‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কোনো কথা নেই’ বলে একটা কথা আছে। স্বার্থ, লোভ, ক্ষমতা, প্রভাব, আর সুযোগ পেলেই অন্যরে বাঁশ দেয়া–এই নিয়েই তো রাজনীতি। বিশ্বের রাজনীতির বেলায় যে শব্দটা আমরা ব্যবহার করি–মোড়লগিরি, এবং অবধারিত ভাবে আমাদের মুখে আমেরিকার নামটা চলে আসে।
২। স্নায়ুযুদ্ধ। রাশিয়ার আফগানিস্তান দখল। আফগান যোদ্ধারা পাহাড়িয়া গুহার মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে কোনোভাবে টিকে আছে। গুহা থেকে বের হলেই কোথা থেকে রাশিয়ান বাহিনী হেলিকাপ্তারে করে এসে গুলি করে আবার সবডিরে গুহার মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
আমেরিকা ৭১-এ যে বাঁশটা খেয়েছিল, সেটা তো ভুলতে পারছে না। তারা দেখলো রাশিয়ার সাথে সরাসরি তো পারা যাবে না বা যুদ্ধে নামাও যাবে না। তো এই আফগান যোদ্ধাদের দিয়ে যদি রাশিয়ানদের একটা শিক্ষা দিতে পারে। আফগানরা বলল, শুধু এই হেলিকাপ্তার ধ্বংস করার একটা উপায় বের করে দিতে পারলেই তারা রাশিয়ানদের চরম শিক্ষা দিতে পারবে।
আমেরিকা যোগাযোগ করল ইসরায়েলের সাথে। ইসরায়েলিরা আবিষ্কার করে ফেলল রকেট লাঞ্চার। ইসরায়েল থেকে ইজিপ্ট-পাকিস্তান হয়ে সেই অস্ত্র ঢুকল আফগানিস্তানে। বাকিটা ইতিহাস। (টম হ্যাঙ্কসের একটা মুভি আছে এই পুরো বিষয়টা নিয়ে।) তো রাশিয়ানরা আফগান ত্যাগ করলে আমেরিকা সেখানে অনেক স্কুল কলেজ তৈরী করে দেয়। কিন্তু আফগান যোদ্ধারা ততদিনে “তালেবান” হয়ে উঠেছে!
৩। ৭১ নিয়ে যা বলছিলাম–বাঙালীরা পাকিদের হটিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ চায়। পাকিরা আবার আমেরিকার জানের জান। রাশিয়া দেখল পাকিদের একটা শিক্ষা দিতে পারলে তার শোকে আমেরিকাও পাথর হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং-অস্ত্র দিল রাশিয়ার দোস্ত ভারত। আমেরিকা পাকিদের সাহায্য করতে সপ্তম নৌবহর পাঠালে রাশিয়া দুইটি সাবমেরিন পাঠিয়ে দেন। এতেই পরিষ্কার হয়ে যায় আসলে কী ঘটতেছে।
৪। এবার মুক্তিযোদ্ধা আর তালেবানদের যুদ্ধ পরবর্তী ভূমিকার তুলনা করা যাক। ভারত-রাশিয়া সাহায্য করেছিল বিধায় মুক্তিযোদ্ধারা সেটা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। রাশিয়া-ভারতের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তীতে আর কোনো বিরোধ হয়নি।
কিন্তু কেউ কি বলতে পারবেন, যে তালেবানদের আমেরিকা এত সাহায্য করল, তারা কিভাবে এত শত্রু হয়ে গেল যে তাদের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করেও আজও তালেবানদের ক্ষোভ মিটেনি? তালেবানরা ক্ষমতা পেয়ে ইসলাম কায়েম করতে চাইল, আর আমেরিকা সেখানে স্কুল-কলেজ করে মেয়েদের শিক্ষিত করতে চাইছিল, এটাই কি একটা কারণ? নাকি আমেরিকা এদের ‘ইউজ’ করে ‘পেমেন্ট’ দেয়নি বলে?
৫। আমরা সবাই বলি তালেবান-আলকায়দা আমেরিকার সৃষ্টি। ধরলাম কথাটা সত্য। কিন্তু পরে এদের মধ্যে বিরোধটা এলো কিভাবে? জানার আগ্রহ রইল।
Leave a Reply