লিখেছেন রাতুল
– রাতুল, এই রাতুল, উঠো!
মাত্র ঘুমজড়ানো অবস্থায় এ রকম আবেগী শব্দ পেলে সবারই একটু লুল লুল লাগে, তার উপর আমার আবার বয়সন্ধিকাল। এই বয়সে রাতবিরাতে এমন আবেগী কন্ঠ শুনে আমার অবস্থা পুরাই লুজ। আমি আপ্লুত হয়ে কোলবালিশে নাক আর ঠোট ঘঁষতে লাগলাম। আর তখনই আবার সেই একই কন্ঠে:
– ওই শুয়োরের বাচ্চা, উঠোস না ক্যেন?
আমি তো ভয়ে চমকে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে বললাম:
– কে কে?
ফেসবুকে সারাদিন বসে মুমিন মুসলমানের গালাগালি দেখতে দেখতেে এমন অবস্থা যে, এখন গালি শুনলেই মনে হয়, ছাগুরা বোম মারতে চইলা আসছে। আমি তাই ভয়ে চোখ মুইদ্দা কাঁপতে কাঁপতে বললাম:
– হু-হু-হজুর, হজুর, মাপ করে দেন, আমি আর আপনাগো নিয়া কিছু কমু না।
তখনই ভালোমতো সামনে তাকায়া দেখি, কিয়ের হজুর মজুর! এ দেখি স্বয়ং আল্লাহ সুবাহানায়া তাআলা। আমি তো চিৎকার করে বললাম:
– আরে আল্লাহ সাহেব আপনে! আমিতো মনে করছিলাম, আপনার ওই ভাড়াটিয়া বালছাল ছাগুগুলা। তা হঠাৎ কী মনে করে?
– তুই আমার বাপরে গালি দিছস!
আমি তাজ্জব হয়ে বললাম:
– আরে! আপনি না এক ও অদ্বিতীয়! আপনার আবার বাপ হইলো কেমনে, আর আমি গালিই বা দিলাম কই!
আল্লাহ সাথে সাথে বললেন:
– তোর নাম রাতুল কে রাখছে?
আমি বললাম:
– আমার মা নাকি বাবা, মনে নাই তয় হ্যেগো ভিতরেই কেউ না কেউ রাখছে।
– তাইলে তুই কেমনে মনে করস যে আমার নাম আমি নিজেই রাখছি ‘আল্লাহ’? আমার আব্বু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আমারে সহি পন্থায় জন্ম দিয়া ৯০ টা উট আকিকা দিয়া আমার নাম রাখছে আল্লাহ।
আমি ভীত হয়ে বললাম:
– তা তুমি আমার ঘরে ঢুুকলা কোনদিক দিয়া? দরজা জানালা সব তো বন্ধ।
– কেন লেট্টিনের ভেতর পায়খানার প্যান দিয়া।
– আইহায়! তাইলে তো এখন পায়খানার প্যানের লিগাও ঢাকনা বানান লাগবো।
– তোর বিচার করতে আইছি। কিয়ামতের আগেই তোর বিচার হইবো।
এ শুনে আমি তো ভয়ে শ্যাষ। কোনোরকমে আল্যারে কইলাম:
– আগে ভালোমন্দ কিছু খান, তারপর সব হবে।
আল্লাও কইলো:
– আন তয় কিছু খাই আগে।
আমি বললাম:
– খাওয়ার আগে হাত মুখ ধুয়া যে আপনার আব্বার সুন্নত, এটা আপনার আব্বায় আপনারে শিখায়া যায় নাই?
সেও একটু শরম পেয়ে কইলো:
– হ হ সব শিখাইছে। তয় আগে হাতমুখ ধুই চল।
আমি তাকে সম্মান দিয়ে সাথে করে লেট্টিনে ঢুুকলাম। তারপর বললাম:
– ছোট পুকুরে (কমোডে) নেমে হাতমুখ ধুয়ে নেন।
আল্লাহ ছোট পুকুর দেখে তাজ্জব হয়ে বললো, মানুষ যে আরো কত কিছু দেখাইবো! এখন ঘরের ভিতরে পুকুর বানাইছে। আসলে তুমরা মানুষ জাতি ভালো উন্নতি করছো।
আল্লাহ এবার তার ঐশ্বরিক ক্ষমতার মাধ্যমে কমোডে নেমে হাত মুখ ধোয়ার মত ছোট হয়ে চোখের পলকে নেমে গেলো। আর আমি টুস করে সুইচ টিপে কমোড ফ্লাশ করে দিলাম। আল্লাহ আ-আ-আ করতে করতে তলিয়ে গেলো শূন্যতার অতল গহীনে।
আর এভাবে একজন রাতুলের কাছে আল্লাহ চিরদিনের জন্য পরাজিত হলো।
Leave a Reply