লিখেছেন পথিক জাহিদ
আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে আমি একটি বিকলাঙ্গ শিশুর বাবা হয়েছিলাম। প্রথম সন্তান। জন্মের পর থেকেই পিজি হাসপাতালে ভর্তি। ডাক্তাররা অপাত্য স্নেহে শিশুটির চিকিৎসা সেবা দিতেন।
আমি জানালা দিয়ে চেয়ে চেয়ে দেখতাম ওর কষ্ট করে নিঃশ্বাস নেয়া। বেঁচে থাকার কী প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। মনে হতো ওর নিঃশ্বাসটি যদি আমি নিয়ে দিতে পারতাম!
সবাই বলত, ওর বেঁচে থাকা নিজেরও কষ্ট, আর সবারও কষ্ট। আমার এক আত্মীয় এক ধাপ এগিয়ে কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জের পীর সাহেবের পানি পড়া নিয়ে এলেন।
আমি এসবে মোটেও বিশ্বাস করি না। কিন্তু সবার মতামতকেও উপেক্ষা করতে পারি না। জানলাম, এই পানির ফজিলত হচ্ছে – এটি খাওয়ালে তার যদি হায়াত থাকে তবে বেঁচে যাবে, আর হায়াত না থাকলে মারা যাবে।
আমার অনুপস্থিতিতে আমার বিশ্বাসী আত্মীয়রা দুই পীরের পানি একসাথে মিশিয়ে সেটা শিশুটিকে খাওয়ালেন। কিছুক্ষণ পর তার শ্বাসকষ্ট আরো বেড়ে গেল। আমি এসে দেখি, খুব খারাপ অবস্থা। ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু ছেলেটি আমার বুক খালি করে লোকান্তরে চলে গেলো।
তখন আত্মীয়-স্বজনেরা মনে হলো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। সবাই তারিফ করতে লাগল পীর সাহেবদের পানি পড়ার। আহহা! খাওয়ানোর সাথে সাথেই চলে গেলো। পানির কী তেজ। আসলে হায়াত নেই তো, কী করা।
আমি অপাংক্তেয়ের মত হাঁ করে উদাস চেয়ে রইলাম।
Leave a Reply