লিখেছেন Elijah Neo
“নাস্তিকরা বিয়ে করবে কী করে?”, এটা আস্তিকদের একটা common প্রশ্ন।
আস্তিকদের ধারণা, ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে বিয়ে না হলে বিয়ে শুদ্ধ হয় না – বিয়ের নামে ব্যভিচার হয়। বিয়ে কী – সে প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। আগে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ের প্রসঙ্গে একটু বলে নিই। ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ে না হলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না, সেটা নাহয় তর্কের খাতিরে আপাতত মেনে নিলাম। কিন্তু প্রশ্ন হলো – কোন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ে করলে তা আস্তিকদের মতে শুদ্ধ হবে? সে কি ইসলাম ধর্ম, নাকি খ্রিষ্টান, নাকি ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ, নাকি আরো কয়েক শত ধর্মের কোনো একটি? কোনটি সঠিক?
মুসলামানরা ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম মানেন না। সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই তাঁদের কাছে – কেননা এগুলো আল্লাহ প্রদত্ত ধর্ম নয় বা বাতিল ধর্ম। ইসলাম ধর্মমতে – কলেমা পড়ে বিয়ে করলেই তাদের মতে বিয়ে শুদ্ধ – তা নয় তো ব্যভিচার! তবে কি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা অন্যান্য ধর্ম মতে যাঁরা বিয়ে করেছেন – তারা সবাই ব্যভিচার করে চলেছেন? হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা অন্য ধর্মালম্বী যাঁরা আছেন – তবে কি তারা সবাই পাপের ফসল?
হিন্দুরা হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে মানেন না। সেগুলোর কোনো মূল্যই নেই তাঁদের কাছে – কেননা এগুলো ভগবান প্রদত্ত ধর্ম নয় বা বাতিল ধর্ম। হিন্দুরা মনে করেন, তাঁদের হিন্দুধর্মের রীতিনীতি মেনে বিয়ে না করলে বিয়ে শুদ্ধ হবে না। তবে কি মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা অন্যান্য ধর্ম মতে যাঁরা বিয়ে করেছেন – তাঁরা সবাই ব্যভিচার করে চলেছেন? মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি বা অন্য ধর্মালম্বী যাঁরা আছেন – তবে কি তাঁরা সবাই পাপের ফসল?
একই প্রশ্ন সব ধর্মালম্বীকে করা যায়। প্রতি ক্ষেত্রেই অন্যান্য ধর্মালম্বীরা বিয়ের নামে অধর্ম করে চলেছেন – কেননা তাঁদের ধর্ম অন্যান্য ধর্মালম্বীদের মতে নকল বা বাতিল ধর্ম।
যেহেতু সমাজের অন্যান্য ধর্মালম্বীরা ভিন্ন কোনো এক ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মকে স্রষ্টাপ্রদত্ত ধর্ম বলে মানেন না, যেহেতু তাঁদের ধর্ম অন্যের মতে আসল ধর্ম নয়; সেহেতু আস্তিকরা সবাই অধর্ম করে চলেছেন। আস্তিকরা সবাই একে অন্যের ধর্মীয় বিচারে বিয়ের নামে ব্যভিচার করে চলেছেন। তারা সবাই পাপের ফসল। তাই নয় কি?
কী মূল্য থাকল তবে “নাস্তিকরা বিয়ে করবে কি করে?” এই মূল্যবোধ বিচারের? কোনো মূল্য নেই। আস্তিকরা যেভাবে অন্যের ধর্মকে কুছ-পরোয়া না করে বিয়ে করছেন, নাস্তিকরাও তেমনি অন্যের ধর্মকে কুছ-পরোয়া না করেই বিয়ে করবেন। তফাৎ কী? কোনো তফাৎ নেই।
এবার আসি, বিয়ে কী, সে প্রসঙ্গে। বিয়ে হলো দু’জন মানুষের মধ্যে চুক্তি যার প্রতি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে। সুতরাং বিয়েতে কলেমা পাঠ বা মন্ত্রপাঠ মুখ্য নয় – বিয়ের মুখ্য বিষয় হলো চুক্তির শর্তাবলী। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, যেন বিয়ে নামক চুক্তিতে উভয়পক্ষ সমান অধিকার পেতে পারে – কারো অধিকার এবং সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয়।
বিয়ের আয়োজন হোক।
বাজুক সানাই।
Leave a Reply