লিখেছেন : অনন্য আজাদ
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের একটি ছাত্রীকে শিশ্ন তত্ত্বে বিশ্বাসী অর্থাৎ যে পুরুষ নিজেকে শুধুমাত্র পেনিসের ভিত্তিতে সুপুরুষ, মহাপুরুষ, বীরপুরুষ এবং নারীকে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্য হিশেবে শয়নে-স্বপনে মনে-প্রাণে চিন্তায় ও কর্মে লালন পালন পরিচালন করতে গৌরববোধ করে থাকে সেই উত্তম পুরুষই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে দেশে শুধুমাত্র একজন ধর্ষক নয়, কোটি কোটি ধর্ষকের খোঁজ পাওয়া সম্ভব।
যে-সকল সুপুরুষ কথায় কথায় পেশিশক্তির জয়গান, পোশাকের অজুহাত, চরিত্রের দোষ, আলো ও অন্ধকারের পার্থক্য, নারীর পড়াশোনা ও চাকুরীতে আপত্তি, নারীর শব্দে-বাক্যে-যুক্তিতে অরুচি, ধর্মের ভয়ভীতি, সংস্কৃতির অবক্ষয়ে তিক্ত, প্রেমবিদ্বেষী, চুম্বন ও আলিঙ্গনে অশ্লীলতা খুঁজে, শারীরিক সম্পর্ক ও জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ- সেসকল সুপুরুষেরাই একেকজন যৌন নিপীড়ক ও ধর্ষণপ্রেমী।
একুশ শতাব্দীতে পোশাক দায়ী নাকি চরিত্র দায়ী অমন অযৌক্তিক ব্যাকালাপগুলি বেমানান হলেও বাস্তবতা হচ্ছে এই কুযুক্তিগুলি এই দেশে মোটা দাগে চিহ্নিত করাই প্রমাণ করে যে এই দেশের উত্তম পুরুষদের চরিত্র কীরূপ! নারী চরিত্র নিয়ে শতাব্দী ধরে খেলাধুলা করা হয়েছে, এবার সময় এসেছে পুরুষের চরিত্র উন্মোচনের।
যে সমাজ নারীবিদ্বেষী, সে সমাজে কি বারবারে জীবনানন্দ জন্ম নিবে নাকি নারী মাত্রই অশ্লীল এমন ধারণায় বিশ্বাসী মানুষের উৎপাদন বেশি হবে? যেখানে ছোটকাল থেকেই আমাদের পরিবার-স্কুল-সমাজ-ধর্ম-রাষ্ট্র ছেলেদের ধর্ষক হতেই শেখায় এবং নারীকে খাদ্য হতেই ভাবায়, সেখানে ধর্ষণ না হয়ে কি সবুজেঘেরা প্রকৃতি মিলবে?
যে পরিবার নিজ পুত্রকে ধর্ষক হওয়া থেকে বিরত রাখার পরিবর্তে কন্যাকে বছরের পর বছর ধর্ষণের ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করে, সেই পরিবার থেকে ধর্ষক ও নিপীড়ক ছাড়া আর কিছু কি বের হতে পারবে?
যে দেশের পাঠ্যপুস্তকে নারীর পোশাকআশাক নির্ণয় করে দেওয়া হয়, ধর্মের ভয়ভীতি দেখিয়ে আবদ্ধ করে রাখার ষড়যন্ত্র করা হয়, সেখানে সেঞ্চুরি মানিকের আবার উৎপত্তি যে হবে না এমন কোন নিশ্চয়তা কি দেওয়া যাবে?
যে সমাজব্যবস্থা নারী পুরুষের সমতায় অবিশ্বাসী, সে সমাজের প্রতিটি নারী মানসিকভাবে ধর্ষণের শিকার। যে সমাজ নারীর শরীরকে অশ্লীল হিশেবে চিহ্নিত করে, সে সমাজ সভ্যতার রঙিন চাদরে আদিম হিংস্রতাকেই বহন করতে স্বস্তি পেয়ে থাকে।
যে দেশের মানুষজন সেক্স শিখেই চটি বই ও থ্রিএক্স থেকে, সেখানে পার্ভার্টের আবির্ভাব হওয়া কি অবিশ্বাস্য কোন ঘটনা? যে দেশের মানুষ সেক্স এডুকেশন শুনলেই ভাবে ক্লাসের ভিতর সবাই মিলে সেক্স শুরু করে দেওয়া, সেই দেশ কি ধর্ষণমুখর না হয়ে থাকতে পারবে?
যে দেশে হিন্দু-আদিবাসী-ছোট্ট-কচি মেয়েদের খাইতে মজা এমন সব নিকৃষ্ট চিন্তাধারা লালন করা হয়, সেই দেশে এক ঘণ্টা ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে থাকাই অকল্পনীয়। যে দেশে বিয়ের সময় নারীর যোগ্যতা হিশেবে চামড়া ও মাংস পর্যালোচনা করে দেখা হয়, সে দেশে রেসিস্ট ও ধর্ষকের সংখ্যা বাড়বে নাকি কমবে?
এখন, এই মুহূর্তেও বাঙলাদেশের কোন না কোন প্রান্তে কোন না কোন নারী সুপুরুষেরা দ্বারা যৌন হয়রানী, যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে- এটাই দেশের বাস্তবতা ও আসল চিত্র।
Leave a Reply