লিখেছেন Secular Friday
অসভ্য, বর্বর, নির্মম, নির্দয়, নিষ্ঠুর ও দীনহীন সমাজে বেড়ে ওঠা মানুষেরা সে সমাজের শিক্ষা মোতাবেক ইতর বর্গীয়, দুর্জন আর ক্রূরমতি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। ১৪০০ বছর আগেও তাই আজন্ম বর্বর মরু-সংস্কৃতিতে লালিত অনাথ এক শিশুও বেড়ে উঠেছিল সেই অপশিক্ষারই আলোকে।
জীবনযুদ্ধ তাকে বঞ্চিত করেছিল সকল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ থেকে; শৈশব তার কেটেছে মেষ আর পশু পালনে; কৈশোরেই তাকে সাহায্যকারী রাখাল হয়ে করতে হয়েছে দুঃসাধ্য মরুযাত্রা। এতদসত্ত্বেও মেধা, কঠোর শ্রম, স্বল্প সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার ব্যবহার এবং ভ্রমণগুলো থেকে শেখা লোকায়ত জ্ঞানের সাথে প্রচলিত ঈশ্বর ধারণার চতুর ও কুশলী মিশেলে, নিজ ও নিজ গোত্রের অবস্থান সংহত করতে সে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল খণ্ডনযোগ্য অথচ অপরিবর্তনীয় সব দৈববাণীর; আর তারই বলে নিজেকে সে স্থাপিত করতে সক্ষম হয়েছিল গোত্রাধিপতির স্থানে। মরুচারি আরবদের দিয়েছিল জাতিগত একটি পরিচয়। মরু-সংস্কৃতিতে তার অবদান অনস্বীকার্য।
মানবসভ্যতা তার ক্রমবিকাশের ধারায় আজ গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে উত্তরণ করে আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় উপনীত হয়েছে। আধুনিক এই রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে বসবাস মানুষের অভিন্ন অধিকার ও সার্বজনীনতাকে নিশ্চিত করে, এবং তা নিজস্ব ত্রুটি সত্ত্বেও গতিশীল ও উত্তরোত্তর বিকাশমান। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা ও বিজ্ঞানমনস্কতাই এই গতিশীলতার নির্ণায়ক। তার বিরুদ্ধাচারণ মানেই সভ্যতার প্রগতিশীলতার বিপক্ষে দাঁড়ানো।
মরু-সংস্কৃতি বিগত ১৪০০ বছর ধরে পুরো দুনিয়াজুড়ে একটি সম্প্রদায়কে শিখিয়েছে, শেখাচ্ছে গোটা মানব সম্প্রদায় হতে আলাদা হয়ে ভিন্ন একটি সম্প্রদায় হিসেবে বাঁচতে; স্বার্থপরতায়, ক্রূরতায়, অযৌক্তিকতায়, অমানবিকতায়, অগণতান্ত্রিকতায়, অতীতমুখিনতায় বাঁচতে; পরকালমুখিনতায় বাঁচতে।
কতটা মূর্খ হলে পরে পৃথিবী জুড়ে ভিন্ন ভিন্ন ভূখণ্ডে, ভিন্ন ভিন্ন বয়েসের, শিক্ষার, সংস্কৃতির মানুষের কাছে সে মরু-সংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য হয়? কতটা অন্ধ হলে পরে সামান্য সে গোত্রাধিপতি তার সকল বিব্রতকর কর্মকাণ্ড (খুন, গুম-খুন, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, বহুবিবাহ, শিশুকাম, দাসপ্রথার অনুসরণ, লুটতরাজ ইত্যাদি) সত্ত্বেও আজও অতুলনীয় আদর্শ চরিত্র বলে প্রতিভাত হয়?
Leave a Reply