মুসলমানদের তোয়াজ না করে বাংলাদেশে হিন্দুদের থাকা সম্ভব নয়। আর যদি উঁচু লেভেলে ব্যবসা-বানিজ্য থাকে, তাহলে তো আরো নয়।
পিনাকি সাব এরকম উঁচু লেভেলের একজন ব্যবসায়ী এবং জ্ঞানী মানুষ। দুদিন আগে তিনি নিচু লেভেলের বেকুব নাস্তিকদের দিকে নজর দিয়েছিলেন। তিনি নাস্তিক তসলিমা নাসরিনকে ধিক্কার জানিয়েছেন। তসলিমা নাসরিনের অপরাধ–পিনাকি সাবের ভাষায়, “উনি একই সাথে বাংলাদেশের মানুষকে “বর্বর” বলেছেন এই দেশে জন্ম নেয়ার জন্য লজ্জিত হয়েছেন।”
তসলিমা নাসরিন মন্ত্রীর ইস্যুতে খুব সম্ভবত ৩টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তার মধ্যে শুধু একটিতে এই বর্বর শব্দটি আসছে। ৫ বার। লজ্জিত হবার ব্যাপারটাও এখানে।–দেখুন–
//…এই দেশ পৃথিবীর অন্যতম বর্বর দেশ… দেশের লক্ষ লক্ষ অশিক্ষিত ধর্মান্ধ বর্বর তাঁকে দেশে ঢুকতে দেবে না… সরকারী দল আর বিরোধী দলের মধ্যে কে কত বেশি ধর্মান্ধ বর্বর, তার প্রতিযোগিতা চলে… লতিফ সিদ্দিকীকে অপসারণ করে ধর্মান্ধ সরকার বুঝিয়ে দিতে চাইছে,…তারাও বর্বর, তারাও কোনও ভিন্ন মতকে বরদাস্ত করে না…. ধর্মান্ধ বর্বরদের দেশটায় আমার জন্ম হয়েছিল, ভাবতেই লজ্জা হয় আমার….//
যারা বর্বরদের মত আচরণ করছে, তাদেরকেই তসলিমা নাসরিন বর্বর বলেছেন। সেই সাথে বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম বর্বর দেশ বলেছেন। যে দেশের বেশির ভাগ লোকে মনে করে কেউ ব্যক্তিগত ভাবে ধর্মের কোনো কিছু বিরোধীতা করলে তাকে দেশে ঢুকতে দেয়া যাবে না, ফাঁসির দাবী করা হয়, কল্লার দাম ঘোষণা হয়—সেসব লোকদের বর্বর বলা যেতেই পারে, এবং বেশিরভাগ জনগণ যখন এমন হয় তখন সে দেশটাকে বর্বর দেশ বলাই যেতে পারে। সর্বোপরি, পিনাকি সাবের আর্গুমেন্টটি ইনভ্যালিড, কেননা তসলিমা নাসরিন তার লেখায় বাংলাদেশের সব মানুষকে “বর্বর” বলেছেন এমনটি পাওয়া যায়নি।
পিনাকি সাব ধর্ম ত্যাগ করেছেন, এমনটি শোনা যায়নি। উল্টো নাস্তিকতার বিরুদ্ধে উঁচু মাত্রায় সরব। সেইসাথে মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষেও উনার উচ্চ লেভেলের কন্ঠ শোনা যায়। যখন কোনো হিন্দুকে একটা দেশে থাকতে হলে, সেই দেশে নিশ্চিন্তে ব্যবসা চালিয়ে যেতে হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের মন রক্ষা করে চলতে হয়, মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে বলতে হয়, নাস্তিকদের কথা ছল-চাতুরী করে ভুল ব্যাখ্যা করে বিরোধীতা করতে হয়, তসলিমা নাসরিনকে ধিক্কার জানিয়ে বাহবা পেতে হয়, তখনি কি প্রমাণ হয়ে যায় না যে সেই দেশটা বর্বরদের অধিকারে?
নিজের জন্মভূমি যখন বর্বরদের অধিকারে চলে যায়, নিজের দেশে সত্য বলার অপরাধে, ভিন্ন মত প্রকাশের অপরাধে যদি দেশান্তরী হতে হয়, তাহলে কেউ কি আক্ষেপ করে হলেও বলতে পারেন না এমন দেশে জন্মানোটা লজ্জার ব্যাপার? ধরলাম সত্য বলাটা তসলিমা নাসরিনের অপরাধ, নিজের ভিন্ন মতামত প্রকাশ করাটা অপরাধ, তাহলে এই দেশ থেকে প্রতিনিয়ত হিন্দুরা বিতাড়িত হচ্ছে, তাদের অপরাধ কী? এই দেশটা যদি বর্বরদের অধিকারে না থাকে তাহলে হিন্দুরা কেনো ভয়ে ভয়ে থাকে? পিনাকি সাবের ভগবান না করুন, এমন পরিণতি যদি উনার জীবনেও নেমে আসে, উনি কি তখনো পারবেন গর্ব করে বাংলাদেশের কথা বলতে? উনি কি তখন তসলিমা নাসরিনের মত এ দেশের মানুষকে বর্বর বলবেন না? এমন দেশে জন্ম বলে লজ্জা পাবেন না? এদেশের সেইসব বর্বর মানুষদের ধিক্কার দিবেন না?
——————————
এখন পর্যন্ত পিনাকি সাবের সেই পোস্টে লাইক দিয়াছেন প্রায় ১২শ জন , এবং পোস্ট শেয়ার দিয়েছেন সোয়া শ’ জনের মতো—যাদের অধিকাংশ পাল্লার লিস্টে আছে…ধিক পাল্লা, ধিক!
Leave a Reply