লিখেছেন : মুহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম
– ভাই, নামাজ পড়তে যাবেন না?
– না।
কথপোকথনটা শুরু না হলে বা এটুকুতেই শেষ হলে ভাল হতো। কারো অনুভূতিতে আঘাত লাগতো না। কিন্তু তা হয় না। ধর্মভীরু মানুষরা বলেন, আপনি ধর্ম পালন করেন বা না করেন, সেটা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে কেন আঘাত দেবেন? আঘাত কি আর সখ করে দেই? গায়ে পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার জন্যই নামাজের দাওয়াত দেয়া সহকর্মীটি প্রশ্ন করলেন,
– ভাই নামাজ পড়বেন না কেন? আপনি মুসলিম না?
– আমি মুসলিম কিনা, সেটা পরের কথা। আগে বলেন, নামাজ “পড়বো” কেন? এটা কি
বইপুস্তক, গল্প-উপন্যাস, পত্রিকা বা ম্যগাজিন নাকি, যে পড়তে হবে?
– বাংলায় আমরা “নামাজ পড়া” বলি। এটা আসলে হবে – “নামাজ আদায় করা।”
– এটা কি দাবীদাওয়া বা কোন দেনা-পাওনা আদায় করার মত কিছু? এটা কি কারো কাছ থেকে কিছু আদায় করার জন্য?
– আসলে ভাই এটা একটা প্রোসেস। একটা পদ্ধতি। আল্লাহপাক বলেছেন,…..
– থামেন তো ভাই! আপনারা কথায় কথায় বলেন, “আল্লাহ বলেছেন!” আল্লাহ কি কারো
সাথে কথাবার্তা বলেন? আল্লাহ কখন কাকে কি বলেছেন? কেউ এরকম দাবি করেছেন
নাকি? কবে বলেছেন? এখন আর বলেন না কেন? আপনারা কিভাবে বলেন, “আল্লাহ
বলেছেন…?”
– আল্লাহপাক পবিত্র কোরানে বলেছেন,…
– ভাই কথা
প্যঁচায়েন না তো! কোরান একটা বই। মানুষ বইটি লিখেছে। ছাপাখানায় ছাপানো
হচ্ছে। এখন বক্তা হিসেবে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিলেই হলো? আর এর সাথে
“পবিত্র” কথাটা জুড়ে দেয়ার কারন কি? আর যে কোন বইয়ের চেয়ে কোরান কি
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশী? আর আল্লাহ আসলে যা বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন,,
কোরানে সেটাই লেখা আছে, নাকি অন্য কোন কথা ঢুকে গেছে, কিভাবে বুঝবেন?
–
কোরান হচ্ছে আল্লাহর বানী। ফেরেশতা জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ তার
বানীগুলি আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
কাছে পাঠাতেন।
– ভাই আপনি কিন্তু আবার প্যাঁচ লাগিয়ে দিচ্ছেন। আপনি
বলতে চাচ্ছেন, আল্লাহ জিব্রাইলকে বলেছেন, জিব্রাইল এসে নবিকে বলেছে।
জীব্রাইল যে হুবহু আল্লাহর কথা বলছেন, বাড়িয়ে কমিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বা ভুল
কিছু বলছেন কিনা, সেটা কিভাবে নিশ্চিত হচ্ছেন?
– আরে ভাই, কোরান তো পবিত্র লওহে মাহফুজে লেখা আছে। এটাকে পরিবর্তন করা কারো পক্ষে সম্ভব না।
– ও! তাহলে জিব্রাইল সেখান থেকে পড়ে, মুখস্ত করে এসে নবীকে বলে যেতেন?
– ভাই, এগুলো হচ্ছে মরফতি বিষয়। আপনি বুঝবেন না। – – আপনি বোঝেন তো? নাকি
না বুঝে নিজে একটা বোকামি করছেন, আর মানুষকে টেনে নিয়ে দল ভারী করতে
চাচ্ছেন? এত যখন বুঝেন, তাহলে বলেন তো নবি কি কখনো আল্লাহকে দেখেছেন, বা
সরাসরি আল্লহর সাথে কথাবার্তা বলেছেন?
– জ্বি না। শুধুমাত্র মিরাজের
সময় নবিজী আল্লাহপাকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আল্লাহপাকের সাথে নবিজীর
কথপোকথন হয়েছে, তবে পর্দার অন্তরাল থেকে।
– পর্দার অন্তরাল থেকে যখন
নবিজীর সাথে আল্লাহ আলাপ আলোচনা করছিলেন, তখন নবিজী কিভাবে বুঝলেন, তিনি
আল্লাহর সাথে কথাবার্তা বলছেন, নাকি কোন ভুতপেত্নীর সাথে কথা বলছেন?
–
নাউজুবিল্লাহ! ভুতপেত্নী কেন হবে! ফেরেশতা জিব্রাইল সিদ্রাতুল মুনতাহা পার
করে, সপ্তম আসমান অতিক্রম করে নবিজীকে আল্লাহর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।
–
আচ্ছা, এই যে জীব্রাইল নবির কাছে আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন, অক্সিজেন ছাড়া
পাখনাওয়ালা ঘোড়ায় চড়িয়ে সাত আসমান পাড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন, নবি
কি কখনো জীব্রাইলকে দেখেছেন?
– জ্বী। দুইবার দেখেছিলেন। প্রথমবার যখন
জীব্রাইল ওহী এনেছিলেন তখন। আর একবার দেখেছিলেন সিদ্রাতুল মুনতাহায়,
মিরাজের সময়। তার ছিল ৬০০০ ডানা।
– থামেন তো! নবি কি জিব্রাইলের কয়টা ডানা পাখনা ছিল তা একটা একটা করে গুনে দেখেছিলেন?
– বলেন কি ভাই! গুনে দেখতে হবে কেন! এটা আল্লাহপাক কোরানে বলে দিয়েছেন।
– আপনি আবার ঘুরে ফিরে আগের জায়গায় চলে আসলেন। “আল্লাহ কোরানে বলেছেন!”
আগে বলেন তো, কোরান নাজিল হওয়ার সবচেয়ে শুরুতে প্রথমে কোন আয়াত নাজিল হয়?
– একরা!” মানে – “পড়ো।”
– এইতো! এক্কেবারে ঠিক বলেছেন। এখন বলেন তো, জিব্রাইল যখন হেরা পাহাড়ের
গুহায় এই “পড়ো!” আয়াতটি নিয়ে নবির সামনে হাজির হলেন, তখন তার হাতে বা পকেটে
করে পড়ার মত কোন বই – পুস্তক – পত্রিকা – ম্যগাজিন এনেছিলেন কিনা? যদি না
এনে থাকেন, তাহলে তিনি আসলে কি পড়তে বলেছিলেন? নাকি নবিজি নিরক্ষর হওয়ায়
তাকে অতি সত্বর স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করতে বলেছিলেন?
– নাউজুবিল্লাহ! এসব কি বলেন!
– আমি আসল কথাই বলছি। কোরান হাদিসের বই আমি আপনার চেয়ে বেশীই পড়েছি। আমি
বলছি, জেনে রাখেন – নবি দু’একবার দৃষ্টিবিভ্রমজনিত কারনে, অসংখ্যবার
শ্রুতিবিভ্রমজনিত কারনে, কখনো কখনো সপ্নদোষজনিত কারনে যেসব অতিকল্পনা
করতেন, দীর্ঘ দিনের চিন্তার ফসল হিসেবে যেসব নিয়মনীতি তার পছন্দ ছিল, সব
মিলিয়ে নতুন একটা ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। জীব্রাইলের বয়ে আনা বানী হিসেবে
নবি তার সাহাবিদেরকে মুখে মুখে বলেছেন, সাহাবিরা কিছু কিছু অংশ মুখস্ত
করেছে, কিছু কিছু লিখেও রেখেছে। তারপর সেগুলি একত্রিত করে বই ছাপানো হয়েছে
নবীর মৃত্যুর ৬০ বছর পর। বিষয়টা কি এত সহজ সরল?
কোরানের আল্লাহ
মাঝেমধ্যে আগের কথা পরে বলেছে, পরের কথা আগে বলেছে, জিব্রাইল কখনো আগের
বানি পরে বলেছে, পরের বানি আগে বলেছে। নইলে কোরানে কেন বানীগুলো নাজিল
হওয়ার ক্রমানুসারে সাজানো নাই? আসাযাওয়ার পথে জীব্রাইল কিছু খবরাখবর ভুলে
গিয়েছিলেন, পরে আল্লাহ সেটা বুঝতে পেরে কিছু বানী বাতিল বা পরিবর্তন
করেছেন। নবি মারা যাওয়ার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বানী জোগাড় করে
খলিফা ওসমান তার খেয়ালখুশিমত বাছাই করে, সাজিয়ে গুছিয়ে একখানা বানী
চিরন্তনী তৈরী করলেন। আর যে বানীগুলো তার পছন্দ হয়নি, সেসব লিখিত বানীগুলোর
উৎস বা প্রমানাদিও পুড়িয়ে ফেললেন। সেই সংকলনেরও কোন মূল কপি আজ পর্যন্ত
কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে নবীর মৃত্যুর পর আল্লাহ বা জীব্রাইলের আর
কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এখন বলেন, আপনার কোরান আর আরব্য রজনীর গল্পের
মধ্যে পার্থক্য কি?
– ভাই, আমার নামাজের দেরী হয়ে যাচ্ছে। এবিষয়ে পরে আপনার সাথে কথা বলবো।
এরপর তিনি আর কোনদিন এবিষয়ে আমার সথে কোন কথাবার্তা বলেননি।
ASLIL
ফাটিয়ে দিয়েছেন স্যার।