লিখেছেন Secular Friday
মানুষের কেন একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হল?
ঈশ্বর তো নিজে কিছুই করে দেন না, তিনি মূর্ত হন বলে কথিত আছে, কিন্তু সেটাও কেবল মাত্র তাঁরই নির্বাচিত কিছু মানুষের সম্মুখে, সেই সব মানুষদের মাধ্যমেই তিনি সকল নির্দেশনা দেন! কিন্তু সে নির্দেশনাগুলোর কোনোটাই এমন কিছু নতুন নয় যে, মানুষ তার সম্পর্কে আগে থেকে অবগত নয়! তবে কেন এই গুপ্ত থাকার ইচ্ছা?
আদিম মানুষের বিস্ময় ও রহস্যের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা; স্বপ্ন, কল্পনা ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা; মৃত্যু ও আত্মার রহস্যের ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা – এর সবই ঈশ্বর-চিন্তার কারণ হলেও আমার ধারণায় ঈশ্বর সত্যিকার অর্থে আবির্ভূত হয়েছেন পুরুষ ও নারীর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে; কৃষিজীবী মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের ধাপে। জমির অধিকার, পশুসম্পদের অধিকার, দাসেদের সত্ত্বাধিকার, ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার এবং নিজ নিজ নেতৃত্বের অধিকার বোধ থেকে।
বিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট মানব আর মানবী সৃষ্টিকে অব্যাহত রাখতেই প্রকৃতির প্রয়োজনে একে অন্যের পরিপূরক; কিন্তু নারীর জন্মদানের ক্ষমতাকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ পুরুষ মাতৃত্বকে ভয়ানকভাবে ভয় পায়। সৃষ্টিতে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ তাকে দেয় হীনমন্যতা, নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করে, অথচ দৈহিক শক্তিতে সে বলিয়ান! এবং সে এমন যুগ, যখন দৈহিক শক্তির কাছে মেধাশক্তি পরাভুত; জীবন ধারণের স্বার্থেই। তাই নারীকে নিয়ন্ত্রনে পুরুষের প্রয়োজন হয় এক অপ্রাকৃত শক্তি উদ্ভাবনের; যার নাম হল ঈশ্বর।
তাবৎ অজানা প্রশ্নের উত্তর যেই রহস্যময় শক্তির কাছে আছে; গড অব দ্য গ্যাপস্।
কৃষিজীবী মাতৃতান্ত্রিক সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে উত্তরণের, ক্ষমতা আর নেতৃত্ব কেড়ে নেয়ার আর কী পথই বা পুরুষের ছিল? হাজার বছর ধরে, ঈশ্বরকে ব্যবহার করে, নারীর উপরে পুরুষ আধিপত্য বিস্তার করেছে।
এর পর প্রতিষ্ঠিত এই ঈশ্বর ধারণাকে ধর্ম ব্যবসায়ীরা নিয়ে গেছে আরও ভিন্ন মাত্রায়। শোষণের সর্বোচ্চ ব্যবহার হয়েছে ধর্মের উছিলায়। ধর্মে বিশ্বাসীরা যুগ যুগ ধরে রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও নির্বাহী ব্যবস্থায় ধর্মকে স্বীয় সঙ্কীর্ণ স্বার্থে, রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে এসেছে; যার ফলশ্রুতি অমানবিক সব আইন, সম্পদের অসম বণ্টন এবং অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা। ক্ষমতা সংহত করতে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, দেখা যায় না, শুধু বিশেষ কেউ কেউ তাকে অনুভব করতে পারে, অসীম ও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এ ধরনের একটি শক্তির কি কোনো বিকল্প আছে শোষণের স্বার্থে, অন্যের অধিকার হরণের স্বার্থে, নিজেকে অন্যের ওপরে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে!!!
Leave a Reply