লিখেছেন হাইয়্যা আলাল ফালাহ্
১.
স্পেনের এক শহর আছে। নাম Ceuta. এর ওপর একটা ডকুমেন্টারি দেখলাম। চরম দুর্লভ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর। মুসলমান (আরব + বর্বর), নাছারা, ইহুদি, হিন্দু সবাই শান্তিতে আছে। এমনকি এটা বিশ্বের একমাত্র অমুসলিম শহর, যেখানে ঈদুল আযহাকে অফিসিয়াল পাবলিক ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তো এই শহরে একটাই মাত্র গ্রুপ আছে, যাদের এসব ভাল্লাগে না। তারা আর কেউ না। মোছলমান। তারা মরক্কোর সাথে জুটতে চায়। বিধর্মীদের সাথে থাকতে তাদের ভাল্লাগে না।
২.
আলি সিনা’র লেখা বই ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং মুহাম্মদ’ পড়ে অনেক কিছু নতুন করে বুঝতে পেরেছি। এখন বুঝি, কেন মোছলমানদের সাথে অন্যদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব নয়।
স্যামুয়েল হান্টিংটনের বই ‘ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন্স্’ পড়ে লেখকের ওপর রাগ, ক্রোধ হয়েছিল (তখন মোছলমান ছিলাম); এখন বুঝি, এদের সাথে কারোই শান্তিতে থাকা সম্ভব না। এরা না খেয়ে, অস্ত্র হাতে নিয়ে, বিধর্মীদের ক্ষতি করতে করতে মরতে রাজি; কিন্তু ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ একটা অক্সিমরন (oxymoron), যখন আশে-পাশে “শান্তির ধর্মের বিশ্বাসীরা” থাকে।
৩.
গত দশ বছর ধরে ফরাসী ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে পড়ছি। ফরাসী সমাজে একটা জোস ব্যাপার আছে। এরা সেক্যুলার। এটা সবাই জানে। যেটা অনেকেই জানে না, সেটা বলি। ফরাসী ভাষায় কারো পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় (বাস্তব জীবনে অথবা উপন্যাসে) তার ধর্ম-পরিচয় দেয়া হয় তাকে নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য। একটা উদাহরণ দিচ্ছি: কেউ যদি লেখে “আমার বাবা ৬০ বছর বয়সী একজন মুসলিম প্রফেসর”; তার মানে হচ্ছে তার বাবা ৬০ বছর বয়সী একজন প্রফেসর, যে কিনা ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। কেউ যদি লেখে “আমার বাবা ৬০ বছর বয়সী ইহুদি প্রফেসর”; তার মানে হচ্ছে তার বাবা ৬০ বছর বয়সী একজন প্রফেসর, যে ব্যাপক কিপ্টা। লক্ষণীয়: এক এক ধর্মের লোকজন এক এক ব্যাপারে সারা বিশ্বজুড়ে সমালোচিত ও হাসির পাত্র। আর কেউ যদি লেখে “আমার বাবা ৬০ বছর বয়সী একজন প্রফেসর”; তার মানে হচ্ছে তার বাবা ৬০ বছর বয়সী একজন প্রফেসর।
Leave a Reply