মুল রচনা: আলি এ রিজভি
অনুবাদ: মাহফুজ সজল
মুসলিম পরিবারে, মুসলিমপ্রধান দেশে জন্মেছি বলে এই “ইসলামের আধুনিকায়ন/সংস্কার” ব্যাপারটা নিয়ে অনেক কথা শুনেছি সেই ছোটবেলা থেকেই। অন্তত একটা ব্যাপার নিশ্চিত করে বলতে পারি, যদি কোনোরকম সংস্কার করতেই হয়, সেক্ষেত্রে “কোরানে কোনও ভুল নেই” টাইপের আইডিয়া পাল্টাতে হবে। আমি একা নই, মাজিদ নেওয়াজের (Maajid Nawaj) মত মুসলমানও এই বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন। উনি সরাসরি স্বীকার করেন, কোরানে ভুল আছে। মাত্র ক’দিন আগেও ইমরা নাজিরও এই বিষয়ে একটা লেখা ছাপিয়েছেন, এই ‘হাফিংটন পোস্ট’-এই। আমার কথা পাগলের মত শোনাচ্ছে? কিন্তু এটা সম্ভব। দাঁড়ান, আমি উদাহরণ দিচ্ছি।
আমার জন্ম রিয়াদে, ইন্টারনেটেরও আগে। স্কুলের পরে একজন প্রাইভেট টিউটর আমাদের কোরান পড়াতেন, ক্লাসিক আরবিতে। সেই ভাষায়, যেটায় কোরান লেখা হয়েছিল। আমার পরিবার কিন্তু সেইসব সাধারণ মুসলিম পরিবারের মতই যাদের মাতৃভাষা আরবি না। অবশ্য বেশিরভাগ মুসলমানই আরবিতে কোরান পড়ে। বলা বাহুল্য, না বুঝেই পড়ে। বেশিরভাগ মুসলিম পরিবারেই কোরান রাখা হয় সর্বোচ্চ কোনো স্থানে। আমাদের বাসায় রাখা হত সবচেয়ে উঁচু বুকশেলফের ওপর। ওযু ছাড়া কোরান ধরা যায় না, মেয়েরা ঋতুস্রাবের সময় কোরান ধরতে পারে না। রমজানের মাসে কোরান খতম দেয়াটা সুন্নত তারাবীহ-এর একটা অংশ। কিছু কিছু মুসলিম দেশে বিয়ের সময় বরের মাথায় কোরান ছোঁয়ানো হয়। বাচ্চারা যখন কোরান খতম করে, তখন সেটা খুবই আনন্দের বিষয়। বেশিরভাগ বাসাতেই সেই খুশিতে মিলাদ দেয়া হয়।
ইন্টারনেট আসার আগে আমি খুবই কম লোকের সাথে মিশেছি। তাদের সাথে তো বটেই, যারা নিজ ভাষায় কোরান পড়ে। তখন গুরুজনদের মুখের থেকে কোরান শুনতাম। আজকাল কত সহজেই কোনও জিনিস গুগল করে নিশ্চিত করা যায়, সে সময় তা একেবারেই ছিল না। কোরানের অনেক জিনিস জানতাম না।
আসলান সাহেবের মত আমরাও মনে করতাম, আরবের বর্বর আইনগুলো (হাত-পা কাটা) স্রেফ আরবের কালচার, এর সাথে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। পরে জেনেছি, কোরান আসলেই শিরশ্ছেদের আদেশ দেয়। সুরা মায়েদায় তো পরিষ্কার ভাবেই চুরির শাস্তি হাত কাটা বলা আছে (৫-৩৮); আবার কিছু জিনিষ যেগুলো মনে হত কোরানে আছে (যেমন হিজাব, বোরখা), জেনেছি নেই। পাথর ছুঁড়ে মারার কথা কোরানে নেই। এটা আছে হাদিসে (বাইবেলেও), কিন্তু কোরানে নেই। খতনার (ছেলে কিংবা মেয়ে) কথাও কোরানে নেই, এটাও আছে হাদিসে।
আসলান সাহেব যখন মিডিয়ার সামনে মেয়েদের খতনার ব্যাপারে কথা বলছিলেন, তখন তিনি একটা বিষয় এড়িয়ে যান। সেটা হল, চার সুন্নি শরিয়াহ দলের একটি (শাফিই) মেয়েদের খতনাকে হাদিস মেনে “বাধ্যতামূলক” বলে ঘোষণা করেছে, আর বাকি তিন দল মেয়েদের খতনাকে “Recommended” বলেছে। এই জন্যই ইন্দোনেশিয়ায়, যেখানে আসলান সাহেবের মতে মেয়ে আর ছেলে ১০০% সমানাধিকার পায়, সেখানে মেয়েদের খতনার হার শতকরা ৮৫ ভাগেরও বেশি। আর সেখানকার ৯০% মেয়েরা এটা সমর্থনও করে। মিশরে মেয়েদের খতনার হার ৯০%! মানছি ছেলেমেয়েদের খতনার ব্যাপারটা ইসলামের আগে থেকেই আছে, কিন্তু এর সাথে ইসলামের কোনও সম্পর্কই নেই, এই দাবি করাটা তো অন্যায্য।
এই ধরনের ব্যাপারগূলো ছোটবেলায় আমার পক্ষে জানা প্রায় অসম্ভব ছিল। কিন্তু ইন্টারনেট আসায় এগুলো একেবারে হাতের কাছে চলে আসে। হঠাৎই একটা বারো বছরের ছেলের কাছে কোরানের অসংখ্য আয়াতের অসংখ্য ব্যাখ্যা হাজির হয়, তাও নানান ভাষার। কোনও লুকোছাপা নেই, সব একেবারে চোখের সামনে!
লি রিঘবির খুনি যখন নিজের স্বপক্ষে সুরা আত-তাওবা (আয়াত ৩) পড়ছিল, তখন ইন্টারনেট ঘেঁটেই দেখা যাচ্ছিল, সে আসলে কী বলছে। আইসিস যখন নিজেদের বর্বর কাজের পক্ষে সুরা মায়েদা, সুরা মোহাম্মদের আয়াত পড়ে, তখন কোরান খুঁজে সেগুলো বের করে এলোমেলো হয়ে থাকা পাজলটা মেলাতে কষ্ট হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা একটা বিশাল সমস্যা। এবং এটা আপনি আর এড়াতে পারেন না।
যখন লোকে দেখে, আপনার মত মডারেটরা ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলছে, আবার এইসব ভয়ংকর আয়াতের সাফাই গাইছে, তখন তাদের চোখে এই আচরণকে দ্বিচারিতা মনে হয়। একটা অমুসলিম যখন কোরানের সেই সব আয়াত পড়ে, আর একটা জঙ্গির হাতে কারও গর্দান যেতে দেখে, তখন তাদের কাছে সেটাই স্বাভাবিক মনে হয়। সমালোচকদের থামানোর জন্য বেন অ্যাফাকের মত গলা ফেড়ে “বর্ণবাদী” বলে চেঁচালে তো সেই চিন্তা তাদের মাথা থেকে বের হয়ে যাবে না।
(তাছাড়া কোনও ধর্মের সব অনুসারীকে একটা “জাতের/বর্ণের” বলাটা, ধর্মের সমালোচনা করাটাকে “বর্ণবাদী” বলাটা তো স্টুপিডিটি। আমেরিকার খ্রিষ্টান আর বাংলাদেশের খ্রিষ্টানদের ধর্ম এক। এ জন্য কি তারা একই জাতের? খ্রিষ্টান ধর্মের সমালোচনা করলে কি আমি “বর্ণবাদী” হয়ে যাব?)
আমি জানি, স্রেফ সেই ধর্মের অল্প কিছু অনুসারীদের কাজকর্ম দেখে সেই ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করাটা অন্যায় (হোক সেই অনুসারীরা তালেবান কিংবা আইসিস); কিন্তু এটাও সত্য যে, কোনও ধর্মের গ্রন্থগুলো পড়ে সেই ধর্ম সম্পর্কে মন্তব্য করাটা স্রেফ সৎই নয় বরং বুদ্ধিমানের কাজও বটে। আজকের ইন্টারনেটের দুনিয়ায়, লোকে যখন আপনাকে আপনার ধর্ম আর ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, আপনাকে আরেকটু সৎ উত্তর দিতে হবে। ভুলভাল আর অমানবিক আয়াতগুলোকে আপনি মোটা দাগে “রূপক” আর “Out Of Context” বলে চালিয়ে দেবেন, সেটা আর চলবে না। আর প্রশ্নকারীকে “ইসলামবিদ্বেষী” কিংবা “বর্ণবাদী” বলে গালি দিলে সে আপনার ধর্ম আর ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে কোন জবাব পাবে, সেটা নিশ্চয়ই আবার বলতে হবে না।
তো এখন প্রশ্ন হল, জবাবটা দেবেন কীভাবে??
***********************************************
স্রেফ কোরান না, বরং অন্যান্য আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলোও পড়া শুরু করুন, তাতে ফল আসবে। দেখবেন বাইবেলও একই রকম ভায়োলেন্ট কথায় পরিপূর্ণ। সত্য বলতে আমার কাছে তো মনে হয়, কোরানের থেকেও বেশি ভায়োলেন্ট আয়াত বাইবেলে আছে। ধর্ম অবমাননাকারীদের, জেনাকারীদের, সমকামীদের পাথর মেরে হত্যা – এ সবই পাবেন সেখানে। আর Deuteronomy-এর কুড়ি নং আয়াতের থেকে সামনে আগাবেন তখন তো মনে হবে এটাই হল ইসিসের মুল আদর্শ!!!
আপনার মনে হবে, ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বইয়ের থেকে আপনার বইয়ের তফাত অনেক কম। এখন প্রশ্ন হল, তারা এতোটা উদারপন্থী হল কীভাবে? তাদের বেশিরভাগই কেন বাইবেলকে (যেটা তাদের কাছে ঈশ্বরের বাণী, যেমনটা মুসলমানদের কাছে কোরান) মাত্রাতিরিক্ত সিরিয়াসলিভাবে না নিয়ে কীভাবেই বা ইহুদী-খ্রিষ্টান থাকছে? মুসলিমদের ক্ষেত্রে কি এমনটা সম্ভব?
ওপরের প্যারাটা পড়লে বুঝে গেছেন যে, শেষ প্রশ্নটার উত্তর হল, “হ্যাঁ, সম্ভব।” তবে এটা করার জন্য আপনাকে প্রথমেই “ইসলামিক” আর “মুসলিম” এই দুটোর মধ্যে পার্থক্যটা ধরতে হবে। এগুতে হলে মানুষের হাত ধরে এগুতে হবে, ধর্মের নয়।
ধর্মের মধ্যে “বিবেক/মানবতা” খুঁজতে যাওয়ার কোনও মানে নেই। আজ সারা মুসলিম-বিশ্ব জুড়ে মহামারীর মত ছড়িয়ে পরা সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদের কারণে সাধারণ মুসলমানরাই বেশি মারা যাচ্ছেন, কোনও বিদেশী অপশক্তির কারণে নয়। “ধর্মের বিবেকের” বিরুদ্ধে এর থেকে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?
একটা সমাজকে এগিয়ে নেয়ার জন্য ধর্মকে না, বরং মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া দরকার, একসাথে কাজ করা দরকার। আমরা অন্যান্য আব্রাহামিক ধর্মের বেলাতেও পরিষ্কার পরিবর্তন দেখতে পাই। কী ইহুদী আর কী খ্রিষ্টান, এদের সবারই ভয়ংকর অমানবিক একটা অন্ধকার অতীত আছে, এটা আমরা ভালোই জানি; আজকাল সুযোগ পেলে এটার ব্যবহার করতেও আপনার ভুল হয় না। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই অন্ধকার সময় থেকে তারা বেরুলো কীভাবে?
ভ্যাটিকানের পোপ যতই জন্মনিয়ন্ত্রণ, গর্ভপাত (abortion) কিংবা বিবাহ-পূর্ব সেক্সের বিরুদ্ধে হইচই করুক না কেন, বেশিরভাগ খ্রিষ্টানই কিন্তু নিজের খেয়ালে চলে, জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি ব্যবহার করে, এবং বিয়ের আগে সেক্সের ব্যাপারেও তারা উদারমনা। বেশিরভাগ ইহুদিই ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ। ইহুদি কালচার মেনে চললেও অনেকেই নিজেকে নাস্তিক কিংবা অজ্ঞেয়বাদী বলে পরিচয় দেয়। কট্টরপন্থীরা আর উদারপন্থীদের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধ হয় বটে, কিন্তু সেটা কথায় শুরু হয়ে কথাতেই শেষ হয়। এজন্য কট্টরপন্থীদের কেউ উদারপন্থীদের খুন করে না।
এই ব্যাপারটার সাথে বিশ্বজুড়ে মুসলমান সমাজের মারাত্মক বৈপরীত্য দেখা যায়। ২০১৩ সালের একটা রিসার্চে দেখা গেছে, মুসলিমপ্রধান দেশের (পাকিস্তান, মিশর) বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে যে, ইসলাম ত্যাগের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। কে “আসল মুসলমান” আর কে না, সেটা নিয়ে তারা মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা করে। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ থামাতে তাদের তেমন চেষ্টা নেই, কিন্তু একজন সামান্য কার্টুনিস্ট কিংবা ফিল্মমেকারের হাত থেকে ইসলামকে বাঁচাতে তারা সদা প্রস্তুত। (প্রসঙ্গক্রমে: বিশ্বজুড়ে আইসিসের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ভয়েস অবশ্যই অভিনন্দন পাবার মত অগ্রগতি)
“মডারেট” শব্দটা তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। Fareed Zakaria (CNN সংবাদ পাঠক) মধ্যপ্রাচ্যে “মডারেট” থাকার ব্যাপারটাকেই “ফ্যান্টাসি” বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমনকি Nathan Lean-এর মত লোকও যিনি ইসলামের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য এবং “ইসলামবিদ্বেষী (Islamophobic)” কথাটা ছড়িয়ে দেবার জন্য বিখ্যাত, তিনিও “মডারেট” শব্দটা ব্যবহারের বিপক্ষে।
“মডারেটদের” প্রয়োজন ইসলামে ফুরিয়েছে, ইসলামের এখন দরকার “সংস্কারক”; আর “সংস্কারক” শব্দটার সাথে “কোনও ভুল নেই” টার্মটা ঠিক খাপ খায় না। সংস্কারের উদ্দেশ্যই হল পাল্টানো, সিস্টেমটাকে ঠিক করা, দিক পরিবর্তন করা। আর সত্য বলতে কী, কোনও কিছু “ঠিক করতে” চাইলে এটা মেনে নিতেই হবে যে, সেটা কোথাও ভেঙেছে। ব্যাপারটা এমন না যে, বস্তুটা আসলে ঠিক আছে, কিন্তু “দেখে মনে হয়” ভেঙে গেছে, কিংবা বস্তুটাকে ভুল লোক দ্বারা “দেখানো হচ্ছে” ভেঙে যাবার মত। আপনি যদি কোনও কিছুর আধুনিকায়ন চান, সংস্কার চান, তবে সেটার অন্তত কিছুটা অংশ যে বাতিল হয়েছে, নষ্ট হয়েছে, সেটা স্বীকার করাই হল আধুনিকায়নের প্রথম পদক্ষেপ।
আমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি সব পাল্টে ফেলতে বলছি? নিজের নবীর দিকেই দেখুন। উনি মক্কা থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন স্রেফ পরিবর্তনের পক্ষে লড়ার জন্য। ঈসা নবী পরিবর্তনের পক্ষে লড়েছিলেন। এঁরা তাদের সময়ের ধর্মগুলোর মূলে আঘাত করতে লজ্জা পাননি। এঁরা আর যা-ই ছিলেন, অন্তত “মডারেট” ছিলেন না। পরিবর্তন আসে এঁদের হাত ধরেই, পরিবর্তন আসে বিপ্লবীদের হাত ধরেই। ইসলাম নিজেও এভাবেই শুরু হয়েছিল। প্রকাশ্যে ক্ষতিকর কোনও ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করাটা “বিদ্বেষ” না, বরং সুন্নত। চার দেয়ালের বাইরে আসুন, ইসলামের সম্মান ফিরিয়ে আনুন।
(নিজের কিছু কথা: “স্রেফ কোরান দিয়ে আর চলবে না”, এই চিন্তাটা কিন্তু এক সময় এই আপনারাও করেছেন। আলী (রাঃ)-এর পরপর যখন উমাইয়াহদের খেলাফত শুরু হয়, তখন বিশাল আর জটিলতর সম্রাজ্য পরিচালনার জন্য স্রেফ কোরান না, বরং নবী এবং তাঁর সাহাবীগণ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কী কী কাজ করতেন, তার প্রতিবেদন সংগ্রহ করা শুরু করেন। আজকে কিন্তু সেইসব প্রতিবেদনকেই আমরা “হাদিস” বলে জানি। আর এই হাদিস সংগ্রহের প্রধান উদ্যোক্তাকে কিন্তু আমরা সবাই এক নামে চিনি, উনি “ইমাম আবু হানিফা”।
এভাবে ইতিহাস ঘাঁটলে এই মুসলমানদের হাতেই ইসলামের অনেক পরিবর্তনের প্রমাণ পাবেন। আরও একবার পরিবর্তন করলে খুব খারাপ কিছু হবে না বলেই মনে হয়।)
Leave a Reply