লিখেছেন : চার্বাক কাজী
ভারত বা পাকিস্তান নয়, গোটা দক্ষিন এশিয়ার সবচাইতে ভীতিকর রাষ্ট্রটির নাম আজ বাংলাদেশ।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার” প্রতিষ্ঠাকে লক্ষ্য করে, রীতিমত রক্ত ঝরানো সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হওয়া এদেশ, আজ পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা লালনের উর্বর এক ভুমিতে; ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে নির্লজ্জভাবে মৌলবাদ তোষনের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত এক নির্দয় ফ্যাসীবাদী রাষ্ট্রে।
আপাত দৃষ্টিতে এদেশে ‘সামরিক ও বেসামরিক আমলা মহলে জনপ্রিয়তা’ এবং ‘বুদ্ধিজীবী মহলে প্রগতিশীলতা’ উভয় মানদন্ডে উত্তীর্ণ দলটিই রাস্ট্র ক্ষমতায় আসীন।
স্বাধীনতার সংগ্রামেও এই দলটিই নেতৃত্ব দিয়েছিলো।
একবিংশ শতকের ‘কর্পোরেট’ মানদন্ডেও দলটি ব্যবসা-বান্ধব, তাই কথিত ‘বন্ধু
রাষ্ট্র’ও এটাই স্থির করে দিয়েছে যে, ক্ষমতাসীনদের এই দলটিই এদেশে একমাত্র
বিকল্প।
তাই তো “বাংলাদেশকে আমাদের চোখে দেখো” এমন বক্তব্য দিতেও তারা দ্বিধান্বিত হয়নি।
আর জান্তারা কবেই বা জনতার কথা ভেবেছে?
তাই তো জনতার সমর্থনকে থোরাই কেয়ার করে নিশীথিনীর এই দলটি নির্দ্বিধায়
আয়োজন করেছে ভোটের নামে মধ্যরাতের প্রহসনের, যা সূচনা করেছে “মদ্যরাতের
মাদকতা”, যে মাদকতায় দুর্বৃত্তায়নই হয়ে উঠেছে এদেশের একমাত্র সংস্কৃতি; যে
যত বড় মাপের দুর্বৃত্ত, সে তত বড় ক্ষমতাবান।
স্বাধীন ও নিরপেক্ষ
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এদেশে কখনও গড়েই ওঠেনি, তাই তো সুশাসন, সুবিচার বা
সমতার মত ধারণাগুলো এখানে শুধুমাত্র কষ্টকল্পনা।
ব্লাসফেমী সদৃশ
কালো আইনে বাক স্বাধীনতাও বাক্সবন্দী; তারপরও যে কঙ্কালটুকুও ছিলো
দৃশ্যমান, সেটিও একে একে দ্রবীভূত হয়েছে আওয়ামী অপশাসনের ধারাযন্ত্রে, এবং
বিলীন হতে চলেছে ধর্মতন্ত্রের অধীনে। ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আওড়ানো দলটি
আজ আশ্চর্য কাপট্য প্রদর্শন করে বলে, এদেশে শরিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক কোন আইন
কখনই প্রণীত হবেনা।
সস্তা জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে সেনাশাসকেরা যে
সব পরিবর্তন এনেছিলো, যেমন, সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের সংযোজন বা সকল
কর্মকান্ড বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবার মত হাস্যকর বিধানগুলো – সেসব যে রয়ে
যাবে সেটিও আমাদের নিশীথিনী নিজ মুখে, বেশ জোরের সাথেই বলেছেন।
শ্রেণীস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ আর ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে
সকল মুক্তিযোদ্ধারা যেমন চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা থাকেনা, নৈতিক মূল্যবোধের
বিন্দুমাত্র চর্চা না করা, আওয়ামী লীগ নামের ক্ষমতালিপ্সু দলটিও আজ চরিত্র
হারিয়ে ও অবস্থান বদলে দাঁড়িয়েছে রাজাকারদের দলেরই কাতারে।
আর তাইতো
চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এবং তাদের বংশধরেরা যে শুধুমাত্র দলের
গুরুত্বপূর্ণ আসনেই বসছে তা নয়, বৈবাহিক সম্পর্কসুত্রে হয়ে উঠেছে পরিবারের
সদস্যও।
৭১ এর যে শ্রেণীটি হত্যা করতে চেয়েছিল এদেশের বুদ্ধিজীবীদের, সৃষ্টি করতে চেয়েছিল বুদ্ধিবৃত্তিক শুন্যতা, আজ সেই পথ ধরে, তাদেরই সহযোগী শক্তি হিসেবে আওয়ামী লিগ নামের দলটি পুরন করে চলেছে সেই লক্ষ্যটি।
বুদ্ধিজীবীরা এদেশে আজ হয় দলদাস, অথবা ব্রাত্য ও ত্যাজ্য ।
একদা বিএনপি’র সময়ে শুনেছিলাম “আমরা সবাই তালিবান, বাংলা হবে আফগান” শ্লোগানটি, আশংকা করি আওয়ামী লিগের অধীনে জয়বাংলা শ্লোগানটি পরিবর্তিত হয়ে পরিণত হবে “জয় বাংলাস্তান” শ্লোগানে।
শেষার্থে, এদেশে লাভবান হয়েছে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী শক্তিটিই; আজকের বাংলাদেশ অপেক্ষমাণ একটি থিওক্র্যাটিক বিপ্লবের।
Leave a Reply