লিখেছেন : চার্বাক কাজী
২০২০-এর প্রতিবাদী তরুণদের মধ্যে যে ব্যবস্থা বদলের অলীক স্বপ্নটি কাজ করেনা, সেটা সুনিশ্চিত। বামের স্বপ্নালু রাজনীতি এদেশে তো বটেই, উপমহাদেশেই যে এখনও ব্রাত্য, সেটা গেল ৭০ বছরে পরিষ্কার।
নয়া প্রজন্মের একটি দল পরিনত হয়েছে পদলোভে পদলেহনকারী আওয়ামী দলদাসে আর অন্যটি তাদের সকল বুদ্ধিমত্তা ও প্রাণশক্তি ব্যয় করে চলেছে চলমান নির্বাচনী ব্যবস্থার অধীনে সরকার বদলে এবং অতি অবশ্যই আওয়ামী বিরোধিতায়। প্রয়োজনে অপরাপর ফ্যাসিস্ট শক্তি, এমনকি ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের পক্ষে গিয়ে হলেও। অর্থাৎ সেই ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ — বৈচিত্র্যহীন পরিবর্তনের রাজনীতি।
অনস্বীকার্য যে, বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দলই কোন কালে মৌলিক কোন আদর্শ
বাস্তবায়নের জন্য ক্ষমতায় আসেনি; বরং, একদল অন্য দলের অপকর্মের কারণে,
নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসেছে।
যার রুটকজ হলো, এ দেশ আদতে “অন্ধ
আওয়ামী সমর্থন” বা “অন্ধ আওয়ামী বিরোধিতা” দুই ধরনের বাইরে আর কোন ধরনের
রাজনীতির কথা ভাবেনি বা দেখেনি।
ফলে এ যেন, কবি বীরেন চট্ট’র ভাষায়,
“রাজা আসে যায়
আসে আর যায়
শুধু পোষাকের রং বদলায়
শুধু মুখোশের ঢং বদলায়!”
এ প্রজন্মের চিন্তাশীল এলিট তরুণরা, যারা সত্যকারের বদলে কিছু ভুমিকা রাখতে সক্ষম, তাদের ভাবনাতেও দেখি উগ্র-ডানেরদের সাথেই অধিকতর ঐক্য পোষন করতে, হয়তো সঠিক রাজনীতির অভাবেই।
একবিংশ শতকে প্রয়োজন নতুন রাজনীতি —
প্রয়োজন নৈতিকতা ভিত্তিক সেই রাজনীতি, যেখানে সাম্য, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হবে;
বৈষম্য অবসানের লক্ষ্যটি অর্জিত হবে,
সহিংসতার অবসান ও সম্পদের বন্টন নিশ্চিত হবে,
মানুষ পাবে একটি সামাজিক-গনতন্ত্রী, প্রগতি-অভিমুখী ও বিজ্ঞানমনস্ক একটি সমাজ;
মানুষ নির্ভয়ে চর্চা করবে তার নিজ সংস্কৃতি এবং
অনাগত প্রজন্মের জন্যে রেখে যাবে একটি সুস্থ পরিবেশ ও গর্বিত সভ্যতা।
আমাদের নষ্ট রাজনীতির ধারক ও বাহক আওয়ামী লিগ, তার সাঙ্গোপাঙ্গ এবং জামাতি-বামাতি ও বিম্পিপন্থীদের সকলেই এর প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ।
নতুন রাজনীতির জন্যে প্রস্তুত হতে হলে সর্বাগ্রে আমাদের প্রয়োজন
রাষ্ট্রযন্ত্রটিকে শক্তিশালী করা, গণতান্ত্রিক মুল্যবোধকে শক্তিশালী করা।
সমতা, সুশাসন, সুবিচার হচ্ছে গণতান্ত্রিক মুল্যবোধের মৌলিক তিনটি স্তম্ভ যাকে মূর্ত করে বাকস্বাধীনতা।
প্রয়োজন এই গণতান্ত্রিক স্তম্ভগুলোর শক্তিশালীকরন।
অর্থাৎ, আইন পরিষদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ করে তোলা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মধ্যেই আছে প্রাথমিক সমাধান।
এই শিক্ষাই আমরা অন্যান্য সেক্যুলার দেশগুলো হতে পাই, যারা ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়াগুলো দেখেছে, মোকাবেলা করেছে ও সফল হয়েছে।
Leave a Reply