লিখেছেন দাঁড়িপাল্লা ধমাধম
আবু বকর মানে ছাগলের আব্বা, জামাল মানে উট, জামাল উদ্দিন মানে ধর্মের উট, ইবনে মায়েজ মানে ছাগলের পুত্র, বিনতে তাওর মানে বলদের কন্যা…ইত্যাদি আরবি নামগুলোর মানে দেখে আমরা হাসাহাসি করি। কিন্তু আসলেই কি হাসাহাসি করার মত সুযোগ আছে?
কোরানের অনেক সূরার বাংলা মানে করলেও হাসি পায় – বিভিন্ন প্রাণীর নামের সূরা – বকনা বাছুর, গৃহপালিত পশু, মৌমাছি, পিপীলিকা, মাকড়সা; স্থান বা বস্তুর নামে – পাথুরে পাহাড়, বালুর পাহাড় গুহা; ফলা-ফলাদির নামে ডুমুর, জলপাই – আল্যায় নিজেও এসবের নামে কসম খায়।
কিন্তু, প্লিজ, হাসবেন না।
দুনিয়ার সমস্ত মানবজাতি একই গতিতে সমান ভাবে উন্নতি লাভ করেনি। বর্তমানে ইউরোপিয়ানদের আমরা সবচেয়ে উন্নত মনে করি। আর সবচেয়ে অনুন্নত জাতির খবর নৃতত্ত্ববিদরা রাখেন – আফ্রিকা, পাপুয়া নিউগিনি বা এরকম এলাকায় এলাকায় এখনো এমন জাতির সন্ধান পাওয়া যাবে যাদের গায়ে বর্তমান সভ্যতার বিন্দুমাত্র উন্নতির আঁচড় লাগেনি। ভারতীয়, আরব, বা আমরাও এই উন্নতির কোনো একটা স্তরে আছি। ইউরোপিয়ানরাও কোনো না কোনো কালে এসব পার হয়ে এসেছে, আরো সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে এসবের পরিচয় পাওয়া যাবে। আমরাও আমাদের চেয়ে অনুন্নত জাতিদের স্তরে কোনো এক কালে ছিলাম, ধীরে ধীরে সামনে এগোচ্ছি।
আমাদের ইতিহাস-সাহিত্য-সংস্কৃতির আদি রূপটা জানতে হলে ভারতের প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলো অবশ্যপাঠ্য। পুরানো কালে গেলে উপনিষদ কুকুর সম্পর্কে একটা শ্লোকের সূত্র ধরে এগিয়ে ঋগ্বেদ পর্যন্ত গেলে সাপ, ব্যাঙ, বাঘ, ছাগল, তিতির, খচ্চোর, মাছ, বানর, ভাল্লুক, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি নামধারী জাতি বা মানুষের পরিচয় পাওয়া যায়। এমনটাই ছিল বাঙালীদের আদি কৌমসমাজেও – একেকটা গোষ্ঠীর পরিচয় গড়ে উঠত বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ার-প্রাণীদের নামে। এটা সবার জানা। (এখন ইউরোপিয়ানদের নামের প্রায় কোনো অর্থ থাকে না, কিন্তু আমরা এখনো প্রাণী বা বস্তুর সাথে মিলিয়ে নাম রাখি।) ইউরোপ-আমেরিকা বা পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ঘাটলেও একই ব্যাপার পাওয়া যাবে।
একই জিনিস আরব জনগোষ্ঠীর বেলাতেও হয়েছে। যদিও তারা কোরান থেকে শুরু করে এবং পেছনে শুধু আদম-হাওয়া পর্যন্ত যায়। এর মাঝামাঝি যা আছে, সব অস্বীকার করে। পুরানো আর সব ইতিহাস এরা ধ্বংস করে একেবারে গুঁড়িয়ে দেয়, নইলে তাদের ধর্মটাই যে মিথ্যা হয়ে যায়! এরা আরবের বাইরেও এই কাজ করেছে বা করে আসছে। যেখানেই গেছে সেখানের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি একেবারে ধ্বংস করে দিতে চেয়েছে বা চায়। কিন্তু তাদের কোরান-হাদিসেই মনের অগোচরেই সেই আদিম কালের ছাপ রয়ে গেছে, ইতিহাস রয়ে গেছে। ঐসব নামগুলো ওই দিকেই নির্দেশ করে। আর মহাম্মদ এসব জানত, তাই নিজের কুকীর্তি ফাঁস হয়ে যাবে সেই ভয়েই ধর্মের বাইরে আর কোনো সাহিত্য বা বিজ্ঞান চর্চার কোনো সুযোগ রাখতে চায়নি।
Leave a Reply