লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬
{ইসলাম প্রচারের পঞ্চম বর্ষে আবু জেহেলের চাচা, বানু মাখযুম গোত্রের প্রতিনিধি ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা মারা যান; মুহাম্মদের দাদা আব্দুল মুত্তালিবের পর মক্কার প্রধান প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনিই। মুহাম্মদের চাচা আবু-তালিব হাশিম গোত্রের প্রধান হলেও মক্কায় তার আর্থিক প্রভাব ছিলো না; অপর দিকে ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা ছিলেন সবদিক দিয়েই প্রবল পরাক্রমশালী মানুষ! তিনি মনে করতেন; কুরাইশ বংশে যদি কারও নবী হবার যোগ্যতা থাকে, তবে তা তারই আছে!
মুহাম্মদের ৩৫ বছর বয়সের সময় কাবা-ঘর সংস্কার হয়, সে-সময়ে কাবা-ঘর ভেঙে ফেলতে সাহস পাচ্ছিলেন না কেউ; ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা এগিয়ে এসে কাবার ওপরে উঠে ভাঙতে শুরু করেন। যে আবু জেহেলকে ইসলামের প্রধান শত্রু হিসাবে দেখা হয়; তিনি এখনও মুহাম্মদের জীবনের (কোরআন-এর) দৃশ্যপটে আসেননি, কারণ চাচা ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা’র মৃত্যুর পরেই আবু জেহেল বানু মাখযুম গোত্রের প্রতিনিধি হিসেবে ‘দারুন নাদওয়া’-তে কর্তৃত্ব করতে শুরু করেন।
এ পর্বের ৭১ নং প্রকাশের প্রায় পুরোটাই ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা-কে নিয়ে; তিনিই প্রথম মুহাম্মদকে জাদুকর হিসাবে মন্তব্য করেছিলেন। গত কয়েক পর্বে মুহাম্মদের নারী-দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তনের যে ঘটনার কথা বলছিলাম, তা এই ৭৫ নং প্রকাশ থেকেই শুরু হতে থাকে!
অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটো মৃ্ত্যুর ঘটনা ঘটে মক্কায়, ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা’র মৃত্যু মুহাম্মদকে উল্লসিত করে; অপরটি মুহাম্মদকে এতটাই কষ্ট দিতে থাকে যে, সূরায় আয়াতের সংখ্যা ৭০ থেকে এক ধাপে নেমে দাঁড়ায় মাত্র ৩-এ; মুহাম্মদ আপোষকামী হয়ে পড়েন এবং কাবার দেব-দেবীদের মেনে নিতে বাধ্য হন!
গত তিন পর্বে আরবের নারী-দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা; আজ মদিনা/ইয়াসরিব ও তায়েফের নারীদের নিয়ে কথা বলার কথা, কিন্তু নবী মুহাম্মদের জীবনের এই মুহূর্তের ঘটনা বর্ণনা করা জরুরি হওয়ায়, এ পর্বে মক্কা ছেড়ে যাওয়া হচ্ছে না!
কয়েক মাস রোগে ভুগে মুহাম্মদের দুগ্ধপোষ্য শিশু আবদুল্লা মারা যান; মুহাম্মদকে বংশহীন বা লেজকাটা নামে ডাকা হতে থাকে মক্কায়; আবদুল্লা মারা যাবার দেড়-দুই মাস পর সূরা আল কাওসার প্রকাশ করেন মুহাম্মদ। এ প্রকাশের আগ পর্যন্ত মুহাম্মদের মুখে হাসি ছিলো না, এবং এ সময়ে কোনো নতুন আয়াত প্রকাশ করেননি তিনি। সূরা আল কাওসার প্রকাশের পর থেকেই মুহাম্মদের লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটতে থাকে; আগামী কয়েক পর্বে তা অবশ্যই চোখ এড়াবে না আমাদের!
সংযুক্ত ছবিটি পর্ব ৬ এ দেওয়া ১১ নং অংশের জান্নাতুল মালা কবরস্থানের খাদিজার কবর; এখানে মোট তিনটি কবর আছে, সবচেয়ে ছোট বর্গাকার অংশটি মুহাম্মদের প্রথম সন্তান কাশেম/কাশিম-এর কবর; মাঝারি’টি খাদিজার কবর; আর দুটো কবরকে একসাথে রেখে বড় বর্গাকার অংশের কোনো এক জায়গায় আছে মুহাম্মদের দুগ্ধপোষ্য শিশু আবদুল্লা’র কবর। কবরটির নির্দিষ্ট স্থান সনাক্ত করা যায়নি, তাই পুরো জায়গাটিকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।
পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১৭ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা – দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১০ম পাঁচ অংশ। অনুবাদে ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭১ তম প্রকাশ; সূরা আল মুদ্দাসসির (৭৪) (পোশাক পরিহিত), ১১ থেকে ৫৬ আয়াত:
১১. যাকে আমি অনন্য করে সৃষ্টি করেছি, তাকে আমার হাতে ছেড়ে দিন।
১২. আমি তাকে দিয়েছি বিপুল ধন সম্পদ।
১৩. এবং নিত্য সঙ্গী পুত্রগণ।
১৪. এবং তার জীবনকে করেছি সচ্ছল ও সুগম।
১৫. এরপরও সে আশা করে যে, আমি তাকে আরও বেশি দিই।
১৬. না, তা হবে না, সে তো আমার নিদর্শনসমূহের উদ্ধত বিরুদ্ধাচারী।
১৭. আমি সত্বরই তাকে শাস্তির পাহাড়ে আরোহণ করাব।
১৮. সে চিন্তা ভাবনা করল এবং সিদ্ধান্ত নিল,
১৯. অভিশপ্ত হোক সে! কেমন করে সে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল!
২০. আবারো ধ্বংস হোক সে, সে সিদ্ধান্ত নিল কীভাবে!
২১. সে আবার চেয়ে দেখল।
২২. অতঃপর সে ভ্রু কুঞ্চিত করল ও মুখ বিকৃত করল।
২৩. অতঃপর সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল এবং অহংকার করল।
২৪. এবং ঘোষণা করল, এতো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত জাদু ভিন্ন আর কিছু নয়।
২৫. এটা তো মানুষেরই কথা।
২৬. আমি শীঘ্রই তাকে ফেলব জ্বালাময় আগুনে।
২৭. তুমি কি জান, জাহান্নামের আগুন কী?
২৮. এটা অক্ষত রাখবে না এবং ছাড়বেও না।
২৯. উহাতো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে।
৩০. সেখানে নিয়োজিত আছে ঊনিশ জন ফেরেশতা।
৩১. আমি তাদেরকে করেছি জাহান্নামের প্রহরী। কাফিরদের পরীক্ষা স্বরূপ। আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি, যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বর্ধিত হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীরা সন্দেহ পোষণ না করে। এর ফলে যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে, তারা ও কাফিরেরা বলবে: আল্লাহ এই অভিনব উক্তি দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন? এভাবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথ নির্দেশ করেন। তোমার রবের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন। এটা তো মানুষের জন্য সাবধান বাণী।
৩২. কখনই নয়। চাঁদের কসম!
৩৩. রাতের কসম যখন তার অবসান হয়,
৩৪. প্রভাতের কসম, যখন তা উদ্ভাসিত হয়।
৩৫. নিশ্চয়ই জাহান্নাম ভয়াবহ বিপদসমূহের অন্যতম।
৩৬. মানুষের জন্যে সতর্ককারী।
৩৭. তোমাদের মধ্যে যে অগ্রসর হতে চায় কিংবা যে পিছিয়ে পড়ে, তার জন্য।
৩৮. প্রত্যেক ব্যক্তি তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী;
৩৯. কিন্তু ডান পাশের লোকেরা নয়।
৪০. তারা থাকবে জান্নাতে। তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেস করবে
৪১. অপরাধীদের সম্পর্কে
৪২. তোমাদেরকে কিসে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?
৪৩. তারা বলবে: আমরা নামায পড়তাম না,
৪৪. আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দান করতাম না।
৪৫. আমরা সমালোচকদের সাথে সমালোচনা করতাম।
৪৬. আমরা কর্মফল দিন অস্বীকার করতাম
৪৭. আমাদের নিকট মৃত্যুর আগমন পর্যন্ত।
৪৮. অতএব, সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকারে আসবে না।
৪৯. তাদের কী হয়েছে যে, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় উপদেশ হতে?
৫০. তারা যেন ভয়ে সন্ত্রস্ত গাধা,
৫১. সিংহের সামনে থেকে পালাচ্ছে।
৫২. বস্তুতঃ তাদের প্রত্যেকেই কামনা করে যে, তাকে একটি উম্মুক্ত গ্রন্থ দেয়া হোক।
৫৩. কখনও না, বরং তারা পরকালকে ভয় করে না।
৫৪. কখনও না, এটাতো উপদেশ মাত্র।
৫৫. অতএব যার ইচ্ছা, সে ইহা হতে উপদেশ গ্রহণ করুক।
৫৬. আল্লাহর ইচ্ছে ব্যতীত কেউ উপদেশ গ্রহণ করবে না, তিনিই ভয়ের যোগ্য, তিনিই ক্ষমা করার অধিকারী।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭২ তম প্রকাশ; সূরা আল মুয্যাম্মিল (৭৩) (বস্ত্রাচ্ছাদনকারী), ১ থেকে ৯, ১০/১২ বাদে ১৯ পর্যন্ত আয়াত:
১. হে বস্ত্রাচ্ছাদনকারী!
২. রাত্রিতে দণ্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে;
৩. অর্ধরাত্রি অথবা তদপেক্ষা কিছু কম
৪. অথবা তদপেক্ষা বেশি। আর কুরআন আবৃত্তি কর ধীরে ধীরে স্পষ্ট ও সুন্দরভাবে।
৫. আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।
৬. নিশ্চয় রাত-জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী।
৭. দিনের বেলায় তোমার জন্য আছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা।
৮. কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি মগ্ন হও।
৯. তিনি পূর্ব ও পশ্চিমের অধিকর্তা, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই; অতএব তাঁকেই কর্ম-বিধায়ক রূপে গ্রহণ কর।
১২. নিশ্চয় আমার কাছে আছে শিকল ও অগ্নিকুণ্ড।
১৩. আর গলায় আটকে যায় এমন খাবার আর মর্মান্তিক শাস্তি।
১৪. সেই দিনে পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।
১৫. আমি তোমাদের নিকট পাঠিয়েছি রাসূল তোমাদের জন্য স্বাক্ষী স্বরূপ, যেমন রাসূল পাঠিয়েছিলাম ফিরআউনের নিকট।
১৬. তখন ফেরাউন সেই রসূলকে অমান্য করল। ফলে আমি তাকে শক্ত ধরায় ধরলাম।
১৭. অতএব, তোমরা কিরূপে আত্নরক্ষা করবে, যদি তোমরা সেদিনকে অস্বীকার কর, যেদিন বালককে করে দেব বৃদ্ধ?
১৮. যেদিন আকাশ হবে বিদীর্ণ; তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
১৯. এটা উপদেশ। অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৩ তম প্রকাশ; সূরা ত্বোয়া-হা (২০) (ত্বোয়া-হা), ১ থেকে ৫২ আয়াত:
১. ত্ব-হা
২. তোমাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।
৩. বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ।
৪. যিনি পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন, তাঁর নিকট হতে তা নাযিল হয়েছে।
৫. দয়াময় আরশে সমাসীন।
৬. যা আছে আকাশমণ্ডলীতে, পৃথিবীতে, এ দু’য়ের অন্তর্বতী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই।
৭. তুমি যদি উচ্চকন্ঠে বল, তিনি যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।
৮. আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই।
৯. মূসার বৃত্তান্ত তোমার কাছে পৌঁছেছে কি?
১০. যখন সে আগুন দেখল, তখন নিজ পরিবারকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, আশা করি, আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাব।’
১১. অতঃপর যখন সে আগুনের নিকট এলো তখন আহবান করে বলা হল: হে মূসা!
১২. আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ।
১৩. এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, অতএব যা প্রত্যাদেশ করা হচ্ছে, তা শুনতে থাক।
১৪. আমি আল্লাহ! আমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; অতএব আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর।
১৫. কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি তা গোপন রাখতে চাই; যাতে প্রত্যেকেই তার কর্মানুযায়ী ফল লাভ করে।
১৬. সুতরাং যে ব্যক্তি কিয়ামাত বিশ্বাস করে না এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে তাতে বিশ্বাস স্থাপনে প্রবৃত্ত না করে, তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
১৭. হে মূসা, তোমার ডানহাতে ওটা কী?
১৮. সে বলল, ‘এটা আমার লাঠি, আমি ওতে ভর দেই, এর সাহায্যে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা ঝেড়ে দেই, আর এতে আমার আরো অনেক কাজ হয়।’
১৯. আল্লাহ বললেন: হে মূসা, তুমি ওটা নিক্ষেপ কর।
২০. অতঃপর সে তা নিক্ষেপ করল, সাথে সাথে তা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল।
২১. তিনি বললেন: তুমি একে ধর। ভয় কর না, আমি একে এর পূর্বরূপে ফিরিয়ে দেব।
২২. তোমার হাত বগলে রাখ, তা বের হয়ে আসবে নির্মল উজ্জ্বল হয়ে অন্য এক নিদর্শন রূপে; কোনো দোষ ছাড়াই।
২৩. এটা এ জন্য যে, আমি তোমাকে দেখাবো আমার মহানিদর্শনগুলির কিছু।
২৪. ফেরাউনের নিকট যাও, সে দারুণ উদ্ধত হয়ে গেছে।
২৫. মূসা বলল: হে আমার পালনকর্তা আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন।
২৬. আমার কাজকে সহজ করে দিন,
২৭. আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন,
২৮. যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
২৯. আমার জন্য করে দিন একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হতে।
৩০. আমার ভাই হারুনকে।
৩১. তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন।
৩২. এবং তাকে আমার কাজে অংশীদার করুন।
৩৩. যাতে আমরা বেশি করে আপনার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি।
৩৪. এবং আপনাকে স্মরণ করতে পারি অধিক।
৩৫. আপনি তো আমাদের অবস্থা সবই দেখছেন।
৩৬. তিনি বললেন: হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ, তা তোমাকে দেয়া হল।
৩৭. এবং আমি তো তোমার প্রতি আর একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।
৩৮. যখন আমি তোমার মায়ের অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিয়েছিলাম,যা এখানে বর্ণিত হচ্ছে
৩৯. যে, তুমি তাকে সিন্দুকের মধ্যে রাখ, অতঃপর তা নদীতে ভাসিয়ে দাও যাতে নদী ওকে তীরে ঠেলে দেয়, ওকে আমার শত্রু ও তার শত্রু নিয়ে যাবে; আমি আমার নিকট হতে তোমার ওপর ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার দৃষ্টির সামনে প্রতিপালিত হও।
৪০. যখন তোমার বোন এসে বলল: আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব, কে এই শিশুর দায়িত্ব নেবে? তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়; এবং তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে; অতঃপর আমি তোমাকে মনঃপীড়া হতে মুক্তি দিই, আমি তোমাকে বহু পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলে। হে মূসা! এরপরে তুমি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলে।
৪১. এবং আমি তোমাকে আমার নিজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি।
৪২. তুমি ও তোমার ভাই আমার নিদর্শনাবলীসহ যাও এবং আমার স্মরণে শৈথিল্য করো না।
৪৩. তোমরা উভয়ে ফেরআউনের কাছে যাও, সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে।
৪৪. তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে, অথবা ভয় করবে।
৪৫. তারা বলল: হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আশঙ্কা করি যে, সে আমাদের প্রতি জুলুম করবে কিংবা উত্তেজিত হয়ে উঠবে।
৪৬. তিনি বললেন: তোমরা ভয় কর না, আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও দেখি।
৪৭. সুতরাং তোমরা তার নিকট যাও এবং বল: অবশ্যই আমরা তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল। সুতরাং আমাদের সাথে বাণী ইসরাঈলকে যেতে দাও এবং তাদেরকে কষ্ট দিও না, আমরা তো তোমার নিকট এনেছি তোমার রবের নিকট হতে নিদর্শন। এবং শান্তি তাদের প্রতি যারা সৎ পথের অনুসরণ করে।
৪৮. আমাদের প্রতি অহী প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪৯. ফির’আউন বলল: হে মূসা! কে তোমাদের পালনকর্তা?
৫০. মূসা বলল: আমার রাব্ব তিনি যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন; অতঃপর পথ নির্দেশ করেছেন।
৫১. ফির’আউন বলল: তাহলে অতীত যুগের লোকদের অবস্থা কী?
৫২. মূসা বললেন: তাদের খবর আমার পালনকর্তার কাছে লিখিত আছে। আমার পালনকর্তা ভ্রান্ত হন না এং বিস্মৃতও হন না।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৪ তম প্রকাশ; সূরা মারইয়াম (১৯) (মারইয়াম, ঈসা নবীর মা), ১ থেকে ৫৭, ৫৯ থেকে ৭৪ আয়াত:
১. কাফ-হা-ইয়া-আইন-সাদ
২. এটা তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ, তাঁর দাস যাকারিয়ার প্রতি।
৩. যখন সে তার রাব্বকে আহবান করেছিল নিভৃতে।
৪. সে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, আর বার্ধক্যে আমার মস্তক সাদা হয়ে গেছে, হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে ডেকে আমি কখনো বিফল হইনি।
৫. ‘আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’।
৬. যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারিত্ব পাবে ইয়াকূবের বংশের এবং হে আমার রাব্ব! তাকে করুন সন্তোষভাজন।
৭. তিনি বললেন, ‘হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের শুভ সংবাদ দিচ্ছি যার নাম হবে ইয়াহইয়া, পূর্বে এ নামে আমি কাউকে আখ্যায়িত করিনি।’
৮. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, কেমন করে আমার পুত্র হবে অথচ আমার স্ত্রী যে বন্ধ্যা, আর আমিও যে বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে উপনীত।
৯. তিনি বললেনঃ এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলে দিয়েছেন: এটা আমার পক্ষে সহজ। আমি তো পূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি এবং তুমি কিছুই ছিলে না।
১০. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আমাকে একটি নির্দশন দিন। তিনি বললেন তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলবে না।
১১. অতঃপর সে কক্ষ হতে বের হয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলো এবং ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় (আল্লাহর) পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে বলল।
১২. আমি বললাম: হে ইয়াহ্ইয়া! এই কিতাব দৃঢ়তার সাথে গ্রহণ কর; আমি তাকে শৈশবেই দান করেছিলাম জ্ঞান
১৩. এবং আমার নিকট হতে হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা; সে ছিল সাবধানী
১৪. মাতা-পিতার অনুগত এবং সে ছিলনা উদ্ধত, অবাধ্য ছিল না।
১৫. তার প্রতি শান্তি – যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।
১৬. বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লেখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।
১৭. অতঃপর তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে সে পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।
১৮. মারইয়াম বলল: আমি তোমা থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করি যদি তুমি আল্লাহভীরু হও।
১৯. সে বলল: আমি তো শুধু তোমার পালনকর্তা প্রেরিত, যাতে তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করে যাব।
২০. মারইয়াম বলল: কেমন করে আমার পুত্র হবে, যখন আমাকে কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই।
২১. সে বলল: এমনিতেই হবে। তোমার পালনকর্তা বলেছেন, এটা আমার জন্যে সহজসাধ্য এবং আমি তাকে মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন ও আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ স্বরূপ করতে চাই। এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার।
২২. অতঃপর সে গর্ভে সন্তান ধারণ করল এবং ঐ অবস্থায় এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেল।
২৩. প্রসববেদনা তাকে এক খর্জুর বৃক্ষ তলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল; সে বলল: হায়! এর পূর্বে আমি যদি মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি হতে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতাম!
২৪. তখন তাঁর নিচে থেকে তাঁকে ডেকে বললে — ”দুঃখ করো না, তোমার প্রভু অবশ্য তোমার নিচে দিয়ে একটি জলধারা রেখেছেন।”
২৫. ”আর খেজুর গাছের কাণ্ডটি তোমার দিকে টানতে থাক, এটি তোমার ওপরে টাটকা-পাকা খেজুর ফেলবে।
২৬. ‘সুতরাং খাও ও পান করো এবং চোখ জুড়াও। আর লোকজনের কাউকে যদি দেখতে পাও তবে বলো — ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য রোযা রাখার মানত করেছি, কাজেই আমি আজ কোনো লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলব না’।”
২৭. অতঃপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট উপস্থিত হল; তারা বলল: হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করেছ!
২৮. ‘হে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’।
২৯. তখন সে শিশুটির দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু আমরা ঈভাবে তার সাথে কথা বলব’?
৩০. শিশুটি বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন’।
৩১. আমি যেখানেই থাকি, তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতদিন জীবিত থাকি, ততদিন নামায ও যাকাত আদায় করতে।
৩২. আর আমার মাতার প্রতি অনুগত থাকতে এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগা।
৩৩. আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি ও শান্তি থাকবে যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন আমি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব।
৩৪. এই মারইয়ামের পুত্র ঈসা। সত্যকথা, যে সম্পর্কে লোকেরা বিতর্ক করে।
৩৫. সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়। তিনি পবিত্র, মহান। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়।
৩৬. আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং তোমাদের পালনকর্তা। সুতরাং তাঁর ইবাদাত কর, এটাই সরল পথ।
৩৭. অতঃপর দলগুলো তাদের মধ্যে মতভেদ করল। কাজেই সেই ভয়াবহ দিনের উপস্থিতকালে কাফিরদের জন্য ধ্বংস অনিবার্য।
৩৮. তারা যেদিন আমার নিকট আসবে, সেদিন তারা কত স্পষ্ট শুনবে ও দেখবে! কিন্তু সীমা লংঘনকারীরা আজ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।
৩৯. তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যখন সকল সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে; এখন তারা অনুধাবন এবং বিশ্বাস স্থাপন করবে না।
৪০. চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী আমি, পৃথিবীর এবং ওর ওপর যা আছে, তাদেরও এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।
৪১. বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যবাদী ও নবী।
৪২. যখন সে তার পিতাকে বলেছিল, ‘হে আমার পিতা! আপনি কেন এমন জিনিসের ‘ইবাদাত করেন যা শুনে না, দেখে না, আর আপনার কোনো কাজেই আসে না?
৪৩. হে আমার পিতা! আমার কাছে এমন জ্ঞান এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি, কাজেই আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সরল সঠিক পথ দেখাব।
৪৪. হে আমার পিতা, শয়তানের এবাদত করবেন না। নিশ্চয় শয়তান দয়াময়ের অবাধ্য।
৪৫. হে আমার পিতা! আমার ভয় হয় যে, দয়াময়ের ‘আযাব আপনাকে ধরে বসবে, তখন আপনি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবেন।’
৪৬. পিতা বলল: হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার উপাস্যদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? যদি তুমি বিরত না হও, আমি অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে তোমার প্রাণনাশ করব। তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে দূর হয়ে যাও।
৪৭. ইবরাহীম বলল, ‘আপনার প্রতি সালাম, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তিনি আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান।
৪৮. আমি পরিত্যাগ করছি আপনাদেরকে আর আপনারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকেন, তাদেরকে। আমি আমার প্রতিপালককে ডাকি, আশা করি আমি আমার প্রতিপালককে ডেকে বঞ্চিত হব না।’
৪৯. অতঃপর সে যখন তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদাত করত সেই সব হতে পৃথক হয়ে গেল তখন আমি তাকে দান করলাম ইসহাক ও ইয়াকূব এবং প্রত্যেককে নবী করলাম।
৫০. আমি তাদেরকে দান করলাম আমার অনুগ্রহ এবং তাদেরকে দিলাম সমুচ্চ সুখ্যাতি।
৫১. এই কিতাবে উল্লেখিত মূসার কথা বর্ণনা কর, সে ছিল বিশুদ্ধ চিত্ত এবং সে ছিল রাসূল, নবী।
৫২. আমি তাকে আহবান করেছিলাম তূর পর্বতের দক্ষিণ দিক হতে এবং আমি গুঢ় তত্ত্ব আলোচনারত অবস্থায় তাকে নিকটবর্তী করেছিলাম।
৫৩. আমি নিজ অনুগ্রহে তাকে দিলাম তার ভাই হারূনকে, নবীরূপে।
৫৪. এই কিতাবে উল্লেখিত ইসমাঈলের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং সে ছিল রাসূল, নবী।
৫৫. সে তার পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিত আর সে ছিল তার প্রতিপালকের নিকট সন্তুষ্টির পাত্র।
৫৬. এই কিতাবে উল্লেখিত ইদরীসের কথা বর্ণনা কর, সে ছিল সত্যবাদী নবী।
৫৭. এবং আমি তাকে দান করেছিলাম উচ্চ মর্যাদা।
৫৯. তাদের পরে এলো অপদার্থ পরবর্তীরা; তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হল; সুতরাং তারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।
৬০. তারা বাদে যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে। ফলে এরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এদের প্রতি এতটুকু যুলম করা হবে না।
৬১. এটা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।
৬২. সেখানে তারা শান্তি ছাড়া কোন অসার বাক্য শুনবেনা এবং সেখানে সকাল-সন্ধ্যা তাদের জন্য থাকবে জীবনোপকরণ।
৬৩. এই সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদের যারা ধর্মপরায়ণ।
৬৪. আমরা আপনার রবের আদেশ ব্যতীত অবতরণ করিনা; যা আমাদের অগ্রে ও পশ্চাতে আছে এবং যা এই দু’এর অন্তবর্তী তা তাঁরই এবং তোমার রাব্ব কোনো কিছু ভুলেননা।
৬৫. তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের অন্তর্বতী যা কিছু আছে সবারই রাব্ব; সুতরাং তুমি তাঁরই ইবাদাতে ধৈর্যশীল থাক; তুমি কি তাঁর সমগুণ সম্পন্ন কেহকে জান?
৬৬. মানুষ বলে: আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হব?
৬৭. মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি পূর্বে তাকে সৃষ্টি করেছি আর সে তখন কিছুই ছিল না।
৬৮. সুতরাং শপথ তোমার রবের! আমি তো তাদেরকে শাইতানদেরসহ একত্রে সমবেত করবই এবং পরে আমি তাদেরকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের চতুর্দিকে উপস্থিত করবই।
৬৯. অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাকে টেনে বের করবই।
৭০. তারপর আমি তো তাদের মধ্যে যারা জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়ার অধিকতর যোগ্য, তাদের বিষয় ভাল জানি।
৭১. তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা।
৭২. অতঃপর আমি পরহেযগারদেরকে উদ্ধার করব এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দেব।
৭৩. তাদের নিকট আমার সুস্পষ্ট আয়াত আবৃত্তি করা হলে কাফিরেরা মু’মিনদেরকে বলে: দু’দলের মধ্যে কোনটি মর্যাদায় শ্রেয়তর ও মজলিস হিসাবে কোনটি উত্তম?
৭৪. বলুন, যারা পথভ্রষ্টতায় আছে, দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে যথেষ্ট অবকাশ দেবেন; এমনকি অবশেষে তারা প্রত্যক্ষ করবে, যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা আযাব হোক অথবা কেয়ামতই হোক। সুতরাং তখন তারা জানতে পারবে, কে মর্তবায় নিকৃষ্ট ও দলবলে দুর্বল।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭৫ তম প্রকাশ; সূরা আল কাওসার (১০৮) (প্রাচুর্য), ১ থেকে ৩ আয়াত;
১. আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
২. কাজেই তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশে নামায আদায় কর এবং কুরবানী কর,
৩. নিশ্চয়ই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নিবংর্শ/লেজকাটা।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মাঠে নামবেন আবু জেহেল, মুহাম্মদের জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য এই একজনই যথেষ্ট; তবে তার দায় যতটা না আবু-জেহেলের, তার থেকে বেশী মুহাম্মদের মনের; কথায় বলে, ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়!’ নবী মুহাম্মদ এতটাই চাপে পড়বেন সামনে, আবু-বকর সহ অনেকেই দেশ ত্যাগে বাধ্য হবেন; অপেক্ষায় থাকুন, সবে শুরু হচ্ছে মুহাম্মদের দ্বিধার জীবন!
(চলবে)
Leave a Reply