শুভেচ্ছা জানিয়েছেন : চার্বাক কাজী
এক শ্রেণীর মোল্লারা, মূলত ভিন্ন নামে সংগঠিত জঙ্গিবাদী জামাতী মোল্লারা, দীর্ঘকাল হতেই পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের সংস্কৃতিকে মরুকরণের।
প্রচলিত খোদা-হাফেজকে এরা বানিয়েছিলো আল্লাহ হাফেজ, ইনশাল্লাহ লেখাকে এরা
বানিয়েছে ‘ইন শা আল্লাহ’, গোঁফ ছাড়া দাড়ি রাখা আর টাকনুর উপর কাপড় পরাকে
করে তুলছে বাধ্যতামুলক; আর হিজাবের কথা বলা তো ছেড়েই দিলাম, নারীকে
যৌনবস্তু আর ভোগ্যবস্তু হিসেবে উপস্থাপনে নাকি নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা
নিহিত! আমাদের নয়া প্রজন্ম সাদরে তা গ্রহণ করেছে।
আজ এদেরই হাত ধরে আসছে ৩১শে ডিসেম্বর পালন হারাম, ক্রিসমাসে এমনকি শুভেচ্ছা জানানোও হারাম, পূজাপার্বণে শ্রেফ অংশ নেওয়াও হারাম, প্রসাদ খাওয়া হারাম, পহেলা বৈশাখ হারাম, শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হারাম, জন্মদিন পালন হারাম, অমুসলিমদের সাথে সাথে বন্ধুত্ব হারাম, ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি ফতোয়া … লিস্টটি আরও অনেক অনেক লম্বা হবে।
তবে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে কোন নারীর নেতৃত্ব যে হারাম, সেকথাটা অবশ্য উনারা এখনও মৃদু স্বরে, ইনিয়ে বিনিয়েই বলেন।
উপযুক্ত সময়ে গর্জে উঠবেন বলে অপেক্ষায় আছেন।
দ্বীনী কাজের জন্যে বা ওয়াজের জন্য চুক্তি করে টাকা নেওয়া জায়েজ নেই, সেটা যে হারাম, সেকথা অবশ্য উনারা গোপন করে যান; বরং সেটাই হয়ে উঠেছে তাদের রাজনৈতিক সম্মেলনের কৌশল। সুদের বিষয়টি নিয়েও তাঁদের তেমন চিন্তিত দেখিনা।
যদিও মৌলবাদের অর্থনৈতিক ভিত যে পরিমাণে বিস্তৃতি লাভ করেছে ও করছে, তাতে লড়াইটা হতে হতো সর্বব্যাপী, বহুমাত্রিক ও বহুকেন্দ্রিক, কিন্তু শ্রেণীস্বার্থ আর ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার উন্মাদনায় ক্ষমতাসীন লুম্পেনদের দলটি সকল গণতান্ত্রিক আর নৈতিক মুল্যবোধকে পায়ে ডলে, রীতিমত গাজোয়ারিভাবে ভোটার বিহীন এক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুনর্বার ক্ষমতা সংহত করার ব্রীড়ায়, বৈধতা ও ন্যায্যতার সঙ্কট মোকাবেলায় একীভূত হয়েছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামাত, হেফাজত ও তাদের সমমনা দলগুলোর সাথে। তাদের করেছে আত্মীকরন।
গবেষক ড. আবুল বারকাত তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ আর দাখিল মাদ্রাসা বেড়েছে ৮ গুণ; প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বেড়েছে দ্বিগুণ আর দাখিল মাদ্রাসায় বেড়েছে ১৩ গুণ; সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক পর্যায়ে একজন ছাত্র-ছাত্রীর মাথাপিছু রাষ্ট্রীয় ব্যয় যেখানে ৩,০০০ টাকা, সরকারি মাদ্রাসা বাংলাদেশে এখন প্রতি ৩ জন ছাত্রের একজন মাদ্রাসার ছাত্র (যার মোট সংখ্যা হবে ৮০ লাখ); দেশে মোট মাদ্রাসার সংখ্যা হবে ৫৫,০০০-এর বেশি, যার মধ্যে ৭৩ শতাংশ কওমি মাদ্রাসা; এসব মাদ্রাসা পরিচালনে বছরে ব্যয় হয় আনুমানিক ১,৪০০ কোটি টাকা, আর মাদ্রাসা পাসদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৭৫ শতাংশ।”
আওয়ামী লীগের মৌলবাদ তোষণ ও মৌলবাদ তুষ্ট করবার সাম্প্রতিক ব্যাগ্র ভাব ও আপ্রাণ চর্চা থেকে এটা আজ স্পষ্ট যে, এখন থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিটাও আওয়ামী লীগই করবে; বিশ্বজুড়ে চলমান গণতান্ত্রিক সঙ্কট যে সমাধানের পথ নয়, বরং ইসলামের পথই একমাত্র পথ, সেটা প্রচারেরও জোর প্রস্তুতি চলছে নেতাদের মনোজগতে!
একদা স্বাধীনতার যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলো যে আওয়ামী লিগ; অদূর ভবিষ্যতে থিওক্র্যাটিক বিল্পব বা তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করবার কাজটাও সেই আওয়ামী লিগের হাত ধরেই হয়তো হবে, সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।
সকলকে মুজিব বর্শের, থুক্কু, মুজিব বর্ষের, শুভেচ্ছা।
Leave a Reply