হুমায়ুন আজদের ‘আমার অবিশ্বাস’ নামের বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম বেশ আগে। ধর্মকারী তখন স্থগিতাবস্থায়। কিন্তু কিছুদূর পড়ার পরে লক্ষ্য করলাম, বইটিতে উদ্ধৃতিযোগ্য ছত্রের ছড়াছড়ি। পড়া তখনই থামিয়ে দিয়ে স্থির করলাম, ধর্মকারী আবার সচল হলে ধর্মকারীর পাঠকদের (অনেকেরই বইটা পড়া আছে, জানি, তবুও…) সঙ্গে টাটকা পাঠমুগ্ধতা ভাগাভাগি করবো। তাই পড়তে শুরু করলাম আবার। বিসমিল্যা।
২৬.
রবীন্দ্রনাথ করতেন রহস্যীকরণ, তিনি কোনো প্রথাবদ্ধ ধর্মে গীতিকার ছিলেন না; তিনি তাঁর বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতেন মহাজগতের সাথে। নজরুলে সেই রহস্যীকরণে নেই, তিনি স্থূলভাবে প্রকাশ করেছেন তাঁর বিশ্বাস বা উদ্দীপনা। নজরুলের বিশ্বাসও সন্দেজনক, মনে হয় তিনি এক বিশ্বাসের সাথে আরেক বিশ্বাসের পার্থক্য বোঝেন না। বিধিবদ্ধ ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো কঠোর, একটি মানলে আরেকটি মানা যায় না, ইসলাম মানলে হিন্দুধর্ম মানা যায় না, একই সাথে কেউ হ’তে পারে না মুসলমান ও হিন্দু; কিন্তু নজরুল তাঁর এক বিশ্বাস থেকে আরেক বিশ্বাসে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আগের বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে। আমি বিস্মিত হই যিনি লেখেন
আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়
আমার নবী মোহাম্মদ, যাঁহার তারিফ জগৎময়
…
তিনি কী ক’রে লিখতে পারেন
‘কালী কালী মন্ত্র জপি বসে লোকের ঘর শ্মশানে’
…
বল্ রে জবা বল্!
কোন্ সাধনায় পেলি শ্যামা মায়ের চরণতল
…
তোর রাঙা পায়ে নে মা শ্যামা আমার প্রথম পূজার ফুল
ও আরো এমন বহু পৌত্তলিক পদ। তিনি কি একই সাথে হ’তে পারেন খাঁটি মুসলমান, আর কালিভক্ত? অনেকে ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করেন যে নজরুল দুই সংস্কৃতির মিলন ঘটিয়েছিলেন; তিনি যদি তাই ক’রে থাকেন তাহলে তিনি মিলন ঘটিয়েছিলেন দুই খারাপের।
২৭.
নজরুলের কি কোনও বিশ্বাস ছিলো না? না কি তিনি স্বতস্ফূর্ত উদ্গীরণ করেছেন বিদ্রোহ; আর বাণিজ্যিক প্রেরণায় লিখে গেছেন একই সাথে হামদ, নাত, আর কালীকীর্তন? নজরুলের ইসলামি আর শাক্ত গানগুলো তাঁকে প্রচুর অর্থ এনে দিয়েছিলো, আমরা জানি, আর ওই অর্থই হয়তো তাঁকে মাতিয়েছিলো কুসংস্কৃত উদ্দীপনায়।
২৮.
বিশ্বাসের জগতটি পুরোপুরি অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিশ্বাসের বইগুলো অন্ধকারের বই, ওগুলোর কাজ মানুষের মনকে গভীর অন্ধকারে আবৃত করা।
Leave a Reply