লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
হিন্দুরা আগে সতীদাহ প্রথা মানতো। জ্যান্ত একটা মানুষকে পুড়িয়ে মারা! কী বর্বর! রামমোহন রায় এই প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছেন। সফলও হয়েছেন। তিনি ‘ইহা সহী সনাতন হিন্দুধর্ম নয়’ বলে নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। এটাও বলেননি, ‘আমি তো পোড়াচ্ছি না! যারা এটা করে, তারা সহী হিন্দু নয়।’ তিনি লড়াই করেছেন। সমাজ এবং ধর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করায় তাঁকে হুমায়ুন আজাদের মতো চাপাতির কোপ খেয়ে মরতে হয়নি। রাজীব হায়দারের (থাবা বাবা) মতো গলির মুখে লাশ হয়ে পড়ে থাকতে হয়নি।
হিন্দুদের মধ্যে বিধবাবিবাহ প্রথা ছিল না। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই প্রথার বিরুদ্ধে লড়েছেন। সফলও হয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলের কথা জানি না। আমার গ্রামে আমার জানামতে তিনজন বিধবার বিয়ে হয়েছে। বিদ্যাসাগর মশায় ‘ইহা সহী হিন্দুধর্ম নয়’ বলে নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। হিন্দুধর্মে অনেক কুসংস্কার, জাতপ্রথা আরও ফালতু ব্যাপার আছে। তবে হিন্দুরা লাইনে আসছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে।
শরৎচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, সুনীল এবং হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া আরও অনেক লেখক হিন্দুধর্মের এবং সমাজব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। তাদের কাউকে কোপ খেয়ে মরতে হয়নি বা, তসলিমা কিংবা দাউদ হায়দারের মতো দেশান্তরী হয়ে থাকতে হয়নি। পার্থক্য এখানেই।
এক ধর্মাবলম্বীরা ‘ইহা সহী ইসলাম নয়’ বলে দায়িত্ব শেষ করে। আর যদি কেউ দাঁড়ায় প্রতিবাদ করতে, তবে তার জন্য দা, ছুরি, চাপাতি আর কল্লা ফেলানোর ফতোয়া তো আছেই। আর অন্যরা? ‘আমার কী? আমি কি হুমায়ুন আজাদকে কোপাইতে গিয়েছিলাম নাকি? ইহা সহী নয়!’
বলতে পারেন, মুসলমানদের মধ্যে বিধবাবিবাহ প্রথা আছে। সতীদাহ ছিল না। হ্যাঁ, ছিল না। তবে ফেসবুক ব্যবহার করার ‘অপরাধে’ পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদণ্ড, প্রেম করে বিয়ে করায় জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা, হিল্লা বিয়ে, বৃষ্টিতে ভেজায় বোনকে ভাইয়ের গুলি করে হত্যা, ধর্ষিত হলে দুইজন ধর্ষণের সাক্ষী নিয়ে যাও, নাস্তিক হলে তার কল্লাটা আস্তে করে একটা কোপ দিয়ে আলাদা করে দাও, ধর্মান্তরিত হলে খুন করো… এইসব আছে।
বলদ এবং ধর্মান্ধ আছে সব ধর্মেই। কিন্তু টয়লেট, কবরস্থান, জানাজার নামাজ, ঈদের নামাজ, পার্ক, শপিং মল, রেল স্টেশন, পত্রিকা অফিস, এখানে-সেখানে বোমা মেরে নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের প্রচেষ্ঠা এই যুগে এসে মুসলমানেরা ছাড়া আর কেউ করছে না ও করবে না, এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন।
আর যারা ‘ইহা সহী ইসলাম নয়’ বলে নিজের দায়িত্ব শেষ করেন, তাঁরা একটু ইরাক, আফগানিস্তান, সুদান, সিরিয়া এবং অন্য ইসলামিক দেশগুলোর দিকে তাকান। এটা এখানেও আসছে এবং খুব দ্রুত। সকালে দুই ঠ্যাং নিয়ে বাজারে গিয়ে যখন বোমার আঘাতে এক ঠ্যাং নিয়ে বাসায় ফিরবেন তখন বুঝবেন। হা হা। আমি পপকর্ন আর চিপস নিয়ে বসে আছি দেখার জন্য।
—————
ধর্মপচারকের পক্ষ থেকে:
প্যাট্রিক কন্ডেল, যাঁর সম্পর্কে রিচার্ড ডকিন্স বলেছিলেন, “Pat Condell is unique. Nobody can match his extraordinary blend of suavity and savagery. With his articulate intelligence he runs rings around the religious wingnuts that are the targets of his merciless humour. Thank goodness he is on our side.”, একটি ভিডিও ছেড়েছেন গতকাল, যেটার নাম: “এর সঙ্গে ইছলামের কোনও সম্পর্ক নেই” অর্থাৎ “ইহা সহী ইছলাম নহে”।
এই ব্যক্তির তীব্র শ্লেষ, হুল-ফোটানো বিদ্রূপ, নিখুঁত শব্দচয়ন ও প্রকাশভঙ্গির ভক্ত আমি গত পাঁচ বছর ধরে।
সাড়ে চার মিনিটের এই ভিডিওটি সাবটাইটেলযুক্ত। সাবটাইটেল দেখা না গেলে প্লেয়ারের cc বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ভিডিও লিংক: http://youtu.be/N46mIHEGHN0
Leave a Reply