লিখেছেন : ইনজা মাম
সময়টা সেই ১৩৩০-৪০ দশকের কথা। বিট্রিশ আমল। বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার লামচরি গ্রামের এক কৃষক/আমিন (তিনাকে কৃষক বলা ঠিক হবে না। কারণ তিনি বিএ পর্যন্ত পড়েছেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক না। এর ওর কাছ থাকে বই জোগাড় করে পড়েছেন। এবং একাধারে তিনি সদিচ্ছায় অনেক বছর শিক্ষকতা করেছেন৷ তবু বলছি কারণ এ এদেশের কিছু মানুষ তাকে এভাবেই সম্বোধন করেন৷)আরজ আলী মাতুব্বর ধর্মীয় বিশ্বাসের বাহিরে এসে তৎকালীন জামাত ইসলামী,হুজুর দের কাছে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দেন। সামান্য কিছু প্রশ্ন করাতে মোল্লা মুন্সিদের ধর্মীয় অনুভূতিতে লেগে যায়। তারা তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন এই বলে যে, তিনি তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। কিন্তু তখন দেশে বিট্রিশ সরকার থাকাতে তিনি বেঁচে যান। তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। কিন্তু মোল্লা মুন্সিরা মামলা করেই ক্ষান্ত হননি। এক পর্যায়ে তাকে লামচরী গ্রামে এক ঘরে করে রাখা হয়৷ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই তিনি জীবন যাপন করেন।৮৬ বছরের বেশীর ভাগ সময় তিনি লাইব্রেরীতে কাটিয়েছেন৷লামচরীতে গড়েছেন বিশাল লাইব্রেরী। মৃত্যুর আগে নিজের শরীর দান করে যান। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য।
২০১৪ সাল আগস্ট মাস, সুপ্রিম কোর্টের জামে মসজিদের খতিব ও একাধিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে তার নিজ বাসায় হত্যা করা হয়।ধর্মীয় মতামতের বিরোধ ধরে৷
সময়টা জানুয়ারী ২০২০,মুজিব বর্ষ।।মির্জাপুরে শরিয়ত বয়াতীকে পুলিশ ডিজিটাল আইনে গ্রেপ্তার করেছেন। কারণ তিনি নাকি চ্যালেঞ্জ করেছেন “ইসলামের কোথাও গান বাজনা হারাম লিখা নাই।” এতেই মির্জাপুর পুর থানার মোল্লা মুন্সীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে লেগে যায় এবং তারা থানায় মামলা করলে, পুলিশ তাকে আটক করে। বলি মোল্লা মুন্সীরা কি শরীয়ত বয়াতির কথা উত্তর দিতে পারতো না?
আরব ইতিহাসে কখনো গান বাজনা হারাম ছিল না।ইসলাম পূর্বে তাদের কবিতা, তাদের সংস্কৃতি অনেক উন্নত ছিল,সমৃদ্ধ ছিল।ইতিহাস তার রাজ সাক্ষী। আপনারা যেটাকে আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগ বলছেন। এমনটা কখনো আরব ইতিহাসে ছিল না। তারা আগে থেকেই অনেক এগিয়ে ছিলেন৷ ইতিহাস তার প্রমাণ। যেটা হাদিসে লেখা আছে৷ সেটাই শুধু ইতিহাস বহন করে না৷ এর বাহিরেও ইতিহাস আছে। সেগুলো জানুন।জানার চেষ্টা করুন। মানবিক মানুষ হবেন। যেটা বড্ড বেশী প্রয়োজন।
বাউল সাধনা কী? বাউল মতবাদের প্রধান শর্তই হচ্ছে “বস্তুনিয়ন্ত্রন”৷ অর্থাৎ সন্তান জন্ম দেয়া যাবে না। চারচন্দ্রভেদ,রজঃসাধনা,দশসাধনার মতো অনিবার্য ধারাগুলো বাউলেরা উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করে থাকেন। বাউলেরা সাম্প্রদায়িক ধার্মাচার ও মৌলবাদকে আক্রমণ করে অসংখ্য পদও রচনা করেছেন। তাদের কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানুষবন্দনার জায়গান। তারা ভালোবেসেছেন মানুষ কুলকে। মানববোধের উজ্জ্বল সমন্বয় ঘটেছে তাদের রচিত পদগুলোতে। “মানুষ ভজোরে মন মানুষ ভজোর” মতো হাজারো পদ তারা রচনা করেছেন। তারা কখনো মানুষের বিপরীতে গিয়ে কোন কাজ করেন নি। তাদের আসল উদ্দেশ্যেই ছিল মানবতার কল্যাণ। যেই কল্যাণের পথিকৃৎ লালন সাইজি থেকে শুরু করে আরো অনেকে যেমন লালনের প্রিয় শিষ্য দুদ্দু শাহ,দীন ভবানন্দ,সৈয়দ শাহনূর, শিতালং শাহ, পাগলা কানাই, পাঞ্জু শাহ থেকে করে শাহ আব্দুল করিম প্রমুখ।
আমাদের পল্লীকবি জসীমউদ্দিন ও বাউল পদাবলী রচনা করেছেন। তিনি আর হাসন রাজা উভয়েই বন্ধুর প্রেমে পাগল হইয়া একই অনুভূতি ধারণ করে একই আঙ্গিকের পদাবলী রচনা করেছেন বলে আমরা জানি। জসীমউদ্দিনের দৃষ্টি ছিল বাউল-ফকির-গ্রাম্য গীতিকারদের তত্ত্বকে ঠিক রেখে আধুনিকতার মিশেলে পল্লিগীতির পদাগুলো রচনা করেন৷
বাউলরা কোরান,গীতার ভাষাকেই
রিপ্রেজেন্ট করেছেন তাদের ভাষায়। তাদের কাছে সবধর্মই সমান৷ তাদের শব্দাবলী
সবাই বুঝবে না,বুঝেন না। শুধু মাত্র বাউলরাই ধরতে পারেন তাদের পদাবলী। এর
মারাফাত কি?
এই যে তাদের ভেদে মারাফাত গুলো সবাই বুঝে না। আমজনতা বুঝে না এই জন্য কি বাউলরা দায়ী??
যদি তারা দায়ী হয় তাহলে বুখারী শরীফের হাদিস না বুঝার জন্য বুখারী শরীফের
লেখক দায়ী।দুই ক্ষেত্রেই আপনাকে কষ্ট করে বুঝে নিতে হবে ভাবার্থ কি?জানতে
হবে বুঝতে হবে।
হিন্দু ধর্মে কীর্তন হয়। আমরা ছোট সময়ে দেখেছি কীর্তনে কি হয়?কীর্তন মূলত দেবদেবীদেরকে স্মরণ করে তাদের নামে গান গাওয়া।। সেখানে তো হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে না।হিন্দু ধর্ম বহু পুরানো। আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বী। তারা এই ভূখণ্ডের মালিক বিশেষত ভারতবর্ষ। এর পর মাত্র কয়েকশত বছর ধরে ইসলাম চলে আসছে। ইসলাম ধর্মের দাওয়াত দিয়েছেন পীররা,সূফীরা।
সূফীবাদ সেটাও মানবতার কথা বলে, কিন্তু ইসলাম মতে সুফীজম নাকি বেদাত। সেটাও শুনে আসছি। এর পর আসে শিয়া সুন্নী। চার তরিকা,চার মাজহাব। এদের ভিতর আবার হাজারটা ভাগ।এগুলো না মানলে আপনি হবেন মডারেট মুসলিম। এখন বলুন তো এর কোনটা সত্যি? কোনটা মিথ্যা? এক হুজুরের কাছে অন্য হুজুর ভুল, এক পীরের কাছে অন্য পীর ভন্ড। মসজিদে বসে হুজুরদের নামে, পীরদের নামে গালাগাল করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কী শুধু এই বিচার করে কাটিয়ে দিবে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক?
আপনার যেটা ভালো মনে হয় আপনি পালন করুন না!! কেউ না করছে না অথবা বাধা দিচ্ছে না৷ কিন্তু আপনার আল্লাহ, ভগবান নিয়ে মানুষ সমালোচনা করবে। এতে দোষের কি?? আপনিও অন্যকে নিয়ে যুক্তিতর্ক, সমালোচনা করেন। এটা তো খারাপ না। বরং সমালোচনা না মেনে জ্বি হুজুর করা পাবলিকরাই আল্লাহ,ভগবানের সংজ্ঞা বুঝে না।তারাই চাপাতি দিয়ে কোপায়। কারণ তাদের কাছে কোপানোটাই ধর্ম। তারা লেখার বিরুদ্ধে লেখা, গানের বিরুদ্ধে গান লিখতে জানে না।
যে নিজেকে উত্তম ভাবে সে কখনো উত্তম হয় না৷। তাই নিজের ধর্ম সর্বোত্তম সর্বেসর্বা ভাবুন। কেউ না করছে না কিন্তু সেটা বাহিরে প্রকাশ করা বাদ দিন। আলোচনা করেন, সমালোচনা করেন, প্রশ্ন করেন। উত্তর মিলবেই৷
শরীয়ত বয়াতীর মুক্তি আমি চাই না। তারা দেশে থাকলে দেশটা জঙ্গিবাধীদের দখলে যেতে পারবে না। নুরুল ইসলাম ফারুকী,সূফীকবিরা থাকলে দেশটা তালেবান দেশ বানাতে পারবে না।
পাকিস্তানিদেরকে ইউরোপ, আমেরিকা ভিসা দেয় না।ভিসা পেতে অনেক কাঠখোড় পোহাতে হয়। কারণ তারা জানে পাকিস্তানিরা যে দেশে যায় সেখানেই হামলা চালায়৷ বহু প্রমাণিত।
সেদিন বেশী দূরে নয়, যে ইউরোপ আমেরিকা বাংলাদেশকে ভিসা দিবে না।হয়তো আপনার কিছু হবে না। কিন্তু দেশের অনেক বড় একটা ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ আমাদের দেশের একটা বড় অংশ ওখানে লেখাপড়া করতে যায়। তারা সে সুযোগটা হয়তো পাবে না৷ দেশের বাহিরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করছে৷ এতে ক্ষতি কি? বরং তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। দেশের সুনাম অর্জন করছে। এতে তো দেশেরই লাভ৷
শরীয়ত বয়াতীরা জেলে পঁচে মরুক। তাদের বা তার মুক্তির দাবী চাইবেন না। একটু অপেক্ষা করেন, দেখবেন প্রধানমন্ত্রী কেনো বোরকা পরছেন না। সেটা নিয়েও মামলা হবে।
অথচ মুক্তিযুদ্ধে এই সব বয়াতি, খেটে খাওয়া মানুষরা যুদ্ধ করেছে। আর স্বাধীনতা পদক পায় শর্ষীনার পির সাহেব। যিনি ঘোর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন৷
হায় স্বাধীনতা আমার……….
Leave a Reply