কেউ আকাম করলে দোষটা কার? ব্যক্তির।
ব্যক্তির আকামের সাথে যদি তার ধর্ম যুক্ত থাকে, অর্থাত ব্যক্তি যদি ধর্ম মাইনা আকাম করে, তখন ব্যক্তির পাশাপাশি ধর্মেরও দোষ দেই। ঠিক কিনা?
২) একসময় ধার্মিক ছিলাম। ধর্মের সমালোচনা শুনলে রেগে যেতাম। তারপর মাথায় একটু কমনসেন্স আসল। ধর্মগ্রন্থ পড়তে গিয়া ধর্মের ফাঁকগুলা বুইঝা ধর্মরে ফাক করা শুরু করলাম। এখন কেউ ধর্মরে গালি দিলে কিছু যায় আসে না। মানে নাস্তিক হইছি। তো এই নাস্তিকতার উদ্দেশ্য কী?
৩) নাস্তিকতার পথে আইসা শুনলাম নাস্তিকতাই শেষ কথা নয়। এটা মানবতার পথে সামান্য পদক্ষেপ। মানবতা কী? মানববাদ কী?
৪) দল মত ধর্ম বর্ণ জাত পাত লিঙ্গ দেশ সীমানা নির্বিশেষে সবার সমান অধিকারের কথা শুনি। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের সবার সমান অধিকার! তবে বাস্তবতার নিরীক্ষে এটা কতটুকু সম্ভব–কনফিউজ। আমরা বেঁচে থাকার জন্য অন্য উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর নির্ভরশীল। তবে শুধু মানুষ বাদে আর কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ অপ্রয়োজনে কিছু করে বলে মনে হয় না।
৫) সমান অধিকারের কথা যখন আসে, তখন নিশ্চয়ই বৈষম্য আছে। আমরা মনে করি, ধর্ম মানুষে মানুষে বৈষম্য ও ভেদাভেদের সৃষ্টি করে। তাই নাস্তিক হওয়ার পরেও ধর্মের সমালোচনা করি। আরো বলি–ধর্মের পাশাপাশি আছে সীমানা বা রাষ্ট্র। অনেকে তাই ধর্মের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও অস্বীকার করেন।
৬) রাষ্ট্র কে বানালো? সবলের হাতে যখন ক্ষমতা গেলো, তখন দুর্বলের অধিকার হরণ, ও তাদেরকে শাসন-শোষণের একটা হাতিয়ার হিসেবে তৈরী হয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সেই সাথে ধর্ম। পুরো বিষয়টার পেছনে পুরুষতন্ত্র। দল মত ধর্ম বর্ণ জাত পাত লিঙ্গ দেশ সীমানাসহ যত ভেদাভেদ দেখেন, এসবই দুর্বলকে শাসন ও শোষণ করার জন্য সবলের হাতিয়ার। এই সবলরা কারা? পুরুষ, এবং সার্বিকভাবে পুরুষতন্ত্র।
৭) পুরুষ হিসেবে সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটা ভোগ করি, সেটা হলো–ধর্ষিত হওয়ার ভয় নেই। (যদিও শিশুকালে ভয় থাকে যৌননির্যাতনের শিকার হওয়ার, কিন্তু সে ভয়টাও মূলত আসে পুরুষদের কাছ থেকেই।) এছাড়াও সমাজে লিঙ্গ-বৈষম্যের কোনো শেষ নাই।
8) নিজে বিয়েপ্রথা মানতাম না, তবুও বিয়ে করেছি। বাচ্চাকাচ্চা-সংসার চাইনি। তাও কিভাবে যেন করতে হচ্ছে। নাস্তিক হওয়ার পরে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আর বুদ্ধদেবকে বউ-বাচ্চা ত্যাগ করে আসার জন্য কত সমালোচনা করছি, এখন নিজেই ভাবি কখন বউ-বাচ্চা-সংসার ছেড়ে পালাবো। বউ একা একা তার বাচ্চাকাচ্চা সামলায়। আর আমি পালানোর পথ খুঁজি। বিষয়টা অমানবিক! তবুও উলটা বউয়ের ঘাড়ে দোষ চাপাই, গালাগালি করি, কথায় জব্দ করার চেষ্টা সবসময়। গায়ে হাত না তুললেও অকারণেই গায়ে হাত তোলার ইচ্ছে জাগে। অনেকে তোলেনও। কিন্তু কেনো? পুরুষতন্ত্র।
৯) মডারেট মুসলমানরা নিজেরা জঙ্গি হয় না, কিন্তু জঙ্গিদের সমালোচনাও করে না। ধর্মের ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দিলেও তারা উলটা ধর্মের সাফাই গায়। আমি পুরুষ। নিজে পুরুষতন্ত্র থেকে বের হতে না পারলেও কেউ যখন পুরুষতন্ত্রের সমালোচনা করে, ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়–অন্তত সেগুলো স্বীকার করি। এই সৎ সাহসটুকু আছে।
১০) শিশুদের জন্য যদি আলাদা আন্দোলন হয়, আমি আলাদা ভাবেই থাকব। কারণ আমি জানি ওরা বৈষম্যের শিকার। সেই একই ভাবে পশুপাখি, বনজঙ্গল, সমপ্রেমী, রূপান্তরকামী, সংখ্যালঘু, গরীব, হিন্দু, পাহাড়ি, আদিবাসী, সাঁওতাল–এরা সবাই কোনো না কোনো ভাবে বৈষম্যের শিকার, সবলদের হাতে অত্যাচারিত হয়। তাই এদের জন্য আলাদা আলাদা আন্দোলনের দরকার হয়। সব সময় এদের পক্ষে আছি। সেই একই ভাবে আমাদের সমাজে নারীরাও বৈষম্যের শিকার, পুরুষতন্ত্র নামক সিস্টেমের শিকার। নিজে পুরুষতন্ত্রের ধারক-বাহক হয়েও তখন নারীদের পক্ষে দাঁড়াই। কিন্তু কেনো?
১১) সবার সমান অধিকার চাই। সবাই সমান ভাবে বাঁচুক। এই চাওয়ার সাথে বিজ্ঞান বা বাস্তবতার সমর্থন না থাকলেও মানবতার প্রশ্নে এই চাওয়াটা না চাইলে দুনিয়ায় মানুষের বিবেক-বুদ্ধি-চিন্তা-চেতনার কোনো জায়গা থাকত না।
১২) এবার যদি মানববাদী হন, মানবতার কথা বলেন, তাহলে আপনার এই মানববাদের মধ্যে কি নারীর অধিকার অন্তর্ভূক্ত? নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী? নারীদের দাবীটা ন্যায্য হলে, কেউ তাদের সেই ন্যায্য অধিকারের পক্ষে কথা বললে আপনাদের চুলকানিটা শুরু হয় ঠিক কিসের কারণে? নারীরা তাদের অধিকার নিয়ে যে যেভাবে পারে চিল্লায়, কথা বলে, লেখালেখি করে। এতে সমস্যা? সমস্যা হলে বলেন–তারা কিভাবে চিল্লাইলে, বললে বা লিখলে আপনাদের কাছে সেগুলা সহিহসম্মত উপায়ে হবে বইলা মনে করেন?
১৩) প্রথম দিকে কেউ নাস্তিক–এটা শুনলেই উচ্ছ্বসিত হইয়া পড়তাম, খুব আপন মনে করতাম। কিন্তু এখন বুঝি, চোর ডাকাত ধর্ষক খুনীও নাস্তিক হতে পারে। জাস্ট একটু কমনসেন্সের ব্যাপার। কিন্তু মানববাদী হওয়ার কঠিন। ব্লগে-ফেসবুকে অনেক নাস্তিক পাইছি, কিন্তু নিজেও মানুষ হইতে পারি নাই, সত্যি বলতে–একটা মানুষের মত মানুষের সন্ধানও পাই নাই।
যে কেউ নাস্তিক হতে পারে। ধর্ম মানে না বইলা শুয়ারের বাচ্চা কুত্তার বাচ্চাগুলাও নাস্তিক হয়। তাই নাস্তিক দেখলে এখন আর উচ্ছ্বসিত হই না।
Leave a Reply