুবিধা নেই। একজন সাধারণ মুসলমান, কারো সাতে পাঁচে নেই, চাকরি কিংবা ব্যাবসা করে, খায় দায়, গান গায়, জুম্মার দিনে জামাতে নামাজ পড়ে, সেজেগুজে বৈশাখী মেলায় যায়, রোজার মাসে রোজা রাখে, ঈদ চাঁদে নতুন জামাকাপড় কেনে, কেমন আছেন কেউ জানতে চাইলে আজকাল বলে আলহামদুলিল্লাহ। ঝামেলা নেই, চিন্তা নেই, ভালো আছে, বেশী কিছু জানার দরকারও নেই। ইসলামকে প্রশ্ন করা যায়না, ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। তবে ঈমান, বিশ্বাস বা আল্লা রসূলকে সত্য মেনে প্রশ্ন করা যায়। সংশয় মনের ভেতরে রেখে ইসলাম নিয়ে প্রশ্ন? অসম্ভব। ঈমান যাবে, ঈমান নষ্ট হওয়া মানেই তো সব শেষ। তাই বাংলাদেশের মুসলমানদের জীবনে ধর্মচার জরুরী কিন্তু ধর্মজ্ঞান অপ্রয়োজনীয়, অজ্ঞতাই আদরণীয়।
কোথা থেকে এলো আজকের কোরান এবং হাদিস?
(ক) হযরত মোহাম্মদের মৃত্যু (৬৩২ খ্রিঃ) এর প্রায় ১৯ বছর পর আজকের কোরান লেখা হয়েছিলো বলে ধরা হয়।
(খ) হযরত মোহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ২০০ বছর পর ইমাম বুখারীর হাদিস বই লেখা হয়েছিলো বলে ধরা হয়।
কোরানের সঙ্কলন কখন শুরু হয়েছে?
হজরত মোহাম্মদের মৃত্যু (৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) এর ঠিক পরপরই সঙ্কলন নিয়ে হৈ চৈ এর শুরু। হজরত মোহাম্মদের জীবদ্দশাতেও একটি কোরান সঙ্কলিত হয়েছিল যা মুখ দেখিয়েছে খুব কম সময়ই। হজরত মোহাম্মদের মৃত্যুর পর নব্য ইসলামী শক্তির নেতৃত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর। খলিফা আবু বকরের (দায়িত্বকাল ৬৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ, বলা হয় বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়) নির্দেশে, সাহাবায়েক্বেরাম যায়েদ বিন সাবেতকে নেতা করে দায়িত্ব দেওয়া হয় কোরান সঙ্কলিত করার। সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে একটি সঙ্কলন তৈরী করে এবং তা খলিফা আবু বকরকে দেয়। অন্যান্য কিছু সাহাবা, যেমন ইবনে মাসউদ, আলী বিন আবী তালেব, মুআবিয়া বিন আবী সুফিয়ান ও উবাই বিন কা’ব প্রমুখ রাও নিজ দায়িত্বে কিছু সঙ্কলন করে।
যায়েদ সঙ্কলিত কোরানই কি আজকের কোরান? এরপর কি হোল?
না, এটি নয়। প্রথম খলিফা হজরত আবু বকরের মৃত্যুর পর আরব বিশ্বে ইসলামী শক্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (দায়িত্বকাল ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ, আততায়ীর হাতে নিহত হয় বলে বলা হয়), যায়েদের করা সঙ্কলনটি এবার হজরত ওমর নিজের হেফাযতে রেখে দেয়। খলিফা ওমরের মৃত্যুর পর ওই সঙ্কলনটি অল্প কিছুদিনের জন্য তার মেয়ে হাফজা’র হেফাজতে থাকে।
আজকের মত হল কি করে?
তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমান (দায়িত্বকাল ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ, দলীয় কোন্দলে নিহত বলে কথিত), তৃতীয় এই খলিফা ক্ষমতায় বসেই কোরানের একাধিক সঙ্কলনের দ্বন্দ্বের ঝামেলার মুখোমুখি হয়ে যায়। তখন দেখা যায় যায়েদের কোরান সঙ্কলন, অন্যান্য সাহাবাদের কোরানের সঙ্কলন এবং অন্যান্য নানান সাহাবাদের দাবীকৃত মুখস্থ কোরানের আয়াত একে অন্যের সাথে মিলছে না। তিনি এসময় যায়েদের প্রথম সঙ্কলনটাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে নতুন একটা সঙ্কলন করিয়ে নেন। কথিত আছে লোক দেখানো ভাবে তিনি কিছু কিছু নামকরা সাহাবাক্বেরাম ও ইসলামী পণ্ডিতদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করে নতুন কোরানের কপি বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দেন। অন্যসব সঙ্কলন পুড়িয়ে ফেলবার হুকুম দিলেন এই খলিফা ( সুতরাং অমুসলমিনরা নয় বরং মুসলমান কর্তিক প্রথম কোরান পড়ানোর হয়) তৈরী হল আজকের কোরানের কথিত মূল সঙ্কলন, আনুমানিক ৬৫১ খৃষ্টাব্দে। মতভেদে অবশ্য বলা হয় আজকের কোরান আরো পূর্নাঙ্গ হয় প্রায় ৮০০ খৃষ্টাব্দের দিকে। আরো কজন মুসলিম শাসকের হাত ঘুরে, শত শত বছর ধরে আরো পরিবর্তিত হয়ে, হাতকপি, কাঠের ব্লককপি, ছাপাখানা প্রযুক্তি কপি এবং তারপর অনুবাদকবৃন্দের অনুবাদ কপিতে রূপান্তরিত হয়ে হল আজকের এই কোরান।
হজরত আলীর কোরান তা’হলে কোনটা?
ইসলামী সাম্রাজ্যের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (দায়িত্বকাল ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৬১ খ্রিস্টাব্দ, চরমপন্থীদের দ্বারা নিহত বলে কথিত), হজরত আলীর আমলেও হজরত ওসমানের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক কোরান সর্বজন স্বীকৃত হয়নি। আজকের ইরাক অঞ্চলের ওই সব মুসলমানেরা ওসমানের এই সঙ্কলনটি প্রত্যাখ্যান করতে থাকে। বলতে থাকে যে সেটির সাথে উব্বে ইবন মাসুদের মত সম্মানিত সাহাবাক্বেরামও একমত নন। খলিফা হয়ে হজরত আলীও ওসমানের সঙ্কলিত কোরানে অসংগতি ও ক্রমবিপত্তির কথা দৃঢ় ভাবে বলেন। এটি বদলে নতুন একটি সঙ্কলনের চেষ্টাও করেন, কিন্তু সেটি সর্বজন স্বীকৃত হয় না। মোটামুটি ভাবে ওসমান সঙ্কলনটিই তখন থেকে টিকে যায়।
সুতরাং ডারউইনের বির্বতন বাদের থিওরির মতই একটি বির্বতনের ভিতর দিয়ে আজকের কোরান বর্তমান রুপ ধারন করেছে।কোরানের শুরুতে লিখা “আলিফ লাম-মিম- জালেকা কিতাবু লা্রাইবা ফি…. (ইহা এমন একটি কিতাব যাতে কোন ভুল নাই)” খুবই হাস্যকর।
ধার্মিকতা একটি মানসিক ব্যাধি। আসুন আমরা একে প্রতিরোধ করি
Saturday, February 11, 2012 at 3:43pm
Leave a Reply