লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
আমার শ্বশুর সাহেব হজ্জ থেকে ফিরেই নতুন নতুন সুন্নত পালন শুরু করলেন! সকাল-বিকাল ১০/১৫ মিনিট করে মেসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা সেসবের মধ্যে একটি। একদিন প্রশ্ন করলাম: ‘বাবা, এটা নিয়মিত কেন করছেন?’
তিনি হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন: ‘এটা আল্লার রসূল নিয়মিত করতেন; এটা সুন্নত এবং সওয়াবের কাজ!’
আমি বললাম: ‘বাবা, দাঁত পরিষ্কার করা সুন্নত; তখনকার দিনে ব্রাশ না থাকায় আল্লার রসূল মেসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতেন, এখনকার মত ব্রাশ-পেষ্ট থাকলে হয়ত তিনি তা-ই ব্যবহার করতেন! অথচ এমন অনেক কাজ আপনি নিয়মিত করেন, যা সুযোগ থাকার পরেও আল্লার রসূল করতেন না; এবং করতে পছন্দ করতেন না!’
শ্বশুর সাহেব প্রশ্ন করলেন: ‘যেমন?’
আমার কাছে সুন্নত পালনের দলিল শোনার পর থেকে শ্বশুর সাহেব মেসওয়াক করা বাদ দিয়েছেন; আজ সেই গল্পই শোনাবো আপনাদের!
প্রাচীন আরবে প্রাকৃতিক কার্য সমাধা করার জন্য বাড়িতে অথবা বাড়ির সীমানার মধ্যে টয়লেট নামে কিছু ছিল না; আরবের জনগণ সকাল এবং রাতে প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে যেতেন! সিরিয়ায় বাণিজ্য যাত্রায় মুহাম্মদ দেখতে পান, ইহুদি-খ্রিষ্টান জনগণ প্রাকৃতিক কার্য সমাধা করার জন্য টয়লেট নামক অদ্ভুত এক ঘর ব্যবহার করেন! কিন্তু সকল আরববাসীর মতই মুহাম্মদের কাছে টয়লেট করার জন্য বদ্ধ ঘরকে অপছন্দনীয় মনে হওয়ায় তিনি সেটার ধারে কাছে যেতেন না।
আরবের ছেলে-মেয়ে-বুড়ো-বুড়ি এবং মহিলারাও খুব ভোরে ও রাতের বেলায় মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে যেতেন ইনকাম ট্যাক্স দিতে! আরও মজার বিষয় হচ্ছে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের ভেতর একটি পাত্রে প্রস্রাব করে রাখতেন তারা, যা আবার খেয়ে ফেলার ইতিহাসও আছে (অন্য কোনো পর্বে বিস্তারিত)।
মক্কার নব্য মুসলিমগন মদিনায় আসার পর ইহুদি গোত্রদের টয়লেট ঘরের বিষয়টি জানতে পারেন এবং স্বভাবতই তা অপছন্দ এবং কষ্টকর মনে করতে থাকেন; খোলা মাঠে পায়খানা-প্রস্রাব করা আসলেই সুখের! ভাবুন, আপনি বসে আছেন আর নিচ দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে!
নবী মুহাম্মদ নিজে কখনই টয়লেটে প্রাকৃতিক কার্য সমাধা করা পছন্দ করতেন না, আর তাই তিনি টয়লেট নির্মাণ করেননি এবং মদিনার সকল ইহুদি বাসস্থান দখল করার পরেও মুসলিমগন তাদের ছেড়ে যাওয়া টয়লেটগুলো ব্যবহার করতেন না! সুযোগ থাকবার পরেও মুহাম্মদ প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারবার জন্য মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে যেতেন!
শেষ পর্যন্ত বিষয় এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, প্রতিটি মমিন মুসলমানের উচিত, প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারবার জন্য টয়লেট ব্যবহার না করে মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে যাওয়া। টয়েলেট ব্যবহার করা নবী মুহাম্মদের সুন্নত-বিরোধী একটি কাজ হতে বাধ্য, কারণ নবী মুহাম্মদ এবং কোনো সাহাবীই এটা পছন্দ করতেন না!
‘অতএব, বাবা, যদি আপনি মেসওয়াক করা সুন্নত মনে করেন, তবে টয়লেট ব্যবহার বাদ দেওয়া উচিত আপনার আজ থেকেই; কারণ নবী মুহাম্মদের সুন্নত হচ্ছে, টয়লেট ব্যবহারের সুযোগ থাকার পরেও প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারবার জন্য মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে যাওয়া! তাহলে চলুন বাবা, আগামীকাল থেকে দু’জনেই সকাল সকাল নদীর পাড়ে গিয়ে সুন্নত পালন শুরু করি!’
আর এটাই আজকের পর্বের সুন্নত পালনের দলিল! প্রিয় পাঠক, নিজেকে সত্যি সত্যি নবী মুহাম্মদের অনুসারী মনে করলে আগামীকাল থেকে মুহাম্মদের নামে মাঠে-ঘাটে-ঝোপ-ঝাড়ে সুন্নত পালন শুরু করুন! এবং নিজেকে প্রশ্ন করুন, নবী মুহাম্মদের অপছন্দের কাজ করে পাপী হবেন, না’কি সুন্নত পালন করবেন; সিদ্ধান্ত আজ থেকে আপনার।
(চলবে)
Leave a Reply