‘হিন্দু বিধানে বিয়ে নারীবলি, মুসলমান বিধানে বিয়ে চুক্তিবদ্ধ দেহদান, খ্রিস্টান বিধানে বিয়ে নারীর অস্তিত্ব বাতিল।’– হুমায়ুন আজাদ / নারী
এরপরেও মেয়েদের চোখে বিয়ে ছাড়া আর কিছু দেখি না। কেউ কেউ চোখে একটু হালকা প্রেম-ভালোবাসার আবরণ দিয়ে রাখলেও আড়ালে সেই বিয়ে-সংসার-বাচ্চাকাচ্চার স্বপ্ন। পিচ্চিপিচ্চি মেয়েরাও শুনি দুইদিন ফোনে প্রেমে করেই তিনদিনের মাথায় বাচ্চাকাচ্চার নাম ঠিক করে ফেলে!
সুকুমারী ভট্টাচার্য পড়তে গিয়ে পেয়েছিলাম–সভ্যতার এক পর্যায়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধিই যেখানে মূল কথা হিসেবে সবাই সজ্ঞানে মেনে নিল, সেখানে বন্ধ্যাত্বকে লোকে খারাপ চোখে দেখবে, বা বিবাহযোগ্যা মেয়ে তখনো বাপের ঘরে বসে খাচ্ছে, বিয়ে না করে বাচ্চা উৎপাদন করতেছে না–এটা সমাজের পছন্দ না হওয়ারই কথা। তাই সমাজ কখন ক্ষেপে যায়, খুব সম্ভবত সেই ভয়তেই বাল্যবিবাহের সূত্রপাত। যেন বাচ্চা ধারণ করার সামর্থ হওয়া মাত্রই আর সময় নষ্ট না হয়। তাই পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগেই ‘গৌরীদান’। হিন্দুরা অনেক-কাল ধরে এই জিনিসটি অনুশীলন করে আসছে। এখনো অনেকে করে।
পরের দিকে ইসলামের মূলেও এই জনসংখ্যা বাড়িয়ে আর সবাইরে সংখ্যার দিক দিয়ে হারিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হলে সেখানেও বাল্যবিবাহ আলাদা মাত্রা পায়।
এভাবে মেয়েরা যখন বাচ্চা বানানোর মেশিনে রূপান্তরিত হয়ে গেলো–মেয়েরা বিয়ে হয়ে গেলে স্বামীর ঘরে খাবে আর বাচ্চা পয়দা করবে, তখন মেয়েদের যে আলাদা করে কোনো চাহিদা থাকতে পারে, বা তাদের নিজস্বতা বলে কিছু থাকতে পারে, তারাও যে আর সবার মত মানুষ–সমাজ সেটা ভুলে গেলো। মানুষ ভাবতে লাগল–বাচ্চা পয়দার মেশিনের আবার আলাদা করে সম্পত্তির কী দরকার! সেই থেকে সম্পত্তিতে তাদের অধিকারের বিষয়টাও মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেলো। মেয়েদের ভুলিয়ে দেয়া হলো বা মেয়েরা ভুলে গেলো স্বাবলম্বী হওয়ার গুরুত্ব।
অনেকের কাছে স্তনপান করানোর দৃশ্যটি নাকি পৃথিবীর সুন্দরতম দৃশ্যগুলোর একটা। হুমায়ুন আজাদ বলছেন–কিছু বছর পরে গর্ভে বাচ্চা-ধারণ ও বাচ্চা জন্ম দেয়ার বিষয়টা মানুষের কাছে ‘পাশবিক’ হিসাবে গণ্য হবে। আমার কাছে এখনই ওই স্তনপান করানোর দৃশ্যটিকে পাশবিক বলে মনে হয়।
Leave a Reply