লিখেছেন ক্যাটম্যান
প্রায় সকল ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ মানব মন্ডলীকে নানা রকম বিষয়ে মুক্তির প্রলোভন দেখিয়ে থাকেন। হিন্দুধর্মে পুনর্জন্মের একঘেয়ে চক্র থেকে মুক্তির প্রলোভন দেখানো হয়। খ্রিষ্টধর্মে যিশুর রক্তের বিনিময়ে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তির প্রলোভন দেখানো হয়। তেমনি ইসলাম ধর্মেও পাপ নামক এক প্রকার আধ্যাত্মিক আবর্জনা থেকে মুক্তির প্রলোভন দেখানো হয়। পাপ নামক এই আধ্যাত্মিক আবর্জনা প্রায় সকল ধর্মের অনুসারীদের মাঝে নানামাত্রিক মুক্তির তাড়না সৃষ্টি করে থাকে। আধ্যাত্মিক মুক্তিপ্রাপ্তির মহাযজ্ঞে পাপ নামক আধ্যাত্মিক আবর্জনার ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মের প্রভুগণের স্বভাব-বৈশিষ্টে ভিন্নতা থাকলেও, আধ্যাত্মিক আবর্জনার যথাযথ ব্যবহারে কোনো ধর্ম ও ধর্মের প্রভুগণের বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ স্বীয় ভক্ত, অনুসারীদের নিকট থেকে ভক্তি, পূজা ও ইবাদত পাওয়ার হীন উদ্দেশ্যে পাপ নামক এই আধ্যাত্মিক আবর্জনাকে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। যেভাবে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে মানুষ ও গবাদি পশুর মল-মূত্র থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়, তেমনি ধর্মের বায়োগ্যাসরূপী প্ল্যান্টে মানুষের পাপ নামক আধ্যাত্মিক বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে ভক্ত, অনুসারীদের মাঝে ভক্তি, পূজা, ইবাদতের ন্যায় বায়োগ্যাস উত্পাদন করে থাকেন ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ।
প্রাথমিকভাবে মনে হতে, পারে ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ সকল আধ্যাত্মিক ধর্ম ও ধর্মের অনুসারীদের পরিচালনা করে থাকেন; বরং বাস্তবতা হলো, পাপ নামক আধ্যাত্মিক বর্জ্য এককভাবে সকল ধর্মের পরজীবী প্রভু ও মাথামোটা অনুসারীদের পরিচালনা করে থাকে। মূলত ধর্মের প্রাণ নিহিত আছে মানুষের পাপ নামক কাল্পনিক অথবা আধ্যাত্মিক বর্জ্যে। প্রায় সকল ধর্ম ও ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ মানুষের পাপ নামক আধ্যাত্মিক বর্জ্যের কল্যাণপুষ্ট । তাই ধর্মসমূহ ও ধর্মের পরজীবী প্রভুগণ মানুষের পাপমুক্তির বিষয়ে যতটা না আগ্রহী, তার চেয়ে বেশি আগ্রহী মাথা মোটা মানুষের পাপকে চক্রবৃদ্ধি হারে ব্যবহারে। সে লক্ষ্যে মানুষের পাপমুক্তির ছদ্মাবরণে চলে পাপ চর্চার ধর্মীয় মহাসমারোহ। দিকে দিকে পাপচর্চা যত বৃদ্ধি পায়, ধর্মচর্চা তার সমান তালে বৃদ্ধি পায়। উল্টো করে বললে ধর্মচর্চা যত বৃদ্ধি পায়, পাপচর্চাও তত বৃদ্ধি পায়। ধর্ম ও পাপ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
ধর্মের ভগবানেশ্বরাল্লাহ পাপ নামক আধ্যাত্মিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে আধ্যাত্মিক রি-সাইক্লিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেছেন। আধ্যাত্মিক পাপ-বর্জ্য রি-সাইক্লিং প্ল্যান্টকে ধর্মভেদে জাহান্নাম, নরক বা হেল নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। ধর্মের প্রভুগণ ভক্তি, পূজা ও ইবাদতের বিনিময়ে ভক্ত, অনুসারীদের জাহান্নাম বা নরকের আযাব বা শাস্তি থেকে মুক্তি দেবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।
তবে ধর্মসমূহ ও ধর্মের প্রভুগণের নিকট পাপ, পাপ থেকে মুক্তি ও পাপ জনিত নরকের শাস্তি থেকে মুক্তির বিষয়গুলো যতই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন, মানুষের নিকট পাপ ও মুক্তির চেয়েও একটি প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয় সব সময়। প্রশ্নটি হলো, যদি ভগবানেশ্বরাল্লাহ তাদের হীন বান্দা, দাস, চাকর, ভৃত্য, গোলাম, খোদ্দাম, ভক্ত ও অনুসারীদেরকে ধর্ম পালনের পুরস্কারস্বরূপ নরকের শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে থাকেন; তাহলে তাদের মতো মহান স্রষ্টাবৃন্দের মানুষরূপী হীন বান্দা সমূহকে প্রথমে বন্দী করল কে? কারণ মুক্তির প্রথম শর্ত বন্দিত্ব। অর্থাৎ ধর্মের প্রভুগণের বোকা বান্দাসমূহকে যিনি বা যাঁরা প্রথমে হীন বন্দিত্ব আরোপ করেছেন, সার্বিক বিবেচনায় তিনি বা তাঁরা হলেন প্রাথমিক সমস্যা সৃষ্টিকারী। আর যিনি বা যাঁরা সমস্যার আদি কারণ, তাঁকে বা তাঁদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় না তুলে মহান ভগবানেশ্বরাল্লাহ বোকা বান্দাসমূহকে বহুমাত্রিক বন্দিত্ব থেকে মুক্তির টোটকা দাওয়াই স্বরূপ ভক্তি, পূজা ও ইবাদতের মাধ্যমে ধর্ম পালনের হীন পরামর্শ দান করেছেন।
আর উক্ত প্রশ্নটির উত্তর যদি হয়, শয়তান বা আসুরিক কোন প্রতিপক্ষ ভগবানেশ্বরাল্লাহর বান্দাসমূহকে বহুমাত্রিক সীমায় বন্দী করেছে; সেক্ষেত্রে আমাদের জিজ্ঞাসা, স্রষ্টা হিসেবে প্রভুগণের মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না? যে প্রভুগণ তাঁদের স্বীয় বান্দাসমূহকে শয়তানের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে অপারগ, যে প্রভুগণ তাঁদের নালায়েক বান্দাসমূহকে শয়তান আরোপিত বন্দিত্ব থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন; তেমন অযোগ্য ভগবানেশ্বরাল্লাহর প্রতি বান্দার পক্ষ থেকে ভক্তি, পূজা ও ইবাদতের অর্ঘ্য নিবেদন করা উচিত হবে কি? যেহেতু অযোগ্য ভগবানেশ্বরাল্লাহর বোকা বান্দার প্রতি শয়তান বন্দিত্ব আরোপ করেছে, সেহেতু বোকা বান্দা সকলের উচিত হবে স্বীয় মুক্তির লক্ষ্যে পুরাতন মনিব ভগবানেশ্বরাল্লাহকে পাল্টে মাননীয় শয়তানকে নতুন মনিব হিসেবে গ্রহণ করা; আর ব্যর্থ ভগবানেশ্বরাল্লাহ প্রদত্ত মুক্তির টোটকা দাওয়াই বর্জন করে শয়তান প্রদত্ত স্বস্তির প্যারাসিটামল গ্রহণ করা ।
আর বান্দাকে বন্দিত্ব আরোপের বিষয়টি যদি স্বয়ং ভগবানেশ্বরাল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে; তাহলে বুঝতে হবে তামাশা করার হীন উদ্দেশ্যে হীন প্রভুগণ তাদের বোকা বান্দাসমূহকে পাপ-বর্জ্যের অথৈ সাগরে ফেলে পুনরায় তাদেরকে উদ্ধার করার মহৎ নাটক সাজিয়েছেন, যে-নাটক মানুষরূপী বান্দার জন্য বড্ড পীড়াদায়ক। তবে নাটকের এই ঘৃণ্য পর্বে অংশগ্রহণ না করে হীন তামাশাকারী ভগবানেশ্বরাল্লাহকে ঘৃণাভরে বর্জন করা আত্মবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে উচিত কর্তব্য নয় কি?
Leave a Reply