লিখেছেন : মাহবুব আরিফ কিন্তু
ব্যারিস্টার সুমন একজন বাংলাদেশের ইউটিইউবার জগত বিখ্যাত লাইভ স্ট্রিমার হিশেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে শুরু করে, মাদ্রাসার ছাদ, হাওরের হাঁটু পানি কি কোমর পানি, রাস্তায় পরে থাকা খাম্বা, আমেরিকার রাস্তার মোরে দাড়িয়ে দুঃস্থ মানুষের খাবার বিতরণ কেন্দ্র আর আদালতের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এমন কোন জায়গা নেই যে তিনি লাইভ স্ট্রিম করেন নাই।
ব্যারিস্টার সুমন, ছেলে মেয়ে বউ ও মাকে নিরাপত্তার কারণে আমেরিকাতে রেখে আসার ঘোষণা দিয়ে যেটা তিনি করতে পরতে সেটা হচ্ছে প্রিয়া সাহাকে নিয়ে আরও একটি লাইভ করে ইউটিইউবার জগতে বিখ্যাত ভিভিআইপি হিশেবে স্থান করে নিতে পারতেন কিন্তু তা আর হলো কই।
শুনেছি তিনি বার কাউন্সিলের সদস্য না হয়েও যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটার পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন আর তার মানে দাঁড়াচ্ছে, তিনি একজন সরকার পক্ষের উকিল, তাই বলে তিনি সরকারের বিপক্ষে জনসাধারণের স্বার্থ উদ্ধারে ইউটিউব লাইভ যে ভাবে নাচন কোদন শুরু করেছিলেন তাতে অনেকের মনেই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের উদ্রেক ঘটে।
যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষের একজন উকিল যখন প্রবাসের মাটিতে দাড়িয়ে নিজ পরিবারের নিরাপত্তার জন্যে অনিশ্চয়তার কথা বলেন তখন যে বাংলাদেশের মান সম্মান ও গণতন্ত্রকে তিনি নিজেই প্রশ্নবিদ্ধ করছেন সে বিষয়ে কোনই সন্দেহ নাই।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে প্রিয়া সাহার মন্তব্য ও অভিযোগ নিয়ে ব্যারিস্টার সুমন যদি নিজেই আমেরিকাতে থেকে প্রিয়া সাহাকে সাথে নিয়ে একটা লাইভ করতেন তবে এতদিনে ইউটিউবে ব্যারিস্টার সুমনের হিট কয়েক কোটির কোঠা ছাড়িয়ে যেতো তাতে কোনই সন্দেহ নাই, আর আমরাও ধরে নিতাম যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল থেকে বিতাড়িত তুরিন আফরোজের চাইতেও রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়াতে ব্যারিস্টার সুমন অনবদ্য অবদান রেখেছেন, অন্তত এ কথা সবাই স্বীকার করবেন যে যতদিন তুরিন যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে সরকার পক্ষের একজন উকিল ছিলেন ততদিন পর্যন্ত তিনি সরকারের বিপক্ষে দাড়িয়ে হাটে মাঠে ঘাটের যে কোন ঘটনা নিয়ে কোর্টে রিট করে বসেন নাই, তুরিনের দোষ হয়তো অনেক আছে কিন্তু যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে তার অসাধারণ কর্মকাণ্ডকে স্বীকৃতি দিতেই হচ্ছে।
ব্যক্তিগত ভাবে ব্যারিস্টার সুমন বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি কাউন্সিল’র উদ্যোগে ‘বিএসিসি হলিডে সেলিব্রেশন ২০২০ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই পারেন, বিরিয়ানী হাউসের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড সিইও মোঃ খলিলুর রহমান সাহেবের সাথে বসে বিরিয়ানী খাওয়াতেও কোন আপত্তি নেই আপত্তি শুধু কয়েকটি জায়গাতে:-
* রাষ্ট্রীয় একটি আদালতের প্রসিকিউটর হিসেবে প্রবাসের মাটিতে কোন বেসরকারি সংস্থা থেকে বা মীর কাশেমের ভাতিজার কাছে থেকে কোন ক্রেস্ট গ্রহণ করার অধিকার রাখেন কি?
* আমেরিকাতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগ দানকারী ও গভীর ষড়যন্ত্রকারী ধারণা করে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করতে আদালতে পর্যন্ত গিয়ে হাজির হয়ে নিজেই সেই বাংলাদেশের বাংলাদেশের মান সম্মান হানি করে বাংলাদেশে নিজ পরিবার পরিজনের নিরাপত্তার বিষয়ে বক্তব্য দেয়া ঠিক হয়েছে কি?
* নিউয়র্কের ঐ অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন : ‘বাংলাদেশের এখন যে অবস্থা আল্লাহ যেন আমাকে মন্ত্রী বানিয়ে বেইজ্জত না করার চেয়ে ব্যারিস্টার সুমন হিসেবে যদি রাখেন তাতে আমি বেশি কৃতজ্ঞ থাকবো। বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টানরা সংখ্যালঘু নয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হচ্ছে সৎলোক। দেশে নেতার অভাব নেই কিন্তু সৎলোকের অভাব। সৎলোকের অভাবের কারণেই বাংলাদেশ এত পিছিয়ে আছে।’ এ বিষয়ে একজন রাষ্ট্রীয় একটি আদালতের প্রসিকিউটরের বক্তব্যকে সরকারের কি ভাবে দেখছেন?
বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতো যে উনি কি আসলেই এবার আমেরিকার আদালতে নিজ দেশের মান সম্মান ক্ষুণ্ণ করার কারণে নিজের বিরুদ্ধেই মামলা করে বসেন কিনা? যাই হোক এইবার উনার লাইভগুলো আকাশ বাতাস জগৎ কাঁপিয়ে আগের মত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
Leave a Reply