এক আমানুল্লাহকে আমরা চিনি শহীদ আসাদ হিসাবে–হুমায়ূন আহমেদ তার ‘মাতাল হাওয়া’ উপন্যাসটির উৎসর্গ পাতায় লিখেছিলেন–//কোনো মৃত মানুষ মহান আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন। আমানুল্লাহ মোহম্মদ আসাদুজ্জামান। তাঁর রক্তমাখা শার্ট ছিল ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের চালিকাশক্তি।//
আরেক আমান উল্লাকে আমরা চিনি সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত বিখ্যাত ভ্রমণ কাহিনী ‘দেশে বিদেশে’র মাধ্যমে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসাবে নিয়ে কাবুলে যান। তার কাবুলে অবস্থানের শেষ পর্যায়ে ডাকাত বাচ্চায়ে সাকোর আক্রমণে আমানুল্লাহ সরকারের পতন হলে তিনি ফিরে আসেন। সেই সাথে আফগানিস্তানে ঢুকে পড়তে থাকে ‘সত্যিকারের ইসলাম।’
সৈয়দ মুজতবা আলী সে ঘটনা নিজের ভাষায় লিপিবদ্ধ করে গেছেন–//… ফরমান বেরলো। তার মূল বক্তব্য, আমান উল্লা কাফির, কারণ সে ছেলেদের এলজেব্রা শেখাত, ভূগোল পড়াত, বলত পৃথিবী গোল। বিংশ শতাব্দীতে এ রকম ফরমান বেরতে পারে সে কথা কেউ সহজে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু বাচ্চার মত ডাকাত যখন তখ-নশীন হতে পারে তখন এরকম ফরমান আর অবিশ্বাস করার কোনো উপায় থাকে না। শুধু তাই নয়, ফরমানের তলায় মোল্লাদের সই ছাড়াও দেখতে পেলুম সই রয়েছে আমান উল্লার মন্ত্রীদের।//
আমান উল্লার দোষত্রুটি হয়তো ছিল, কিন্তু তাকে গদিচ্যুত করতে বিরোধীরা যে ফরমান জারি করেছিল তাতে তাকে ইসলাম-বিরোধী কাফের হিসাবেই বেশি করে দেখানো হয়েছিল। আমান উল্লাহ কেন কাফের? কারণ, //সে ছেলেদের এলজেব্রা শেখাত, ভূগোল পড়াত, বলত পৃথিবী গোল।// শেষ কথাটা খেয়াল করেন, অর্থাৎ মুসলমানদের বিশ্বাস–পৃথিবী সমতল! এখনকার দিনের মডারেট মুসলমানরা কোরানের নানান ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝতে চায় যে কোরানে যে পৃথিবীকে বিছানার মত সমতল হিসাবে বলা হয়েছে, ওটা আসলে উটের ডিম!
যাই হোক, সৈয়দ মুজতবা আলী সাক্ষ্য দিচ্ছেন–কেউ এলজেব্রা শিখলে, ভূগোল পড়লে, পৃথিবীকে গোল বললে তারা তখন কাফের হিসাবে গণ্য হতেন। অর্থাৎ, যারা বলে বা মানে বা বিশ্বাস করে–পৃথিবী সমতল, তারা কাফের নয়, সত্যিকারের মুসলমান।
Leave a Reply