আবারো বলছি- ফেসবুক বা ব্লগে নাস্তিকদের সাথে ধর্মান্ধদের ক্যাচাল হয়ে বটে, তবে আসল লড়াইটা মূলত সমালোচক বনাম রাজনৈতিক দলের চ্যালা চামুণ্ডাদের মধ্যে।
আল্লা নবী ধর্মরে প্রকাশ্যে পুন্দিয়ে ধর্ষণ করে ফেললেও এদেশের মানুষের কিছু যায় আসে না। সমস্যা হয় তখন যখন রাজনৈতিক দলগুলো এসব ঘটনা থেকে ফায়দা লুটতে চায়। যতগুলো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বা ঘটছে, সবগুলোর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য এবং প্রশাসনিক দূর্বলতা।
ধর্মের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ যথেষ্ঠ পরিমানে সহিষ্ণু। এর বড় প্রমাণ- এদেশে আরজ আলী, আহমদ শরীফরা অনেক আগে থেকেই প্রকাশ্যে নাস্তিকতার চর্চা করে আসছিলেন। তাতে দেশের সাধারণ মানুষের তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয় নাই। এমনকি তসলিমা নাসরিন বা হুমায়ুন আজাদ- তাদের নাস্তিকতায়ও কারো তেমন সমস্যা হয় নাই। অনেকে জাস্ট চরম উগ্র নাস্তিক বললেও শেষ কালে এড়িয়ে গেছেন।
সমস্যা হতে শুরু করেছে তখন থেকে যখন এই দুইজন মৌলবাদ তথা জামাত-শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে লেখা শুরু করেছেন। তাদের দেশান্তর বা খুন হওয়ার পিছনের একমাত্র কারণ সেটাই।
আর একটা কথা ভবিষ্যতে মিলিয়ে নিয়েন- থাবা খুন হওয়ার পিছনেও উনার নুরানি চাপা কোন অংশে দায়ী নয়। এর পিছনে ছিল গভীর রাজনৈতিক চাল। থাবা জাস্ট আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতির শিকার। তিনি মোটেই নাস্তিকতার কারণে খুন হয় নাই। এই খুনের ব্যাপারে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং প্রশাসন আগে থেকেই জানত। এ ব্যাপারে একটু গভীর ভাবে আরেকটু ভাবলেই পেয়ে যাবেন আসল কাহিনি। আমি জাস্ট ভাবনা কিছু উপকরণ জোগান দেই আগের একটা পোস্ট থেকে-
সর্বপ্রথম যে হিটলিস্ট বের হয়েছিল, এমনকি মামলাও হয়েছিল, সেখানে তাদেরকে নাস্তিক বলা হলেও আমরা দেখেছি তাদের অনেকেই নাস্তিক ছিলেন না। তারা চরম ভাবে রাজাকার বিরোধী ছিলেন। সেই লিস্টের সূত্র ধরেই ঘেউ ঘেউ করা পার্টি নাস্তিকতা নিয়ে এক এক করে নানান লিস্টের জন্ম দিয়ে আসছিল। সবচেয়ে আলোচিত লিস্টটা হলো ৮৪ জনের। খেয়াল করে দেখবেন, এগুলা কোন দলের কাছ থেকে আসে নাই। ব্লগ আর ফেবুর ঘেউ ঘেউ করা পার্টিটাই অনেক দিন ধরে জমানো নামগুলাই লিস্ট আকারে দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৮৪ জনের মধ্যে ২১ জনকে নাকি সনাক্ত করা গেছিল। আর বাকিগুলা এদেরই ফেক নিক। এই ২১ জনের লিস্টে যারা ছিলেন তারা সবাই মোটামুটি নাস্তিক। এ থেকে ১১ জনের লিস্ট ডিবি বা সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। এই ১১ জনের মূল অপরাধ কিন্তু নাস্তিকতা ছিল না। এরা রাজাকার বিরোধীতার পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলারও সমান সমালোচনা করতেন। অর্থাৎ এরা অনেকের দলানুভূতিতে ব্যাপক ভাবে আঘাত করে আসছিলেন। এটাই আসল ব্যাপার। দলানুভূতি! (কে বা কারা এই লিস্ট করে ডিবির হাতে পৌঁছে দিয়েছিল, সেটাও আশা করি অনেকেই জানেন!)
এবার আসি আরেকটা চলমান ইস্যু আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যাপারে। ইনিও স্বনামে প্রকাশ্যেই অনেক আগে থেকে নাস্তিকতার চর্চা করে আসছেন। ধর্ম নিয়ে উনার লেখালেখি নিয়ে ব্লগ-ফেবুতে অনেক হাউকাউ হলেও সেটা ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু যখনই তিনি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর বিরোধীতার সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিয়েও সমালোচনা বা স্যাটায়ার বা কৌতুক করা শুরু করলেন, তখন থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। উনার কাছের মানুষগুলাও উনার পিছে লাগতে শুরু করলেন। উনাকে গানম্যান দিয়ে প্রোটেকশন দেয়ার পরও সেই সরকারই আবার উনাকে জেলের মধ্যে পচাচ্ছেন। প্যাঁচ লেগেছে সেই ১১ জনের লিস্ট জমা পড়ার পর থেকে। সেই লিস্টের সাথে সাথে আরো জমা পড়েছিল রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করা আসিফের অনেক স্নাপশটের প্রিন্টআউট যা পৌঁছে দেয়া হয়েছিল একেবারে টপ পর্যায়ে।
যারা আজ আসিফের মুক্তির ব্যাপারে অফ আছেন, তারা সবাই যে তলে তলে রাজনৈতিক দলের চ্যালা মাছ মাত্র, সেটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চিনে নিয়েন। আর এটাও মনে রাখবেন, গভীর জলের মাছেরা আপনাদের ব্যবহার করছে মাত্র।
আর আপনি যদি সত্যিকারের মুক্তচিন্তার পথের পথিক হয়ে থাকেন তাহলে ভেবে দেখুন- ধর্মান্ধদের চাইতে এই দলান্ধরাই মুক্তচিন্তার জন্য বেশি ক্ষতিকর। কারণ ধর্মকে ধর্মের স্থানে রাখতে এরাই বাঁধা দেয় সবার আগে। এরাই দেশের সাধারণ মানুষরে ধর্মকে রাজনৈতির সাথে গুলে খাওয়ায়। আপনাদের আসল শত্রু ধর্মান্ধরা নয়, দলান্ধরা; ধর্মানুভূতি নয়, দলানুভূতি।
আর বর্তমানে যারা আসিফের কারাবাসে খুশি, আসিফ মহিউদ্দীন তাদের ধর্মানুভূতিতে যতটা না আঘাত দিছে, তারচেয়ে বেশি আঘাত দিছে তাদের দলানুভূতিতে, বিশেষ করে আমলিঙ্গানুভূতিতে।
Leave a Reply