লিখেছেন শ্রোডিঞ্জারের বিড়াল
এক বেকুব নাস্তিকের উপর আল্লাহর গজব পড়ছিলো। এক গজবে এক্কেরে হারামজাদার একিউট লিউকেমিয়া। হাসপাতালে মৃত্যুসজ্জায় শোয়া অবস্থায় মা বোন এসে পাশে বসে হা-হুতাশ করতেছে যে বেকুপ পোলায় নাস্তিকগিরি কইরা গজব খাইলি, ৭২ হুরীও লাগাইতে পারবি না। ডাক্তার বলছে, ৩-৪ মাসের মধ্যেই মারা যাবি, এখনো সময় আছে সুধরাইয়া যা।
নাস্তিক পোলার বোন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে, হিজাবী, অনেক বুদ্ধিসুদ্ধি। হেতি বেকুব নাস্তিকরে লজিক দিলো, “শোন, ভাইয়া, তুই তো নাস্তিক, তুই যদি সঠিক হস তাহলে মরার পর কিচ্ছুই হবে না, মরার পরেই সব শেষ। কিন্তু আমরা যদি সঠিক হই, তাহলে মরার পর আমি আর আম্মা তো জান্নাতে হুরীদের সর্দারনী হমু। কিন্তু তুই তো জাহান্নামে পুড়তেই থাকবি, আল্লাহ টর্চার করতেই থাকবে। চিন্তা করে দেখ, আল্লাহ না থাকলেও আমরা মুসলিমরা কোনো শাস্তি পাবো না, আবার আল্লাহ থাকলে পাবো জান্নাত। কিন্তু তুই নাস্তিক মরলে যদি আল্লাহ থাকে তখন জাহান্নামে যাবি। কোনটা বুদ্ধিমানের কাজ এইবার তুই বল নাস্তিক হওয়া না আল্লাহকে মানা?”
বেকুব নাস্তিকের অন্তরের তালা কেমনে যেন খুইলা গেল। সে বুঝতে পারলো যে, মুসলিম হইয়া গেলেই সবদিক থেকে লাভ। তো মরার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪ মাস সে মনে প্রাণে জান-প্রাণ দিয়া মুসলিম হয়ে গেল। আল্লাহকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা শুরু করলো। সারা দিনরাত এর আগের নাস্তিকগিরির জন্য আল্লাহর কাসে কান্দি কাটি ক্ষমা চাইতো। নামাজ কালাম সব করে বেকুব নাস্তিকটা এবার হয়ে গেল বুদ্ধিমান মুমিন। সুবহানাল্লাহ।
তারপর ৪মাস পর একদিন পটাশ করে সে পটল তুললো, মানে অক্কা পেল। সে মরতে তার মা বোন কান্না করলেও একে অন্যরে সান্ত্বনা দিল যে, যা-ই হোক, ছেলেটা মুসলিম হিসাবে মরছে। আল্লাহ মহান, আল্লাহ অসীম দয়ালু, আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে ক্ষমা করে বেহেশতে নসীব করবেন।
মরার পর…
বেচারা প্রথম শকটা খাইলো তখন, যখন কবরে তার কাছে মুনকার-নাকীর আসলো না। সে ঘন্টার পর ঘণ্টা কবরের দমবন্ধ পরিবেশে অপেক্ষা করতে থাকলো, কখন আসবে মুনকার-নাকীর? কেউ আসে না… সে ভাবতে শুরু করলো, তাহলে কি বেকুব নাস্তিকরাই সঠিক? আসলেই ইসলাম ভুয়া?
তারপর আবার সে ভাবলো, ধুরো, না, কী উলটা পালটা ভাবছি, নাস্তিকরা সঠিক হইলে আমি কবরের ভিতর চিন্তা করতেছি কেমনে, অক্কা পাওয়ার সাথে সাথেই তো সব শেষ হই যাওয়ার কথা। যেহেতু মরার পর কবরের ভিতরে আমি চিন্তা করতেছি, তারমানে পরকাল আছে, ইসলামই সত্য।
মুনকার-নাকীরের একটু দেরি হচ্ছে হয়তো। দুইজন মাত্র ফেরেশতা তারা, আর পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে হাজারে হাজারে মানুষ মরতেছে, দুইজনে একলা কয়জনরে সামলাবে, ফেরেশতারাও তো মানুষ। তাই হয়তো একটু দেরী হচ্ছে।
সে অপেক্ষা করতে থাকে, মুনকার-নাকীর আসবে, আল্লাহ আগে থেকেই সব জানেন। তবে জানা সত্বেও তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে কেন, ব্যাপারটা যদিও ঠিক ক্লিয়ার না।
নাউজুবিল্লাহ, এসব ভাবতে নেই… নিশ্চয়ই আসবে তারা।
দ্বিতীয় শকটা সে খাইলো তৃতীয় দিনে,
তার ঠিক মাথার উপরে একটা সাদা আলো জ্বলে উঠলো। সে বেলুনের মত চুপসে শরীর থেকে বেরিয়ে গেল এবং সাদা আলোর গর্তে ঢুকে গেল। শরীর থেকে “আলাদা” হবার সময় সে কী ঠাণ্ডা।
এমন ঠাণ্ডার অস্তিত্ব সম্ভব বলে জানতো না সে। বিজ্ঞানীরা ভুল, -২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেও তাপমাত্রা আছে, নিশ্চয়ই আছে।
আসমানে…
আসমানে পৌঁছাইয়া সে তৃতীয় এবং সবচাইতে চরম শকটা খাইলো। আসমানে দেখে, দাড়িওয়ালা সাদা চামড়ার এক বৃদ্ধ আর তার সাথে যিশু দাঁড়াইয়া আছে। পাশেই নেংটা গ্যাব্রিয়েল ডানা ঝাপাটিয়ে উড়তেছে।
নেংটা গ্যাব্রিয়েল কইলো, “বাহ বাহ বাহ, আরো একটা ছাগু আইছে।”
দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ বললো, “ওই দেখ আইছে, আরেকটা মুসলিম টেরোরিস্ট হারামজাদা। লুসি, ও লুসি, এদিকে আয়, তোর জন্য আরেকটা বখরা পাওয়া গেছে।”
বুদ্ধিমান মুমিন বললো, “দাঁড়াও দাঁড়াও দাঁড়াও, খ্রিষ্টান ধর্ম সঠিক ধর্ম?”
যিশু উত্তর দিল, “অফ কোর্স, তুমি কোনোদিন ‘Scientific Miracle in Bible’ গুগল সার্চ করো নাই? কত শত মিরাকেল সেইখানে, সেগুলাই প্রমান করে যে বাইবেলই সঠিক, এর পরেও কেমনে তুমি বাইবেলে অবিশ্বাস করে ওই ভুয়া কোরানে ঈমান আনলা?”
“কি কি কিন্তু বাইবেল তো বিকৃত হয়ে গেছে, মুহাম্মদ হইলো শেষ নবী, কোরানই শেষ আসমানী কিতাব। আল্লাহর কোনো পুত্র নাই, যিশু শুধু একজন নবী। বাইবেল বি বি বিকৃত তো…”
বুদ্ধিমান মুমিন কথা শেষ করার আগেই যিশু চেঁচিয়ে উঠলো, “কী! হারামজাদা তুই আমারে জারজ বলতে চাস, তুই বলতে চাস আমার কোনো বাপ নাই? গড হইলো আমার বাপ। তুই আমারে কোন সাহসে জারজ কস, হারামজাদা! মুহাম্মদ নামের ওই শিশুকামী যুদ্ধবন্দীদের ধর্ষণকারী ওই মরুদস্যূ যা-তা কইছে, আর তুই বিশ্বাস করছোস? ওই ছাগলডা নাকি একটা ডানাওয়ালা গাধায় চইড়া আসমানে গেছিল, ডানাওয়ালা গাধা! এইটা কেমনে বিশ্বাস করলি রে, ছাগুর বাচ্চা ছাগু?”
গড একটু কাশি দিল, “যিশু… লেঙ্গুয়েজ!”
বুদ্ধিমান মুমিন উত্তর দিল, “কিন্তু কিন্তু যিশু তো কোনো উড়ন্ত গাধা ছাড়াই আসমানে উড়ে গেছিল, এইটা কীভাবে সম্ভব, উড়ন্ত গাধার সাহায্য ছাড়া Escape Velocity ঈভাবে লাভ করলো? ওইসময় তো স্পেস শাটলও ছিল না!”
যিশু চিল্লায় উঠলো, “চুপ হারামজাদা, তুই আমারে জারজ কইসোস। আমার নাকি বাপ নাই, কত বড়ো ব্ল্যাসফেমি। তার উপর বাইবেলরে বলোস বিকৃত।”।
অতঃপর লুসিফার তথা লুসি নামক অপূর্ব সুন্দর সেক্সি চেহারার এক রমণী উড়ে এল। সে দেখতে ঠিক মুহাম্মদের কল্পনার হুরীদের মত। অতঃপর গড নির্দেশ দিল, “নিয়ে যা একে, লুসি, পোড়া একদম সর্বনিকৃষ্ট নরকে।”
অতঃপর লুসি যখন বেকুব মুমিনকে নিয়ে যাচ্ছিল নরকে, সে মনে মনে ভাবলো, লুসি তো আসলেই দেখতে হুবুহু কোরান হাদীসের হুরীর মত, আসলে কি লুসিফার শয়তানই তাহলে মুহাম্মদকে ধোঁকা দিয়েছিল? কোরান কি তাহলে লুসিফারই জিব্রায়েল সেজে মুহাম্মদকে দিয়েছিল? যে কারনে সে প্রথমবারে ভয় পেয়ে গেছিল? ইসলাম কি তাহলে আসলে শয়তানেরই বানানো মিথ্যা ধর্ম! মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে ছড়ানো বিভ্রান্তি?
এসব ভাবতে ভাবতেই সে তার মাত্র ৩৮ বছরের জীবনের সীমিত সময়ব্যাপী “ভুল বিশ্বাস” এর জন্য অসীম সময় ধরে অনন্তকালের জন্য নরকে নির্যাতিত হতে থাকলো…
——০—–
আপনি যে-ধর্মের যে-বিশ্বাসেই বিশ্বাসী হন না কেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করে অন্য কিছুতে।
পৃথিবীতে এত হাজারো ধর্মের মধ্যে প্রত্যেক ধর্মই তথাকথিত মিরাকল, সায়েন্স, প্রফেসী এসবের দাবি করে থাকে।
এত হাজারের মধ্যে আপনি কীভাবে নিশ্চিত হলেন যে, আপনার ধর্মের আপনার সেক্টের বিশ্বাসটাই সঠিক?
Leave a Reply