লিখেছেনঃ ওমর ফারুক লুক্স
গণজাগরন আন্দোলন আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্নটি দেখিয়েছিলো। এর আগে জীবনে কখনো এতটা রাত জাগিনি। সারারাত ঘুমাতাম না। ফেসবুক আর বাংলা টিভি চ্যানেলের সামনে বসে থাকতাম, খবরের আশায়, পরিবর্তনের আশায়। বাঙ্গালী জাতিকে এতটা এক হতে এর আগে কখনো দেখিনি। আমরা যে এতটা এক হতে পারি, স্লোগানের শক্তি যে এত বেশি হতে পারে, সেটাও আগে বুঝিনি।
রাজাকার ও জামাত মুক্ত, ধর্মীয় রাজনীতি ও ধর্মব্যবসা মুক্ত, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার মুক্ত সত্যিকার প্রগতিশীল ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতি গঠনে কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের আন্দোলন যে এত সহজেই আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করবে, জামাতী রাজনীতির কাছে আর দলীয় রাজনীতির চালে যে এই আন্দোলন তার লক্ষ্য হারাবে তা ভাবতেই পারিনি। যেদিন দেখলাম আন্দোলনের মুখপাত্ররা একে একে নিজেদের ধার্মিক দাবী করতে শুরু করেছে এবং ধর্মহীনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছে, সেদিনই বুঝেছি আমরা আসলেই ধর্ম নিরপেক্ষতা বুঝিনা, অথবা বুঝলেও তা প্রকাশ করি না আমাদের ব্যাক্তিগত ও পছন্দের রাজনৈতিক দলের স্বার্থে। মনে হয়েছে, প্রগতিশীল আন্দোলনের কথা বলা তরুণ এই মুখপাত্রদের কাছে দেশ ও জাতির মুক্তির চেয়ে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতই বড়।
যারা সত্যিকার ধর্মনিরপেক্ষতা বোঝেনা, অথবা যারা নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী করে অথচ একটি বিশেষ ধর্মকে বুকে ধারণ করে আর ধর্মহীনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, জাতিকে অল্প কয়েকদিনের জন্য স্বপ্ন দেখাতে পারলেও তারা একটি প্রগতিশীল, ধর্মীয় মৌলবাদ মুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র উপহার দিতে পারে না। তারাও আমার কাছে প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় গা ভাসানো অতি সাধারণ একজন রাজনীতিবীদ। আর দশজন রাজনৈতিক নেতার মতো একদিন তাদেরও দূর্নীতির খবর প্রকাশিত হবে এরকম আশংকা করা ছাড়া তাদের কাছে আমার আর ভবিষ্যতে কিছুই আশা করার নেই।
Leave a Reply