লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় হিজরত করেন সেপ্টেম্বর ২৪, ৬২২ সালে। মদিনায় হিজরত পরবর্তী সময়ে বহিরাগত মুহাম্মদ ও তাঁরই নির্দেশে মদিনায় হিজরতকারী বহিরাগত মক্কাবাসী অনুসারীরা ছিলেন সম্পূর্ণভাবে মদিনাবাসী মুহাম্মদ অনুসারীদের (আনসার) স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীল।
এমত পরিস্থিতিতে জীবিকাহীন পরনির্ভর বেকার জীবন হতে পরিত্রাণের চেষ্টায় হিজরতের মাত্র সাত মাস পর (মার্চ, ৬২৩ সাল) মুহাম্মদ তাঁর চাচা হামজা বিন আবদ আল-মুত্তালিবের নেতৃত্বে কীভাবে রাতের অন্ধকারে ওৎ পেতে অতর্কিতে কুরাইশ বাণিজ্য-কাফেলার ওপর হামলায় তাঁদের বাণিজ্য-সামগ্রী লুণ্ঠনের চেষ্টার সূচনা করেছিলেন; তারপর পরবর্তী দশটি মাসের একের পরে এক অনুরূপ সাতটি ডাকাতি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর আরবদের পবিত্র মাস রজবে (জানুয়ারি, ৬২৪ সাল) “নাখলা” নামক স্থানে একজন নিরপরাধ কুরাইশ বাণিজ্য আরোহীকে খুন ও দুইজন আরোহীকে বন্দী করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন ও বন্দীদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের মাধ্যমে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কীভাবে ইসলামের ইতিহাসের নৃশংস পথ যাত্রার সূত্রপাত করেছিলেন; কীভাবে মুহাম্মদ তাঁর এই অনৈতিক নৃশংস কর্মকাণ্ড ও সে উপায়ে অর্জিত পার্থিব উপার্জনের বৈধতা “ঐশী বাণীর” মাধ্যমে নিশ্চিত করেছিলেন; সেই ধারাবাহিকতারই অংশ হিসাবে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সকল আগ্রাসী অমানবিক নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আক্রান্ত সংক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্ত কুরাইশদের সর্বপ্রথম প্রতিরক্ষা যুদ্ধ বদর প্রান্তে কীভাবে সংঘটিত হয়েছিল; কী কারণে কুরাইশদের চরম পরাজয় ঘটেছিল; কী উপায়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বিজয়ী হয়ে “সর্বপ্রথম বৃহৎ উপার্জন”-এর অংশীদার হয়েছিলেন – ইত্যাদি বিষয়ের ধারাবাহিক বর্ণনা গত ১৩টি পর্বে করা হয়েছে ।
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মদিনায় এসে কুরাইশদের ওপর তাঁর এ সকল আক্রমণাত্মক অনৈতিক সহিংস বর্বর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বৈধতার প্রয়োজনে তাঁর রচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরানের “মদিনা পর্বে (মক্কায় নয়)” বারংবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, মক্কায় অবস্থানকালীন সময়ে কুরাইশরা:
১) “তাঁদের কে অন্যায়ভাবে তাঁদের ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত করেছে শুধু এই অপরাধে যে তাঁরা মুসলমান;
২) তাঁদের কে মসজিদে হারামে যেতে বাধা প্রদান করেছে; এবং
৩) তাঁদের প্রতি অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে!” [1]
কিন্তু তাঁর এই দাবীর ঐতিহাসিক ভিত্তি শুধু যে অত্যন্ত দুর্বল, তাইই নয়, আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণিত তাঁর জীবনীগ্রন্থ (সিরাত), হাদিস-গ্রন্থ ও তাঁরই রচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থের পুংখানুপুংখ পর্যালোচনায় আমরা তাঁর এই দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখতে পাই।
ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি, কীভাবে মুহাম্মদ তাঁর নিজ জামাতা আবু আল আস বিন রাবিকে বাধ্য করেছিলেন যেন তিনি তাঁর স্ত্রী জয়নাবকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন। সুদীর্ঘ ১৪ টি বছর (৬২০-৬২৪ সাল) এই পৌত্তলিক স্বামী তাঁর মুসলিম স্ত্রীর সাথে একই বাড়িতে অবস্থান করতেন। তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রীর ওপর কোনোরূপ অত্যাচার বা অসম্মান করতেন, এমন ইতিহাস কোথাও নেই। পৌত্তলিক আবু আল আস তাঁর মুসলিম স্ত্রীকে মক্কা থেকে বহিষ্কার করেননি। “মুহাম্মদই তাঁকে বাধ্য করেছিলেন” যেন তিনি তাঁর মুসলিম স্ত্রী জয়নাবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাঁকে মদিনায় পাঠিয়ে দেন।
কুরান, সিরাত ও হাদিসের নিরপেক্ষ পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনায় এমনই বহু খণ্ড খণ্ড চিত্রের বর্ণনায় “যে সত্যটি স্পষ্ট” তা হলো, কুরাইশরা কোনো মুহাম্মদ-অনুসারীকেই মক্কা থেকে শুধু যে বিতাড়িত করেননি, তাইই নয়, তাঁরা তাঁদের নব্য ধর্মান্তরিত পরিবার সদস্যদের প্রাণপণে বাধা প্রদান করেছেন, তাঁদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছেন, যেন তাঁদের এই একান্ত প্রিয়জনরা মুহাম্মদের প্ররোচনায় দেশান্তরিত না হয়। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবো হিজরত তত্ত্বে; এই পর্বের পর্যালোচনা শুধু প্রাসঙ্গিক ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।]
কুরাইশরা নয়, “মুহাম্মদই” তাঁর মতবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তাঁর অনুসারীদের মদিনায় দেশান্তরী হতে বাধ্য করেছিলেন। তাঁর যে সমস্ত অনুসারী তাঁর এই অমানবিক ও গর্হিত ‘বিভেদ বিভাজন ও শাসন (Divide and Rule)’ আদেশে অনীহা ও অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদেরকে তিনি জোরপূর্বক বিভিন্ন প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ও এমনকি হত্যার আদেশ জারি করে তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে হিজরতে বাধ্য করেন ।
মুহাম্মদের নিজের জবানবন্দিই এই সত্যতার সাক্ষ্য হয়ে আছে।
মুহাম্মদের ভাষায়:
৪:৮৯ (মদীনায় অবতীর্ণ) – “তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।” [2] [3]
৮:৭২ (মদীনায় অবতীর্ণ) – “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগ করে। অবশ্য যদি তারা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু তোমাদের সাথে যাদের সহযোগী চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মোকাবেলায় নয়। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সেসবই দেখেন।” [4][5]
>>> প্রশ্ন হলো – কী কারণে মুহাম্মদ জোরপূর্বক বিভিন্ন প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ও হত্যার আদেশ জারি করে হিজরতে অনিচ্ছুক অনুসারীদের হিজরতে বাধ্য করেছিলেন?
কারণটি ছিল এই:
“তাঁদের কে অন্যায়ভাবে ভিটে মাটি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে!”
পূর্ব কথা (৫৭০- ৬১০ খ্রিষ্টাব্দ):
মুহাম্মদের পিতা আবদ-আল্লাহ (আবদুল্লাহ) বিন আবদ-আল মুত্তালিব মুহাম্মদের জন্মের আগেই মৃত্যুবরণ করেন। মা আমিনা বিনতে ওয়াহাব তখন ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তাঁর গর্ভে মুহাম্মদ। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের (Year Of Elephant) ১২ ই রবিউল আউয়াল মাসে মুহাম্মদ ভূমিষ্ঠ হন। মা আমিনা মারফত নাতি মুহাম্মদের জন্মের খবর পেয়ে দাদা আবদ আল-মুত্তালিব খুশির আতিশয্যে মুহাম্মদকে পবিত্র ক্বাবার ভেতরে দেবতা ‘হুবাল’-এর সামনে নিয়ে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন এবং তাঁর এই পুরষ্কারের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানান।
মুহাম্মদের জন্মের অল্প কিছুদিন পরেইপিতৃহীন মুহাম্মদকে তাঁর মা আমিনা ও দাদা আবদ আল-মুত্তালিব হস্তান্তর করেন হালিমা বিনতে আবু ধুয়ায়েব নামক এক দুধ-মাতার (Foster mother) কাছে। হালিমা ও তাঁর স্বামী হারিথ বিন আবদ-উজ্জা (Foster father) মুহাম্মদকে তাঁদের নিজ পরিবারে নিয়ে আসেন। দুই কিংবা আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত মুহাম্মদ তাঁর দুধ-মাতা হালিমা ও পালিত পিতা আল-হারিথ বিন আবদ-উজ্জার সন্তানদের সাথেই পালিত হন। জীবনের এই অত্যন্ত প্রাথমিক সময়ে মুহাম্মদ তাঁর নিজ মাতৃস্নেহ থেকে হন বঞ্চিত।
মুহাম্মদের দুই বছর বয়সের সময়হালিমা ও তাঁর স্বামী মুহাম্মদকে তাঁর মা আমিনা ও দাদা আবদ আল-মুত্তালিবের কাছে ফেরত দিতে নিয়ে আসেন। কথিত আছে, মুহাম্মদকে পেয়ে হালিমা ও তাঁর পরিবার অলৌকিক উপায়ে এতটাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সুখ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছিলেন যে, হালিমা মুহাম্মদকে তাঁদের কাছে আরও কিছুদিন রাখার জন্য মা আমিনাকে অনুরোধ করেন। হালিমার পীড়াপীড়িতে আমিনা রাজি হন। হালিমা মুহাম্মদকে আবার তাঁর পরিবারে নিয়ে আসেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি,এত অধিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সুখ-সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও এর অল্প কয়েক মাস পরেই [ছয় মাস কাল] হালিমা ও তাঁর স্বামী মুহাম্মদকে আবারও তাঁর মা ও দাদার কাছে ফেরত নিয়ে আসেন।
কারণ হিসাবে তাঁরা উল্লেখ করেন যে, মা আমিনার কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার কয়েক মাস পরেই একদিন তাঁর সন্তানরা তাঁদের তাঁবুর বাহির থেকে দৌড়ে এসে তাঁদের এই বলে খবর দেয় যে, দুই জন সাদা পোশাকধারী লোক এসে মুহাম্মদের পেট চিরে কী যেন পরিষ্কার করে আবার সেলাই করে দিয়েছে। তাই শুনে তাঁরা দ্রুতগতিতে বেরিয়ে আসেন এবং দেখেন যে, মুহাম্মদ ফ্যাকাসে মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কী হয়েছিল, তা জানতে তাঁরা মুহাম্মদকে জিজ্ঞেস করেন। মুহাম্মদ জবাবে বলেন, “সাদা পোশাকধারী দুই লোক এসে আমাকে মাটিতে শুইয়ে দেয় এবং আমার পেট চিরে তার মধ্যে কী যেন খোঁজে, আমি জানি না, তারা কী খুঁজছিল।” [6]
তারপর তাঁরা মুহাম্মদকে তাঁবুর মধ্যে নিয়ে যান। হালিমা আরও জানান, তাঁর স্বামী এই ভেবে ভীত যে, মুহাম্মদ “মস্তিষ্ক রোগগ্রস্ত”, তাই অবস্থা বেগতিক হবার আগেই তাঁরা মুহাম্মদকে তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত দিতে চান। আমিনা তাঁদের কাছে সরাসরি জানতে চান, তাঁরা মুহাম্মদকে “পিশাচ-গ্রস্ত” মনে করেন কি না। জবাবে তাঁরা বলেন, “হ্যাঁ” (পর্ব-১৮)।
তারপর মুহাম্মদ তাঁর মা আমিনা ও দাদা আবদ আল-মু্ত্তালিবের আশ্রয় ও স্নেহধন্যে পালিত হন।
মুহাম্মদের বয়স যখন মাত্র ছয় বছর, তখন তাঁর মা আমিনার মৃত্যু হয়। মুহাম্মদের বড় দাদীর (দাদার আম্মা) নাম ছিল সালমা বিনতে আমর, তিনি ছিলেন মদিনার খাজরায গোত্রের অন্তর্ভুক্ত (পর্ব-১২); সেই সূত্রে মদিনার খাজরাজ গোত্রের সাথে মুহাম্মদের পরিবার হাশেমী গোত্রের যোগাযোগ ছিল। মা আমিনা মুহাম্মদের এই বড় দাদীর পরিবারের সাথে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন মদিনায়। মদিনা থেকে মক্কায় প্রত্যাবর্তন কালে মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী “আবওয়া” নামক স্থানে মা আমিনার মৃত্যু হয়। সেখানেই তাঁকে কবরস্থ করা হয়।
মা আমিনার মৃত্যুর পর মুহাম্মদ তাঁর দাদা আবদ-আল মুত্তালিবের স্নেহে প্রতিপালিত হন আরও দু’টি বছর। তিনি তাঁর এই অনাথ নাতিকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। মুহাম্মদের বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন তাঁর দাদা আবদ-আল মুত্তালিব ও মৃত্যুমুখে পতিত হন।মৃত্যুকালে দাদা আবদ-আল মুত্তালিব মুহাম্মদের ভরণ-পোষণ ও লালন পালনের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে আবু তালিবের কাছে। কারণ আবু তালিব ও মুহাম্মদের পিতা আবদুল্লাহ ছিলেন একই মায়ের গর্ভজাত সন্তান(পর্ব ১২); পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ মুহাম্মদ তাঁর দাদা আবদ-আল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর এই চাচা আবু তালিবের পরিবারে আশ্রয় নেন। [7]
আবু তালিব তাঁর বাবার দেয়া দায়িত্ব একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। অনাথ মুহাম্মদ ছিলেন তাঁর এই চাচা আবু তালিবের বিশেষ স্নেহধন্য। আবু তালিব মুহাম্মদকে তাঁর অন্যান্য সন্তানদের সাথে পিতৃস্নেহেপ্রতিপালন করেন।
২৫ বছর বয়সে মুহাম্মদ বিদুষী সম্ভ্রান্ত ঐশ্বর্যশালী ৪০ বছর বয়সী খাদিজা বিনতে খুয়ালিদকে বিয়ে করার পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মদ তাঁর এই চাচা আবু তালিবের পরিবারেই পালিত হন। খাদিজাকে বিয়ে করার পর মুহাম্মদ আবু তালিবের পরিবার থেকে ধনী খাদিজার পরিবারে স্থানান্তরিত হন। তিনি ছিলেন খাদিজা পরিবারের ঘর-জামাই।
খাদিজাকে বিয়ে করার পর থেকে মৃত্যুকাল পর্যন্ত মুহাম্মদ জীবিকার প্রয়োজনে কোনোরূপ “সৎ পেশায়” জড়িত ছিলেন এমন ইতিহাস কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। কথিত আছে যে, মুহাম্মদ তাঁর ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রায়ই হেরা পর্বতের গুহায় গিয়ে ধ্যান করতেন। তাঁর পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কোনোরূপ জীবিকার চেষ্টা করেছেন, এমন ইতিহাসও কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না!
তথাকথিত নবুয়ত পরবর্তী মক্কার ঘটনা (৬১০-৬২২ খ্রিষ্টাব্দ):
৬১০-৬১৩ সাল:
৬১০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময়ে হেরা পর্বতের গুহার ভেতর জিবরাইল ফেরেশতা মারফত মুহাম্মদের তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনাটি ঘটে। এরপর প্রায় তিন বছর মুহাম্মদ তাঁর মতবাদ প্রচার করেন গোপনে। তারপর তিনি প্রকাশ্যে তাঁর মতবাদ প্রচার শুরু করেন।
৬১৩-৬১৫ সাল:
মুহাম্মদ যখন প্রকাশ্যে তাঁর মতবাদ প্রচার শুরু করেন, কোনো কুরাইশই তাঁর প্রচারে কোনোরূপ বাধা প্রদান করেননি।
কিন্তু মুহাম্মদ যখন তাঁর ধর্মপ্রচারের নামে কুরাইশদের পূজনীয় দেব-দেবী, কৃষ্টি-সভ্যতা ও পূর্বপুরুষদের অসম্মান করা শুরু করেন, তখন তাঁরা তাঁদের ধর্মরক্ষা ও অসম্মানের প্রতিবাদে মুহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। [8]
কুরাইশরা মুহাম্মদকে বারংবার এহেন গর্হিত কর্ম থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানান। মুহাম্মদ তাঁদের কথায় কোনোই কর্ণপাত করেন না। তিনি বিনা কারণে কুরাইশরদের কোনো অপরাধ ছাড়াই শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মাবলম্বী (পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত) হওয়ার কারণেতিনি তাঁর আল্লাহর নামে “ওহি মারফত” কুরাইশদের দেব-দেবী, পূর্বপুরুষদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য অসম্মান পুরোদমে চালিয়ে যেতে থাকেন। যারাই তাঁর মতবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমালোচনা বা কটাক্ষ করেছেন, তাঁদেরই বিরুদ্ধে তিনি ওহি মারফত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অসম্মান ভীতি প্রদর্শন, শাপ-অভিশাপ পরোক্ষ হুমকি শাসানী প্রদর্শন করেছেন।
মুহাম্মদের নিজ গোত্র হাশেমী বংশের “গোত্রপ্রধান ছিলেন মুহাম্মদের চাচা আবু তালিব”। তিনি ছিলেন মক্কার কুরাইশদের সকল সম্মানিত গোত্র প্রধানদের একজন।
মুহাম্মদের এই সকল আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সংক্ষুব্ধ কুরাইশরা পৃথিবীর আর সব সভ্য মানুষদের মতই তাঁর এই গর্হিত কাজের প্রতিবাদে তাঁরা “হাশেমী গোত্রপ্রধান ও মুহাম্মদের অভিভাবক” চাচা আবু তালিবের কাছে প্রতিবাদ জানান।
তাঁরা আবু তালিবকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন তাঁর ভাতিজাকে এই গর্হিত কর্ম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। আবু তালিব তাঁর ভাতিজা মুহাম্মদকে অনুরোধ করেন যেন মুহাম্মদ কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্ব-পুরুষদের কোনোরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, উপহাস ও অসম্মান না করে। মুহাম্মদ তাঁর চাচা আবু তালিবের এই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন।
ব্যর্থ আবু তালিব কুরাইশদের তাঁর এই ব্যর্থতার খবর জানিয়ে দেন। তাঁদেরকে তিনি আরও জানান যে মুহাম্মদের মতবাদ ও কর্মকাণ্ডে তিনি বিশ্বাস করেন না। কিন্তু মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেবেন না এবং গোত্রপ্রধান ও অভিভাবক হিসাবে তিনি এই ভাতিজাকে যে কোনো আপদে ও বিপদে সগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা(Clan protection) দান করবেন।
সেই অবস্থায় বাধ্য হয়ে মুহাম্মদের অসহনশীল, তাচ্ছিল্য ও আক্রমণাত্মক মতবাদের বিরুদ্ধে কুরাইশরা কঠোর জনমত ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁরা তাঁদের ধর্মান্তরিত পরিবার সদস্য, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের বিভিন্ন উপায়ে পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ফলে কুরাইশদের যে পরিবার সদস্য, প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবরা মুহাম্মদের মতবাদে একদা দীক্ষিত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আবার তাঁদের পূর্ব-ধর্মে ফিরে গিয়েনিজ নিজ পরিবার পরিজনদের সাথে যোগদান করতে থাকেন। [9]
এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মুহাম্মদ তাঁর ধর্মরক্ষার খাতিরে নিজ স্বার্থে নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে (৬১৫ সাল) তাঁর অনুসারীদের তাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার আদেশ জারী করেন। [10]
৬১৬-৬১৯ সাল:
মুহাম্মদের তাঁর আক্রমণাত্মক অসহনশীল মতবাদ ও কুরাইশদের পূজনীয় দেব-দেবী কৃষ্টি-সভ্যতা এবং পূর্ব-পুরুষদের অসম্মান তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, হুমকি-শাসানী, ভীতি প্রদর্শন, শাপ-অভিশাপ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান।
সুদীর্ঘ সাতটি বছর কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই সব কর্মকাণ্ড সহ্য করার পর মুহাম্মদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সংক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ কুরাইশরা আবারও মুহাম্মদের গোত্রপ্রধান ও অভিভাবক চাচা আবু তালিবের কাছে প্রতিবাদ জানান। বৃদ্ধ আবু তালিব তখন অসুস্থ ও শয্যাগ্রস্ত।
তাঁদের দাবি ছিল অত্যন্ত সামান্য! আবু তালিবের কাছে তাঁদের “একটি মাত্র দাবি” এই যে, মুহাম্মদ তাঁর ধর্মের নামে যা খুশী প্রচার করতে চান করুন, কিন্তু তিনি যেন মুহাম্মদকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন যেন মুহাম্মদ তাঁদের পূজনীয় দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষদের কোনোরূপ অসম্মান ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য না করেন। তাঁরা গত ৭ টি বছর মুহাম্মদের উপদ্রব সহ্য করেছেন, গোত্রপ্রধান ও অভিভাবক হিসাবে তাঁর কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন যেন তিনি মুহাম্মদকে সংযত করেন।
শয্যাগ্রস্ত আবু তালিব আবারও মুহাম্মদকে অনুরোধ করেন যেন তিনি কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষদের কোনোরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য উপহাস ও অসম্মান না করেন। মুহাম্মদ আবু তালিবের অনুরোধ আবারও প্রত্যাখ্যান করেন। ব্যর্থ আবু তালিব কুরাইশদের তাঁর ব্যর্থতার খবর আবারও জানিয়ে দেন। [11]
গোত্র প্রধান আবু তালিবের এই সিদ্ধান্তে অনন্যোপায় কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক হাশেমী গোত্রের বিরুদ্ধে “সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ” কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।
কী সেই ব্যবস্থা? তাঁরা মুহাম্মদের মত কোনো শারীরিক আক্রমণ, হানাহানি, রক্তপাত, নৃশংসতা কিংবা গুপ্ত-হত্যার আশ্রয় নেননি। সমগ্র কুরানে মুসলমানদের উপর কুরাইশদের একটিও শারীরিক আঘাত বা খুনের ঘটনারও উল্লেখ নেই।
তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির পর গত সাতটি বছর তাঁদের পূজনীয় দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষদের অপমান-অসম্মান ও তাচ্ছিল্য (পর্ব-২৬) সহ্য করার পর মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর পৃষ্ঠপোষক হাশেমী গোত্রের বিরুদ্ধে সেই সপ্তম শতাব্দীতে যে ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেছিলেন, তা আজকের একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও সভ্য সমাজের (Advanced and civilized society) মানুষদের মতই এক ব্যবস্থা।
ভাবতে অবাক লাগে, মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মদের আক্রমণাত্মক অসহিষ্নু প্রচারণার বিরুদ্ধে ৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে যে ব্যবস্থাটি গ্রহণ করেছিলেন তা আজকের ২০১৪ সালের উন্নত ও সভ্য সমাজের মানুষেরা একই রকম পরিস্থিতিতে অনুরূপ ব্যবস্থায় অবলম্বন করেন। [12]
কী সেই ব্যবস্থা?
ব্যবস্থাটি হলো সামাজিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা (Social and Economic embargo) – মুহাম্মদের তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির সপ্তম থেকে নবম বছর (৬১৬-৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত , দুই–তিন বছর, তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞা জারী রাখেন।
পরবর্তীতে মুহাম্মদের ওপরে বর্ণিত গর্হিত কর্ম-তৎপরতা চালু থাকা সত্ত্বেও ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে এই কুরাইশরাই আবার দয়াপরবশ হয়ে এই নিষেধাজ্ঞাটি বাতিল করেন। [13]
৬১৯ – ৬২২ সাল
হিজরতের প্রায় তিন বছর আগে (৬১৯ সাল) সর্বাবস্থায় সাহায্য ও সহায়তাকারী স্ত্রী খাদিজা ও সগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধাদানকারী চাচা আবু-তালিব অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করেন।
আবু-তালিবের মৃত্যুর পর আবু লাহাব হাশেমী বংশের গোত্র প্রধান নিযুক্ত হন। নব নিযুক্ত গোত্র প্রধান চাচা আবু লাহাব তাঁর ভাই আবু তালিবের মতই মুহাম্মদের উপর সগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা জারী রাখেন। কিন্তু যখন কিছু কুরাইশ মারফত আবু লাহাব জানতে পারেন যে, মুহাম্মদ প্রচার করছেন, তাঁর দাদা আবদ আল-মুত্তালিব-এর স্থান হলো নরকের আগুন।
এ কথা শুনে আবু লাহাব মুহাম্মদের কাছে এর সত্যতা জানতে চান। জবাবে মুহাম্মদ তাঁকেও জানান যে, আবদ আল-মুত্তালিব ও তাঁর সাথীরা হবেন নরকের অধিবাসী।মুহাম্মদের নিজ মুখে এ কথা জানার পর আবু লাহাব অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন। তিনি মুহাম্মদের ওপর থেকে সগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা উঠিয়ে নেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন যে, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, ততদিন মুহাম্মদের এমনতর প্রচারণার বিরোধিতা করবেন। [14]
হাশেমী বংশের গোত্রসুবিধা রহিত হওয়ার পর কুরাইশরা মুহাম্মদের অসহনশীল, তাচ্ছিল্য ও আক্রমণাত্মক মতবাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর জনমত ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁরা তাঁদের ধর্মান্তরিত পরিবার সদস্য, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালান। ফলে কুরাইশদের যে পরিবার সদস্য ও প্রিয়জনরা মুহাম্মদের মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আবার তাঁদের পূর্ব-ধর্মে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ পরিবার পরিজনদের সাথে যোগদান করতে থাকেন। সেই পরিস্থিতিতে “মক্কায় তাঁর নবী-জীবনের অবসান” কেবলমাত্র সময়ের ব্যাপার ছিল।
এমত পরিস্থিতিতে মক্কায় মুহাম্মদের ধর্ম-প্রচার প্রচণ্ড বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত হয়ে পরে।
এই সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দিতে মুহাম্মদ গোপনে প্রথমেই গমন করেন তায়েফে (৬১৯ সাল)। তায়েফের গণ্যমান্য বিশিষ্ট নেতৃবর্গদের তিনি তাঁর নিজ বাসভূমি মক্কার কুরাইশদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।
তাঁরা তাতে রাজী না হলে মুহাম্মদ তাঁদেরকে তাঁর তায়েফে আসার খবর ও তাঁদের সাথে পরামর্শ করার খবর গোপন রাখার অনুরোধ করেন। তাঁরা এই দেশদ্রোহীর (নিজের দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অন্য দেশ ও সম্প্রদায়ের লোককে ক্ষেপিয়ে তুলে তাঁদের সাহায্য কামনা ও নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাকারী) অভিসন্ধি বুঝতে পারেন।
পরিণতিতে তায়েফের কিছু লোক এই দেশদ্রোহীকে পিটিয়ে বিদায় করেন। তায়েফ-বাসীর মারফত মক্কাবাসী মুহাম্মদের এই অপকর্মের খবর জানতে পারেন। এর পরেও কোনো মক্কাবাসী কুরাইশ মুহাম্মদ কিংবা তাঁর অনুসারীর বিরুদ্ধে কোনোরূপ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। [15]
মুহাম্মদ তাঁর নবী-জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে সৌভাগ্যক্রমে মদিনা থেকে মক্কায় আগত কিছু তীর্থযাত্রীর সন্ধান পান। তাঁরা মুহাম্মদের মতবাদে আগ্রহ প্রদর্শন করেন। তায়েফের মতই এবারও মুহাম্মদ মক্কাবাসী কুরাইশদের বিরুদ্ধে এই বিদেশীদের সাথে গোপনে বৈঠক করেন (১ম ও ২য় আকাবা)। তাঁরা মুহাম্মদকে মদিনায় হিজরত করার আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ও তাঁর হিজরতকারী অনুসারীদের তাঁরা সর্বাত্মক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।
জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে মুহাম্মদ “তাঁর ধর্ম রক্ষার চেষ্টায়”তাঁর অনুসারীদের মদিনায় হিজরত করার আদেশ জারি করেন। কিছু কাল পর তিনি নিজেও মদিনায় হিজরত করেন। ইসলামের প্রাথমিক সংজ্ঞা অনুযায়ী, মুহাম্মদের আদেশ পালন করা তাঁর অনুসারীদের জন্য বাধ্যতামূলক। তিনি তাঁর অনুসারীদের প্রলোভন, হুমকি এমনকি হত্যার আদেশ জারী করে অনিচ্ছুক অনুসারীদের মদিনায় হিজরত নিতে বাধ্য করেন।
কুরাইশরা নয়, মুহাম্মদ নিজ স্বার্থে তাঁর অনুসারীদের তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মদিনায় তাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনা:
‘আমাকে [মুহাম্মদ বিন ইশাক] বলা হয়েছে যে বদর প্রান্তে নিহত হওয়া কিছু মানুষের বিশয়ে কুরানের বানী অবতীর্ণ হয়,
(৪:৯৯ [৪:৯৭]“—তারা বলেঃ এ ভূখন্ডে আমরা অসহায় ছিলাম। ফেরেশতারা বলেঃ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিল না যে, তোমরা দেশত্যাগ করে সেখানে চলে যেতে?–“) তারা হলেন আল হারিথ বিন জামায়া, আবু কায়েস বিন আল-ফাকিহ, আবু কায়েস বিন আল-ওয়ালিদ, আলী বিন উমাইয়া এবং আল-আস বিন মুনাববিহ।
আল্লাহর নবী যখন মক্কায় ছিলেন, তখন এই লোকেরা ছিল মুসলমান। যখন তিনি মদিনায় দেশান্তরিত হন, তাঁদের পিতারা ও পরিবার সদস্যারা মক্কায় তাদেরকে রুদ্ধ ও বিমোহিত [পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা] করে এবং তারা নিজেরাও নিজেদেরকে বিমোহিত হতে দেয় [পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়]।
তারপর তারা বদর অভিযানে অংশ নেই এবং তাদের সকলেই নিহত হয়।’ [16] [17]
“I have been told that the Quran came down about certain men who were killed at Badr (4:99 [4:97])—“was not God Earh wide enough that you could have migrated therein?—”).
They were Al-Harith b Zamaa, Abu Qays b a-Fakih, Abu Qays b al-Walid, Ali b Umayya and Al-As b Munabbih.
These had been Muslims while the apostle was in Mecca. When he migrated to Medina, their fathers and families in Mecca shut them up and seduced them and they let themselves be seduced.
Then they joined their people in the expedition to Badr and were all killed.” [16] [17]
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হেরেম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া; অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] কুরান: ২২:৪০; ৬০:১; ২:২১৭; ৮:৩১-৩৪; ৩:১৯৫; ৯:১৩; ৯:৪০; ৪৭:১৩; ইত্যাদি।
[2] ইবনে কাথিরের তফসির http://www.qtafsir.com/index.php?option=com_content&task=view&id=622&Itemid=59#2
[3] আল-যালালীনের তফসির- ইংরেজি অনুবাদ ফেরাস হামজা http://www.altafsir.com/Tafasir.asp?tMadhNo=0&tTafsirNo=74&tSoraNo=4&tAyahNo=89&tDisplay=yes&UserProfile=0&LanguageId=2
[4] ইবনে কাথিরের তফসির
[5] আল-যালালীনের তফসির- ইংরেজি অনুবাদ ফেরাস হামজা
[6] কুরান: ৯৪:১ –“আমি কি আপনার বক্ষ উম্মুক্ত করে দেইনি?”
[7] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৬৯-৭৩ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[8] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১১৮
[9] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১১৮-১২১
[10] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১৪৬-১৫০
[11] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১৯১
[12] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১৫৯-১৬১
[13] Ibid ইবনে ইশাক- পৃষ্ঠা ১৭২-১৭৫
[14] মুহাম্মদ ইবনে সা’দ (৭৮৪-৮৪৫ খৃষ্টাব্দ) – লেখক: “কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির”
http://muslim-library.blogspot.com/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html#!/2011/09/tabqaat-ibn-e-saad.html
অনুবাদ – এস মইনুল হক, প্রকাশক- কিতাব ভবন, নয়া দিল্লি, সাল ২০০৯ (3rd Reprint).
ISBN 81-7151-127-9 (set). ভলুউম ১, পৃষ্ঠা ২৪৩-২৪৪
[15] মুহাম্মদের তায়েফ গমন (৬১৯ সাল):
Ibid ইবনে ইশাক পৃষ্ঠা ১৯৩; কিতাব আল-তাবাকাত আল-কাবির” – পৃষ্ঠা ২৪৪
“তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৬, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৮, ISBN 0-88706-706-9 [ISBN 0-88706-707-7 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden)- ১২০০-১২০২
[16] Ibid ইবনে ইশাক পৃষ্ঠা – ৩০৭
[17] ইবনে কাথিরের তফসির
Leave a Reply