মহাভারতের একটি উপাখ্যান–‘রাজর্ষি ভঙ্গাসন ইন্দ্রের ক্ৰোধে নারীতে পরিণত হয়, এবং এক তাপসের ঔরষে নিজের গর্ভে একশো পুত্র জন্ম দেয়। পরে ইন্দ্র তাকে পুরুষত্ব ও নারীত্বের মধ্যে একটি বেছে নিতে বললে সে নারীই থাকতে চায়। কারণ হিশেষে সে বলে, ‘স্ত্রীপুরুষের সংযোগকালে স্ত্রীরই অধিক সুখ হয়।‘
বেগম রোকেয়া বলেছেন, ‘পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব।…আমাদের উন্নতির ভাব বুঝাইবার জন্য পুরুষের সমকক্ষতা বলিতেছি। নচেৎ কিসের সহিত এ উন্নতির তুলনা দিব? পুরুষদের অবস্থাই আমাদের উন্নতির আদর্শ। একটা পরিবারের পুত্র ও কন্যায় যে প্রকার সমকক্ষতা থাকা উচিত, আমরা তাহাই চাই।’
গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার বলেন, ‘নীতিশাস্ত্রে পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রীর বুদ্ধি চতুর্গুণ ও ব্যবসায় ছয়গুণ কহিয়াছেন।’
হুমায়ুন আজাদের নারীগ্রন্থে পাই–
‘একটি মেয়ের জন্ম পিতৃতন্ত্রের জন্যে অন্যতম প্রধান দুঃসংবাদ; একটি মেয়ের জন্ম পুরুষতন্ত্রের প্রচণ্ড প্রত্যাশার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।’
‘একটি মেয়ে জন্ম নিলে চারদিকে পড়ে শোকের ছায়া।…তবে সে মেয়ে, অবহেলা আর পীড়ন সহ্য করার অপার শক্তি তার, জন্মসূত্রেই সে নিয়ে আসে টিকে থাকার শক্তি।…’
‘মেয়ে মায়ের গর্ভে থাকে ছেলের থেকে কিছুটা কম সময়, কিন্তু বাড়ে অনেক বেশি; তার অস্থিও হয় ছেলের অস্থির থেকে বেশি শক্ত। তার নার্ভতন্ত্রও হয় অনেক বেশি পরিণত। মেয়েরা জন্মে ছেলেদের থেকে অনেক কম ক্রুটি নিয়ে, বেঁচে থাকার শক্তিও নিয়ে আসে বেশি। গর্ভপাতে নষ্ট হয় অনেক বেশি ছেলে, মৃত ছেলেও জন্মে অনেক বেশি। জন্মের পর ছেলের মৃত্যুর হার অনেক বেশি মেয়ের মৃত্যুর হারের থেকে। পল্লীবাঙলায় মেয়ের প্রাণকে তুলনা করা হয় কইমাছের প্রাণের সাথে, কুটলেও যে মরে না। মেয়ে, পৃথিবীতে অনভিনন্দিত, বেঁচে থাকে শুধু অদম্য প্রাণশক্তিতে।’
এরপরেও কোনো নারী যদি পুরুষ হতে চান, সেটা প্রতিনিয়ত পুরুষরূপী হায়েনাদের যৌন-নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আক্ষেপ করে বলে থাকেন। বরং উলটোটাই হয় বেশি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও নারীরূপে সাজতে পছন্দ করে বেশি। এমনকি নবী মোহাম্মদও মাঝে মাঝে মেয়েদের পোশাক পরতেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে যত কবি-সাহিত্যিক আছেন–সবাই কোনো না কোনো সময়ে নিজেকে রাধার অবস্থানে কল্পনা করেন। ‘বনমালী গো তুমি পরজনমে হইও রাধা’–পুরুষদেরই গাওয়া গান। প্রতিটা প্রেমিক পুরুষ মাত্রই রাধা।
মেয়েরা ছেলেদের শিশ্নকে হিংসা করে, মেয়েরা পুরুষ হতে চায়–এই জাতীয় ফ্রেয়েডীয় আবলামির যুগ অনেক আগেই শেষ গেলেও, আমাদের দুর্ভাগ্য, এখনো অনেক বিচিবাদী এবং তাদের সেবাদাসীরা ফ্রেয়েডীয় আবলামির যুগে বাস করতে চায়! তাদের জন্য সমবেদনা!
[গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সমর্থক পুরুষ রনি থেকে নারী হয়ে যাওয়া মাসুদা ভাট্টিকে কেউ জিজ্ঞেস করে দেখবেন তো তিনি আবার পুরুষ হতে চান কিনা?]
Leave a Reply