লিখেছেন : কবিতা রায়
অধিকার বলে যেটাকে ভাবেন সেটাই হল সবচেয়ে বড় কাল্পনিক জিনিস। প্রকৃতি কোনোদিন কারোকে কোনো অধিকার দেয়না, যেটা দেয় তা হল ক্ষমতা। বেঁচে থাকার এবং বেড়ে ওঠার ক্ষমতা। জলে কুমির এবং ডাঙায় বাঘ রাজত্ব এইজন্য করেনা যে এটা তাদের অধিকার। এই জায়গাতে তাদের বেঁচে থাকার এবং বেড়ে ওঠার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি আছে তাই তারা রাজত্ব করে।
আপনারা যেসব কাগজে লেখা অধিকারের কথা বলেন, বিজ্ঞানের চোখে সেগুলোর কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই। জীবনবিজ্ঞান আপনার বেঁচে থাকার অধিকারও স্বীকার করেনা। বিজ্ঞান বলছেঃ যদি আপনার বাঁচার ক্ষমতা থাকে তবে বাঁচবেন, নাহলে মরে যাবেন।
আপনি আপনার যেসব অধিকার আছে বলে মনে করেন সেগুলো আসলে সবই কাল্পনিক। কিন্তু যেহেতু কিছু ক্ষমতাবান সেগুলোকে সমর্থন করে তাইজন্যই সেগুলো আছে। ঠিক যেমন একদা আফগানিস্তানে বৌদ্ধরা ছিল কারণ ক্ষমতাবান রাজশক্তি তাদের পিছনে ছিল। সেই জায়গায় তালিবান এসে মনে করেছে এদের থাকবার অধিকার নেই, অমনি বুদ্ধমূর্তিটা লুপ্ত হয়ে গেছে। তেমনই আপনার এলাকায় যেদিন তালিবানের রাজত্ব শুরু হবে সেদিন আপনার বেঁচে থাকার অধিকারটা থাকবেনা, তার বদলে আপনাকে কোতল করাটাই হয়ে যাবে রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার। এর কারণ অধিকার ব্যাপারটার অস্তিত্ব কেবল কল্পনায়।
ফরাসী বিপ্লবের পর সেখানকার সরকার সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার অধিকার দিয়েছিল। কিন্তু ফরাসী দেশের বাইরে কালো মানুষের উপনিবেশগুলোয় তার কোনো অস্তিত্ব ছিলনা। আমেরিকার যে মানুষেরা ইংরেজের গোলামী থেকে স্বাধীন হবার জন্য সব মানুষের সমান অধিকারের প্রবচণ দিত, সেই সব মানুষের তালিকায় নিগ্রো ক্রীতদাসদের কোনো জায়গা হয়নি। একজন কালা আদমি খাস লন্ডনে গেলে ব্রিটিশদের প্রায় সমান অধিকারই পেত, কিন্তু ব্রিটিশদেরই রাজত্ব আমেরিকায় বা আফ্রিকায় সেই অধিকার থাকত না। কারণ লন্ডনে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের মনে হয়েছিল অধিকার দেওয়া উচিত, উপনিবেশে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের এমনটা মনে হয়নি। প্রত্যেক মানুষেরই মনে অধিকার সম্পর্কে নিজস্ব কল্পনা থাকে। যার ক্ষমতা বেশি, তার কল্পনাটাই সবাইকে মেনে নিতে হয়। একটা শিশু মনে করে তার সারাদিন খেলা করার অধিকার আছে, কিন্তু বড়দের ক্ষমতার সামনে সে অধিকার টেকে না। আপনি মনে করতে পারেন যে দুনিয়ার সব ভালো ভালো জায়গা দেখতে যাবার অধিকার আপনার আছে, কিন্তু সেইসব বিভিন্ন দেশের ক্ষ্মতায় থাকা সরকারগুলো যদি অন্য কিছু মনে করে তবে আপনাকে ঢুকতেই দেবেনা। যার ক্ষমতা বেশি সে যেটা মনে করে সেটাই চলে। গান গাওয়ার অধিকার আজ আপনার আছে, তালিবানের সরকার ক্ষমতায় এলে এজন্য আপনি চাবুক খাবেন।
আপনার অধিকার ততটুকুই বাস্তব, যতটুকু আপনি নিজের ক্ষমতায় কিম্বা ক্ষমতাবানদের সাহায্যে (পুলিশ, আদালত, সরকার, জন-আন্দোলন ইত্যাদি) আদায় করতে পারবেন। যেটা আদায় করার ক্ষমতা নেই সেটা নেহাতই কাল্পনিক।
Leave a Reply