লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯
বাণিজ্য-ফেরত নিরীহ কুরাইশ কাফেলার উপর রাতের অন্ধকারে মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীদের (মুহাজির) পর পর সাতটি ব্যর্থ হামলা ও অষ্টম বারের সফল “নাখলা” আক্রমণ, তাদের মালামাল লুণ্ঠন ও একজনকে খুন এবং দুইজনকে বন্দী করে এনে মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে ফেরত দেয়ার বিস্তারিত বর্ণনা আগের দুটি পর্বে করা হয়েছে। বিশিষ্ট নিবেদিতপ্রাণ আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় যে সত্যটি অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো:
“মুহাম্মদ ও তাঁর সহকারীরাই ছিল আক্রমণকারী ও আগ্রাসী, কুরাইশরা নয়।“
নাখলা আক্রমণের (জানুয়ারি, ৬২৪ সাল) অল্প কিছুদিন পরেই ইসলামের ইতিহাসের প্রথম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সংঘটিত হয় বদর নামক স্থানে। আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মদিনা গমনের (হিজরত) আঠার মাস পরে। ইতিহাসে তা “বদর যুদ্ধ” নামে বিখ্যাত। তারিখটি ছিল ১৫ই মার্চ ৬২৪ সাল; বরাবর ১৯ শে রমজান (মতান্তরে ১৭ই রমজান), হিজরি দ্বিতীয় বর্ষ। পৃথিবীর প্রায় সকল নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসীকে যদি এই বদর যুদ্ধের কারণ ও প্রেক্ষাপট জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে নির্দ্বিধায় তাঁরা যে জবাবটি দেবেন, তা হলো – কুরাইশরা শত্রুতা বশে অন্যায়ভাবে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর জবরদস্তি আক্রমণ চালিয়েছিল। প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে সকল ইসলাম-বিশ্বাসী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা আগ বাড়িয়ে অন্যায়ভাবে (Offensive) কখনোই কোনো সংঘর্ষ কিংবা যুদ্ধে লিপ্ত হননি। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কুরাইশ ও অন্যান্য অমুসলিমদের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ এবং তাঁর অনুসারীদের যাবতীয় নিষ্ঠুরতা, সংঘর্ষ ও যুদ্ধের কারণ “শুধুই আত্মরক্ষা”! তাঁদের এ বিশ্বাসের উৎস যে শত শত বছরের মিথ্যা ও অপপ্রচারণার ফসল, তা অতি সহজেই বোঝা যায় আদি উৎসের নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসীদেরই রচিত ইতিহাসে। তাঁরা মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থে বদর যুদ্ধের যে কারণ ও প্রেক্ষাপট লিপিবদ্ধ করেছেন, তা হলো নিম্নরূপ:
মুহাম্মদের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থের লেখক মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা:
‘আল্লাহর নবী জানতে পারলেন যে আবু সুফিয়ান বিন হারব ত্রিশ-চল্লিশ জন সঙ্গী সহকারে কুরাইশদের এক বিশাল বাণিজ্য বহর (কাফেলা) নিয়ে সিরিয়া থেকে ফিরছেন, যে বাণিজ্য বহরে আছে প্রচুর অর্থ ও বাণিজ্য সামগ্রী।
মুহাম্মদ বিন মুসলিম আল-জুহরী, আসিম বিন উমর বিন কাতাদা, আবদুল্লাহ বিন আবু বকর এবং ইয়াজিদ বিন রুমান < উরওয়া বিন জুবাইর এবং আমাদের অন্যান্য স্কলার < ইবনে আব্বাস হইতে বর্ণিত:
তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে সংগ্রহীত বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বদর যুদ্ধের যে কাহিনীগুলো আমি (ইবনে ইশাক) জেনেছি তারই ভিত্তিতে আমি বদর যুদ্ধের এই উপাখ্যান রচনা করেছি। তাঁরা বলেছেন, যখন আল্লাহর নবী জানতে পারলেন যে আবু সুফিয়ান সিরিয়া থেকে ফিরছেন তখন তিনি মুসলমানদের ডেকে পাঠান এবং ঘোষণা করেন, “এই সেই কুরাইশদের ধন-সম্পদ সমৃদ্ধ বাণিজ্য-বহর (কাফেলা)। যাও তাদের আক্রমণ কর, সম্ভবত: আল্লাহ এটি তোমাদের শিকার রূপে দান করবেন।” তারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়; কিছু লোক আগ্রহের সাথে, কিছু লোক অনিচ্ছায়। কারণ আল্লাহর নবী যে যুদ্ধে যেতে পারেন তা তাঁরা চিন্তা করেন নাই।
আবু সুফিয়ান হিজাজের নিকটবর্তী হলে প্রতিটি আরোহীর কাছে তিনি খবর সংগ্রহের চেষ্টা করেন। উৎকণ্ঠিত আবু সুফিয়ান কিছু আরোহী মারফত জানতে পারেন যে, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের আহ্বান করেছেন যেন তাঁরা তাঁকে ও তাঁর কাফেলায় আক্রমণ করে। এই খবরটি জেনে আবু সুফিয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং দমদম বিন আমর আল-গিফারি নামক এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যে এই আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছে, এই খবরটি কুরাইশদের জানানোর জন্য মক্কায় পাঠান; এবং তাকে আদেশ করেন যে, সে যেন কুরাইশদের তাঁদের মালামাল রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান করে। দমদম দ্রুত বেগে মক্কার উদ্দেশ্যে ধাবিত হয়। [1]
(মক্কায় এসে) –দমদম উঠের পিঠে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে চিৎকার করে বলে, “হে কুরাইশ, উটের কাফেলা, উটের কাফেলা! আবু সুফিয়ান ও তাঁর বাণিজ্য কাফেলায় আপনাদের যে যে সম্পদ আছে মুহাম্মদ ও তাঁর সহচররা তা হস্তগত করার অপেক্ষায় আছে। আমার মনে হয় না আপনারা তা রক্ষা করতে পারবেন। হেল্প! হেল্প!” —-
লোকজন দ্রুত প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং বলে, “মুহাম্মদ ও তার সহচররা কি মনে করেছে যে, এটি তাদের ইবনে হাদরামীর কাফেলা আক্রমণের মতই হবে”? আল্লাহর কসম, তারা শীঘ্রই টের পাবে যে এবার সেরূপ হবে না।”[পর্ব ২৯-নাখলা আক্রমণ] প্রত্যেকটি লোক নিজে অংশগ্রহণ করে অথবা তার পরিবর্তে অন্য কাউকে পাঠায়। সবাই অংশগ্রহণ করে। আবু লাহাব বিন আবদ আল-মুত্তালিব ছাড়া কোনো বিশিষ্ট লোকই অংশ গ্রহণে বিরত ছিলেন না। আবু লাহাব নিজে অংশ গ্রহণ করেননি, তিনি তাঁর পরিবর্তে আল-আস বিন হিশাম বিন মুগীরাকে পাঠান। আল-আস তাঁর কাছে চার হাজার দিরহাম ঋণগ্রস্ত ছিলেন, যা তিনি পরিশোধ করতে পারছিলেন না। তাই আবু লাহাব আল-আসকে নিযুক্ত করেছিলেন এই শর্তে যে, তাহলে তিনি আল-আসের ঋণ মওকুফ করবেন। আল-আস বিন হিশাম আবু লাহাবের পরিবর্তে এই অভিযানে অংশ নেন। আবু লাহাব থাকেন বিরত।[2]
(অন্য দিকে) –আবু সুফিয়ান সতর্কতা হেতু তাঁর কাফেলার আগে আগে অগ্রসর হয়ে এক জলাশয়ের নিকটে আসেন। সেখানে তিনি মাজদি বিন আমর নামক এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করে জানার চেষ্টা করেন যে, সে কোনো কিছু দেখেছে কি না। জবাবে মাজদি তাঁকে জানায় যে, দু’জন আরোহী পাহাড়ের ওপর এসে থেমেছিল এবং চামড়ার থলিতে করে পানি নিয়ে ফিরে গিয়েছিল; এ ছাড়া সন্দেহজনক আর তেমন কিছুই সে দেখেনি। আরোহীরা যেখানে থেমেছিল আবু সুফিয়ান সেখানে গমন করেন এবং উটের কিছু লাদি কুড়িয়ে তুলে তা চূর্ণ করে তাতে খেজুরের বিচির সন্ধান পান। তিনি বলেন, “হে আল্লাহ, এ যে দেখি মদিনার পশুখাদ্য।” তিনি তৎক্ষণাৎ তাঁর সঙ্গীদের কাছে ফিরে যান এবং তাঁর যাত্রার গতিপথ পরিবর্তন করে বদরকে বামে ফেলে বড় রাস্তার পরিবর্তে সমুদ্র তীরবর্তী পথে যথাসম্ভব দ্রুত গতিতে রওনা হন।’ [3]
>>> মুহাম্মদের যে দু’জন সহচর ঐখানে তাদের উট থামিয়ে আবু সুফিয়ানের কাফেলার সন্ধান করেছিল তাদের নাম আদি ইবনে আল জাগবা এবং বাছবাছ ইবনে আমর। [4]
আল-তাবারীর (৮৩৮-৯২৩ সাল) অতিরিক্ত বর্ণনা:
‘ইবনে হুমায়েদ < ইয়াহিয়া বিন ওয়াদি < ইয়াহিয়া বিন ইয়াকুব হইতে < আবু তালিব < আবু আওয়ান মুহাম্মদ বিন ওবায়েদুল্লাহ আল-থাকাফি < আবু আবদ আল-রহমান আল সুলামি আবদ আল্লাহ বিন হাবিব < আল হান বিন আলী বিন আবু তালিব হইতে বর্ণিত:
লাইলাতুল ফুরকান (৮:৪১), যে দিনটিতে দুই সেনাদল পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল তা হলো ১৭ই রমজান। মুহাম্মদ এবং মূর্তিপূজক কুরাইশদের মধ্যে বদর এবং অন্যান্য যুদ্ধ কিসের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছিল? উরওয়া বিন আল- জুবাইয়ের এর মতে তা ছিল ওয়াকিব বিন আবদ আল্লাহ আল-তামিমি কর্তৃক আমর বিন আল-হাদরামীর খুনের ঘটনা।
বদর যুদ্ধের অনুষঙ্গে উরওয়া বিন আল-জুবাইয়ের উমাইয়া খলিফা আবদ আল মালিক বিন মারওয়ান কে যা লিখেছিলেন, তা হলো (আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় এই চিঠির বিশয়ে ইবনে ইশাক অবহিত ছিলেন না):
‘আপনি আবু সুফিয়ান ও তাঁর বাণিজ্য-কাফেলা অভিযানের পারিপার্শ্বিকতা জানতে চেয়ে আমার কাছে লিখেছেন। আবু সুফিয়ান বিন হারব প্রায় ৭০ জন অশ্বারোহী সহকারে সমস্ত কুরাইশ গোত্রের প্রতিনিধি রূপে সিরিয়া থেকে ফিরছিলেন। সিরিয়াতে তাঁরা ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা সকলেই একত্রে তাঁদের অর্থ ও বাণিজ্য সম্পদ নিয়ে ফিরে আসছিলেন। আল্লাহর নবী এবং তাঁর সহকারীরা এই খবরটি জানতে পারেন। এটি ছিল কুরাইশদেরকে আক্রমণ, নাখলায় ইবনে আল হাদরামীকে খুন ও কিছু কুরাইশকে বন্দি করে নিয়ে আসার পরের ঘটনা; যে বন্দিদের মধ্যে ছিলেন আল মুগীরার এক পুত্র ও তাঁদের মওলা ইবনে কেইসান।
যারা সেই ঘটনার জন্য দায়ী তাঁরা হলেন আবদ আল্লাহ বিন জাহাশ এবং ওয়াকিদ ও তাদের সাথে ছিলেন আল্লাহর নবীর আরও অনুসারী, যাদেরকে তিনি আবদ আল্লাহ বিন জাহাশের সহযোগী রূপে পাঠিয়েছিলেন। ঐ ঘটনা কুরাইশদের করে ক্রোধান্বিত এবং তা আল্লাহর নবী ও কুরাইশদের মধ্যে যুদ্ধ, হানাহানি ও রক্তপাতের সূচনা ঘটায়।
ঐ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীদের সিরিয়া রওনা হওয়ার পূর্বেই। পরবর্তীতে আবু সুফিয়ান ও তাঁর সঙ্গী কুরাইশ অশ্বারোহীরা সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে সিরিয়া থেকে ফেরত আসেন।
যখন আল্লাহর নবী তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তিনি তাঁর সহকারীদের ডেকে পাঠালেন এবং বললেন যে ওদের সাথে আছে প্রচুর ধন-সম্পদ এবং স্বল্পসংখ্যক জনবল। মুসলমানেরা আবু সুফিয়ান ও তাঁর অশ্বারোহী ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে রওনা হয়নি।
তাঁরা চিন্তাও করেননি যে, এটি একটি সহজ লুণ্ঠন-অভিযান ছাড়া আর কিছু হতে পারে। তাঁরা ধারণাও করতে পারেননি যে, কুরাইশদের সঙ্গে তাঁদের কোনো বড় ধরনের যুদ্ধ হতে পারে। এই সম্পর্কেই ঐশী বাণী নাজিল হয়,
৮:৭ – “আর যখন আল্লাহ দু’টি দলের একটির ব্যাপারে তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, সেটি তোমাদের হস্তগত হবে, আর তোমরা কামনা করছিলে যাতে কোন রকম কণ্টক নেই, তাই তোমাদের ভাগে আসুক;–” [5]
আবু সুফিয়ান যখন জানতে পান যে, আল্লাহর নবীর সহচররা তাঁকে মাঝপথে পাকড়াও করার জন্য রওনা হয়েছেন তখন তিনি কুরাইশদের খবর পাঠান, “মুহাম্মদ ও তার সহচররা তোমাদের বাণিজ্য-বহর পাকড়াও করার জন্য আসছে, সুতরাং তোমারা তোমাদের পণ্যদ্রব্য রক্ষা করো।“
যখন কুরাইশরা এই খবরটি জানতে পায়, যেহেতু বনী কাব বিন লুয়াভির বংশধর সকল কুরাইশ গোত্রই (দু’টি গোত্র ছাড়া সমস্ত প্রধান কুরাইশ গোত্র) আবু সুফিয়ানের বাণিজ্য বহরের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, মক্কাবাসীরা এ ঘটনাটির বিষয়ে সম্যক অবহিত ছিলেন। বনী কাব বিন লুয়াভির (কুরাইশ ফিহিরের নাতি) বংশজাত কুরাইশদের মধ্য থেকে লোক সমাগম হয়, কিন্তু বনী আমির গোত্রের অধীন মালিক বিন হিসল গোত্রের অল্প কিছু লোক ছাড়া তাঁদের কোন লোকই অংশগ্রহণ করেননি। আল্লাহর নবী ও তাঁর সহচররা বদর প্রান্তে পৌঁছার আগে এই মক্কা বাহিনীর বিষয়ে কোনোকিছুই জানতেন না। বদর প্রান্তটি ছিল ঐ অশ্বারোহীদের যাত্রাপথে যারা সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে সিরিয়া গিয়েছিলেন। অতর্কিত আক্রমণের ভয়ে ভীত আবু সুফিয়ান তখন বদর প্রান্ত থেকে ফিরে এসে সমুদ্র উপকূলবর্তী পথে যাত্রা অব্যাহত রাখেন।[6]
বানু আদি বিন কাব ও বানু জুহরা ছাড়া প্রতিটি কুরাইশ গোত্রই এই অভিযানে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, এই দুই গোত্র একেবারেই অংশগ্রহণ করেনি। তালিব বিন আবু তালিব অন্যান্য কুরাইশদের সাথে (প্রায় ৯৫০ জন) এই অভিযানে অংশ নেন। সঙ্গের কুরাইশরা তাঁকে বলেন, “হে বনি হাশিম, আমরা জানি যে যদিও তোমরা আমাদের সাথে এসেছ কিন্তু অন্তরে তোমরা মুহাম্মদের পক্ষে।” তাই, তালিব এবং সাথে আরও কিছু লোক মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন।’
আল–তাবারীর মতে, ইবনে আল কালবির উদ্বৃতি মতাবেক:
‘তালিব বিন আবু তালিব তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুরাইশদের সাথে এই অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বন্দী কিংবা মৃত ব্যক্তির তালিকার কোনটিতেই ছিলেন না, তিনি তাঁর পরিবারের কাছেও ফেরত যান নাই। তিনি ছিলেন একজন কবি এবং তিনিই বলেছিলেন:
‘হে প্রভু, যদি যায় তালিব অনিচ্ছায়
এমনই কোন অভিযানে,
কর তাকে অপহরণ, পরাজিত;
অপহারক, বিজেতা না করে।’ [7]
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি – অনুবাদ, লেখক।]
Account of Badr by Muhammad Ibne Ishaq (704-768):
The messenger of God heard that Abu Sufyan b Harb was coming from Syria with a large caravan of Quraysh, containing their money and merchandise, accompanied by some thirty or forty men.
Muhammad bin Muslim Al-Zuhri and Asim bin Umar b Qatada and Abdullah bin Abu Bakr and Yazid b Ruman from from Urwa b Al-Zubayr, and other scholars of ours from Ibne Abbas, each one of them told me some of this story and their account is collected in what I (Ibn Ishaq) have drawn up of the story of Badr. They said that when the apostle heard about Abu Sufyan coming from Syria, he summoned the Muslims and said, ‘This is the Quraysh caravan containing their property. Go out to attack it, perhaps God will give it as a prey.’ The people answered his summons, some eagerly, others reluctantly because they had no thought that the apostle would go to war.
When he got near to the Hijaz, Abu Sufyan was seeking news and questioning every rider in his anxiety until he got news from some riders that Muhammad had called out his companions against him and his caravan. He took alarm at that and hired Damdam b Amr Al-Ghifari and sent him to Mecca, ordering him to call out Quraysh in defence of their property and to tell them that Muhammad was lying in wait for it with his companioins. So Damdam left for Mecca at full speed. — [1]
(Damdam came to Mecca)—The voice of Damdam crying out in the bottom of the Wadi, as he stood upon his camel —saying, ‘O Quraysh, the transport camels, the transport camels! Muhammad and his companioins are lying in wait for your property which is with Abu Sufyan. I do not think that you will overtake it. Help! Help!’—
The men prepared quickly, saying, “Do Muhammad and his companioins think this is going to be like the caravan of Ibn Hadrami? By God they will soon know that it is not so.” Every man of them either went himself or sent someone in his place. So, all went; not one of their nobles remained behind except Abu Lahab b Abd Al Muttalib. He sent in his place Al-As bin Hisham b Al-Mughira who owed him four thousand Dirhams which he could not pay. So he hired him with them with the condition that he should be cleared of his debt. So he went on his behalf and Abu Lahab stayed behind.’ [2]—
(On the other hand) Abu Sufyan went forward to get in front of the caravan as a precautionary measure until he came down to the water, and asked Majdi b Amr if he had noticed anything. He replied that he had seen nothing untoward except merely two riders had stopped on the hill and taken water away in a skin. Abu Sufyan went to the place where they had halted their camels, picked up some camel dung and broke it in pieces and found that it contained date stones. “By God”, he said, “This is the camel fodder of Yathrib.” He returned at once to his Companions and changes the caravan’s direction from the road to the sea shore leaving Badr on the left, travelling as quickly as possible. [3][4]
Al Tabari added:
According to Ibne Humayd <Yahya b Wadih <Yahya b Yaqub < Abu Talib < Abu Awn Muhammad b Ubayd Allah al-Thaqafi < Abu Abd al-Rahman al-Sulami Abd Allh b Habib <Al Haan b Ali b Abu Talib:
The Laylat al-Furqan (8:41), the day when the two armies met was on 17 Ramadan. What provoked the battle of Badr and the other fighting between Muhammad and polytheist of Qurayesh? According to Urwah b al-zubayr, was the killing of Amr b Al-Hadrami by Waqib b Abd Allah al-Tamimi.
The Account of the Greater battle of Badr in the letter of Urwah b al Zubayr to the Umayyad caliph Abl Al-Malik b Marwan as follows:
According to Ali b Nasr b Ali and Abd Al-Warith b Abd Al Samad b <his father < Abban Al-Attar <Hisham b Urwah: Urwah wrote to Abd Al-Malik b Marwan as follows (this letter is an important source, apparently unknown to Ibn Ishaq):
“You have written to me asking about Abu Sufyan and the circumstances of his expedition. Abu Sufiayn b Harb came from Syria at the head of nearly seventy horsemen from all the clans of Quraysh. They had been trading in Syria and they all came together with their money and their merchandise. The messenger of God and his companions were informed about them. This was after fighting had broken out between them and people had been killed, including Abne Al-Hadrami at Nakhla, and some of Quraysh had been taken captive, including one of the sons of al-Mughirah and their mawla Ibne Kaysan. Those responsible were Abd Allah b Jahsh and Waqid together with other companions of the messenger of God whom he had sent out with Abd Allah b Jahsh. This incident had provoked (a state of) war between the messenger of God and Quraysh and was the beginning of the fighting in which they inflicted casualties upon one another; it took place before Abu Sufyan and his companions had set out for Syria.
Subsequently Abu Sufyan and the horsemen of Quraysh who were with him returned from Syria, following the coastal road. When the messenger of God heard about them, he called together his companions and told them of the wealth they had with them and the fewness of their numbers. The Muslims set out with no other object than Abu Sufyan and the hoarsemen with him. They did not think that these were anything but (easy) booty and did not suppose that there would be a great battle when they met them. It is concerning this that God revealed, “And ye longed that other than the armed one might be yours (Quran 8:7)”. [5]
When Abu Sufyan heard that the companions of the messenger of God were on their way to intercept him, he sent to Quraysh (saying), “Muhammad and his companions are going to intercept your caravan, so protect your merchandise”.
When Qurash heard this, since all the clans of Ka’b b Lu’avy [he was the grand son of Qurash Fihr and all the main clan of Quraysh except two were his descendants) were presented in Abu Sufyan’s caravan, the people of Mecca learned towards it. The body of men was drawn from the clans comprised in the Banu Ka’b b Lu’avy but did not contain any of the clan of Amir, except for some of the subclan of Malik b Hisl. Neither the messenger of God nor his companions heard about this force from Mecca until the prophet reached Badr, which was on the route of those horsemen of Quraysh who had taken the coastal road to Syria. Abu Sufyan then doubled back from Badr and kept to the coastal road, being afraid of an ambush at Badr”. [6]
Every clan of Quraysh was represented except for Banu Adi b Ka’b and Banu Zuhra- these two tribes were not represented at all. There was some discussion between Talib bin Abu Talib who was with the army and some of Quraysh. The latter said, “We know O’ Bani Hashim, that if you have come out with us your heart is with Muhammad”. So Talib and some others returned to Mecca.
According to Abu Jafar Al-Tabari: As for Ibn al-Kalbi
Among the narratives I was told on his authority is the following:
Talib b Abi Talib set out for Badr with the polytheists. He was sent out against his will, and he was not among the captives or the dead, and he did not return to his family. He was a poet and he is the one who said:
‘O Lord, if Talib goes on an expediction in one of
these defiles
Let him be plundererd, not the plunderer, conquered
not the the conqueror’. [7]
সহি বুখারী: ভলূউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ২৮৬ (অনেক বড় হাদিস, প্রাসন্গিক অংশ)
আবদুল্লাহ বিন মাসুদ হইতে বর্ণিত:
—– যেদিন বদর যুদ্ধ আসন্ন, আবু জেহেল তার লোকদের যুদ্ধের জন্য এই বলে আহ্বান করে, “যাও তোমাদের কাফেলা রক্ষা করো।“ কিন্তু মক্কা ছেড়ে যাওয়া উমাইয়ার ছিল অপছন্দ। আবু জেহেল তার কাছে আসে এবং বলে, “হে আবু সাফওয়ান! যদি লোকে দেখে যে, তুমি এই জনপদের প্রধান হয়েও পিছিয়ে থাকছো, তবে তারাও তোমাকে অনুসরণ করবে।” আবু জেহেল তাকে যাওয়ার জন্য বার বার সনির্বন্ধ অনুরোধ করতেই থাকে যতক্ষণ না সে (উমাইয়া) রাজী হয় এবং বলে, “যেহেতু তুমি আমার মন পরিবর্তন করতে বাধ্য করলে, আল্লাহর কসম, আমি মক্কার সর্বশ্রেষ্ঠ উটটি কিনবো। — [8] (অনুবাদ লেখক)
সহিবুখারী: ভলূউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ২৮৭
কাব বিন মালিক হইতে বর্ণিত:
আমি তাবুক অভিযান ছাড়া অন্য কোনো অভিযানেই আল্লাহর নবীর সাথে অংশ নিতে ব্যর্থ হইনি। যদিও আমি বদর অভিযানে অংশ গ্রহণ করিনি, কিন্তু আল্লাহর নবী এই অভিযানে অংশগ্রহণে অসমর্থ কাউকেই দোষারোপ করেননি। কারণ আল্লাহর নবী (কুরাইশদের) কাফেলা আক্রমণের জন্য গিয়েছিল, কিন্ত আল্লাহ তাঁদেরকে (মুসলমান) অপ্রতাশিতভাবে (কোনো পূর্ব অভিপ্রায় ছাড়ায়) শত্রুর সম্মুখীন করেছিলো। [9] (অনুবাদ লেখক)
>>> মুহাম্মদ ও তাঁর সহচরদের এসকল অনৈতিক কর্ম-কাণ্ডের ইতিবৃত্ত বর্ণিত হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সবচেয়ে আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ইতিহাসবিদদেরই লেখনীতে। তথাকথিত মডারেট মুসলমানদের অধিকাংশই এ সকল বর্বর, অমানবিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। তদেরকে যখন এ ঘটনা গুলো জানানো হয়, তারা প্রথমেই করেন অস্বীকার, “এ হতেই পারে না! এসব ইসলামের শত্রুদের চক্রান্ত, বিকৃত ইতিহাস…” – ইত্যাদি।
যখন তারা জানতে পারেন এ সকল ঘটনার বর্ণনা বিশিষ্ট মুসলিম লেখকদেরই লেখা, তখন তারা বলেন, “মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী, মুহাম্মদ ইবনে সা’দ প্রমুখদের লিখা ইতিহাস আদৌ নির্ভরযোগ্য নয়!” কেন? কারণটি কী এই যে তাঁরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রাণবন্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, যা আজকের সমাজে চরম নেতিবাচক আচরণরূপে গণ্য? মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ‘সিরাত রসুল আল্লাহর’ বইটিই মুহাম্মদের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ (সীরাত)। বইটি লিখিত হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১১০ বছর পরে। এর আগে মুহাম্মদের ঘটনাবহুল জীবনের যে বিচ্ছিন্ন ইতিহাস পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। সে কারণেই এই বইটিই পরবর্তী লেখক ও ইসলাম ইতিহাসবিদদের মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের “মূল রেফারেন্স।” আর এই বইটিতে মুহাম্মদের নামে প্রচারিত অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক, অর্থহীন, অবাস্তব ও উদ্ভট কল্পকাহিনীর (মোজেজা) পরিমাণ পরবর্তীতে রচিত অন্যান্য মুসলিম ইতিহাসবিদদের “সীরাত”-এর তুলনায় অনেক কম। মুহাম্মদের নামে প্রচারিত এ সকল উদ্ভট অলৌকিক কল্পকাহিনীর (মোজেজা) জনকরা হলেন মুহাম্মদের মৃত্যুপরবর্তী ইসলাম বিশ্বাসীরা। আর সে কারণেই এ সকল অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক, অবাস্তব, উদ্ভট কল্পকাহিনীর পরিমাণ মুহাম্মদের মৃত্যুপরবর্তী সময়ের পরিমাণের সরাসরি সমানুপাতিক (Directly Proportional)। কুরান সাক্ষী, মুহাম্মদ তাঁর ১২-১৩ বছরের মক্কা জীবনে কুরাইশদের বারংবার বহু অনুরোধ সত্ত্বেও একটি মোজেজা ও হাজির করতে পারেননি (বিস্তারিত ২৩-২৫ পর্বে)।
যখন তারা জানতে পারেন এ সকল ঘটনার বর্ণনা বিশিষ্ট মুসলিম লেখকদেরই লেখা, তখন তারা বলেন, “মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী, মুহাম্মদ ইবনে সা’দ প্রমুখদের লিখা ইতিহাস আদৌ নির্ভরযোগ্য নয়!” কেন? কারণটি কী এই যে তাঁরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রাণবন্ত বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন, যা আজকের সমাজে চরম নেতিবাচক আচরণরূপে গণ্য? মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের ‘সিরাত রসুল আল্লাহর’ বইটিই মুহাম্মদের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ (সীরাত)। বইটি লিখিত হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুর প্রায় ১১০ বছর পরে। এর আগে মুহাম্মদের ঘটনাবহুল জীবনের যে বিচ্ছিন্ন ইতিহাস পাওয়া যায়, তার অধিকাংশই কালের গর্ভে হারিয়ে গিয়েছে। সে কারণেই এই বইটিই পরবর্তী লেখক ও ইসলাম ইতিহাসবিদদের মুহাম্মদের জীবন ইতিহাসের “মূল রেফারেন্স।” আর এই বইটিতে মুহাম্মদের নামে প্রচারিত অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক, অর্থহীন, অবাস্তব ও উদ্ভট কল্পকাহিনীর (মোজেজা) পরিমাণ পরবর্তীতে রচিত অন্যান্য মুসলিম ইতিহাসবিদদের “সীরাত”-এর তুলনায় অনেক কম। মুহাম্মদের নামে প্রচারিত এ সকল উদ্ভট অলৌকিক কল্পকাহিনীর (মোজেজা) জনকরা হলেন মুহাম্মদের মৃত্যুপরবর্তী ইসলাম বিশ্বাসীরা। আর সে কারণেই এ সকল অবৈজ্ঞানিক, অযৌক্তিক, অবাস্তব, উদ্ভট কল্পকাহিনীর পরিমাণ মুহাম্মদের মৃত্যুপরবর্তী সময়ের পরিমাণের সরাসরি সমানুপাতিক (Directly Proportional)। কুরান সাক্ষী, মুহাম্মদ তাঁর ১২-১৩ বছরের মক্কা জীবনে কুরাইশদের বারংবার বহু অনুরোধ সত্ত্বেও একটি মোজেজা ও হাজির করতে পারেননি (বিস্তারিত ২৩-২৫ পর্বে)।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয় – এই সিদ্ধান্ত যারা অবলীলায় ঘোষণা করেন, তারা এর চেয়ে অধিক গ্রহণযোগ্য কোনো রেফারেন্স হাজির করতে পারেন না। এই বাস্তবতাকে যে ধর্মবাজরা অস্বীকার করেন, তারাই আবার কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্ব-পুরুষদের প্রতি মুহাম্মদের উপর্যুপরি অসম্মান ও তাচ্ছিল্যে অতিষ্ঠ কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর নব্য অনুসারীদের বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, এই বইগুলোতে উদ্ধৃত যৎকিঞ্চিত সেই ঘটনাগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে, তিলকে সমুদ্রবৎ বৃদ্ধি করেন, কুরাইশদের অমানবিক নির্যাতনের সাক্ষ্য হিসাবে উপস্থিত করেন [বিস্তারিত আলোচনা করবো আইয়্যামে জাহিলিয়াত তত্বে]।
একই সাথে তারা সেই একই বইতে মুহাম্মদের চরিত্রের নেতিবাচক শত শত পৃষ্ঠার বর্ণনাগুলোকে অ-নির্ভরযোগ্য (not authentic) আখ্যা দিয়ে এক ধরনের মানসিক আত্মতুষ্টি অনুভব করেন। কেন তাঁরা এমনটি করেন? কারণ এটাই তাদের অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। ইসলাম বিশ্বাসের অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো ইসলাম-বিশ্বাসীরই এই গণ্ডির বাহিরে যাবার কোনোই সুযোগ নেই।
একই সাথে তারা সেই একই বইতে মুহাম্মদের চরিত্রের নেতিবাচক শত শত পৃষ্ঠার বর্ণনাগুলোকে অ-নির্ভরযোগ্য (not authentic) আখ্যা দিয়ে এক ধরনের মানসিক আত্মতুষ্টি অনুভব করেন। কেন তাঁরা এমনটি করেন? কারণ এটাই তাদের অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। ইসলাম বিশ্বাসের অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো ইসলাম-বিশ্বাসীরই এই গণ্ডির বাহিরে যাবার কোনোই সুযোগ নেই।
যে কোনো ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পর থেকে স্থান ও সময়ের দূরত্ব যতই বৃদ্ধি পায়, সেই ঘটনা বিকৃতির সম্ভাবনা ততই প্রকট হয়। আদি উৎসের বর্ণনা যদি নির্ভরযোগ্য না হয়, তবে পরবর্তীতে লেখা ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা যে আরও ক্ষীণ, তা যে কোনো পক্ষপাতহীন মুক্তমনের মানুষ অতি সহজেই বুঝতে পারেন। বিশেষ করে তা যদি লিখিত না থাকে, প্রচার হয় মুখে মুখে এবং বিরুদ্ধবাদীদের দমন করা হয় চরম হস্তে।
ইসলাম বিশ্বাসের প্রাথমিক শর্ত হলো, “ইমান! মুহাম্মদের (আল্লাহ) প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস।” সেই ইমানের শর্ত অনুযায়ী জগতের প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসীরই একান্ত কর্তব্য হলো, “মুহাম্মদ (আল্লাহ) ও তাঁর অনুশাসন কে ভালবাসতে এবং নিষেধকে ঘৃণা করতে হবে সর্বান্তকরণে! ইসলামী পরিভাষায় যাকে বলা হয়, “আল ওয়ালা ওয়াল বারা [Al wala wal Bara]।
“Love and hate for the sake of Muhammmad”. [11]
ইসলাম বিশ্বাসের এই প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো ইসলাম-বিশ্বাসীই মুহাম্মদ ও তাঁর কর্মকাণ্ডের “সামান্যতম সমালোচনা” করারও অধিকার রাখেন না।
এমত পরিস্থিতিতে জগতের কোনো ইসলাম বিশ্বাসীর পক্ষেই “মুহাম্মদ ও তাঁর ইসলামের” নির্ভরযোগ্য ইতিহাস রচনা করা কি আদৌ সম্ভব? আদি মুসলিম বর্ণনাকারী (যাদের কাছ থেকে এই ঘটনাগুলো সংগ্রহীত) এবং ইতিহাসবিদরা মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থে এসব ঘটনার উল্লেখ ও বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদের শৌর্য-বীর্য ও বুদ্ধিমত্তার উপাখ্যান হিসাবে। তাঁদের পক্ষে ধারণা করাও সম্ভব ছিল না যে, শত-সহস্র বছর পরে এই ঘটনাগুলো মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের অমানবিক ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য দলিল হিসাবে আখ্যায়িত হবে।
সংক্ষেপে, ইসলামের ইতিহাসের আদি উৎসের পর্যালোচনার ভিত্তিতে যে সত্যে আমরা উপনীত হতে পারি, তা হলো:
১) নাখলা ও নাখলা পূর্ববর্তী ঘটনার মতই বদর যুদ্ধে আগ্রাসী আক্রমণকারী ব্যক্তিটি হলেন মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল্লাহ ও তাঁর অনুসারী, কুরাইশরা নয়। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল নাখলা অভিযানের অনুরূপ হামলায় আবু সুফিয়ান বিন হারবের নেতৃত্বে সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনকারী কুরাইশদের বাণিজ্য-ফেরত সকল মালামাল লুন্ঠন; আরোহীদের খুন, পরাস্ত এবং বন্দী করে ধরে নিয়ে এসে তাঁদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়।
২) এই অভিযানে কুরাইশদের মূল উদ্দেশ্য ছিল – মুহাম্মদ ও তাঁর সহকারীর করাল গ্রাস থেকে আবু সুফিয়ান ও তার সহযাত্রীর (যারা ছিল বিভিন্ন কুরাইশ গোত্রের নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী অথবা বন্ধু-বান্ধব) নিরাপত্তা বিধান এবং তাঁদের জীবিকার অবলম্বন অর্থ ও বাণিজ্য-সামগ্রী রক্ষার চেষ্টা।
৩) বদর যুদ্ধের প্রকৃত কারণ হলো – মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীর উপর্যুপরি আগ্রাসী কর্মকাণ্ড, পথিমধ্যে বাণিজ্য-ফেরত কুরাইশ কাফেলা আক্রমণ, বাণিজ্য সামগ্রী লুণ্ঠন ও তাঁদের প্রিয়জনদের খুন অথবা বন্দী করে মুক্তিপণ দাবীর অনুরূপ অনৈতিক সন্ত্রাসী অপকর্মের পুনরাবৃত্তি রোধে ক্ষতিগ্রস্ত (Victim) কুরাইশদের আত্মরক্ষা ও প্রতিরোধের চেষ্টা।
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি–বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ “এখানে“।
পাদটীকা ও তথ্য সূত্র:
১) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ২৮৯-২৯৬
২) “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) ১২৮৪-১৩০৮
৩) “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬
৪) কিতাব আল–তাবাকাত আল–কাবির – লেখক: মুহাম্মদ ইবনে সা‘দ (৭৮৪–৮৪৫ খৃষ্টাব্দ)‘, অনুবাদ এস মইনুল হক, প্রকাশক কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint), ISBN 81-7151-127-9(set), ভলুউম ২, পার্ট– ১, পৃষ্ঠা ৯-৩০
http://muslim-library.blogspot.com/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html#!/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html
[1] Ibid ইবনে ইশাক পৃষ্ঠা ২৮৯, আল-তাবারী পৃষ্ঠা ১২৯১-১২৯২
[2] Ibid ইবনে ইশাক পৃষ্ঠা ২৯১, আল-তাবারী পৃষ্ঠা ১২৯৫-১২৯৬
[3] Ibid ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ২৯৫-২৯৬, আল-তাবারী পৃষ্ঠা ১৩০৫-১৩০৮
[4] Ibid কিতাব আল–তাবাকাত আল–কাবির –পৃষ্ঠা ২৬
[5]তফসীর ইবনে কাথির:
তফসীর যালালীন ও অন্যান্য:
[6] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল তাবারী-পৃষ্ঠা ১২৮৪-১২৮৬
[7] হিসাম বিন মুহাম্মদ ইবনে আল কালবি নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলাম-পূর্ব ও সমসাময়িক ইসলাম পরবর্তী সময়ের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার।
[8]সহি বুখারী: ভলূউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ২৮৬
Narrated ‘Abdullah bin Mas’ud:
——- But when the day of (the Ghazwa of) Badr came, Abu Jahl called the people to war, saying, “Go and protect your caravan.” But Umaiya disliked to go out (of Mecca). Abu Jahl came to him and said, “O Abu Safwan! If the people see you staying behind though you are the chief of the people of the Valley, then they will remain behind with you.” Abu Jahl kept on urging him to go until he (i.e. Umaiya) said, “As you have forced me to change my mind, by Allah, I will buy the best camel in Mecca. ——
[9]সহি বুখারী: ভলূউম ৫, বই ৫৯, নম্বর ২৮৭
Narrated Kab bin Malik:
I never failed to join Allah’s Apostle in any of his Ghazawat except in the Ghazwa of Tabuk. However, I did not take part in the Ghazwa of Badr, but none who failed to take part in it, was blamed, for Allah’s Apostle had gone out to meet the caravans of (Quraish), but Allah caused them (i.e. Muslims) to meet their enemy unexpectedly (with no previous intention).
[10] “আল ওয়ালা ওয়াল বারা (Al wala wal Bara)
[11] Love and hate for the sake of Muhammmad
Leave a Reply