লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২
ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষটি সংঘটিত হয় বদর প্রান্তে। এই যুদ্ধের কারণ ও প্রেক্ষাপট, অধিকাংশ কুরাইশ গোত্র ও নেতৃবৃন্দের আক্রমণাত্মক সংঘর্ষে অনীহা ও তার কারণ এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও কুরাইশরা আবু-জেহেলের পীড়াপীড়িতে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের নাখালায় তাঁদের নিরীহ বাণিজ্য কাফেলায় হামলা, মালামাল লুণ্ঠন, আরোহীকে খুন ও বন্দীর প্রতিবাদে পরিশেষে কীরূপে এই যুদ্ধে জড়িত হয়েছিলেন, তার আলোচনা আগের চারটি পর্বে করা হয়েছে। মুহাম্মদের নেতৃত্বে সেদিন তাঁর অনুসারীরা তাঁদেরই নিকট-আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীদের পানিবঞ্চিত তৃষ্ণার্ত-পিপাসিত অবস্থায় প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতায় কীরূপে খুন করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনাও আগের পর্বে করা হয়েছে। মুহাম্মদ ও তাঁর সহচরদের সেদিনের সেই নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিলেন ১৪০ জন কুরাইশ। ৭০ জন কুরাইশকে নৃশংসভাবে করা হয় খুন ও ৭০ জনকে বন্দী। [1]
কুরাইশদের খুন করার পর তাঁদের মৃতদেহগুলো মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা প্রচণ্ড অবমাননা ও অশ্রদ্ধায় একে একে বদরের এক নোংরা শুকনো গর্তে নিক্ষেপ করেন।
আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা সেই সকল ঘটনার বর্ণনা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কিছু উদাহরণ:
উমাইয়া বিন খালাফের লাশ:
‘ইয়াজিদ বিন রুমান < উরওয়া বিন আল-জুবায়ের < আয়েশা হইতে বর্ণিত, শেষ উক্ত জন আমাকে (মুহাম্মদ ইবনে ইশাক) বলেছেন:
যখন আল্লাহর নবী লাশগুলো গর্তে ফেলে দেয়ার আদেশ জারি করেছিলেন, উমাইয়া বিন খালাফের লাশ ছাড়া আর সবার লাশই গর্তে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। বর্মের ভিতরে তার লাশটি ফুলে এমনভাবে ভর্তি হয়ে গিয়েছিল যে নড়া চড়া করার সময় তাঁর বিভিন্ন অংশ খসে পড়ছিল। তাই তাঁর লাশটি যেখানে ছিল, সেখানেই রেখে তাঁরা মাটি ও পাথর চাপা দিয়েছিলেন। যখন লাশ গুলো গর্তে ফেলা হচ্ছিল তখন আল্লাহর নবী দাঁড়িয়ে যান এবং বলেন, “হে গর্ত-বাসী, আল্লাহর হুমকি যে সত্য, তা কি তোমরা উপলব্ধি করছো? কারণ আমি উপলব্ধি করছি যে, আমার আল্লাহ যা প্রতিজ্ঞা করেছে, তা সত্য।” তাঁর অনুসারীরা জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কি মরা মানুষের সাথে কথা বলছেন?” তিনি জবাবে বলেন, তারা জানে যে, আল্লাহর প্রতিজ্ঞা সত্য। —মুসলমানেরা জিজ্ঞেস করে, “হে আল্লাহর নবী, আপনি কি গলিত লাশদের সম্বোধন করছেন?” তিনি বলেন, “তোমাদের শ্রবণ শক্তি তাদের [গলিত লাশের] শ্রবণ শক্তির চেয়ে উত্তম নয়; কিন্তু তারা আমার কথার জবাব দিতে পারে না।”
ওতবা বিন রাবিয়ার লাশ:
‘যখন আল্লাহর নবী লাশগুলো গর্তে ফেলে দেয়ার আদেশ জারি করলেন, [আবু হুদেইফার পিতা] ওতবা বিন রাবেয়ার লাশ গর্তে টেনে নিয়ে আসা হয়েছিল। আমাকে [ইবনে ইশাক] বলা হয়েছে যে, আল্লাহর নবী ওতবার ছেলে আবু হুদেইফা বিন ওতবার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করেন, ছেলেটির মুখটি ছিল বিমর্ষ ও ছলছলে।
তিনি [নবী] বলেন, “আবু হুদেইফা, তোমার আব্বার এই অবস্থাদৃষ্টে সম্ভবতঃ তুমি কিছুটা বিষণ্ণতা অনুভব করছো”, অথবা এ জাতীয় কোন বাক্য। তিনি [আবু হুদাইফা] বলেন, “না। আমার আব্বার ব্যাপারে আমার কোনো সংশয় নাই, সে মৃত। আমি জানতাম যে, আমার আব্বা ছিলেন একজন জ্ঞানী, সুশিক্ষিত ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তাই আমি আশা করেছিলাম যে, তিনি ইসলামে দীক্ষিত হবেন। তাঁর এই পরিণতি এবং অবিশ্বাসী অবস্থায় তাঁর মৃত্যুবরণ হওয়ায় আমি মনঃক্ষুণ্ণ।” আল্লাহর নবী তাঁকে আশীর্বাদ করেন এবং তাঁর সাথে সদয় ভাবে কথা বলেন’। [2] [3] [4]
>>> পাঠক, এই সেই ওতবা বিন রাবিয়ার ছেলে আবু হুদেইফা বিন ওতবা, যিনি বদর যুদ্ধে শুধু তাঁর পিতাকেই হারাননি, হারিয়েছেন তাঁর চাচা সেইবা বিন রাবিয়া এবং ভাই আল-ওয়ালিদ বিন ওতবাকেও। এই সেই ওতবা বিন রাবিয়ার ছেলে আবু হুদেইফা যিনি মুহাম্মদের পক্ষপাতদুষ্ট আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছিলেন, “আমাদেরকে খুন করতে হবে আমাদের পিতাকে, পুত্রকে, ভাইকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে, কিন্তু আব্বাসকে দিতে হবে ছেড়ে?” — পরিণতিতে উমর ইবনে খাত্তাব আবু হুদেইফাকে খুন করার হুমকি দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, “আমি তার গর্দান নেব!” এই ঘটনার পর আবু হুদেইফা এতই ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন যে, তিনি প্রায়ই বলতেন, সেদিনের সেই উক্তির পর তিনি নিজেকে কখনোই নিরাপদ বোধ করতেন না! [পর্ব ৩১-৩২)] সুতরাং, এমত পরিস্থিতিতে আবু হুদেইফা একই দিনে নিজের বাবা, চাচা ও ভাইয়ের নৃশংস খুন হবার পর যতই বিষণ্ণ হোন না কেন, তাঁদের করুণ মৃত্যুতে যত মনঃকষ্টই পান না কেন, তা প্রকাশ করে আবার ও মৃত্যু-ঝুঁকির বলি হতে যে চাইবেন না, তা বলাই বাহুল্য।
সহি বুখারি: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৩১৪
‘আবু তালহা হইতে বর্ণিত:
বদর যুদ্ধের দিন আল্লাহর নবী চব্বিশ জন কুরাইশ নেতৃবৃন্দের লাশ বদরের এক নোংরা শুকনো গর্তে নিক্ষেপ করার আদেশ জারী করেন’।—- [5]
[ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। – অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ – লেখক।]
Corpse of Umayya b Khalaf:
‘Yazid b Ruman from Urwa b al-Zubayr from Ayesha told me that latter said:
When the apostle ordered that the dead should be thrown into a pit, they were all thrown in except Umayya b Khalaf whose body had swelled within his armor so that it filled it and when they went to move him his body disintegrated. So they left it where it was and heaped earth and stones upon it. As they threw them into the pit the apostle stood and said, “O’ people of the pit, have you found that what God threatened is true? For, I have found that what my Lord promised me is true.” His companions asked: “Are you speaking to dead people?” He replied that they knew that what their Lord had promised them was true. —– The Muslims said, “O’ messenger of God, are you addressing peple who have putrified?” He replied, “You hear what I say no better than they, but they can not answer me.”’
Corpse of Utba b Rabiah:
When the apostle gave the order for them to be thrown into the pit Utba b Rabiah (father of Hudhayfa) was dragged to it. I (Ibn Ishaq) have been told that the apostle looked at the face of his son Abu Hudhayfa b Utba, which was sad and his color had changed.He said, “Abu Hudhayfa, perhaps some sadness has entered you on account of your father,” or words to that effect. “No” he said, “I have no doubt about my father and his death. But I used to know my father as a wise, cultured and virtuous man and so I hoped that he would be guided to Islam. When I saw what had befallen him and that he had died in unbelief after my hopes for him it saddened me.” The apostle blessed him and spoke kindly to him. [2] [3] [4]
>>> স্বঘোষিত আখেরি নবী মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহর আদেশে তাঁর সহচররা তাঁদেরই (মুহাম্মদের মক্কাবাসী সহচর) নিকট-আত্মীয়, পরিবার পরিজনদের অমানুষিক নিষ্ঠুরতায় খুন, জখম ও মৃত স্বজনদের লাশের অবমাননায় যখন আত্মগ্লানিতে ভুগছিলেন। মুহাম্মদ যথারীতি ঐশী বাণী আমদানি করলেন! এই নৃশংস হত্যা-যজ্ঞের পর মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর শক্তিমত্তার প্রশংসা করে ঘোষণা দিলেন,
“সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহ্ই তাদেরকে হত্যা করেছেন”
মুহাম্মদের ভাষায়,
৮:১৭ – ‘সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি, বরং আল্লাহ্ই তাদেরকে হত্যা করেছেন| আর তুমি মাটির মুষ্ঠি নিক্ষেপ করনি, যখন তা নিক্ষেপ করেছিলে, বরং তা নিক্ষেপ করেছিলেন আল্লাহ স্বয়ং, যেন ঈমানদারদের প্রতি এহসান করতে পারেন যথার্থভাবে| নি:সন্দেহে আল্লাহ শ্রবণকারী; পরিজ্ঞাত’| [6] [7]
>>> ধর্মশাস্ত্রে অশুভ শক্তির প্রতীক হলো “শয়তান”, আর শুভ শক্তির প্রতীক হলো “স্রষ্টা”। স্রষ্টা ও শয়তানে বিশ্বাসী পৃথিবীর প্রায় সকল ধর্মবিশ্বাসীই কোনো “অপকর্ম সম্পাদনের পর আত্ম-গ্লানির” বশবর্তী হয়ে তাঁরা সেই অপকর্মের দায়ভার শয়তানের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন। আর কোনো “সৎকর্ম সম্পাদনের পর আত্মতুষ্টির” বশবর্তী হয়ে তা আরোপ করেন স্রষ্টার উদ্দেশে। এ দৃশ্য আমাদের সবারই পরিচিত। ইসলাম-বিশ্বাসীরাও এর ব্যতিক্রম নয়। অপকর্ম সম্পাদনের পর আল্লাহর শক্তিমত্তার প্রশংসা করে কোনো মুমিন বান্দা নিশ্চয়ই ‘আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)’ বলেন না; বলেন, ‘নাউজুবিল্লা’! একই ভাবে কোনো সৎকর্ম সম্পাদনের পর আল্লাহর শক্তি মত্তার প্রশংসা করে মুমিন বান্দারা বলেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’ জাতীয় কোন শব্দ; নিশ্চয়ই “নাউজুবিল্লা’ নয়! নিজেদেরই একান্ত পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের অমানুষিক নৃশংসতায় হত্যা করা; হত্যা করার পর তাঁদের লাশগুলোকে চরম অবমাননায় নোংরা গর্তে নিক্ষেপ করা; রাতের অন্ধকারে ওৎ পেতে নিরীহ বাণিজ্য-ফেরত কাফেলা ও অমুসলিম জনপদের ওপর আক্রমণ করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন, পরাস্ত, খুন, জখম ও বন্দী করে ধরে নিয়ে এসে মুক্ত মানুষকে চিরদিনের জন্য দাস-দাসীতে রূপান্তরিত করা – পৃথিবীর সকল সভ্য সমাজেই কুৎসিত অপকর্ম রূপেই চিহ্নিত। এ সকল “সর্বজনগ্রাহ্য অপকর্ম” সম্পাদনের পর আত্মতুষ্ট মুহাম্মদ তাঁর কল্পিত বিশ্ব-স্রষ্টা আল্লাহর প্রশংসা ও শক্তিমত্তার জয়গান করছেন।
অর্থাৎ, মুহাম্মদের উক্ত ৮:১৭ উক্তিটি এই পরিচিত সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিপরীত। কেন?
কারণ, ইসলামের মূল শিক্ষা পৃথিবীর অন্যান্য প্রচলিত “সর্বজন গ্রাহ্য” মূল শিক্ষার মত নয়; এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্পূর্ণ বিপরীত।
ন্যায়-অন্যায়ের “সর্বজন গ্রাহ্য” পরিচিত রূপ/শব্দমালার অর্থ “ইসলামিক পরিভাষায়” সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ বহন করতে পারে। স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নির্দেশিত মতবাদে অবিশ্বাসী বিরুদ্ধবাদী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা জনপদের বিরুদ্ধে এ সকল যাবতীয় “সর্বজনগ্রাহ্য” কুৎসিত অপকর্ম ইসলামী মতবাদে (Islamic Ideology) সম্পূর্ণরূপে শুধু যে বৈধ তাইই নয়; তা বিবেচিত হয় “সর্বোৎকৃষ্ট সৎকর্ম” রূপে। ইসলামী পরিভাষায় যাকে জিহাদনামে অভিহিত করা হয়। আর তা কী রূপে সম্পাদন করতে হবে, তার ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর প্রত্যক্ষ অনুসারীরা বদর প্রান্তেই সর্বপ্রথম প্রদর্শন করেছিলেন। নিবেদিতপ্রাণ ইসলাম-বিশ্বাসীরা মুহাম্মদের এই নির্দেশিত সর্বোৎকৃষ্ট সৎকাজটি আজও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করছেন।
ইসলামের মূল শিক্ষা সম্বন্ধে যাদের কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই, তাঁরা পদে পদে বিভ্রান্ত হন “ইসলামিক পরিভাষার (Islamic Vocabulary)” এই মারপ্যাঁচে! শুধু অমুসলিমরাই নয়, প্রায় সকল সাধারণ তথাকথিত মডারেট মুসলমানরাও [ইসলামে কোনো কমল, মডারেট বা মৌলবাদী শ্রেণীবিভাগ নেই] ইসলামিক পরিভাষার এ সকল মারপ্যাঁচ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। তাই তাঁরা বিভ্রান্ত হন পদে পদে। কিছুদিন আগে এক মডারেট মুমিন বান্দা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। প্রশ্ন করলেন, “প্রতিবেশীদের সাথে সৎ ব্যবহারের নির্দেশ, পিতা মাতার প্রতি সর্বদাই ভাল ব্যবহার করার আদেশ কি ইসলামে নেই?” সবিনয়ে জানালাম, “নিশ্চয়ই আছে! যদি তাঁরা ইসলাম অনুসারী (মুসলমান) হন।” যদি তাঁরা তা না হন, তবে ইসলামের নির্দেশ হলো তাঁদেরকে “সর্বান্তকরণে ঘৃণা করা। যদি তাঁরা ইসলামের বিরুদ্ধ কটূক্তি করেন, সমালোচনা করেন কিংবা করেন বিরুদ্ধাচরণ – তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ও প্রয়োজনে তাঁদেরকে “হত্যা” করা প্রত্যেক ইসলাম বিশ্বাসীর অবশ্যকর্তব্য ইমানী দায়িত্ব। হোন না তিনি সেই মুমিন বান্দার পিতা-পুত্র, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশী। বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ তাঁর এই নির্দেশের সর্ব-প্রথম বাস্তবায়ন ঘটান। [8]
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকে অবিশ্বাসকারী, তাঁর মতবাদের সামান্যতম সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধবাদীদের যথেচ্ছ তাচ্ছিল্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি, শাসানী ও ভীতি-প্রদর্শন করেছেন সুদীর্ঘ তেইশটি বছর (৬১০-৬৩২ সাল)। আর তা তিনি করেছেন তাঁর আবিষ্কৃত আল্লাহর রেফারেন্স দিয়ে, “আপ্তবাক্য (ঐশী বাণী)” মোড়কের আড়ালে। যখনই কেউ তাঁকে অস্বীকার করেছেন কিংবা বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তখনই তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রয়োজনীয় ঐশী বাণীর প্রকাশ ঘটিয়েছেন। যখনই তাঁর মতবাদ প্রচার ও প্রসারে কেউ বাধা সৃষ্টি করেছেন, আত্মপক্ষ সমর্থন এবং সেই বাধাকে অতিক্রম করার কর্মকৌশলের বাহন হিসাবে তিনি প্রয়োজনীয় ঐশী বাণীর আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। যখন কেউ তাঁকে কিংবা তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের মনঃকষ্ট দিয়েছেন, সেই ঘটনার বিপরীতে নাজিল হয়েছে তাঁর মুখনিঃসৃত শ্লোক, যা তিনি ‘আপ্তবাক্য (ঐশী বাণী)’ বলে প্রচার করেছেন। মোটকথা, তাঁর মতবাদ প্রতিষ্ঠা, প্রচার ও প্রসারের কর্মকৌশলের বাহন হিসাবে তাঁকে ও তাঁর মতবাদে অস্বীকারকারী, সমালোচনাকারী ও বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে প্রয়োজন মোতাবেক যখন যেমন দরকার তখন তেমন আপ্তবাক্য প্রকাশ (Revelation) করেছেন তাঁর কল্পিত আল্লাহর নামে।
কোনো মানুষ যখন তাঁর নিজের জীবনেরই বিভিন্ন ঘটনা ও পারিপার্শ্বিকতার পরিপ্রেক্ষিতে শ্লোক-বাক্য উদ্ধৃত করেন; তাঁর নিজের জীবনেরই বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকুল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ও কর্মপ্রণালীর প্রকাশ ঘটান শ্লোক-বাক্য উদ্ধৃতির মাধ্যমে। তবে তাঁর উদ্ধৃত সেই শ্লোক-বাক্যের সমষ্টিকে বলা হয় তাঁর [স্বরচিত বা স্বলিখিত] ব্যক্তি-মানস জীবনী (Psycho-biography)। ‘কুরান’ হলো এমনই এক গ্রন্থ; সেই সকল শ্লোক-বাক্যের সমষ্টি যা স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর কর্মময় নবী জীবনের (৬১০-৬৩২ সাল) বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত ও অনুকূল-প্রতিকুল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ও কর্মপ্রণালীর বাহন হিসাবে উদ্ধৃত করেছিলেন, যা বই আকারে সংকলিত হয়েছে মুহাম্মদের মৃত্যুর (৬৩২ সাল) উনিশ বছর পরে, খলিফা উসমান বিন আফফানের শাসন আমলে। কুরানের কোনো বিশেষ শ্লোক (Verse) বুঝতে হলে সেই শ্লোকটি মুহাম্মদ তাঁর জীবনের কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ধৃত করেছিলেন, তা অবশ্যই জানতে ও বুঝতে হবে। ইসলামী পরিভাষায় যা “শানে নজুল” নামে আখ্যায়িত। তাঁর মুখনিঃসৃত এ সকল আপ্তবাক্য (শ্লোক) তাঁর ঘটনাবহুল নবী জীবনের কর্মকাণ্ড, পারিপার্শ্বিকতা ও নিজস্ব মনস্তত্ত্বেরই বহিঃপ্রকাশ। মুহাম্মদ ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বঞ্চিত ষষ্ট-সপ্তম শতাব্দীর (৫৭০-৬৩২ সাল) এক আরব বেদুইন। কুরান তাঁর স্বরচিত “Psychobiography”। স্বলিখিত নয়। (বিস্তারিত পর্ব-১৬)।
কুরাইশ ও অবিশ্বাসীদের প্রতি মুহাম্মদের যাবতীয় তাচ্ছিল্য, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকি, শাসানী এবং ভীতি-প্রদর্শনের সাক্ষ্য তাঁর স্বরচিত এই জবানবন্দীর (কুরান) পাতায় পাতায় বর্ণিত আছে, যার আলোচনা ২৬ ও ২৭ পর্বে করা হয়েছে। মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে (৬১০-৬২২ সাল) মক্কাবাসী কুরাইশদের প্রতি মুহাম্মদের এসকল তাচ্ছিল্য, হুমকি, শাসানী ও ভীতি-প্রদর্শনের অধিকাংশই ছিল পরোক্ষ। মক্কাবাসী কুরাইশরা মুহাম্মদকে জানতেন এক মিথ্যাবাদী, উন্মাদ ও যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরূপে (পর্ব ১৮)। মদিনায় স্বেচ্ছানির্বাসনে এসে মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীরা [মুহাজির] কুরাইশদের বাণিজ্য-ফেরত কাফেলার ওপর হামলা, মালামাল লুণ্ঠন এবং একজনকে খুন ও দুইজনকে বন্দী [পর্ব ২৯] করার পরও কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে জড়াতে চাননি। তাঁরা ধারনা করেছিলেন যে মুহাম্মদের মতবাদের অনুসারীরা [যারা তাঁদেরই নিকট-আত্মীয় আপনজন ও প্রিয়পাত্র] পথভ্রষ্ট, বিপথগামী, নীতিভ্রষ্ট, উপদ্রবকারী মরুদস্যু ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁরা আন্দাজ করতে ও পারেননি যে, মুহাম্মদের নেতৃত্বে এই নব্য মরুদস্যুর দল কী পরিমাণ নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর! বদর যুদ্ধেই কুরাইশরা তা প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন! চরম মূল্যের বিনিময়ে!
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।
পাদটীকা ও তথ্যসূত্র:
[1] সহি বুখারি: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৩২২
Volume 5, Book 59, Number 322:
Narrated Al-Bara’ bin ‘Azib: On the day of Uhud the Prophet appointed ‘Abdullah bin Jubair as chief of the archers, and seventy among us were injured and martyred. On the day (of the battle) of Badr, the Prophet and his companions had inflicted 140 casualties on the pagans, 70 were taken prisoners, and 70 were killed. Abu Sufyan said, “This is a day of (revenge) for the day of Badr and the issue of war is undecided.”
[2] ক) “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩০৫-৩০৭
খ) “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৭, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-88706-344-6 [ISBN 0-88706-345-4 (pbk)],
পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৩১-১৩৩৩ http://books.google.com/books?id=efOFhaeNhAwC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[3] সহি বুখারি: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৩৬০
[4] সহি বুখারি: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৩১৬ -৩১৭
[5] সহি বুখারি: ভলিউম ৫, বই ৫৯, নং ৩১৪
Narrated Abu Talha: On the day of Badr, the Prophet ordered that the corpses of twenty four leaders of Quraish should be thrown into one of the dirty dry wells of Badr. —–.
[6] Tafsir Ibne Kathir
[7] Tafsir al-Jalalayn, translated by Feras Hamza
[8]Love and hate for the sake of Muhammmad (Allah)
Leave a Reply