মেক্সিকান/দক্ষিণ আমেরিকার স্পানিশরা শুনি ভাতের সাথে পানির বদলে বিয়ার খায়। নিউইয়র্কে এরা প্রচুর। অনেক শারীরিক পরিশ্রম করে বা করতে পারে এরা। এখানের অলিতে গলিতে বার-রেস্টুরেন্ট। গরমের দিনে রেস্টুরেন্ট লাগোয়া ফুটপাতে বসেও ড্রিঙ্ক করতে দেখা যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে মাতলামি করতে দেখা যায় না বলেই চলে। এরা ড্রিঙ্ক করতেছে, এইটা শো করার জন্য কোনোদিন সেলফি তুইলা ফেসবুকে লোডাবে না। আর লোডাইলেও এই ড্রিঙ্ক করা নিয়া হাউকাউ হবে না। বাংলাদেশের উচ্চবিত্তরা অহরহ ড্রিঙ্ক করে, নিম্নবিত্তের লোকেরাও তাড়ি বা বাংলা চালায়। এরাও কোনোদিন এসবের সেলফি দেয় না। এদের কাছে ব্যাপারটা হাগু করার মত নিত্য-নৈমিত্তিক…সাধারণ একটা ঘটনা।
ঘটনাটা অসামান্য হয় মধ্যবিত্তদের কাছে। একটু ড্রিঙ্ক করার সুযোগ পাইলে সেটা জীবনের বিশাল একটা ইভেন্ট হইয়া যায়। একটা উৎসব উৎসব ভাব কাজ করে। মধ্যবিত্ত মানসিকতার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাপারটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ছবি তুলবে, সেটা সংরক্ষণ করতে পারলে ফেসবুকে আপলোডাবে। আর একদল বুভুক্ষু আবাল সেটা নিয়া কটাক্ষ-হাউকাউ করবে।
সেই আবালদের সামনে যখন বিশিষ্ট মুসলমান হাসিনা-খালেদা-আনজিম চৌধুরীদের কিংবা রাজাকারের বাচ্চাদের ড্রিঙ্ক্ররত ছবি দেখানো হয়, তখন শুরু করে পিছলামি আর ত্যানা প্যাচানি। ইসলামে ড্রিঙ্ক করা হালাল নাকি হারাম–সেইটা নিয়া ভাবতে ভাবতে কনফিউজ হইয়া যাইবে, তারপর এই কনফিউশন দূর করতে নিজেরাই কয়েক পেগ বা বোতল গিলা ঘুম দেবে।
২। উপরের কথাগুলোতে ড্রিঙ্কের জায়গায় চুমু বসিয়ে পড়ে দেখেন–চুমুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম হবে। বিদেশীদের কোনোদিন দেখা যাবে না চুমুর অধিকার নিয়া আন্দোলন করতে। আমাদের দেশের পোলাপানরা যখন বলে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার অধিকার চাই–তখন একটা প্রশ্ন জাগে–এই অধিকার এরা কার কাছে চাইছে? কে এই অধিকার দিবে? আমি কই কি অধিকার চাইতে চাইতে মুখ ব্যথা না কইরা চুমু খাইতে খাইতে মুখ ব্যথা বানাইয়া ফেলেন। এইটা আরো বেশি কার্যকরী।
৩। স্বামী-স্ত্রী বা প্রেমিক-প্রেমিকা হাত ধরাধরি করে হেঁটে যাচ্ছে, একে অন্যকে ভালোবাসছে–এই দৃশ্যগুলো দেখে আপনার ভালো লাগে না? নাকি হিংসা হয়? ধর্মীয় বিধিনিষেধ আসার পরে পরপুরুষের দিকে তাকানোই অপরাধ বলে গণ্য হত, সেখানে এখন প্রেমিক-প্রেমিকারা হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিছুদিন পরে প্রকাশ্যে চুমুও খাবে। হিংসা কইরা লাভ নাই। এই ইচ্ছা আপনারও হয়। কিন্তু নিজের কপালে নাই, তাই অন্যদের বাগড়া দিচ্ছেন। বুঝি বস, সবই বুঝি!
৪। আমরা কোনদিকে আগাচ্ছি? পশ্চিমে নাকি মিডইস্টে। মিডইস্টও কিন্তু দিনকে দিন পশ্চিমেই আগাচ্ছে। লাস্ট কয়েকশ বছরের সভ্যতার গতিপথ হিসাবে করে দেখেন। না পারলে অন্তত কুড়ি-বাইশ বছর আগে যখন ডিস এন্টেনা আসছিল তখনকার বুড়াদের হাউকাউ মনে আছে? কিংবা তারপর ফাইবার অপটিক ক্যাবল কানেকশন নিয়া? বুড়ারা হাউকাউ করবেই। কিন্তু এই বুড়াদের সাথে তথাকথিক প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকারের তথাকথিক শিক্ষিত মুরিদরা কেন লাফাচ্ছে, সেইটা এখনো ক্লিয়ার না। অবশ্য ভোট আর লাইকের হিসাব হইলে আমার কিছু বলার নাই।
৫। কুমার বিশ্বজিতের একটা গান আছে–আমার ভালো থাকার কথা শুনে তোমার কেনো হিংসে হয়, তাহলে কি ধরে নেব তোমার সময় এখন ভালো নয়…
Leave a Reply