লিখেছেন : আকাশ মালিক
নিকুঞ্জ বিথীকা, Charbak Quazi ও সুষুপ্ত পাঠকের আলোচনার সুত্র ধরে আমার বক্তব্য –
সুষুপ্ত পাঠকের কোনো লেখাই আমার চোখের আড়াল থাকার কথা নয়। তাকে ছোট ভাই বলেছি, সে ভাবেই দেখি, সেও আমাকে বড় ভাই হিসেবে শ্রদ্ধা করে। তার মেধা প্রতিভা, লেখালেখির জগতে পাঠকদের মন আকর্ষণের ক্ষমতা দক্ষতা অনস্বীকার্য। কিন্তু আমি তার সকল মতের সকল পথের সকল ভাবনায় একমত হইনা এবং আমার বিশ্বাস সেও আমার সকল ধারনার সাথে একমত হতে পারেনা।
মূল দ্বিমতটা একটি নির্দিষ্ট জায়গায়। সেটি হলো এই; সকল ধর্ম থেকে ইসলাম একটি আলাদা ধর্ম আর সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ( কর্মে ব্যবহারে, মনে মানসে, আদর্শে বিশ্বাসে) মুসলমান আলাদা জাতি এটা আমি মানিনা বিশ্বাস করিনা। কর্ম ব্যবহার, মন মানস, আদর্শ বিশ্বাস, ঈমানী জোশের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় স্থান কাল বিশেষে যেমন, ভারত ও চীন। মুক্তমনায় ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে লেখালেখির সুবাধে সঙ্গত কারণেই অন্যান্য ধর্মের ইতিহাস, অন্যান্য ধর্মালম্বীদের আচার আচরণ, তাদের ধর্মগ্রন্থের আদ্যোপান্থ সন্ধান করার ও পড়ার প্রয়োজন হয়েছিল। হিন্দু ধর্মের তথ্যাদি দিয়ে সাহায্য করতেন মুক্তমনার অনন্ত বিজয় দাস আর অভিজিৎ রায়। পড়েছি সুকুমারী ভট্টাচার্য, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, আমার হাইস্কুল জীবনের প্রধান শিক্ষক সুভ্রত স্যার আর খবরের কাগজে ধারাবাহিক সিরিজ যতীন সরকারের ‘পাকিস্তানের জন্ম-মৃত্যুর দর্শন’। ‘হিন্দু ধর্মের মত নিকৃষ্ট ধর্ম জগতে আর একটিও নাই’ কথাটি কোনো মুসলমানের নয়, একজন হিন্দু লেখকের। তাই বলে আমি তার এই কথাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে মেনে নেইনি। কারণ ইতিহাস সাক্ষী, বাইবেল সাক্ষী খৃস্টান ধর্ম এর চেয়ে কোনো অর্থেই কম নিকৃষ্ট নয়। এক নিরস্ত্র নিরপরাধ মানবতাবাদী বিজ্ঞানী হাইপেশিয়াকে খুনের ঘটনাই খৃস্টান ধর্মকে উলঙ্গ করে দিয়েছে। কল্পনা করা যায় ধর্ম মানুষকে কতো নৃশংস হিংস্র পশুর চেয়েও ভয়ানক করে তুলতে পারে? একজন নিরপরাধ নারীকে হাজার হাজার মানুষের সামনে উলঙ্গ করে ছুরি দিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি তার শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ টুকরো টুকরো করে কেটে ছিড়ে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল ধর্ম পাগল একদল মানুষ। কোন ধর্মে আছে ধর্মের অনুশাসন যথারীতি না মানার কারণে হাজার হাজার নিরপরাধ নারীকে ডাইনী পেত্নী আখ্যা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার কথা? কোন ধর্মের ইতিহাসে আছে অসহায় অবলা নিস্পাপ নারীকে স্বামীর চিতায় জীবন্ত আগুনে জ্বালিয়ে দেয়ার কথা? কোন ধর্মে আছে সভাসদের সামনে নারীকে ডেকে এনে তার শাড়ি ধরে টানাটানির কথা?
প্রত্যেকটা ধর্মের জন্ম হয়েছে তার পূর্ববর্তী সমাজের সামাজিক ও রাজনৈতিক নিপীড়নে অত্যাচারে নিষ্পেষিত মানুষের মধ্য থেকে। সুতরাং প্রত্যেকটা ধর্মের সাথে অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ব্যাপারটা আবশ্যিকভাবে জড়িত। মুহাম্মদকে মদীনার অবহেলিত নিপীড়িত মানুষেরা রাতের অন্ধকারে মক্কায় এসে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এই যে সেদিন ভারতের একদল মানুষ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হলো সেটি কি হিন্দু ধর্মের বেদ, রামায়ণ, গীতার ব্যর্থতা নাকি ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরানের ক্যারিশমা? গত সপ্তাহেই যেন পত্রিকায় পড়লাম সিলেটের এক হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতা ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ ঘোষণা দিয়ে মুসলমান হয়েছেন। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে তিনি কী এমন ঘৃণ্য কথা পেলেন যে তাকে তার ধর্ম ত্যাগ করতে হলো আর কয় পাতা কোরান পড়ে তিনি বুঝলেন যে, ইসলাম শান্তির ধর্ম? এখন এই ভদ্রলোক যদি বলেন ‘সকল ধর্মের প্যাটার্ণ সমান নয়’ তাহলে আমাদেরকে কি বিশ্বাস করতে হবে ইসলাম তুলনামূলক ভাবে উৎকৃষ্ট ধর্ম?
‘ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমান পরিবর্তনযোগ্য জাতি নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তদের ধর্মগ্রন্থ ত্যাগ করেছে’ কথাটা অমূলক অবাস্তব। সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক অন্যায় অবিচারে অতিষ্ট তাসলিমা নাসরিনও এমন কথা বলেছেন। ডঃ আলি সিনহাও বলেছেন, ইসলাম সংস্কার করতে হলে পৃথিবীর সকল কোরান সাগরে ভাসিয়ে দিতে অথবা আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এ কথা গুলোকে স্বজাতি বিদ্বেষ যদি না’ই বলি, হতাশা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলা যেতেই পারে কিন্তু তাতে সমাজ পরিবর্তন তো আদৌ সম্ভব নয়। তাহলে লেখালেখি করে লাভটা হলো কী?
Leave a Reply