লিখেছেন গোলাপ
“যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।”
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী শর্তে খায়বারের নিরপরাধ ইহুদিদের হত্যা ও বিতাড়িত না করে তাঁদের ভিটে-মাটিতে থাকার অনুমতি প্রদান করেছিলেন, মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর কোন প্রিয় অনুসারী কী কারণে তাঁদের পৈত্রিক ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত করেছিলেন, আদি উৎসের ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই প্রাণবন্ত বর্ণনার আলোকে তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) অব্যাহত বিস্তারিত বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1]
সাইদ বিন আল-মুসায়েদ হইতে > আল-যুহরি হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মামার[৭১৪-৭৭০ খ্রিস্টাব্দ] আমাকে বলেছেন, যা তিনি বলেছেন: [2]
যুবায়ের বিন মুতিম বলেছে: আল্লাহর নবী যখন খায়বারের ভাগের অংশগুলো তাঁর আত্মীয় বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব গোত্রের লোকদের মধ্যে বণ্টন করেন, আমি ও উসমান ইবনে আফফান পদব্রজে যাত্রা করি যতক্ষণে না আমরা আল্লাহর নবীর সম্মুখে এসে উপস্থিত হই ও তাঁকে বলি, “হে আল্লাহর নবী, বানু মুত্তালিব গোত্রের ভাইদের সঙ্গে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়টি আমরা অস্বীকার করি না, যা তাদের মধ্যে থেকে আল্লাহ আপনাকে অধিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু আপনি কি আমাদের ভাইদেরকে বানু মুত্তালিব গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করেননি? আমরা কি নিশ্চিতভাবেই একই পজিশনে নাই? তথাপি আপনি তাদেরকে দিয়েছেন ভাগ ও আমাদেরকে করেছেন বঞ্চিত।” আল্লাহর নবী বলেন, “বাস্তবিকই, জাহিলিয়া যুগ ও ইসলাম আগমনের পর বানু মুত্তালিব গোত্রের লোকেরা আমাকে পরিত্যাগ করেনি। তারা আমাদের সাথে কষ্টভোগ করেছিল। প্রকৃতপক্ষেই বানু হাশিম ও বানু মুত্তালিব গোত্রের লোকেরা একই!” অতঃপর আল্লাহর নবী তাঁর দুই হাতের আঙ্গুলগুলো একত্রে জড়ো করেন (intertwined)।
তারা বলেছেন: ‘আবদ আল-মুত্তালিব বিন রাবিয়া বিন আল-হারিথ বলেছে যে, আল-আব্বাস বিন আবদ আল-মুত্তালিব ও রাবিয়া বিন আল-হারিথ একযোগ হয়ে বলেছিল, “যদি আমরা আমাদের দু’জন যুবক ও ফাদল বিন আব্বাস [মুহাম্মদের চাচাতো ভাই, চাচা আল-আব্বাসের পুত্র(পর্ব-১২)] কে আল্লাহর নবীর কাছে পাঠাই ও তারা তাঁর সাথে কথা বলে, এবং তিনি যদি তাদেরকে এই খয়রাতি সম্পত্তিগুলোর কর্তৃত্ব-ভার দেন; তারা যা দিতে হয়, তা জনগণদের দেবে ও যা মুনাফা করতে পারে, তা করবে।” অতঃপর আল-ফদল ও আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ও আমরা যাত্রা শুরু করি যতক্ষণে না আমরা আল্লাহর নবীর কাছে আসি ও তাঁর সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াই। তিনি দুপুরের সময় আমাদের কাছে আসেন, যখন আমরা তাঁর জন্য লেডি যয়নাবের বাসস্থানে বসেছিলাম। তিনি তাদের কাঁধগুলো ধরেন, ও বলেন, “তোমাদের গুপ্ত উদ্দেশ্যগুলো আমাকে বলো।” যখন তিনি সেখানে প্রবেশ করেন, তারাও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করে ও বলে, “হে আল্লাহর নবী, আমরা আপনার কাছে যে কারণে এসেছি, তা হলো এই যে, আপনি যেন আমাদেরকে খয়রাতি সম্পত্তিগুলোর দায়িত্বভার দেন, যাতে অন্যান্য লোকেরা যেমন মুনাফা করে তেমনটি করা যায়।” আল্লাহর নবী নীরব থাকেন। তিনি তাঁর মাথা উঁচু করে বাড়িটির ছাদের দিকে তাকান, অতঃপর তাদের দিকে এগিয়ে আসেন ও বলেন, “নিশ্চিতই মুহাম্মদ ও মুহাম্মদের পরিবারের জন্য খয়রাতের সম্পদ অনুমোদনযোগ্য নয়। এটি অবশ্যই জনগণের জন্য খয়রাত (Alms)। মাহমিয়া বিন জাযা আল-যুবায়েদি ও আবু সুফিয়ান বিন আল-হারিথ বিন আবদ আল-মুত্তালিব [মুহাম্মদের চাচাতো ভাই, চাচা আল-হারিথের পুত্র (পর্ব-১২)] কে আমার কাছে ডাকো।” তিনি মাহমিয়া-কে বলেন, “একে (আল-ফাদল) তোমার কন্যার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দাও”; এবং তিনি আবু সুফিয়ানকে বলেন, “একে (আবদ আল-মুত্তালিব বিন রাবিয়া বিন আল-হারিথ) তোমার কন্যার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও।” তিনি মাহমিয়া-কে বলেন,” এক-পঞ্চমাংশ অংশ থেকে তুমি তাদেরকে দাম্পত্য উপহার স্বরূপ কিছু দাও,” কারণ তাকে এক-পঞ্চমাংশের অংশে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ইবনে আব্বাস যা বলতো, তা হলো: ‘উমর আমাদের কাছে এই আবেদন করে যে, এই টাকাপয়সা গুলো যেন বিধবাদের বিবাহের জন্য তাদের পরিবারদের সাহায্য ও ঋণ পরিশোধ বাবদ বায় করা হয়। কিন্তু আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা জোর দিয়ে বার বার বলি যে, এর সমস্তই যেন উপস্থাপন করা হয়, সে আমাদের কাছে তা করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করে।
উরওয়া বিন আল-যুবায়ের হইতে > ইয়াযিদ বিন রুমান হইতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মুসাব বিন থাবিত আমাকে যা বলেছেন তা হলো:
আবু বকর, উমর ও আলী এই অংশগুলো অনাথ ও দরিদ্রদের প্রদান করেছিলেন। তাদের মধ্যে কিছু লোক বলেছেন যে, এগুলো আল্লাহর রাস্তায় ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জাম বাবদ খরচ করা হয়েছিল। সরবরাহকৃত ঐ খাদ্যগুলো আল্লাহর নবীর জীবিত অবস্থায় তাঁর এবং আবু বকর, উমর, উসমান ও মুয়াবিয়ার খেলাফতের সময়ে তাদের প্রদত্ত পারিতোষিক হিসাবে প্রদান করা হয়েছিল – আল্লাহ যেন তাদের ওপর শান্তি বর্ষণ করে। ইয়াহিয়া বিন আল-হাকাম তার সময়ে এই পারিতোষিকের পরিমাণ ছয় ভাগ বর্ধিত করেন ও তিনি এই বর্ধিত অর্থ জনসাধারণকে প্রদান করেন। অতঃপর আবান বিন উসমান তা বৃদ্ধি করেন ও তিনি তা লোকদের প্রদান করেন। যে লোকগুলোকে এই জীবিকা প্রদান করা হয়েছিল, তাঁরা হলেন ঐ লোকগুলো, যাঁরা মারা গিয়েছিলেন অথবা যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।
আল্লাহর নবী ও আবু বকরের জীবিত অবস্থায়,
এক ব্যক্তির প্রদত্ত অংশ তার উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হতো।
যখন তা উমর ইবনে খাত্তাবের তত্ত্বাবধানে ছিল,
কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাকে প্রদত্ত পারিতোষিকটি তিনি করায়ত্ত করতেন, অতঃপর তা তিনি হস্তান্তর করতেন না।
[১] তিনি যায়েদ বিন হারিথা ও জাফর বিন আবু তালিব [মুহাম্মদের পালিত পুত্র ও তাঁর চাচাতো ভাই] এর পারিতোষিক করায়ত্ত করেন। আলী ইবনে আবু তালিব সে বিষয়ে তার সাথে কথা বলে, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
[২] যখন তিনি সাফিয়া বিনতে আবদ আল-মুত্তালিব [মুহাম্মদের ফুপু] এর পারিতোষিক করায়ত্ত করেন, সে বিষয়ে আল-যুবায়ের [সাফিয়ার পুত্র, উত্তরাধিকারী] কঠোর ভাষায় তার সাথে কথা বলে, কিন্তু তিনি তা তার কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। যখন সে জোরাজুরি করে, তিনি বলেন, “তোমাকে আমি সেটির কিছু অংশ প্রদান করবো।” যুবায়ের বলে, “না, আল্লাহর কসম, আমার পাওনা একটা খেজুরও আটকে রেখো না!” উমর তাকে তার সম্পূর্ণ অংশটি হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। আল-যুবায়ের বলে, “আমি শুধু সম্পূর্ণ অংশটিই নেবো!”
[৩] উমর মুহাজিরদের তা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন; এছাড়াও তিনি ফাতিমার [মুহাম্মদের কন্যা] পারিতোষিকটিও করায়ত্ত করেন। কেউ একজন এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলে কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোনো কিছু করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।
[৪] উমর নবীর স্ত্রীদের যা প্রদান করতেন, তা হলো তাদের কার্যকলাপের ওপর ভিত্তি করে। যয়নাব বিনতে জাহাশ তার খেলাফতের সময়ে মৃত্যুবরণ করেন ও তিনি তার উত্তরাধিকারীদের তার অংশ মুক্ত হস্তে প্রদান করেন। তা বিক্রয় বা দান করে যা কিছু তারা পেতে পারে তা গ্রহণ করার অনুমতি তিনি তাদের প্রদান করেন। তিনি তার অংশ তার সমস্ত উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করেন, কিন্তু সে ছাড়া অন্য কারও জন্য তিনি তা করার অনুমতি প্রদান করেননি।
কেউ তার অংশ বিক্রয় করলে খরিদা সেই অংশের বিক্রির অনুমোদন দানে তিনি অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “এই বিষয়টি অজানা। হিস্যার অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার অধিকার হয় রহিত, সুতরাং তাদের কোন বিক্রি কীভাবে অনুমোদন পেতে পারে?” শুধুমাত্র আল্লাহর নবীর স্ত্রীরা যা করতে ইচ্ছা করেছিলেন, তাদেরকে তিনি তা করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন।
যখন উসমানের খেলাফতের শাসন আমল ছিল, উসামার [মুহাম্মদের পালিত পুত্র যায়েদ বিন হারিথার পুত্র] সমস্ত অংশ উসামা-কে ফেরত দেয়া হয়, কিন্তু অন্য কারও ব্যাপারে তা করা হয়নি। আল-যুবায়ের তার মা সাফিয়ার অংশের ব্যাপারে উসমানের সঙ্গে কথা বলে, কিন্তু তিনি তা ফেরত দেননি। তিনি বলেন, “যখন তুমি উমরের সাথে কথা বলেছিলে, তখন আমি তোমার সাথে উপস্থিত ছিলাম, উমর তোমাকে তা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিলো, বলেছিলো, “এর কিছু অংশ নাও।” উমর তোমাকে যেটুকু দিতে চেয়েছিল, আমি তার কিছু অংশ তোমাকে দেব; আমি তোমাকে দেবো দুই-তৃতীয়াংশ ও এক-তৃতীয়াংশ রেখে দেবো।” আল-যুবায়ের বলে, “না, আল্লাহর কসম, একটা খেজুরও কম নয়; সমস্ত অংশই ফেরত দাও, নতুবা তা তোমার কাছে রেখে দাও।”
নিজ পিতার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শুয়ায়েব বিন তালহা বিন আবদুল্লাহ বিন আবদ আল-রাহমান বিন আবু বকর আমাকে বলেছেন, তিনি যা বলেছেন:
যখন আবু বকরের মৃত্যু হয়,
[১] তার উত্তরাধিকারী ছিল তার পুত্ররা, যারা তার খায়বারের অংশটি গ্রহণ করে – উমর ও উসমানের খেলাফতের আমলে যার পরিমাণ ছিল ১০০ ওয়াস্ক (wasq) [প্রায় সাড়ে ১৯ মেট্রিক টন।] [3]
[২] তার স্ত্রী উম্মে রূমান বিনতে আমির বিন উয়ায়েমির আল-খানিয়া ও হাবিবা বিনতে খারিজা বিন যাহেদ বিন আবু যুহায়ের-কে তার উত্তরাধিকারী হিসাবে নিযুক্ত করা হয় ওতাদের কাছে তার অংশটি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পাঠানো হয়, আবদ আল-মালিক এর শাসন আমল [৬৮৫-৭০৫ খ্রিস্টাব্দ] কিংবা তার পর পর্যন্ত। অতঃপর তা বন্ধ করে দেয়া হয়।
আবু আবদুল্লাহ বলেছেন: “আমি ইবরাহিম বিন জাফর কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আল্লাহর নবী তাঁর খায়বারের এক-পঞ্চমাংশ কাকে কাকে দান করেছিলেন?’ তিনি বলেছেন, ‘আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে এ বিষয়ে কখনোই জিজ্ঞাসা করো না। এই অংশ থেকে যাকে যা প্রদান করা হয়, সে তা পায় তার মৃত্যুকাল অবধি। অতঃপর তা তার উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা তা বিক্রি করে, ভরণপোষণের জন্য ব্যবহার করে ও উপহার স্বরূপ অন্যকে দান করে। আবু বকর, উমর ও উসমানের শাসন আমলে এটিই হয়েছিল’। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কার কাছ থেকে তুমি এটি শুনেছ?’ জবাবে সে বলে, ‘আমার পিতা ও অন্যান্য লোকদের কাছ থেকে।’
আবু আবদুল্লাহ বলেছেন: “আমি এই ঘটনাটি আবদ আল-রাহমান বিন আবদ আল-আজিজ-এর কাছে উল্লেখ করি, তিনি বলেন, ‘এমন একজন ব্যক্তি যাকে আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনাটি সম্বন্ধে আমাকে যা বলেছে তা হলো, ‘আল্লাহর নবীর পত্নী ও অন্যান্যদের জীবিত অবস্থায় যখন তাদের কেউ মৃত্যুবরণ করতো, উমর তখন তাদের অংশটি বাজেয়াপ্ত করতেন।’ অতঃপর তিনি বলেন, ‘হিজরি বিশ সালে উমরের শাসন আমলে যয়নাব বিনতে জাহাশ মৃত্যুবরণ করেন ও তিনি তার অংশটি বাজেয়াপ্ত করেন; অতঃপর এ বিষয়ে কথাবার্তা হয়, কিন্তু তিনি তার উত্তরাধিকারীদের কাছে তা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। উমর বলেছেন, বাস্তবিকই আল্লাহর নবীর পক্ষ থেকে ঐ ব্যক্তির জীবিতকালে পারিতোষিক বরাদ্দ ছিলো; কিন্তু ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সেটির ওপর তার উত্তরাধিকারীদের কোনো অধিকার ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘উমরের খেলাফতের শাসন আমলে এ বিষয়ে এটিই ছিল তার হুকুম, তার মৃত্যুকাল অবধি। অতঃপর উসমান শাসনভার গ্রহণ করে। আল্লাহর নবী খায়বারে যায়েদ বিন হারিথার জন্য পারিতোষিক নির্ধারণ করেন, যা তার জন্য লিখিতভাবে উল্লেখ ছিল না; অতঃপর যায়েদ যখন মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহর নবী তা উসামা বিন যায়েদ-কে প্রদান করেন।’ আমি বলেছি: সত্যিই যারা এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছে, তাদের কিছু লোক বলেছে: উসামা বিন যায়েদ তার পিতার এই পারিতোষিকের ব্যাপারে উমর ও উসমানের কাছে আবেদন করে, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাকে যেমনটি অবহিত করছি, বিষয়টি ছিলো তেমনই।’ আবু আবদুল্লাহ বলেছেন, “ঘটনাটি ছিল এটিই।”’
ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) এর বর্ণনা:
‘ইবনে উমর (আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন) হইতে বর্ণিত: আল্লাহর নবী (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) খায়বারের জমিগুলো হস্তান্তর করেন (তা থেকে উৎপন্ন ফল ও ফসলের অংশ লাভের নিমিত্তে (এই শর্তে), এছাড়াও প্রতি বছর তিনি তাঁর স্ত্রীদের ১০০ ওয়াস্ক ফল ও ফসল প্রদান করেন: ৮০ ওয়াস্ক খেজুর ও ২০ ওয়াস্ক বার্লি। যখন ওমর খলিফা নিযুক্ত হন, তিনি খায়বার (জমি ও গাছপালা) ভাগ বাটোয়ারা করে দেন; ও তিনি আল্লাহর নবীর (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) স্ত্রীদের এই প্রস্তাব দেন যে, তারা তাদের নিজেদের জন্য এখানকার জমি ও জলাশয়, কিংবা প্রতি বছর বরাদ্দকৃত ঐ পরিমাণ (যা তারা পেয়ে থাকেন) ফল ও ফসল – এ দুটির যে কোন একটি পছন্দ করতে পারে। তারা এ ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হয়। তাদের কেউ কেউ পছন্দ করে জমি ও জলাশয়, কেউ কেউ পছন্দ করে প্রতি বছর বরাদ্দকৃত ঐ পরিমাণ ফল ও ফসল। আয়েশা ও হাফসা ছিলেন তাদের দলে যারা জমি ও জলাশয় পছন্দ করেছিলেন।’
– অনুবাদ, টাইটেল, [**] ও নম্বর যোগ – লেখক।
>>> আদি উৎসের আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে খায়বারের জনপদ-বাসীর যে সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা লুণ্ঠন করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিলেন, তা তারা ভোগ করেছিলেন বংশ পরস্পরায়। মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর লুটের মালের অংশ থেকে যে অংশগুলো তাঁর নিকট আত্মীয়দের দান করেছিলেন, মুহাম্মদ যেখানে নিজে মৃত ব্যক্তির অংশ তার উত্তরাধিকারীদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন, মুহাম্মদের প্রিয় অনুসারী উমর ইবনে খাত্তাব তা বাজেয়াপ্ত করেছিলেন।
মুহাম্মদের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই এই লুটের মালের উত্তরাধিকার ও হস্তান্তর নিয়ে উমর ইবনে খাত্তাব মুহাম্মদের একান্ত নিজস্ব পরিবারের লোকদের বিরুদ্ধে কী ধরনের চরম অবমাননা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ শুরু করেছিলেন, তা আদি উৎসের এই বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট (এ বিষয়ের আরও আলোচনা ‘ফাদাক‘ অধ্যায়ে করা হবে); ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি, উমর ইবনে খাত্তাব বাজেয়াপ্ত করেছিলেন মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের লোকদের অংশগুলো। তিনি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন মুহাম্মদের নিজ কন্যাফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ, ফুপু সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব, চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব, পালিত পুত্র যায়েদ বিন হারিথা ও অন্যান্যদের পারিতোষিক। আলী ইবনে আবু তালিব ও আল-যুবায়েরের বারংবার অনুরোধ উমর প্রত্যাখ্যান করেছিলেন অবলীলায়!
অন্যদিকে, আবু বকরের মৃত্যুর পর আবু বকরের লুটের মালের অংশটি তার উত্তরাধিকারীরা ভোগ করেছিলেন বংশ পরস্পরায়, উমর ও অন্যান্য উমাইয়া শাসনকর্তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে। যে যুক্তিতে উমর তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে মুহাম্মদের নিজস্ব পরিবারের লোকদের উত্তরাধিকারীদের বঞ্চিত করেছিলেন, সেই একই যুক্তিতে আবু বকরের উত্তরাধিকারীরা কি কোনোভাবে মৃত আবু বকরের লুটের মালের মালিকানার হিস্যা পেতে পারেন? আবু বকরের পরিবারের প্রতি ওমর ইবনে খাত্তাবের বদান্যতার কারণ কী, তার আলোচনা ‘উমর ইবনে খাত্তাবের কাপুরুষতা (পর্ব-১৩২)!” পর্বে করা হয়েছে।
মুহাম্মদ কি তাঁর জীবদ্দশায় ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পেরেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁর একান্ত নিজস্ব পরিবার সদস্যদের ওপর তাঁরই প্রিয় অনুসারীরা এমনই প্রত্যক্ষ অবমাননা ও পক্ষপাতদুষ্ট নিপীড়ন শুরু করবেন?
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের প্রাসঙ্গিক অংশ সংযুক্ত করছি।
The detailed continued narrative of Al-Waqidi (748-822 AD): [1]
‘—— Muṣ‛ab b. Thābit related to me from Yazīd b. Rūmān from ‛Urwa b. al-Zubayrthat Abū Bakr, ‛Umar and ‛Alī gave these portions to the orphans and the poor. Some of them said that it was used for weapons and equipment in the way of God. Those food provisions were taken as the payment of the Messenger of God during his life, and during the caliphates of Abū Bakr, ‛Umar, ‛Uthmān and Mu‛āwiya—may God bless them. When it was Yaḥyā b. al-Ḥakam he increased the payment by a sixth of the amount, and he gave the people from the payment that was increased. Then Abān b.‛Uthmān increased it and he gave them with that. Among those who were provided with subsistence were those who died or were killed. During the life of the Prophet and Abū Bakr, one’s provision was transfered to one’s heirs.
When it was under the guardianship of ‛Umar b. al-Khaṭṭāb he took the provisions from those who died and did not transfer them. He took the provisions of Zayd b. Ḥāritha, and Ja‛far b. Abī Ṭālib. ‛Alī b. Abī Ṭālib spoke to him [Page 698] about it, but he refused. When he took the provisions of Safīyya bt. ‛Abd al-Muṭṭalib, al-Zubayr spoke to him about that, and was harsh, but he refused to hand it to him. When he insisted, he said, “I will give you some of it.” Zubayr said, “No, by God, do not hold back a single date and keep it from me!” ‛Umar refused to submit all of it to him. al-Zubayr said, “I will only take all of it!” ‛Umar refused to return it to the Muhājirūn; and he also took from the provisions of Fātima. Someone talked to him about it but he refused to act.
‛Umar gave the wives of the Prophet according to their actions. Zaynab bt. Jaḥshdied during his caliphate, and he gave a free hand concerning her inheritance. He permitted what they made by sale or gift. He transferred that to all of her heirs but he did not permit that for other than her. He refused to allow the sale of those who sold their provisions. He said, “This thing is not known. When one who was supplied with the provisions dies, his rights become void, so how can their sale be permitted?” Only the wives of the Messenger of God were permitted to do what they did.
When it was the caliphate of ‛Uthmān, all of Usāma’s portion was returned to Usāma, but not to the others. al-Zubayr spoke to Uthmān about the provision of his mother, Ṣafiyya, but he would not return it. He said “I was present with you when you spoke to ‛Umar, and ‛Umar refused you, saying, ‘Take some of it.’ I will give you some of what ‛Umar turned in to you; I will give you two thirds and keep a third.” al-Zubayr said, “No by God, not a single date; submit all of it, or keep it.”
Shu‛ayb b. Ṭalḥa b. ‛Abdullah b. ‛Abd al-Raḥmān b. Abī Bakr related to me from his father, who said: When Abū Bakr died, his sons were his heirs and they took his provisions from Khaybar—a hundred wasq during the caliphate of ‛Umar and ‛Uthmān.His wives Umm Rūmān bt. ‛Āmir b. ‛Uwaymir al-Kināniyya and Ḥabība bt. Khārija b. Zayd b. Abī Zuhayr were appointed heirs, [Page 699] and his portion continued to flow to them until it was the time of ‛Abd al-Malik or after him. Then it was stopped.
Abū ‛Abdullah said: I asked Ibrāhīm b. Ja‛far, “To whom did the Messenger of God give from the fifth of Khaybar?” He said, “Do not ask any one but me about it ever. One who was given from it received the provision until he died. Then it was transferred to those who were his heirs. They sold it and ate it and gave gifts. This was during the time of Abū Bakr and ‛Umar and ‛Uthmān.” I said, “From whom did you hear that?” He replied, “From my father and others of my people.” Abū ‛Abdullah said: I mentioned this tradition to ‛Abd al-Raḥmān b. ‛Abd al-Azīz, and he said, “One whom I trust informed me about the tradition that ‛Umar kept those provisions when they died, during the life of the wives of the Prophet and others of them.” Then he said: Zaynab bt. Jaḥsh died in the year twenty during the caliphate of ‛Umar, and he kept her portion, and it was talked about, but he refused to give her heirs. ‛Umar said that indeed there was provision from the Prophet during the person’s life; but that when the person died his heirs had no right to it. He said: That was the command about that during the caliphate of ‛Umar until his death. Then ‛Uthmān took charge. The Prophet had made provision for Zayd b. Ḥāritha from Khaybar, which was not written for him, and when Zayd died the Prophet gave it to Usāma b. Zayd. I said: Indeed, some who narrate about it say: Usāma b. Zayd spoke to ‛Umar and ‛Uthmān about the provision of his father but he was refused. He said: It was not except as I inform you. Abū ‛Abdullah said, “This is the affair.” ——
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] আল-ওয়াকিদির বিস্তারিত বর্ণনা: “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ),ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৯৬-৭০০; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪২-৩৪৪
[2] মামার ইবনে রাশিদ (৭১৪-৭৭০ খ্রিস্টাব্দ] ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খ্রিস্টাব্দ) এর সমসাময়িক এক বিশিষ্ট মুসলিম স্কলার ও ইবনে শিহাব আল যুহরীর (মৃত্যু ৭৪২ সাল) ছাত্র।
[3] One Wasq = 60 Saâ = 252.3456 Liter (194.3 Kilogramm)
১০০ ওয়াস্ক =১০০x১৯৪ কিলোগ্রাম = ১৯,৪০০ কিলোগ্রাম = প্রায় সাড়ে ১৯ মেট্রিক টন।
‘Ibn Umar (Allah be pleased with them) reported: Allah’s Messenger (may peace be upon him) handed over the land of Khaibar (on the condition) of the share of produce of fruits and harvest, and he also gave to his wives every year one hundred wasqs: eighty wasqs of dates and twenty wasqs of barley. When ‘Umar became the caliph he distributed the (lands and trees) of Khaibar, and gave option to the wives of Allah’s Apostle (may peace be upon him) to earmark for themselves the land and water or stick to the wasqs (that they got) every year. They differed in this matter. Some of them opted for land and water, and some of them opted for wasqs every year. ‘Aisha and Hafsa were among those who opted for land and water.’
Leave a Reply