জঙ্গিদের হামলায় ১৭ বিদেশীদের পাশাপাশি ৩ জন বাংলাদেশী মুসলমানও জবাই হয়েছেন। সাথে আরো দুজন পুলিশ—মারা গেছেন গুলি খেয়ে। পুলিশের কথা বাদ দিলাম। ৩ জন মুসলমানের দিকে চোখ দেই। এরা মারা গেছেন আরবি সুরা মুখস্ত না বলতে পারার এবং হিজাবি না হওয়ার অপরাধে।
এ নিয়ে ফান করে হলেও বলতেছেন, জঙ্গিদের চাপাতি থেকে বাঁচতে সবাই যেন সুরা মুখস্ত রাখে, এবং হিজাব পরে। বলার অপেক্ষায় রাখে না—ব্যাপারটা অনেকেই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। কিন্তু জঙ্গিদের অভিযোগের যে কোনো নির্দিষ্ট টেমপ্লেট নেই! ইসলাম সেই পুরানো যুগের ৫০০টি মালটিপল চয়েজের সিলেবাস নয় যে ওর মধ্য থেকেই ৫০টা প্রশ্ন অবশ্যই কমন পড়বে।
ইসলাম বিশাল একটা শান্তিযজ্ঞ। এখানে কারো ইসলামের সাথেই কারো ইসলামের মিল নেই। যে ৩ জন মুসলমান কোতল হয়েছেন—এদের কেউ কিন্তু নাস্তিক বা ব্লগার ছিল না; তবুও কোতল হয়েছে, কারণ জঙ্গিদের চোখে তাদের ইসলাম সহিহ ছিল না। আবার গ্যারাণ্টি দিয়ে বলা যায়, ওই ৩ জনের মত আরো যত মডারেট মুসলমান আছেন, তাদের চোখে জঙ্গিদের ইসলাম সহিহ নয়। আবার একেক জঙ্গি গ্রুপের কাছে আরেক জঙ্গি-গ্রুপের ইসলামও সহিহ হবে না।
জঙ্গিরা আসছেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে কোতল করার জন্য। তাতে মানুষ বাচুক কি মরুক, তাতে কিছু যায় আসে না তাদের। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাদের চাই লাশ আর রক্ত। তারা সুরা মুখস্ত না বলতে পারার এবং হিজাবি না হওয়ার অপরাধে ৩ জনকে জবাই করল। অনেক মুসলমানই জঙ্গিদের পক্ষ নিয়ে বলছেন, সুরা না মুখস্ত বলতে পারলে, হিজাব না পরলে তো জবাই করবেই! কিন্তু অন্যদের যে সুরা মুখস্ত বলতে পারার পরেও, বা হিজাবি হওয়ার পরেও জবাই করবে না, তার কিন্তু কোনো গ্যারাণ্টি নেই। কারণ সহিহ ইসলাম পালন করতে পারে, এমন মুসলমান দুনিয়ার কোথাও নেই। ভেবে দেখুন তো, যারা বলছেন জঙ্গিদের ইসলাম সহিহ না, আপনারা নিজেরাই কি সহিহ ইসলাম পালন করছেন? তনুর কথাই ধরা যাক। মেয়েটা বোরখা-হিজাব পরার পরেও ধর্ষিত হল, আর অমনি ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে এক পাল মুসলমান দাবী করল, তনুর হিজাব টাইট ছিল, তাই তার ধর্ষিত হওয়া জায়েজ। তেমনি দেখা যাবে, আপনার হিজাবেও কোনো ভুল জঙ্গিরা ধরে ফেলছে, আপনার সুরাপাঠেও ভুল খুঁজে পাবে… টাকনুর উপরে প্যাণ্ট নাই, সুন্নতি দাড়ি নাই, লাল কাপড় পরেছেন, লিপিস্টিক লাগিয়েছেন, নেইল-পালিশ, মেকাপ, হাই হিল, গান, বাদ্য, নাচ, নাটক, সিনেমা, টিভি, ক্যামেরা, অভিনয়, মডেলিং, ছবি, আর্ট, প্রেম, বিএফ-জিএফ, হিজাব নাই, হিজাব আছে বোরখা নাই, বোরখা আছে তবে টাইট কেন, বোরখার রঙ কালো না কেন… মেয়ে হয়ে ঘরের বাইরে বের হয়েছেন কেন, ইত্যাদি বেশরিয়তি কর্মকাণ্ড… জবাই করার অজুহাতের শেষ নেই!
ভয় হচ্ছে আপনাদের জন্য যারা দেশে আছেন। এত সুন্দর একটা দেশ ছিল, অথচ এখন সবার মনে ভয়—কে কখন জবাই হয়! তবু তো এখন ধরে ধরে জবাই করছে, মিডল-ইস্টের মত আত্মঘাটি বোমা দিয়ে পুরো এলাকা, বাস, ট্রেন, এয়ারপোর্ট, মার্কেট, শপিং মল, স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি—এসব উড়িয়ে দেয়া শুরু হলে কী করবেন, কে জানে! যা হোক, জঙ্গিদের হাত থাকে আপনাদের যদি বাঁচার স্পেশাল কোনো উপায় জানা থাকে, আমাদের সাথে শেয়ার করুন, যাতে অন্যরাও সেভাবে নিজেদের জীবন রক্ষা করতে পারে।
Leave a Reply