ফেসবুকে আমরা যারা হাউকাউ করি, আমাদের কারো কাছে মূলত কোনো কিছুর ‘সমাধান’ নেই। যা আছে সেটা বড়জোর–নানা মুনির নানা মত…ভাবের আদানপ্রদান…। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোনো ‘ব্যবস্থা’ নেয়ার ক্ষমতা আছে শুধু রাষ্ট্রের… সরকারের… পুলিশ-প্রশাসনের… আর এই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা যখন কেউ বা কোনো দল পালটে দিতে পারছে না, তার মানে কারো কাছে সে সক্ষমতা নেই…
যা হোক, রাষ্ট্র মাঝে মাঝে নাগরিকদের এগিয়ে আসতে বলে–//সামাজিক ভাবে//… অমুক-তমুকদেরকে সামাজিক ভাবে প্রতিহত করুন…
নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে ‘সামাজিক ভাবে’ এগিয়ে আসতে গেলে নাগরিকদের সেই বিষয়ে ‘সচেতন’ হতে হয়।
আমাদের সামাজিক জীবন এখন অনেকটাই ‘সোস্যাল মিডিয়া’ কেন্দ্রিক। এখানে আমরা সামাজিক ভাবে অনেক ইস্যুতে এগিয়ে আসি। কোনো বিষয়ে নিজেদের মতামত দেই, আলোচনা, সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক… এর কোনো শেষ নেই…
তবে কিছু ব্যাপারে আমাদের অনেকের শেষ কথা বলে কিছু থাকতে পারে। যেমন ধর্ষণ। ব্যক্তিগত ভাবে আপনি হয় ধর্ষণের পক্ষে, নয়তো বিপক্ষে। যেমন, নারী-পুরুষের সমান অধিকার–হয় আপনি নারী-পুরুষের সাম্য ও সমান অধিকারের পক্ষে, নয়তো বিপক্ষে। পক্ষে হলে আপনি ব্যক্তিগত ভাবে নারীবাদী… মানুষে-মানুষের সমান অধিকার–এর পক্ষে থাকলে আপনি ব্যক্তিগত ভাবে সাম্যবাদী। (এসব ‘পজেটিভ’ ট্যাগিং-এ আপত্তি থাকলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার।)
এবার আপনার মতো ধর্ষণের বিপক্ষে থাকা অন্য কেউ যদি ধর্ষকের শাস্তি বা অন্য কোনো বিষয়ে আপনার সাথে দ্বিমত করেন, তখন সে কারণে রাগ করে আপনি নিশ্চয়ই ধর্ষকের পক্ষ নিবেন না… তেমনি অন্য কোনো নারীবাদী বা সাম্যবাদীর ভিন্নমতের কারণে নিশ্চয়ই নারীবাদ বা সাম্যবাদ বিষয়ে আপনার যে পূর্ব অবস্থান, সে অবস্থান থেকে সরে আসবেন না।
আপনার অবস্থান পরিবর্তন হলেও সেটা দোষ বা অপরাধের কিছু নয়, কারণ অনলাইনে আমরা কেউ কাউকে “শাস্তি” দিতে পারব না, আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না… অর্থাৎ আমরা “জাজমেন্টাল” হচ্ছি না। (অবস্থান পরিবর্তন হলেও সেটা যার যার বিবেচনা, আমরা বলার কেউ না আসলে। বড় জোর একটা স্নাপশট নিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়তে পারি–বা একটু আলোচনা-সমালোচনা…।)
আপনি আসলে কী, সেটা আপনি জানেন; আমি আসলে কী, সেটা আমি জানি–তবে আমরা যে আসলেই কে কী, তার কিছুটা প্রতিফলন অবশ্যই আমাদের লেখালেখি-কথাবার্তায় দেখা যায়। মন খারাপের কিছু নাই, সবারই কিছু না কিছু দোষ-গুণ থাকেই (নবী বাদে।)
তো ফেসবুকে যেহেতু ব্যক্তি বা ব্যক্তিস্বাধীনতাটাই আসল, নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথেই কথা চালাচালি হয় বেশি, তাই ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গির উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে হয়। কারো দৃষ্টিভঙ্গি আমার কাছে অস্বচ্ছ হলে বা যদি মনে হয় ব্যক্তি নিজেও জানে না তার অবস্থানটা আসলে কী, তখন অবশ্যই প্রশ্ন করব–আপনার লেখালেখির উদ্দেশ্য কী? আপনি আসলে কী চান? বা অমুক বিষয়ে আপনার অবস্থান কী? (বাস্তবে কী হয় না হয়, কী সম্ভব, কী সম্ভব না–এগুলা ভিন্ন ব্যাপার।)
Leave a Reply