লিখেছেন : আকাশ মালিক
আজ কয়েকজন নতুন লেখক ও তাদের লেখা বই নিয়ে আলোচনা করবো যাদের বই সব চেয়ে বেশী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, যাদের নিয়ে পাঠক মহলে বেশী মাতামাতি হচ্ছে।
প্রথম লেখকঃ গত বৎসরের ‘ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ’ এর আরিফ আজাদ। তার এই বই নিয়ে প্রচুর হৈচৈ হয়েছে ইসলামী দল বিশেষ করে জামাতি ইসলামীদের মাঝে। বইটি কেনার জন্যে পড়ার জন্যে চরমোনাইর মুফতি থেকে আজহারী কম পক্ষে ১০/১২জন বক্তার ওয়াজে মানুষকে অনুরোধ করতে শুনেছি। কেউ কেউ নাকি একাই পঞ্চাশটা বই কিনে মানুষের কাছে বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন। উনাকে নিয়ে তখনই একটি লেখা ফেইসবুকে লিখেছিলাম। তবুও তার একটি লেখার কিয়দংশ এখানে উল্লেখ করলাম;
“ আপাদমস্তক বোরকা দ্বারা আবৃত একটি মেয়ের সামনে বসে আছি। মাঝখানে একটি সুন্দর টি টেবিল। টেবিলে তিনকাপ চা। চায়ের কাপ থেকে ধুয়া উড়ছে। আমি এই মেয়ের দিকে তাকালাম। চোখ থেকে যেন বের হচ্ছে আগুনের ফুলকি। মেয়েদের চোখ এত মোটা হয়, এত নির্দয় হয়, এত জ্বলজ্বল করে জানতামনা। এই মেয়ে যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে মনে হচ্ছে ভস্ম করে দিবে। মেয়েরা ভালবাসার আগুনে ভস্ম করে বলেই জানি। কিন্তু প্রতিহিংসার আগুনে কি ভস্ম করে কে জানে। ওমেন চ্যাপ্টার কি বলে জানতে হবে। এই মেয়ের পাশে বসা আরমান ভাইয়ের একটি বোরকার দোকান আছে নিউ মার্কেটে। ভাইজান সরাসরি দুবাই থেকে বোরকা আমদানি করে থাকেন। আরমান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম, বুঝতে পারছিনা, পাশের ইনি কি ভাবি? বিয়ে করলেন কবে? জানালেন না ত কিছুই? আরমান ভাই বললেন, আগে চা খান তারপর কথা। অনেকদিন দেখা সাক্ষাত নাই। কই ছিলেন?
– ভাই গেরামে ছিলাম বেশ কিছুদিন। এখন গাও গেরামেই বেশী থাকি।
– খুব ভাল। খুব ভাল। এদিকের খবর কি কিছু জানেন?
আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে বললাম, আপনি কিন্তু কথা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। কই নতুন বিয়া করছেন ভাবীর সাথে পরিচয় করাই দিবেন, তা না করে অন্য আলাপে চলে যাচ্ছেন বারবার। এটা কিন্তু ঠিক না ভাই।
মেয়েটি এবার চোখ রাঙিয়ে কঠিনভাবে তাকাল আমার দিকে। আমার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেল টেবিলে। হায় হায় করে উঠলেন আরমান ভাই। বললেন, হুজুর মানুষ আপনি, মাইয়ালোক দেখলে হুশ ঠিক থাকেনা বুঝি!!! আমি কাপড়ে লেগে থাকা চা ধোওয়ার জন্য বেসিনের দিকে এগুতে লাগলাম। আরমান ভাই পেছনে এসে খপ করে হাত ধরে টান দিলেন। জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম উনার দিকে । কানে কানে যা কইলেন, হুশ হারানোর মত অবস্থা আমার। তিনি বললেন,
– এই মেয়ে আসলে মেয়ে না। পুরুষ মানুষ। ইনি হইলেন…
– ইনি কি???
– ইনি একজন বিজ্ঞানমনস্ক নাস্তিক । এলেমদার আদমি।
– কিন্তু বোরকা পরেছেন কেনো? উনারা ত বোরকা বিরোধী বলেই জানি।
– আরে বোকা, আরিফ আজাদ নামক এক লোক নাকি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ নামে কি একটা বই লিখেছে।
– লিখেছে ত কি হইছে? ওখানে ত বোরকা কিংবা ও তে ওড়না এসব নিয়ে আমার জানামত কিছু লেখা নাই।
– আরে তা না। ওই বইতে নাস্তিকদের বিজ্ঞান ফিজ্ঞান নিয়ে উল্টা পাল্টা কথার জবাব দেয়া হয়েছে। আগে নাস্তিকরা প্রশ্ন করত, বিজ্ঞানের কথা বলে ধর্মের বিরোধিতা করত এখন সিস্টেম উলটে গেছে। এখন ধার্মিকরা প্রশ্ন করছে নাস্তিকরা বেকায়দায় পড়েছে।
– তাই নাকি?
– এখন বেচারারা চেলা চামুন্ডাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে দলে দলে বোরকা পরছে।
– তাহলে ত আপনার বোরকা বেচাকেনা ভালই হবে আগামিতে। আগামি সপ্তাহে চায়নিজ খাওয়াবেন কিন্তু!
আমার কাপড় ধোওয়া শেষ হল। বেসিন থেকে কুলি করে এসে বাকি চা শেষ করে বেরিয়ে
যাব। যাওয়ার সময় বোরকা পরা নাস্তিক ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম, যাই ভাবি,
দাওয়াত কিন্তু বাকি রইল। উনি অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরেকবার ভস্ম করে
দিতে চাইলেন।
আমি বেরিয়ে মিশে গেলাম ঢাকার বিশাল জনস্রোতে ”।
ইসলামের বারোটা বাজিয়ে মডারেইট মুসলিম চাইনিজ খেতে চায়, বন্ধুর নতুন বউকে দেখতে চায় তার সাথে পরিচিত হতে চায়। লেখাটি কাল্পনিক হলেও লেখায় লেখকের নোংরা মানসিকতা স্থুল চিন্তা নারী লোভ প্রকটভাবে ধরা পড়ে।
দ্বিতীয় লেখকঃ আখতারুজ্জামান আজাদ। তার একটি লেখা নিম্নরূপ;
“ পঁয়ত্রিশের পর ধনাঢ্য বাঙালি নারীরা ভোগেন এক অদ্ভুত অবসাদে। সদ্য-বিগত জমকালো যৌবন আর মাত্রই-হাতছাড়া জ্বলন্ত জৌলুশের নস্টালজিয়ায় তারা ভোগেন হুলস্থুল হীনম্মন্যতায়। মাত্রই বছর পাঁচ-সাতেক আগে একজন পঁয়ত্রিশোর্ধ্বা ছিলেন সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা; তারও গোলাভরা ধান ছিল, পুকুরভরা মাছ ছিল, ছিল উঠোনভরা গাছ। মাত্র অর্ধদশকের ব্যবধানে আচমকা প্রাচুর্যের প্রায় সবটা হারিয়ে তিনি নাম লেখান সর্বহারার দলে। কিছুকাল আগেও তার পেছনে ছিল মৌয়ালদের অপেক্ষমাণ তালিকা। তার উন্নাসিক উপেক্ষাকে উপেক্ষা করেও যে মৌয়ালরা তার এতটুকু কৃপার অপেক্ষায় থাকত, পঁয়ত্রিশে তিনি এসে চারিদিকে তাকিয়ে তিনি দেখতে পান— কোথাও কেউ নেই! তিন দেখতে পান সেই সমবয়সী পূজারীরা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে এখন সংসারধর্মে লিপ্ত আছে ‘কচি’ স্ত্রী নিয়ে, যে স্ত্রীর বয়স ঐ পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীটির বয়সের অর্ধেকের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশি। এই ঈর্ষার ইন্ধনে জ্বলেপুড়ে খাক হন পঁয়ত্রিশোর্ধ্বা। একজন পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার সাধারণত দুই বা ততোধিক সন্তান থাকে। ক্ষেত্রবিশেষে জ্যেষ্ঠ সন্তানটির বয়স হয়ে থাকে পনেরো বা এর বেশি। জ্যেষ্ঠ সন্তানটি কন্যা হলে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব মায়ের সাথে কন্যাটির বয়সের ব্যবধান দাঁড়ায় মাত্র কুড়ি। পরিচিত প্রতিবেশে পঞ্চদশী কন্যাটি যখন পূজারী পুরুষদের প্রাত্যহিক পূজা পায়, তখন পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার মনে পড়ে— কুড়ি বছর, মাত্র কুড়ি বছর আগে এমন পুজো আমাকেও করা হতো! চোখের সামনে আত্মজাকে এমন পুজো পেতে দেখে পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার সাধ জাগে পুনর্বার সামান্য পুজো পেতে। পুজোপ্রাপ্তির এই পারমাণবিক বাসনা তাকে করে তোলে স্বীয় কন্যার প্রতি ঈর্ষাকাতর! পঁয়ত্রিশের পর দেহনদীতে অনিবার্যভাবে ভাঙন ধরে, এককালের পাহাড়ি ঊর্ধাঞ্চল পরিণত হয় শাদামাটা সমতল ভূমিতে, প্রসাধনীর প্রচ্ছদে ঢাকা পড়তে থাকে পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার প্রকৃত প্যারাডক্স। ওদিকে তার ব্যবসাসফল পঞ্চাশোর্ধ্ব স্বামীটিও বয়সের ভারে উত্থানরহিত কিংবা পরনারীর পরাগায়ণে নিয়োজিত। অর্থ-অলঙ্কারের অঢেল যোগানে পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার জীবন হয়ে ওঠে কফি হাউস গানের সুজাতার মতো। কিন্তু পৃথিবীতে দুর্লভতম জিনিশ হচ্ছে সময়। সুজাতারা লাখপতি স্বামী, দামি বাড়ি-গাড়ি পেলেও পান না স্বামীটির ‘সময়’। ঝি-চাকরেরা গৃহস্থ সব কাজ করে দিয়ে যাওয়ায় আক্ষরিক অর্থেই পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার কোনো কাজ থাকে না, স্বামী কর্তৃক সময়বঞ্চিত হয়ে মনে-মনে তিনি হয়ে ওঠেন বেসামাল বিদ্রোহী। স্বামীকে কচি নারীতে আসক্ত দেখে তিনিও হয়ে ওঠেন কচি পুরুষান্বেষী। এমতাবস্থায় কলিং বেলে একবার মৃদু চাপ পড়লেই মুহুর্মুহু খুলে বন্ধ হয়ে যায় তার দরোজা-জানালার সিটকিনি-সমগ্র। অপেক্ষাকৃত কমবয়সী তরুণকে প্রেমিক হিশেবে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার অন্যতম কারণ হচ্ছে তরুণটির হাতে থাকে দেওয়ার মতো অঢেল সময়, যা থাকে না স্বামী নামক টাকার মেশিনটির। পঁয়ত্রিশোর্ধ্বারা প্রশংসার কাঙাল। লক্ষ বাক্যের মহাকাব্য রচনা করেও এককালে যে অপ্সরার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেত না, পঁয়ত্রিশ অতিক্রান্ত হবার পর তিনিই চাতকের মতো মুখিয়ে থাকেন এক বাক্যের স্তুতি শোনার জন্যে। কেউ যদি একবার বলে ‘বয়সের চেয়ে আপনাকে দশ বছর কম লাগছে’ বা ‘আপনাকে আপনার মেয়ের বোনের মতো লাগছে’ কিংবা কপট করে হলেও কেউ যদি একবার শুধোয়, ‘আপনার বয়স বিশ, না বাইশ?’ তখনই তার মনের অঙ্গনে সুখের ফাগুন আসে, কাঠির ঘষা ছাড়াই তার দেশলাইয়ে আগুন আসে; এই একটি প্রশ্নের জন্যেই তার ইচ্ছে করে প্রশ্নকর্তাকে সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে দিতে! পঁয়ত্রিশোর্ধ্বাটি কৈশোরে-তারুণ্যে প্রেম করেছেন হয়তো দরিদ্র কারো সাথে; যে তাকে দিনভর কবিতা শুনিয়েছে, রাতভর জোছনা খাইয়েছে। কবিত্ব না থাকলেও তাকে তুষ্ট করতে ছেলেটি হয়তো অনিচ্ছায় কবিতাচর্চা করেছে, ছেলেটি ছিল তার একান্ত বাধ্যগত ব্যক্তিগত কবি। পুরুষতান্ত্রিক বাস্তবতার কবলে পড়ে তার বিয়ে হয় দেড়গুণ বয়সী টেকো কোনো হোঁতকা পেটুকের সাথে; যে পেটুক সওদাগরটি তাকে গা-ভরা সোনা আর পেটভরা সন্তান ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। পেটুকটির সাথে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীটি সুখী-সুখী সেলফি প্রচার করলেও তার ভেতরে রয়ে যায় কবিতার কৈ মাছ, জোছনার জলরঙ, বৃষ্টির বীর্য। পঞ্চাশোর্ধ্ব পতি প্রবরটি যখন অর্থ উৎপাদনের প্রবল প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত; তখন পঁয়ত্রিশোর্ধ্বার ইচ্ছে করে কেউ তাকে নিয়ে কবিতা লিখুক, নিদেনপক্ষে তাকে কেউ কবিতা শোনাক। কিন্তু বছরে একটি করে বাচ্চা দিতে পারলেও পতির সময় হয় না বছরে একটি কবিতা শোনাবার। স্বামীরা বুফে না, সব চাহিদা এক স্বামী দিয়ে পূরণ হবে না; স্বামীরা সেট মেনু, এক স্বামী দিয়ে পূরণ হবে দু-একটি চাহিদা। যে স্বামী কবিতা শোনাবে, স্ত্রীকে তিনি অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে পারবেন না; যে স্বামী অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে পারবেন, তিনি কবিতা শোনাবেন না। এমতাবস্থায় এই কাব্যিক শূন্যস্থান পূরণে পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব নারীটি নিজেই কবি হয়ে যান, অলঙ্কারবেষ্টিত হয়ে কবিতাপাঠের আসরে যান, সখ্য জমান কোনো উঠতি পুং কবির সাথে। এর পরের অংশ পঠিত বলে গণ্য হোক ”।
এই লেখকের আরো একটি লেখা পড়েছি যেখানে তিনি লিখেছেন, ছোটবেলায় একটি ছবি দেখতে সিনেমায় গিয়েছিলেন খুব আগ্রহ উৎসাহ নিয়ে কারণ তিনি পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছিলেন যে, ঐ ছবিতে সুন্দরী নায়িকার শরীরের একটি বিশেষ অঙ্গ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেখানো হয়েছে। প্রত্যেক এপিসোডেই সেই অত্যাশচার্য দৃশ্যটি দেখার জন্যে ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধর্ষণ দৃশ্যেও তা দেখতে না পেয়ে বড় মনঃক্ষুন্ন হয়ে অথীব ব্যথিত মনে প্রেক্ষাগৃহ ত্যাগ করেছিলেন।
তৃতীয় লেখকঃ সালমান মুক্তাদির। উনার কোনো লেখা দুনিয়া তন্ন তন্ন করেও খুঁজে পাইনি, শুধু প্রথম আলো পত্রিকা থেকে এইটুকু জেনেছি;
“ আমি পড়াশোনায় খুবই দুর্বল ছিলাম। স্কুলে নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিভিন্ন পরীক্ষায় ২১ বার ফেল করেছিলাম। আর এইচএসসিতে হিসাব বিজ্ঞানে দুই বছরে ফেল করেছিলাম ২২ বার। আমার কাছে টেনেটুনে পাস করাটাই ছিল সবচেয়ে বড় আনন্দ। অবশ্য পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে কম চাপ দেওয়া হয়নি। এমনও হয়েছে মেঘনা নদীর পাশে বাবার অফিসের কাছে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে শুধু পড়াশোনার জন্য। জানি এসব আমার ভালোর জন্যই করা হচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনা মোটেও ভালো লাগত না। তো এভাবে ২০১২ সালে কোনোভাবে এইচএসসি পাস করে পুরা “হোপলেস” হয়ে গেলাম। গেলাম অস্ট্রেলিয়া। উদ্দেশ্য অ্যাকাউন্টিং নিয়ে পড়াশোনা করা। কিন্তু হলো না। দেশে ফিরে এসেছি। তখনই ভিডিও বানানোর পোকা মাথায় ঢোকে। শুরুতে আমার গিটার বাজানোর একটা ভিডিও আপ করি। সবাই বেশ প্রশংসা করে। শেয়ারও করে। আমি প্রথম ভিডিও বানিয়েছিলাম নোকিয়া এন ৯৫ মডেলের মুঠোফোন দিয়ে। তারপর একে একে ঢাকা গাইজ, রমাদান প্রবলেম, ইন্টারনেট সেনসেশনসহ বিভিন্ন শিরোনামে অসংখ্য ভিডিও দেওয়া হয় আমার দুটি চ্যানেলে। ইউটিউবে আছে দুটি চ্যানেল। একটির নাম ‘সালমান দ্য ব্রাউন ফিশ’, আরেকটি ‘সালমান দ্য পুটি মাছ’। এর প্রথমটাতে আছে ৩১টি আর দ্বিতীয়টিতে ২৫টি ভিডিও। সুত্রঃ (প্রথম আলো, তিনি ইউটিউবার সালমান আল মুক্তাদির।)
শুনা যায় এবারের বই মেলাতে লেখক সালমান আল মুক্তাদিরের সাহিত্য পুরুষ্কার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
চতুর্থ লেখকঃ অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ। তিনি একাধারে একজন মুক্তিযোদ্ধা কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার নাট্যকারও। ২৫টির বেশি বই লিখেছেন। এর আগে মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীন স্বর্ণপদকসহ কয়েকটি পদক পেয়েছেন। এবার তিনি সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন। নিজের সম্পর্কে লেখক বলেছেন-
‘আমি প্রচারবিমুখ, আমার প্রচারের জন্য গাংচিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ আছে। এর শাখা দেশের সব জেলাতে আছে, বিদেশে আছে। আমি এটার কেন্দ্রীয় সভাপতি। হাজার হাজার তৃণমূল পর্যায়ের কবি আমাকে ভালো জানে, আমিও তাদের জানি। রাজধানীর যারা কৌলিন্যের দাবিদার সেখানে আমি খুব একটা পরিচিত না। একেবারে সেখানে অনুষ্ঠান করিনি তা না। কিন্তু এখন অনেকেই না চেনার ভান করবে। এটা তাদের ব্যাপার। আর পরিচিত হওয়ার জন্য প্রচেষ্টাও আবার খুব একটা ছিল না।’
তবে তার নিন্দুকেরা বলেছেন ‘রইজ উদ্দিন আহম্মদকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণা’ এটি রাষ্ট্রের রীতিমতো ইয়ার্কি। আর কেউ বলেছেন, ‘রইজ উদ্দিন আহম্মদকে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণা করে বাংলাদেশের সাহিত্য-সমাজকে অপমানিত করল রাষ্ট্র’। তার সম্মন্ধে যা কিছু জানতে পেরেছি তাতে আমার মনে হয়েছে, আগে মানুষ তেলমর্দন করতো রাষ্ট্রের মাথায় এবার প্রথম বুঝি রাষ্ট্র তার কোনো স্বার্থে একজন মানুষের মাথায় তেলমর্দন করলো।
পঞ্চম লেখকঃ মীরসরাইয়ের সন্তান হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ। তিনি ইসলামী গবেষণায় এ বৎসর একুশে পদক পাচ্ছেন। এটিও একজন মানুষের মাথায় রাষ্ট্রের তেলমর্দন ছাড়া আর কিছু মনে হয় নি।
ষষ্ঠ লেখকঃ মারজুক রাসেল। তিনি একজন কবি, গীতিকার, মডেল, অভিনেতা ও লেখক। উনার অভিনীত দুটো নাটক দেখেছি। দুটোতেই তিশা ছিলেন নায়িকার চরিত্রে। সন্দেহ নেই মারজুক রাসেল একজন খুব ভাল অভিনেতা। শুনেছি উনার বই কেনার জন্যে এক মহিলা নাকি নিজের মোবাইল বিক্রি করে দিয়েছেন। তার একটি লেখা নিচে দেয়া হলো-
অল্টারনেটিভ-
“তোমার দেখা পাচ্ছি না; তোমার দেড়-তলা বাড়িটাকে দেখতেছি। বাদামি পর্দা-উড়া-হালকা-খোলা জানলা দিয়ে যত ভেতরে দেখা যায়। ছাদে শুকাতে দেয়া কাপড় চোপড়, “ফিরোজা+পিংক” কম্বিনেশন ড্রেসে তোমাকে একদিন মার্কেটে দেখেছিলাম; ওই ড্রেসটা কি ভিজায় থাকে, শুকাইতে দাও না, ছায়াতে শুকাও ? গোপনে শুকাও ? তোমার এলাকার হোটেলগুলায় নাশতা; দুপুর, রাতের খাবার, টং দোকানের চিনি-ছাড়া-কাঁচাপাতি-দুধ-বেশি-চা; চানাচুর, আপঝাপ, মিনারেল পানি, চুইংগাম, ক্যাকজ্যাাক খাচ্ছি প্রশংসা করছি। তোমারে খাইতে পারতেছি না। তোমার এলাকার রোদ, বৃষ্টি, ধুলাবালি, প্যাঁ ক, ময়লাটয়লা লাগায় বেড়াচ্ছি; তোমারে লাগানো হইয়েই উঠতেছে না।হবে …
তোমার এলাকা ছাইড়া যাচ্ছি; তোমারে ছাড়ার ফিলিংস্ হচ্ছে, হোক – আমি অনেক-কিছুই-ছাইড়া-আসা-লোক ” !
তার আরেকটি লেখা- ‘লিটল ব্রাদার’
সে -(স্ত্রী মোবাইল ফোনে) আপনার ছোট ভাইকে বলবেন আমার ইংরেজি বইটি ফেরত দিতে।
আমি- আমার ছোট ভাই?
সে- হ্যাঁ।
আমি – আমার যে ছোট ভাই ওর তো পায়ের দিকে চুল, ও তো দাঁড়াইতে পারে আর বসতে
পারে, আর টায়ার্ড হতে পারে; কথাই তো বলে না, ইংরেজি পড়বে কিভাবে?
সে- ঢং, অসভ্য।
কবি মারজুখের আরেকটি কবিতার নাম ‘ভিটামিন শি’(She) ।
‘জানো, শুটকি খুবই সিরিয়াস ব্যাপার! কুড়ি-ঢেঁড়শের গাছেরাও জানে, বেগুন
খুবই প্রয়োজনীয় দরকারী।ভাত রুটি মাছ মাংস শাক শব্জি, এরকম খাবারের
পাশাপাশি পেয়ারা কমলা বাতাবিলেবু,আরো সব গোল গোল প্লাই গোল ফল খেয়ে আর
দেহের গঠন থেমে থাকছেনা, টের পাচ্ছি। নিজের ভাল নিজেকেই দেখতে হয়, দেখাতে
হয়। পার্থক্য ভেদে সংকট সবারই আত্মীয়। আমার কাছেও সংকট আসে,সংকট এলে পাশে
বসিয়ে নিরিবিলিতে,অবশ্য রাতে,দেহকেই জিজ্ঞেস করে জানতে পারি,তার এখন
‘ভিটামিন শি’(She) খুবই দরকারী ”।
‘কুড়ি-ঢেঁড়শের গাছেরাও জানে,
বেগুন খুবই প্রয়োজনীয় দরকারী’ এর অর্থটা কী আমি মোটেই বুঝি নাই। আর‘
ভিটামিন শি’(She) বলতে কি নারীকে বুঝানো হয়েছে?
মারজুখ রাসেলকে তার
সমর্থকগণ কেউ বলেছেন ‘মারজুখ দ্যা গ্রেইট’ কেউ বলেছেন এ যুগের নতুন
‘পাঠকদের আইডল’ কেউ উপাধি দিয়েছেন ‘তারুণ্যের প্রতিক’ আর কেউ তার আদর্শ
মেনে গড়ে তুলেছেন “মারজুক রাসেল ফ্যানস গ্রুপ” নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
কবি মারজুক রাসেল তার সাংবাদিক বন্ধুদের সাথে ক্যামেরার সামনে পাবলিক
প্লেসে এসে কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ‘বা-’ আর ‘শাউ-’ যুক্ত শব্দ বেশ
কয়েকবার উচ্চারণ করেছেন যেগুলোকে তার সমর্থকরা সততা,স্পষ্টবাদীতা বলে
আখ্যায়ীত করছেন। কবি মারজুখ বই মেলায় এসে বলেছেন যে, তার প্রতি বিশাল জনতার
আগ্রহ দেখে নিজেকে হ্যামিলনের বংশীবাদক মনে হয়েছে। মারজুখ বোধ হয় জানেন না
যে, হ্যামিলনের বংশীবাদক কিন্তু একজন ভাল মানুষ ছিলনা। ইঁদুর মেরে ফেলার
পর বংশীবাদক তার পাওনা সামান্য টাকার জন্যে শহরের সকল শিশুদের নিয়ে উধাও
হয়ে গেল, এ তো বিরাট এক অমানবিক গনহত্যা।
সপ্তম ও শেষ লেখকঃ দিয়ার্ষি আরাগ।
শুনা যায় এই লেখকের একটি বই জাতি বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়ীক উস্কানির অজুহাতে
নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি নাকি নিরাপত্তার কারণে দেশ ত্যাগ করেছেন
কিংবা তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। একজন লেখকের বই নিষিদ্ধ করা ও
লেখককে দেশ থেকে বিতাড়িত করা অন্যায়। তাকে নিরাপত্তা দিতে না পারা সরকারের
ব্যর্থতা। আর সাম্প্রদায়ীকতার অজুহাত তোলা এই সরকারের সাজেনা। যে সরকার
প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় যে, তার নিজস্ব একটি ধর্ম আছে এবং সেই ধর্মই শ্রেষ্ট
ধর্ম সেই সরকার নিজেই তো সাম্প্রদায়ীক। আমি তার বইটি পড়িনি। অনুমান করি
নিষিদ্ধ বইটি তার ফেইসবুকে বিভিন্ন সময়ে লেখা উক্তি, মন্তব্য ও স্ট্যাটাসের
সংকলন হবে। দেখা যাক তার ফেইসবুকে কিছু লেখা ও মন্তব্য-
“ বিশ্বের
অধিকাংশ মুসলমান তার প্রথম মুসলিম পূর্বপুরুষের ধর্ষণের ফসল। কারণ তাদের
অধিকাংশরেই মায়ের ইতিহাসের প্রথম মুসলিম মা ছিল ইসলামের কাছে গনিমতের মাল।
যে মাকে লুটকরা হয়েছিল, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরা হয়েছিল, ধর্ষণকরা হয়েছিল।
আজ মুসলিম ধর্মপ্রচারক কিংবা শাসকদের দ্বারা নির্যাতিত সেই মায়ের
বংশোদ্ভূত সন্তানেরা গর্বিত মুসলিম।সম্প্রদায়গতভাবেও মানুষ
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী আর কাপুরুষ হতে পারে। শুধু একটা উদাহরন দিই। নবীর বাইশ
স্ত্রীর অধিকাংশই গনিমতের মাল। এবং অধিকাংশই নবী কর্তৃক ধর্ষণের
শিকার।সুতরাং তাদের সন্তানাদির ইতিহাস এটাই ”।
“ নবীর বাইশ স্ত্রীর
অধিকাংশই গনিমতের মাল এবং অধিকাংশই নবী কর্তৃক ধর্ষণের শিকার সুতরাং তাদের
সন্তানাদির ইতিহাস এটাই ” এই বাক্যের প্রতিবাদে দু একজন পাঠকের প্রশ্নের
উত্তরে তিনি জবাব দিয়েছেন যে, তিনি এখানে ‘অধিকাংশ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
কথাটা সত্য কিন্তু যা সত্য নয় তা হলো, মুসলমানদের প্রথম মুসলিম পূর্বপুরুষ
ছিলেন মুহাম্মদ। তার প্রথম স্ত্রী খাদিজা গণিমতের মাল ছিলেন না, এবং তাদের
কোনো পুত্র সন্তানও ছিলনা। মুহাম্মদের আর কোনো স্ত্রীর গর্ভে কোনো সন্তান
জন্ম নেন নি। এটি একটি জাতিবিদ্বেষ মানসের উক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। লেখকের
আরো কিছু উক্তি-
– পাশের বাড়ির শুয়োরে সব ক্ষেত নষ্ট করে ফেলছে? আল্লাহ
আল্লাহ করুন! সমাধান নিশ্চিত।তবে তার আগে শুয়োরটাকে একটু বিষ খাইয়ে দিতে
ভুলবেন না যেন!
– মোল্লারা পাবলিক বেশ্যালয়ের বিরোধিতা করে ভিন্ন
কারণে, ওখানে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা তাদের নাই। কেন? কারণ প্রায় সব মোল্লাদের
পরিবারই এক একটা মিনি প্রাইভেট বেশ্যালয়।
– আপনি কি মুসলিমদের উপর চরম নির্যাতন করতে চান? এদেরকে যুক্তি আর জ্ঞানের কথা বলুন।
– মুসলমানদের বাঁশ দিতে চাও? তাহলে ওদেরকে আরও বেশি করে মুসলমান হতে বল।
এবার তার একটি পূর্ণ লেখা-
“ পূজানুষ্ঠান দেখছিলাম, হঠাৎ কনিষ্ঠ পুত্রের জিজ্ঞাসা, “বাবা, এখানে এত
পুলিশ কেন?” বড়টার জবাব, “দেখ বাবা, কী বোকা! এখনও এটাই জানে না! পাহারা
দিচ্ছে, কেউ যেন মূর্তি ভাঙতে না পারে! দেখিসনি কত মূর্তি ভেঙে ফেলেছে!”
ছোটটা দমে গেল ! তবুও প্রশ্ন করল, “ওরা কি অসুর?” বড়টা হিহিহি করে
হাসল।এবার ছোটটা লজ্জা পেয়ে চুপ করে গেল। আমিও লজ্জা পেলাম। অসাম্প্রদায়িক
বাংলাদেশে পুলিশ প্রহরা দিয়ে পূজা উদযাপন করিয়ে সম্প্রীতির উদাহরণ! রাতে
ছোটটা আবার সেই প্রসঙ্গে গেল। জিজ্ঞেস করল,”আচ্ছা বাবা, দুর্গা মার না এত
হাত, এত পিস্তল।অসুরকে মেরে ফেলতে পারে না?” আবার বড়টা অট্টহাসি দিল।
“বোকা! দুর্গা তো মাটির তৈরি! মাটি কি কিছু করতে পারে?” ছোটটা এবার ওকে
পাত্তা দিল না, হালও ছাড়ল না। “বাবা, তুমি বল!” আমি মাথায় হাত বুলিয়ে
বললাম, “দুর্গা অবশ্যই করতে পারেন। স্বর্গের অসুরকে তিনি পরাজিত করেছিলেন।
কিন্তু পৃথিবীতে যেসকল অসুর আছে তাদের সঙ্গে যুদ্ধটা আমাদের নিজেদেরই করতে
হবে। দুর্গার সংগ্রামটা দুর্গার, আমাদের সংগ্রামটা আমাদের।”
“তাহলে তাঁর পূজা আমরা করছি কেন?”
“যিনি দুর্গার কাছ থেকে শক্তিটা এমনিই নিতে পারেন তাঁর পূজার প্রয়োজন পড়ে না! তাঁর প্রয়োজন পড়ে প্রতিজ্ঞার।”
“সেজন্যই কি তুমি দুর্গা মাকে প্রণাম করনি?”
“হ্যাঁ!”
“তাহলে আমিও আর প্রণাম করব না!” ছোটটা বলল!
বড়টাও চিৎকার করল, “তাহলে আমিও আর প্রণাম করব না!”
“তাহলে কী করবে তোমরা?”
দু’জন চিৎকার করল, “প্রতিজ্ঞা!”
আমি দু’জনকে চুমু খেলাম, “হ্যাঁ বাবারা, পূজা নয়, কাজ দরকার। পৃথিবীতে
অনেক অসুর। আর আমাদের আছে লক্ষকোটি হাত! ভীরুর শপথ নয়, চাই সংহারক
প্রতিজ্ঞা!”
প্রিয়, বন্ধু স্বজন, আমার ঘরে দুর্গা তৈরি হচ্ছে । আপনার?
কাল্পনিক গল্প লিখতে গিয়ে লেখক বেমালুম ভুলেই গেছেন তিনি যে তার ছেলে দুটিকে নারী দূর্গা বানাচ্ছেন, ইচ্ছে করলে পুরুষ রাম বানাতে পারতেন। সেদিন ইউটিউবে দেখলাম ফিলিস্তিনী জঙ্গী দল হামাস যেমন ছোট্ট শিশুদের তলোয়ার পিস্তল বন্দুক হাতে তুলে দিয়ে জিহাদের ট্রেনিং দেয় তেমনি ভারতের একটি হিন্দু জঙ্গীবাদী দল ছোট্ট কিশোরদের হাতে তীর ধণু তোলে দিয়ে ট্রেনিং দিচ্ছে আর শেখাচ্ছে, তোমাদেরকে হতে হবে লঙ্কারাজ রাবণ হত্যাকারী তীরন্দাজ রামের মতো, শত্রু নিধনে যে রামের তীর কখনও লক্ষ্যভ্রষ্ট হতোনা। লেখকের গল্পের টার্গেট ‘অসুর’ যে মুসলমান তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু কেন আপনার শিশুকে ‘ভীরুর শপথ’ শেখাবেন, কেন এই ‘সংহারক প্রতিজ্ঞা’? কেন মুসলিমদের ওপর চরম নির্যাতন করার আর মুসলমানদের বাঁশ দেয়ার এমন তীব্র আগ্রহ? তাহলে সেদিন যে এক হিন্দু বিদ্বেষী মুসলমান বলেছিল, ‘হিন্দুকে ফাঁসাতে হলে হিন্দু নামে ফেইসবুকে একাউন্ট খুঁলে নবিকে কটুক্তি করে স্ট্যাটাস দাও’ সেই হিন্দু বিদ্বেষী মুসলমান আর একজন বই লেখকের মধ্যে পার্থক্যটা রইলো কোথায়? পৃথিবীতে কোনো একটি জাতির সকল মানুষ মন্দ হয় না, কোনো মানুষকেই তার জাতি ধর্ম বর্ণ দিয়ে বিচার করা উচিৎ নয়।
ডঃ আহমেদ শরিফের একটি কথা প্রায়ই আমার
লেখায় উল্লেখ করি আর তা হলো; ‘আগাছা পরগাছায় ভরপুর পরিত্যক্ত জঙ্গলের চেয়ে
ফুলহীন বাগান ভাল, ফুল একদিন ফুটতেও পারে’। নতুন লেখকদের সমালোচনা না করে
উৎসাহ বা প্রেরণা দেয়ার জন্যে তিনি কথাটি বলেছিলেন। যে দিন যখনই জেনেছি
কোনো নতুন পাঠক লেখালেখি করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন, তাকে আমার সীমিত
ক্ষমতায় যতটুকু পারি সাহায্য করেছি উৎসাহ দিয়েছি আর বলেছি সত্যকে গোপন
রাখায় কোনো মহত্ব নেই,যা কিছু মনের ভিতরে গোপন আছে, জগত ও জীবন নিয়ে নিজের
যতো ভাবনা আছে সবকিছু প্রকাশ করে দাও। আর বাকস্বাধীনতার পক্ষে ভলতেয়ারের
(Voltaire) সেই উক্তিতে আমরা সকলেই তো একমত যে, ‘ I Disapprove of What
You Say, But I Will Defend to the Death Your Right to Say It ’ (যদিও
উক্তিটি ভলতেয়ারের নয়, এটি Evelyn Beatrice Hall নামের একজন ইংলিশ লেখিকার
যিনি S. G. Tallentyre ছদ্ধ নামে লিখতেন) ‘তোমার মতের সাথে আমি একমত না
হতে পারি কিন্তু তোমার মত প্রকাশের অধিকার আমি জীবন দিয়ে রক্ষা করবো’।
পতঙ্গেরা যেমন ফুল থেকে মধু আহরণর করে, লেখকের বই থেকে পাঠকেরাও তেমনি
জ্ঞান অর্জন করেন। ফুলের বাগানে ভ্রমরা আসবে, রঙ্গীন পাখার প্রজাপতিরা আসবে
তারা ফুলের রেণু মধু আহরণ করবে, ফুল বাতাসে সুরভি ছড়াবে, ফুল দিয়ে
নবদম্পতি ফুলশয্যা সাজাবে, প্রেমিক প্রেমিকার চুলে ফুল গেঁথে দিবে,
প্রেমিকা প্রেমিকের গলায় ফুলের মালা পরাবে, আমরা সবাই ফুলের বাগান চাই,
ফুলের মতো পবিত্র জীবন চাই। কিন্তু আমরা কি কেউ ধুতুরা ফুলের বাগান চাই?
সেও তো এক প্রকার ফুল। ধুতুরা গাছের সমস্ত অংশই বিষাক্ত। এতে আছে বিপজ্জনক
মাত্রার Tropane Alkaloids নামক বিষ। এই গাছের বিষক্রিয়ায় মানুষ বা
পশুপাখির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ কারণে অনেক দেশেই ধুতুরার উৎপাদন,
বিপনন ও বহন আইনত নিষিদ্ধ। ধু্তুরা ফুল কেউ কাউকে উপহার দিবেনা কেউ কারো
গলায় ধুতুরা ফুলের মালা পরাবেনা।
বৎসর ঘুরে একবার আমাদের গর্বের একুশের বই মেলা আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। এই বই মেলা প্রীয় লেখকদের সাথে তাদের পাঠকদের মিলন মেলাও। এখানে প্রতি বৎসর হাজার হাজার জ্ঞান অন্বেষণকারী, লেখকের দর্শনার্থী পাঠকেরা আসেন। ফুল যেমন বাতাসে তার সুগন্ধ বিলিয়ে দেয়, লেখকেরাও তেমনি বইয়ের মাধ্যমে মানুষের মাঝে জ্ঞান বিলিয়ে দেন। ফুলের মধ্যেও যেমন কিছু ফুল বিষ ছড়ায়, বইয়ের মধ্যেও সকল বই জ্ঞান দান করেনা কিছু বই বিষও ছড়ায়। প্রমাণ, জগতের সবগুলো ধর্মের বই এক একটি বিষাক্ত ধুতুরা ফুলের গাছ।
এবারের একুশে বই মেলায় নতুন প্রজন্ম আমাদের সন্তানেরা যদি বই কিনতে যায়, আমি তাদেরকে বলবো, ফুল তুলতে যাও কিন্তু ভুল করে কখনও ধুতুরা ফুলে হাত দিওনা।
Leave a Reply