লাশের কোন জাত নাই, কোন ধর্ম নাই, কোন মতাদর্শ নাই। লাশ হচ্ছে লাশ, আর প্রতিটা মানুষের মৃত্যুই দুঃখজনক।
: ভাই আপনে কি জামাত শিবিরের পক্ষে কথা কইলেন!
: না, জামাত শিবির ঘৃণা করি। সেই সাথে ঘৃণা করি সকল ইসলামী জিহাদী, খৃষ্টান ক্রুসেডার, শিবসেনা, জয় বজরঙ্গবলী, নাৎসী, ইহুদীবাদ সহ সকল ধর্মীয় মতাদর্শ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদকে।
: তাইলে শিবিরের দুইজন জিহাদীর মৃত্যুতে এই রকম স্ট্যাটাস মারলেন ক্যা?
: আমার প্রফাইল ইনফোতে একটা কথা লেখা আছে, ভাল করে পড়েনঃ
“যখন আমি বলি,’আহারে, মানুষগুলো কত গরীব, মানুষগুলো কত অসহায়!’
-তারা আমাকে বলে ‘আমি মস্তবড় ধার্মিক’রে
আর যখন আমি বলি, ‘কেন তারা গরীব, কেন তারা অসহায়?’
-তখন তারাই আমাকে বলে ‘শালা নাস্তিক কমিউনিস্ট!'”
এই কথাটিকে একটু অন্যভাবে বলিঃ
“যখন আমি বলি, ‘সাবাশ। দুই শিবিরকে হত্যা করা হয়েছে। পিটা শালাদের পিটাইয়া মাইরা ফালা’
-তারা আমাকে বলে ‘আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মহান যোদ্ধা।’
আর যখন আমি বলি, ‘কেন তারা জামাতী, কেন তারা শিবির করে?’
-তখন তারাই আমাকে বলে, ‘শালা নাস্তিক কমিউনিস্ট মানবতাবাদী ছাগু!'”
: কিন্তু ছাগু জবাই করলে আপনের পোড়ে কেন?
: আমি জানতে চাই তারা কেন জামাত শিবির? তারা তো আমাদের দেশেরই সন্তান। এই দেশের খেয়ে এই দেশের পরে তারা কেন মৌলবাদে দীক্ষা নিলো? আমাদের কোথায় দুর্বলতা যে লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে আজ মৌলবাদের দিকে চলে যাচ্ছে? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কোথায় ত্রুটি? আমাদের চেতনায় কোথায় গলদ? শ্রদ্ধেয় আহমদ শরীফ বলেছিলেন, ‘ধর্মতত্বের ভেতরেই সাম্প্রদায়িকতার বীজ নিহিত, তাই ধর্মতত্বের সমালোচনা না করে সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদের সমালোচনা করা অবান্তর।’ আজকে যারা দুজন শিবিরের মৃত্যুতে উল্লাশ করছেন, মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ করছেন, তারা কখনই ধর্মতত্বের সমালোচনা করেন না। মূলত তারা একটা বিষবৃক্ষের ডালপালার সাথে যুদ্ধ করে নিজেই নিজেদের বীরশ্রেষ্ট উপাধী দিয়ে ফেলেন, কিছু হাততালি কুড়ান, কিন্তু একই সাথে সেই বিষবৃক্ষের গোড়াতেই পানি ঢালেন, বিষবৃক্ষটিকে লালন পালন করেন। জামাত শিবির জিহাদী ক্রুসেডার জয়বজরঙ্গবলী শিবসেনা ইহুদীবাদী এরা সকলেই একই বিষবৃক্ষের ফল। সেই বিষবৃক্ষের গোড়াতে পানি ঢেলে দুইজন শিবির সেনার মৃত্যুতে উল্লাশ করা আহাম্মকিই নয়, প্রতিক্রিয়াশীলতাও বটে।
: ক্রুসেডার জয়বজরঙ্গবলী শিবসেনা ইহুদীবাদীদের সাথে জামাতিদের গুনগত পার্থক্য আছে। জামাতিরা ৭১ এ গনহত্যা এবং ধর্ষণের মহাযজ্ঞের হোতা ছিল।
: ঠিক একই ভাবে ইসলামী জিহাদী, খৃষ্টান ক্রুসেডার, জিওনিস্ট, শিবসেনারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গনহত্যা এবং ধর্ষণের মহাযজ্ঞের হোতা। আমি বিশ্বমানবতার শত্রুদের একই ভাবে দেখি।
: কিন্তু সেইটা করতে গিয়ে কি জামাতিদের সাইড দিতেছেন?
: সেটা করতে গিয়ে জামাতিরা সুযোগ পেতে পারে না। জামাত শিবির কোন আঞ্চলিক সংগঠন নয়, ধর্মীয় মৌলবাদও কোন আঞ্চলিক সমস্যা নয়। বরঞ্চ এই সমস্যাকে আঞ্চলিক সীমাবদ্ধ দৃষ্টি নিয়ে বিচার করলেই তা কখনও মূল সমস্যাকে চিহ্নিত করবে না। মূল সমস্যার একটা খন্ডিত চিত্র পাওয়া যাবে, যার দ্বারা নেয়া যেকোন সিদ্ধান্তই কোন ফলাফল এনে দেবে না, বরঞ্চ ক্ষমতার কেন্দ্র এক দলের কাছ থেকে আরেক দল উগ্রবাদীর হাতে গিয়ে পরবে। সেই উগ্রবাদীদের শেকড় ধর্মতত্বের সাথে জড়িত থাকার কারণে তারাও ক’দিন পরে আরেক জঙ্গিতে পরিণত হবে।
: কিন্তু তাহলে উপায় কি?
: মৃত্যু নিয়ে উল্লাশ করার এই সংস্কৃতি পাল্টাপাল্টি সংস্কৃতির জন্ম দেবে। ক’দিন পরে আমি তাদের হাতে মারা গেলেও জঙ্গীরা একই ভাবে উল্লাশ করবে। এই উৎকট উল্লাশের কোন আদর্শ নাই, এই উৎকট উল্লাশের কোন শুভ বোধ নাই। জামাত শিবিরে যারা যোগ দিচ্ছে, তারা আমাদেরই এলাকার ছেলেমেয়ে,আমাদের দেশেরই সন্তান। তারা কেন, কিভাবে জামাত শিবিরে যোগ দিচ্ছে, তাদের এই জিহাদী মনস্তত্ব কিভাবে তৈরি হচ্ছে সেটাই গুরুত্বপুর্ণ। আল্লার রাস্তায় জিহাদ করে স্বর্গ লাভের এই প্রক্রিয়াটার মূলে আঘাত না করতে পারলে, এই নষ্ট বিশ্বাসের শেকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে কোন লাভ হবে না, কোন লাভ হয় নি আজ পর্যন্ত। উন্নত বিশ্বেও জামাত শিবিরের মত মৌলবাদী বর্ণবাদী সংগঠন রয়েছে। একটা সময় তারাও এই নিয়ে ভুগেছে, এখনও বেশ কিছু পর্যায়ে ভুগছে। কিন্তু ধীরে ধীরে তারা সমস্যার শেকড় উপড়ে ফেলেছে। তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি, ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা বন্ধ করেছে। ধর্মকে উপাসনালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে, ধর্ম আর রাজনীতি বা শিক্ষায় নাক গলাচ্ছে না। মোল্লারা পুরোহিতরা যেন আমাদের রাজনীতিবিদদের উপরে খবরদারী করতে না পারে, আমাদের শিক্ষক সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীদের উপরে কর্তৃত্ব করতে না পারে। ধর্মতত্ব যেন আমাদের গ্রাস না করে। মানুষ মেরে স্বর্গের যাবার এই রাস্তাটাই বন্ধ করে দিতে না পারলে, মানুষের স্বর্গে যাবার এই কামনাকেই দমন করতে না পারলে মানুষ নিজ নিজ বিশ্বাসে নিজ নিজ ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে জামাত শিবির করবেই, রগ কাটবেই। দুটো শিবির মেরে আনন্দে গদগদ হয়ে উল্লাশ শুধুই প্রতিক্রিয়াশীলতা বাড়াবে, ওরা দুটো মেরেছে, আমাদেরও চারটা মারতের হবে, এই সংস্কৃতির জন্ম দেবে।
-সেক্যুলারিজম, বা ইহলৌকিকতা। আওয়ামী নষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, বাস্তবিক ধর্মনিরপেক্ষতা, অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় বিশ্ববাষ্পহীন মুক্ত পৃথিবী। এই পৃথিবী আমাদের, এর আগে পরে আর কিছু নাই। কোন স্বর্গ নাই, কোন মোক্ষ নাই, কোন বেশ্যালয় বা সুড়িখানা নাই। যা আছে এই পৃথিবীতেই। তাই এই পৃথিবীকেই সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। ইউ মে সে আইম এ ড্রিমার, বাট আম নট দি ওনলি ওয়ান। আই হোপ সাম ডে ইউ উইল জয়েন আস।
–আসিফ মহিউদ্দীন
Thursday, February 9, 2012 at 8:18am
Leave a Reply