লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯> পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর হুকুমে কাব বিন আল-আশরাফ নামক এক ইহুদি কবিকে মুহাম্মদ অনুসারীরা প্রতারণার আশ্রয়ে রাতের অন্ধকারে অমানুষিক নৃশংসতায় কীভাবে হত্যা করেছিলেন, তার বিশদ আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, মুহাম্মদের প্রেরিত ঘাতকরা কাব বিন আশরাফকে খুন করার পর তাঁর কল্লাটি কেটে ফেলে। তারপর তারা সেই কাটা মুণ্ডুটি নিয়ে তাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদের কাছে যখন ফেরত আসে, তখন মুহাম্মদ সকালের (ফজর) নামাজের জন্য দণ্ডায়মান।
ঘাতকরা মুহাম্মদ কে অভিবাদন জানান; তারপর, তারা কাব বিন আশরাফের রক্তাক্ত ছিন্ন মস্তকটি নবীর সামনে নিক্ষেপ করেন এবং তাদের সফলতার বিবরণ পেশ করেন। তাঁর অনুসারীদের এই সফলতায় মুগ্ধ ও আনন্দিত দলপতি মুহাম্মদ মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন!
আদি ও বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আমরা আরও জানতে পারি যে, এই বীভৎস নৃশংস ঘটনার পর মদিনার ইহুদিদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয় এবং মদিনায় এমন কোনো ইহুদি ছিলেন না, যিনি তাঁর জীবনের ভয়ে ভীত হননি!
অতঃপর মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে উন্মুক্ত ঘোষণা দেন, “হত্যা করো ইহুদিদের, যাকে পারো তাকেই।” মুহাম্মদের আদেশে তাঁর অনুসারীরা মদিনার ইহুদিদের ওপর নির্বিচারে আক্রমণ চালায়।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনায় ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ
মুহেইয়িসা ও হুয়েইয়িসার উপাখ্যান:
[ইবনে হুমায়েদ <সালামাহ হইতে <] ইবনে ইশাক হইতে বর্ণিত:
‘এই গল্পটি আমাকে [ইবনে ইশাক] বলেছে বানু হারিথার এক মক্কেল <মুহেইয়িসার কন্যার কাছ থেকে < স্বয়ং মুহেইয়িসার কাছ থেকে।
আল্লাহর নবী বলেন, “হত্যা করো ইহুদিদের, যাকে পারো তাকেই।”
ফলে মুহেইয়িসা বিন মাসুদ ঝাঁপিয়ে পড়ে খুন করে ইবনে সুনেইনা (অথবা সুবেয়না) নামক এক ইহুদি ব্যবসায়ীকে। সে সামাজিক ও ব্যবসায়িক সূত্রে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। [1]
তার বড় ভাই হুয়েইয়িসা তখনও মুসলমান হয়নি। যখন মুহেইয়িসা তাকে খুন করে, হুয়েইয়িসা তাকে মারধর শুরু করে ও বলে,
“তুই খোদার শত্রু, যার সম্পদে তোর পেটের চর্বি জমে, তাকেই কিনা তুই খুন করলি?”
জবাবে মুহেইয়িসা বলে,
“যে আমাকে বলেছে তাকে খুন করতে, সে যদি আমাকে বলতো তোমাকে খুন করতে, তবে আমি তোমার কল্লাও কেটে ফেলতাম।” সে [মুহেইয়িসা] বলে যে, এই পরিস্থিতিতেই হুয়েইয়িসার ইসলাম গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
অন্যজন জবাবে বলে,
“হায় খোদা, যদি মুহাম্মদ তোকে হুকুম দিতো আমাকে খুন করার তাহলে তুই কি আমাকে ও খুন করতি?”
সে বলে, “হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, সে যদি আমাকে তোমার কল্লা কাটার হুকুম দিতো, তাহলে আমি তাইই করতাম।”
সে [হুয়েইয়িসা] অবাক হয়ে বলে,
“হায় খোদা, যে ধর্ম তোর এমন পরিবর্তন আনতে পারে তা বিস্ময়কর (marvelous)!” এবং সে মুসলমানিত্ব বরণ করে।’ [2][3]
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। – অনুবাদ, টাইটেল ও [**] যোগ – লেখক।]
The Narrative of Muhammad Ibne Ishaq (704-768 AD)
The affair of Muhayyisa and Huwayyisa:
‘According to Ibn Humayd <Salamah <Muhammad b Ishaq:
I was told this story by a client of Banu Harithah <from the daughter of Muhayyisa <from Muhayyisa himself.
The apostle said, “Kill any Jew that falls into your power.”
Thereupon Muhayyisa b Mas’ud leapt upon Ibn Sunayna (or Subayna), a Jewish merchant with whom they had social and business relations, and killed him. [1]
Huwayyisa was not a Muslim at the time though he was the elder brother. When Muhayyisa killed him Huwayyisa began to beat him, saying,
“You enemy of God, did you kill him when much of the fat on your belly comes from his wealth?”
Muhayyisa answered,
“Had the one who ordered me to kill him ordered me to kill you I would have cut your head off.” He [Muhayyisa] said that this was the beginning of Huwayyisa’s acceptance of Islam.
The other replied, “By God, if Muhammad had ordered you to kill me would you have killed me?”
He said, “Yes, by God, had he ordered me to cut off your head, I would have done so.”
He exclaimed, “By God, a religion which can bring you to this is marvellous!” and he became a Muslim.’ [2][3]
>>> মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের এই বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো মুহেইয়িসা ও হুয়েইয়িসা নামের এই দুই ভাই ও তাদের পরিবারের ভরণ-পোষণ চলতো ইবনে সুনেইনা নামক এই ইহুদি ব্যবসায়ীর সম্পদের ওপর ভরসা করে। সম্ভবত, তারা এই ইহুদির দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো।
কাব বিন আশরাফকে নৃশংসভাবে খুন করার পর যখন ইহুদিরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা না নিয়ে ছিলেন ভীত সন্ত্রস্ত, তখন মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে উন্মুক্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তারা তাদের নাগালের মধ্যে যে ইহুদিকেই পাবে, তাকেই যেন হত্যা করে।
মুহাম্মদের এই আদেশে উদ্বুদ্ধ হয়ে হুয়েইয়িসা নামের এই মুহাম্মদ অনুসারী তার নিজ পরিবারের ভরন-পোষণকারী এক নিরপরাধ ইহুদি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে খুন করে।
ফলে এই খুনির অমুসলিম বড় ভাই প্রচণ্ড মর্মাহত হয়ে তার এই মুসলিম ছোট ভাইকে মারধর শুরু করলে খুনি গর্বভরে এই বলে ঘোষণা দেয় যে, এই নিরপরাধ ইহুদি মালিককে খুন করা তো কোনো বিষয়ই নয়! নবী যদি তার এই বড় ভাইয়ের কল্লা কাটারও হুকুম দিতো, তাহলে সে নির্দ্বিধায় তার বড় ভাইয়ের মুণ্ডুও কেটে ফেলতো।
তারপরেই মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণিত এই ঘটনাটির আসল চমকটি আমরা দেখতে পাই! আর তা হলো,
মুসলমান হওয়ার পর ছোট ভাইয়ের এই অভূতপূর্ব পরিবর্তনের পরিচয় পেয়ে মুগ্ধ বড় ভাই ঘোষণা দিলেন, “আহা! কী সুন্দর ধর্ম! যে ধর্মের অনুসারী হয়ে তোমার চরিত্রের এত সুন্দর পরিবর্তন হয়েছে, তা কতই না বিস্ময়কর!” এই বিস্ময়কর ধর্মের পরিচয় হাতে নাতে পেয়ে মুগ্ধ বড় ভাই মুসলমানিত্ব বরণ করেন–!
ক্ষণিক আগেই যে-অমুসলিম ভাইটি ছিলেন ন্যায় ও মানবতার প্রতীক এক মানব সন্তান, মৃত্যু-হুমকির বশবর্তী হয়ে তিনি মানুষ থেকে মুসলমান হতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে বড় ভাইয়ের মুসলমানিত্ব বরণের পেছনের কারণটি ছিল “মৃত্যু-হুমকি।”
পাঠকদের একটি বিষয় খুব মনোযোগের সঙ্গে খেয়াল করার অনুরোধ করছি। বদর যুদ্ধের পর মদিনায় এই যে একের পর এক সন্ত্রাসী হত্যাকাণ্ড মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ঘটিয়ে চলেছেন, তা কোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সম্পন্ন হয়নি। মদিনায় তখন কোনো যুদ্ধ ছিল না।
এই মানুষগুলোর অপরাধ এই যে, তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আক্রমণাত্মক নৃশংস কর্মকাণ্ডের মৌখিক প্রতিবাদ করেছিলেন! তাঁদের অপরাধ এই যে, বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদেরই একান্ত নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবদের হত্যা করার পর অমানুষিক নৃশংসতায় একে একে বদরের এক নোংরা শুকনো গর্তে নিক্ষেপ করেছিলেন, এই লোকগুলো সেই নিহত হতভাগ্য মানুষদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছিলেন!
তাঁদের অপরাধ এই যে, তাঁরা ছিলেন আদি মদিনাবাসী; তাঁদেরই এলাকায় পালিয়ে এসে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ নামের এক মক্কাবাসী কুরাইশ যখন তাঁরই নিজ এলাকাবাসী মানুষদের বাণিজ্য-ফেরত কাফেলার ওপর রাতের অন্ধকারে একের পর এক হামলা করে তাঁদের সর্বস্ব লুণ্ঠন, হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছেন, তখন তাঁরা তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে আদি মদিনাবাসীদের সাবধান ও উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন, যেন তারা মুহাম্মদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ না নেয়। তাঁরা মুহাম্মদ কিংবা তাঁর অনুসারীদের ওপর কখনোই কোনো শারীরিক আঘাত করেননি।
বলা হয়, “অসীর চেয়ে মসী অনেক শক্তিশালী।” এই আপ্তবাক্যটি আর যেখানেই সত্য হোক না কেন, ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার পেছনে অসী, নিষ্ঠুরতা, নৃশংসতা, সন্ত্রাস, প্রতারণা ও মিথ্যাচার-এর ভূমিকা যে কত বিশাল, তা ‘ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ’ এর গত একুশটি পর্বে করা হয়েছে। পরবর্তী পর্বগুলোতে ও তা ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হবে।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা
[1] ‘তার পুরা নাম ছিল মুহেইয়িসা বিন মাসুদ বিন কাব বিন আমির বিন আ’দি বিন মাযদাহ বিন হারিথা বিন আল-হারিথ বিন আল-খাজরায বিন আমর বিন মালিক আল-আউস’।
[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”– লেখক: ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৩৬৯
[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”– লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ), ভলুউম ৬, ইংরেজী অনুবাদ: W. Montogomery Watt and M.V. McDonald, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৮, ISBN 0-88706-706-9 [ISBN 0-88706-707-7 (pbk)], পৃষ্ঠা (Leiden) ১৩৭৩-১৩৭৪
Leave a Reply